মেট্রো নয়, ভাগ্যে বনগাঁ লোকালই
সালটা ২০১০। আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। বারাসতে আমার স্কুলটির সুনাম থাকায় মধ্যমগ্রাম, নিউ ব্যারাকপুর, বিরাটি থেকে অনেক বন্ধুরা আসত পড়তে। তাদের কাছে পরিবহণের প্রধান মাধ্যমই ছিল ট্রেন। যে সে ট্রেন নয়! বনগাঁ লোকাল! তবে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার যে কোনও ট্রেনের অফিস টাইমের যে অমানুষিক যাত্রা, তা বোধ হয় সবারই জানা।
নাকাল চলাকালীনই হঠাৎ এক দিন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন কলকাতা মেট্রো রেলের চার নম্বর লাইনের যা উত্তর শহরতলির বারাসাতকে জুড়ে দেবে কলকাতার দক্ষিণতম প্রান্তের সঙ্গে। ঠিক হল, মোট দশটি স্টেশন নিয়ে নোয়াপাড়া থেকে বারাসাত পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আঠারো কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড মেট্রো পথ তৈরি হবে। কিছু দিনের মধ্যেই ঘটা করে হল শিলান্যাস; স্থির হল ২০১৬ সালের মার্চ মােস এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে।
সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হল রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হওয়ার মুখেই তা গেল থমকে! এয়ারপোর্ট থেকে বারাসত, এই বারো কিলোমিটার অংশে প্রায় দু’হাজার বেআইনি জবরদখলকারী রেলের জমিকে বসবাস এবং ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছেন। স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের কাছে বার বার চিঠি লিখে এবং আলোচনা করেও জবরদখলকারীদের সরানো সম্ভব হল না। রাজ্য প্রশাসনের দাবি ছিল, জোর করে কোনও ভাবেই দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাবে না। ফলে বেআইনি জবরদখলকারীদের সরানো সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় নির্মাণকারী সংস্থা কয়েক মাস অপেক্ষা করে, কাজের জন্য জমির অভাব দেখিয়ে নির্মাণের সমস্ত সরঞ্জাম ও শ্রমিকদের সরিয়ে নেয় এবং পরে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা আন্দাজ করে এই প্রকল্প থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজেদের সরিয়ে নেয়। এমনকী জবরদখলকারীদের হটাতে রাজ্য সরকারের অনিচ্ছা দেখে, প্রকল্পের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ ২০১৪-র মে মাসে রেল বোর্ডকে প্রকল্পটির এয়ারপোর্ট থেকে বারাসত অংশের কাটছাঁট করার প্রস্তাব দেয়।
কিন্তু পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর বৈঠকের পর রাজ্য সরকার বিভিন্ন মেট্রো প্রকল্প এলাকা থেকে জবরদখল সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশ্বাস দেয়। এয়ারপোর্ট পর্যন্ত কিছু জায়গায় জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে বারাসত পর্যন্ত রুটের জবরদখল সরানোর কোনও সদিচ্ছা প্রশাসনের পক্ষে দেখানো হয়নি। ফলে প্রকল্পের এই অংশের ভবিষ্যৎ আজও তিমিরে।
এ দিকে বর্তমান অর্থবর্ষে (২০১৭-১৮) এই প্রকল্পে প্রায় ২২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৭৫ কোটি টাকা বেশি। তবে কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই অংশে কাজ করতে না পারার সম্ভবনা রয়েছে এবং তাই এই টাকার সম্পূর্ণ অংশ যে খরচ করা যাবে না, তা মেনে নিয়েছেন অনেক আধিকারিকই।
আমি এখন কলেজে পড়ি। ছোটবেলায় শোনা সেই বনগাঁ লোকালের করুণ কাহিনিগুলো প্রতি দিন প্রত্যক্ষ করি। সারা দিন কাজের পর ফেরার ট্রেনে পা দু’টো ঠিক করে রেখে দাঁড়াতে না পারার কষ্টটা বোঝা হয়তো অন্যদের পক্ষে সম্ভব না। দু’টো বিধানসভা, একটা লোকসভা নির্বাচন হয়ে গেছে এই ছ’বছরে। রাজ্য রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু কোনও দলকেই এই ব্যাপারে মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি। ভোটের রাজনীতির কাছে ফের হেরে যেতে বসেছে উন্নয়ন আর সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য।
জয়দীপ দাশ বনমালীপুর, বারাসাত
নিষিদ্ধ হোক
আজ যখন রামনবমীর যুক্তিহীন প্রকাশ্য অস্ত্র-মিছিল অপরাধ হিসাবে অভিযুক্ত হচ্ছে, তখন মহরম সহ রাজ্যব্যাপী যা কিছু অস্ত্র প্রদর্শনকারী কাণ্ডকারখানা, সব কিছুকেই একই অপরাধের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না কেন? তা না হলে বাঙালিকে সচেতন ভাবে ‘অসচেতন’ বলা ছাড়া উপায় থাকবে কি ?
অনিরুদ্ধ সেন ধর্মপুকুরিয়া, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
রক্তপলাশ
অনুভা চট্টোপাধ্যায় রচিত অনিল চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ-এ একটি তথ্যপ্রমাদ চোখে পড়ল (পত্রিকা, ১-৪)। লেখা হয়েছে যে অনিলবাবুর ‘রক্তপলাশ’ নামক বাংলা ছবিটির হিন্দি ভার্সন করতে চেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু অনিলবাবু বম্বে (অধুনা মুম্বই) না যাওয়াতে হিন্দি ছবিটি হল না। এটি প্রকৃত তথ্য নয়।
‘রক্তপলাশ’-এর হিন্দি ভার্শনের নাম ‘ফরার’। এতে অনিলবাবু প্রধান চরিত্র অভিনয় করেছিলেন। ছবিটির পরিচালক পিনাকী মুখোপাধ্যায় ও প্রযোজক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবির নায়িকা ছিলেন মুম্বইয়ের অভিনেত্রী শবনম। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতার লোটাস সহ অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল। ছবিটির শুটিং হয়েছিল কলকাতায়, যার মধ্যে প্রধান ছিল খিদিরপুর ডক। ছবিটির কাহিনি কলকাতার ক্রিমিনালদের নিয়ে।
অনুভা দেবী অবশ্য ‘ফারার’-এর নামটি উল্লেখ করেছেন।
শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য কলকাতা-৩৯
বি-এড সংকট
আমরা হাইস্কুল ও জুনিয়র হাইস্কুলের নন বি-এড শিক্ষকরা এক অভূতপূর্ব সমস্যায়। ২০১২ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিদ্যালয়গুলিতে নিযুক্ত হই। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সবাই উপযুক্ত ছিলাম। কিন্তু এখন এনসিটিই-র নিয়মে ৫০% নম্বর না থাকলে বিএড করা যায় না। তাই আমরা বিএড করতে পারছি না। সরকারও উদাসীন। বার বার বিকাশ ভবন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছি। এই বছর বিএড করতে না পারলে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছি। ২০১২-১৪ শিক্ষা বর্ষে ৫০%-এর কম নম্বর থাকা শিক্ষকশিক্ষিকাদের জন্য ওপেন ডিস্ট্যান্স লার্নিংয়ে বি-এড করার যে ব্যবস্থা হয়েছিল তা যদি আবার করা যায় তবে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার শিক্ষক জীবিকা হারানোর শঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারেন।
পীযূষ প্রতিবার রঘুনাথপুর, ঝাড়গ্রাম
সুন্দরবন
স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরিচালনায় শিক্ষক নিযুক্তি শুরু হওয়ার পর থেকে সুন্দরবনের বহু ছাত্রছাত্রী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু সুন্দরবনের দ্বীপগুলি শিক্ষকের অভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে চলেছে। একটি দৃষ্টান্ত। গোসাবা ব্লকের ৯টি দ্বীপে ৪৬টি মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্বীকৃত প্রধান শিক্ষক আছেন ৬টিতে। বাকিগুলিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকই (টিআইসি) ১০-১৫ বছর ধরে স্কুলের সমস্ত প্রশাসনিক দায়িত্বভার বহন করছেন।
প্রধান শিক্ষকের পদটি দীর্ঘ দিন ফাঁকা থাকায় বিশৃঙ্খলা গ্রাস করেছে প্রতিষ্ঠানগুলিকে। টিআইসি-দের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সর্বত্র। গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, সাগর, কুলতলি, সন্দেশখালি, বাসন্তী, সব ব্লকেই শিক্ষার হাল এক। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংখ্যাও খুব কম। দক্ষ এবং যোগ্যরা দেশান্তরী হয়েছেন জীবিকার প্রয়োজনে।
স্বপনকুমার মণ্ডল কলকাতা-১৫০
প্রাচীনতম
আমার রণজিৎ গুহ সংক্রান্ত রচনায় (ধন্য হউক, ১৫-৪) ‘এই উপমহাদেশের বৃহত্তম নথিখানা হল ধর্ম’ এই অংশটিতে ‘বৃহত্তম’-এর বদলে ‘প্রাচীনতম’ পড়তে হবে । এই ভুলের জন্য দুঃখিত।
বিশ্বজিৎ রায় শান্তিনিকেতন
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy