Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

গৌতম চক্রবর্তী গোরক্ষনাথের ভক্ত মুসলমান যোগী এবং এই সম্প্রদায়ের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে গোমাংস ও শূকরমাংস খাওয়ার উল্লেখ করেছেন (‘হিংলাজ তো পাকিস্তানে...’, ১-৪)।

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

নাথধর্মের উৎপত্তি ও বিকাশ

গৌতম চক্রবর্তী গোরক্ষনাথের ভক্ত মুসলমান যোগী এবং এই সম্প্রদায়ের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে গোমাংস ও শূকরমাংস খাওয়ার উল্লেখ করেছেন (‘হিংলাজ তো পাকিস্তানে...’, ১-৪)। নাথ সম্প্রদায়ের এই বিভিন্নতা সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে গেলে গোড়ার ইতিহাস পর্যালোচনা প্রয়োজন। দেখা যায়, নানা জাতির চিন্তা-ভাবনা, আচার-ব্যবহার, সাধন পদ্ধতি ও ধ্যানধারণার সমন্বয় সাধন করে এই ধর্ম সংগঠিত ও সমৃদ্ধ হয়েছিল। প্রাক্-আর্য ও বৈদিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিক যোগসাধনার সঙ্গে জৈন এবং তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের সহজযান ও বজ্রযানের সংমিশ্রণ ঘটে এখানে। নাথধর্মের উৎপত্তি ও বিকাশের কেন্দ্র হিসাবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রচলিত উপাখ্যান থেকে অনুমান করা হয়, এই সম্প্রদায়ের আদিগুরু মৎস্যেন্দ্রনাথ বাংলার বাখরগঞ্জের চন্দ্রদীপের অধিবাসী ছিলেন। কালক্রমে এই সম্প্রদায় উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে রাজপুতানা, গুজরাত, পঞ্জাব, উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। নাথযোগীরা নিজেদের গুরুর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে গান রচনা করতেন এবং চারণকবিদের মতো বহির্বাংলাতেও গানগুলি গেয়ে প্রচার করতেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানিকচাঁদের গীত, গোপীচন্দ্রের গীত, ময়নামতীর গান, গোরক্ষবিজয়, মীনচেতন ইত্যাদি নাথধর্ম বিষয়ক কাব্যকাহিনি আবিষ্কৃত হয়েছে।

শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, তুর্কি আক্রমণের আগেই গোপীচন্দ্র, ময়নামতী ও গোর্খ-মীননাথের কাহিনি বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। এর নিদর্শন পাওয়া যায় পঞ্জাব, গুজরাত, দাক্ষিণাত্য প্রভৃতি অঞ্চলের স্থানীয় ভাষায় লেখা বাংলার নাথ গীতিকারদের কাহিনি থেকে।

বস্তুত, বৌদ্ধধর্মের পতন এবং ব্রাহ্মণ্যধর্মের উত্থানের সন্ধিক্ষণেই জাতপাতের ভেদাভেদহীন নিম্নকোটির কৌমদেবতা শিবকে আশ্রয় করে নাথধর্মের অভ্যুদয় ও সম্প্রসারণ ঘটে। নাথধর্মের সঙ্গে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের সাযুজ্য এত বেশি যে, এই ধর্মকে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের ক্রমিক পরিণতি বললে অত্যুক্তি হয় না। পণ্ডিত নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে, নবম থেকে একাদশ শতকে বৌদ্ধ মহাযান সম্প্রদায়ের সঙ্গে শৈব ধর্মমূলক যোগ ও তন্ত্রাচার মিশ্রিত হয়ে নাথধর্মের সৃষ্টি। তিনি মীননাথ ও গোরক্ষনাথকে এই ধর্মের প্রবর্তকদের মধ্যে অগ্রণী বলে উল্লেখ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে নাথধর্মের আত্মপ্রকাশ ঘটে সম্পূর্ণ নতুন স্বতন্ত্র ধর্মগোষ্ঠী হিসাবেই। হঠযোগ তাঁদের সাধনা। চতুর্দশ শতকের পরবর্তী সময় নাথধর্মের দেশব্যাপী সম্প্রসারণ ঘটে ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।

‘পাগ-সাম-জোন-জ্যাং’ গ্রন্থে বলা হয়েছে গোরক্ষনাথ তান্ত্রিক বৌদ্ধ ছিলেন। পরে তিনি বৌদ্ধধর্ম ত্যাগ করে মৎস্যেন্দ্রনাথের কাছে শৈবধর্মে দীক্ষিত হন। সাহিত্যবিশারদ আবদুল করিমের মতে, গোরক্ষনাথ পঞ্জাবের অন্তর্গত জালন্ধরে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল তাঁর নাড়ির যোগ। তাঁর মাতৃভাষাও ছিল বাংলা। বাংলাদেশের নাথপন্থীরা গোরক্ষনাথকে তাঁদের আচার্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

নেপালের সঙ্গে নাথধর্মের যোগাযোগ ছিল একেবারে শুরুতেই। নেপালি ঐতিহ্যে মৎস্যেন্দ্রনাথকে বৌদ্ধ দেবতা অবলোকিতেশ্বর হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক লেভি এই মতকে সমর্থন করেছেন। মৎস্যেন্দ্রনাথ ছিলেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী নেপালের উপাস্য কল্যাণদাত্রী দেবতা এবং নেপালরাজ্যের ভাগ্যবিধাতা। মৎস্যেন্দ্রনাথের লেখা পাঁচটি বই নেপাল থেকে পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল ‘কৌলজ্ঞাননির্ণয়’ যেখানে তাঁর পরিচয় হল তিনি ‘সিদ্ধ সম্প্রদায়’ভুক্ত।

নানা জাতি, ধর্ম ও তাঁদের সাধনপদ্ধতি সমৃদ্ধ নাথ সম্প্রদায়ের আজকের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি, যোগী আদিত্যনাথ। তিনি এই ধর্মগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও পরম্পরা রক্ষা করে সহিষ্ণুতার নিদর্শন রাখতে পারেন কি না, সেটাই দেখার।

রাহুল বড়ুয়া কলকাতা-৭৪

তলার অন্ধকার

আমি এক জন কৃষি স্নাতক। অমিত বসুর ‘টিনের কৌটোয় বাংলাদেশের খাদ্য যাচ্ছে চিন...,’ শীর্ষক লেখার প্রেক্ষিতে কিছু জানাতে চাই। পশ্চিমবঙ্গে কৃষি জমির পরিমাণ ভারতের কৃষি উৎপাদনশীল মোট জমির তিন শতাংশের কাছাকাছি হলেও এই বাংলা মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনের ৮ শতাংশ উৎপাদন করে ওই তিন শতাংশ জমিতে। বাংলার চাষিদের সিংহভাগই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি (৬৮%), তা সত্ত্বেও উৎপাদনশীলতার নিরিখে আমরা অনেকটাই এগিয়ে আছি।

বাংলার প্রধান খাদ্যশস্য ধান ছাড়াও অনেক ফসল আছে যেগুলোও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চাষ হয় এ রাজ্যে। যেমন গম, ডালশস্য, ভুট্টা, বার্লি, আলু, তৈলবীজ ও শাকসবজি। খাদ্যশস্য ছাড়া বাংলার সবচেয়ে অর্থকরী ফসল চা, যার বেশির ভাগ বিদেশে রফতানি হয়। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল, পাট। ভারতের মোট উৎপাদনের ৬০% পাট এ রাজ্যে উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া তামাক ও আখ পশ্চিমবঙ্গে নিবিড় ভাবে চাষ করা হয়। বিগত দুই দশকে বাংলার কৃষি নিবিড়তা ১.৩১ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১.৬২ হয়েছে। ধান উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে। এ রাজ্যে তৈলবীজ উৎপাদন গত এক দশকে ০.২৪ মিলিয়ন টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ০.৫৫ মিলিয়ন টন হয়েছে, যা অসাধারণ সাফল্য। আলু উৎপাদনে আমরা ভারতে দ্বিতীয়, এবং মোট উৎপাদনের ২৮% এ রাজ্যে উৎপন্ন হয়। এখনও গ্রামবাংলার অর্থনীতি ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যের মতোই কৃষি নির্ভর এবং বাংলার কৃষি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। নবতম সংযোজন হল ফুল রফতানি।

কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ঠিক ভাবে পর্যালোচনা করলে অন্য রকম ঠেকবে। এ রাজ্যে অক্টোবর ২০১১ থেকে ডিসেম্বর ২০১৬-র মধ্যে প্রায় ৪০ জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন, যার বেশির ভাগই প্রান্তিক চাষি অথবা দিনমজুর। আলু ও ধান চাষিরা, যাঁরা ধার নিয়ে চাষ করেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফসল বেচার সময় দাম পান না। ফলে ধার শোধের উপায় থাকে না। যে হেতু ‘গ্রামীণ ঋণ ব্যবস্থা’ এখনও খুবই খারাপ, ইনস্টিটিউশনাল ক্রেডিট যতটা আছে, তা এই সমস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কাছে পৌঁছয় না। ভাগচাষি হলে তো প্রশ্নই ওঠে না। ফলে তাঁরা ঋণ নেন চড়া সুদে স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে। যদি ফসল বিক্রি করে দাম না পান, তা হলে এই মহাজনরা ভিটেমাটি পর্যন্ত দখল করে নেন।

আসল কথা হল বিগত ৩০ বছরে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার কখনওই ৫ শতাংশের বেশি হয়নি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে এটি ছিল সর্বাধিক ৪.৬৯%। শেষ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় এই হার ৩% ছিল। সবুজ বিপ্লবের ফলে যা কিছু অগ্রগতি হয়েছে তার সুফল কেবলমাত্র কিছু রাজ্যই নিতে পেরেছে। কিন্তু পরবর্তী কালে কস্ট অব প্রডাকশন তেমন ভাবে কমেনি।

ধীরাজকুমার নাথ হায়দরাবাদ

রাম গেরুয়া কেন

রামনবমী উদ্‌যাপনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করেছে বিজেপি। তৃণমূলই বা পিছিয়ে থাকে কেন? তাই অনুব্রত মণ্ডলও মাঠে নেমেছেন পাল্টা জবাব দিতে (‘কেষ্টর রামনবমী’, ৫-৪)। কে কত বেশি, কত জোরে, কত ভাবে রাম নাম উচ্চারণ করতে পারেন, তাই নিয়েই দড়ি টানাটানি চলছে। রামকে শিখণ্ডি করে রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াই। একটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন বন্ধ হওয়া জরুরি। রাম, হনুমান সকল মানুষের, বিশেষ দলের নন। ধর্ম ও রাজনীতিকে একই আসনে বসানো কখনওই কাম্য নয়। বিজেপির অত্যধিক রামপ্রীতির ফলে রাম হয়ে উঠেছেন গৈরিক বসনধারী। এই প্রচেষ্টা কেন? কোন উদ্দেশ্যে?

হীরালাল শীল কলকাতা-১২

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE