Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

ঘরে আজকাল রামের ছবি রাখতেও ভয় লাগছে। আমি কি তবে বিজেপি হয়ে গেলাম! পুলিশ এ ছবি দেখলে জেলে ভরে দেবে না তো? কিংবা আমাকে আরএসএস-এর সদস্য বলে দেগে দেওয়া হবে না তো?

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

এত ভয় কিসের?

• ঘরে আজকাল রামের ছবি রাখতেও ভয় লাগছে। আমি কি তবে বিজেপি হয়ে গেলাম! পুলিশ এ ছবি দেখলে জেলে ভরে দেবে না তো? কিংবা আমাকে আরএসএস-এর সদস্য বলে দেগে দেওয়া হবে না তো? না হলে এই সে দিন হনুমান জয়ন্তীতে সিউড়িবাসীকে কেন মিছিল করতে দেওয়া হল না? কেন কিছু মিছিলকারীকে জেলে ভরা হল? এক জনের হাতেও তো অস্ত্র ছিল না। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি তো অনেক পরের ঘটনা। সেটুকুও হত না, যদি মিছিলে বাধা না দেওয়া হত। কষ্ট হলেও বলছি, মুসলমানদের কাছ থেকে নয়, বরং সরকারের তরফ থেকেই একটা হিন্দু-বিরোধী উসকানি দেখতে পাচ্ছি ধারাবাহিক ঘটনায়। সরকার কেন ভয় পাচ্ছে যে, যারা রামের নামে মিছিল বের করছে তারা সবাই বিজেপিকে ভোট দেবে? আমি এক সাধারণ নাগরিক। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই, প্রায় প্রতিটি জনসভায় বক্তৃতার শেষে হিন্দুদের জন্য আলাদা মন্ত্রোচ্চারণ, সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের জন্য ইনশাল্লাহ্— এ সব বলাটা কি খুবই প্রয়োজন? অত লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে আলাদা ভাবে হিন্দু-মুসলমান চিহ্নিত করে তাদের আলাদা করে খুশি করাটা কি অত্যন্ত জরুরি? এটা সাম্প্রদায়িকতা নয়? রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম তো এখানেও জুড়ে যাচ্ছে। আম জনতা সেখান থেকেই রাস্তা খুঁজে নিচ্ছে। সেই রাস্তা হিংসার।

রানি মজুমদার, রানিগঞ্জ

অনাদরে বাংলা

• ‘ভাষাহারা বাঙালি’ (সম্পাদকীয়, ১৫-৪) পড়ে ২০০১ সালের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ল। ডব্লিউবিসিএস গ্রুপ ‘এ’ ইন্টারভিউ দিচ্ছি। এক প্রশ্নকর্তা ইংরেজিতে জানতে চাইলেন, ‘পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কি বিডিও-র কাজে সাহায্য করে, না এটা না থাকলেই তাঁর কাজের সুবিধা বেশি?’ বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছি, ইংরেজি খারাপ লিখি না। কিন্তু ইংরেজিতে মৌখিক ভাবে যুক্তিজাল বিস্তার করার মতো দক্ষতা নেই। মরিয়া হয়ে জানতে চাই— আমি কি বাংলায় বলতে পারি? এক ভদ্রমহিলা (প্রশ্নকর্তাদের এক জন) অসহিষ্ণু ভাবে বলে ওঠেন—‘ইউ আর গোয়িং টু বি আ ডব্লিউবিসিএস গ্রুপ ‘এ’ অফিসার। ইউ মাস্ট আনসার ইন ইংলিশ।’ সবিনয়ে বললাম, ম্যাম, আপনি আমার কাছে একটা বিষয় জানতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে আমার কতটা ধারণা আছে, সেটাই তো আসল, ভাষাটা তো এখানে গৌণ। তা ছাড়া আপনাদের বিজ্ঞাপনে বলা ছিল বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা বাধ্যতামূলক, ইংরাজি সম্পর্কে তেমন কিছু ছিল না। আগের প্রশ্নকর্তা সহানুভূতির সঙ্গে বললেন, ‘ইংরেজিতেই চেষ্টা করুন না।’ আর তর্ক করা ঠিক হবে না বিবেচনা করে বাকি উত্তর ইংরেজিতেই দিই। চাকরিটা পেয়ে যাই, তবে পার্সোন্যালিটি টেস্টে নম্বর কম পাওয়ায় ‘এ’ গ্রুপে নির্বাচিত হতে পারিনি।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চাকরির ইন্টারভিউতে ইংরেজি বলার দক্ষতা যতটা যাচাই করা হয়, বাংলা ততটা নয়। অথচ পশ্চিমবঙ্গের অফিসে কাজ করতে গেলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলতে হয়। ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় এই কথাগুলো মনে রাখলে সাধারণ মানুষের উপকার হয়। অভিভাবকরাও আশ্বস্ত হন এই ভেবে যে, ছেলেমেয়েরা ইংরেজি বলায় দক্ষ না হলেও চাকরি পাওয়া আটকাবে না। সে ক্ষেত্রে বাঙালির ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রতি আকর্ষণ কিছুটা হলেও কমবে, এমনকী বাংলা-ইংরেজি জগাখিচুড়ি ভাষায় কথা বলা বাঙালির সংখ্যাও কমতে পারে।

পিন্টু ভট্টাচার্য্য, বহিরগাছি, নদিয়া

বৃক্ষরক্ষায় মাতুন

• একমুঠো আশার আলো নিয়ে আসে সৌরকোষের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস (‘সৌর বিদ্যুতের প্রশিক্ষণে যাদবপুর’), সবুজ পাঁচিল নির্মাণ (‘গাছ লাগিয়ে স্কুলে এ বার ...) ও বৃক্ষ রক্ষার (‘হাত হারিয়ে গাছ...’) মতো খবর (১২-৪)। লাগামহীন জৈব জ্বালানির ব্যবহারের কুফল— তাপমাত্রার দ্রুত বৃদ্ধি ও অস্বাভাবিক আবহাওয়া। বিশ্বের দূষিত পরিবেশকে সুস্থ করে তুলতে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য দুটি উপায় হল সৌরবিদ্যুতের ব্যাপক ব্যবহার ও বৃক্ষরোপণ। সৌরশক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ে পৃথিবী-ব্যাপী গবেষণা চলছে, কিন্তু জৈব জ্বালানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সৌরশক্তি এখনও অনেক পিছিয়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনার্জি স্টাডিজ-এর বিজ্ঞানীরা সিলিকনের জায়গায় পেরোভস্কাইট ব্যবহার করে যদি সৌরকোষের উৎপাদন ব্যয় কমাতে পারেন, তবে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে সন্দেহ নাই। স্কুলে স্কুলে সবুজ পাঁচিল নির্মাণে স্কুলশিক্ষা দফতরের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ ভাবে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও বসত ভিটায় সবুজ সীমানার ব্যবস্থা করলে পরিবেশ পরিশ্রুত হবে, শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহার কমবে, বিদ্যুৎ ব্যয় কমবে, আখেরে দেশের লাভ হবে। যে কাজ ‘আরণ্যক’-এ যুগলপ্রসাদ করতেন, ‘চিপকো আন্দোলন’-এ মহিলারা যা করে দেখিয়েছেন, বাগডুবি গ্রামের প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ নকুল সিংহের মতো কিছু গাছপাগল মানুষ যা করছেন আমাদের সবাইকে তা করতে হবে।

সুশীল বর্মন, জগাছা, হাওড়া

সৌরশক্তিই পথ

• বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে বিকল্প শক্তির পথ নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। পাশাপাশি, পৃথিবী-জুড়ে লক্ষ লক্ষ মোটর গাড়ি, ট্রাক, ট্রেন ইত্যাদি যানবাহন চালাতেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এখনও জীবাশ্ম জ্বালানিই প্রধান ভরসা। বিশেষত, মোটর গাড়ির ৯৮ শতাংশই পেট্রোলিয়াম-নির্ভর। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, চিন ও ভারতে বছরে মাথাপিছু তেলের ব্যবহার যথাক্রমে ২৫, ১৭, ১১, ২, ১ ব্যারেল। এই তেলের কারণে যে দহন হচ্ছে, তার ফলে পরিবেশ দূষণকারী গ্রিনহাউস গ্যাস, বিশেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইড নিষ্ক্রমণ এক জ্বলন্ত সমস্যা, যার মারাত্মক পরিণাম বিশ্ব উষ্ণায়ন।

এর প্রতিরোধের অন্যতম মুশকিল আসান হিসাবে সৌরশক্তি ব্যবহারের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই। ২০০৯ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গ্রিড-ভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২০ গিগাওয়াট। ২০১৫-র শুরুতে তা বেড়ে হয়েছিল ২০০ গিগাওয়াট। বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদক দেশটি জার্মানি। ভারতের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয় ২০০৯-এ পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে, যার উৎপাদন ক্ষমতা ২ মেগাওয়াট। ২০১৫ সালে সারা ভারতে এর মোট পরিমাণ ৪০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। আর ২০২২ নাগাদ ভারতে মোট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় এক লক্ষ মেগাওয়াট। কিছুটা বড় আকারে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়তে অনেকখানি জায়গা লাগে। গ্রাম বা শহরে একলপ্তে প্রয়োজন মতো জমির সমস্যা এড়াতে ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অব নিউ অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি রাজারহাটে পরীক্ষামূলক ভাবে দৈনিক ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে ২০১৫-র জানুয়ারিতে। গত পঞ্চাশ বছরে সৌরকোষ থেকে বিদ্যুৎ তৈরির প্রযুক্তি যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনই ব্যবহারও বেড়েছে।

এটা সত্যি যে, এখনও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ প্রচলিত উপায়ে উৎপন্ন বিদ্যুতের তুলনায় বেশি। আশার আলো দেখাচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতার ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারের পাঁচ গবেষক। তাঁদের আবিষ্কৃত ‘পেরোভস্কাইট’ যুক্ত সৌরকোষ ব্যবহার করে আগামী দিনে আমজনতা কম খরচে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে উৎসাহিত হবেন। স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে, আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে বিকল্প এই শক্তি হয়তো জীবাশ্ম জ্বালানি-কেন্দ্রিক প্রচলিত শক্তির জায়গা অনেকটাই কেড়ে নেবে।

নন্দগোপাল পাত্র, সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE