নামে কী আসে যায়
আকাশবাণী কলকাতা ‘ক’ ও ‘খ’ প্রচারতরঙ্গ ২১ মে থেকে নতুন নামে পরিচিত হয়েছে। এ দিন থেকে কলকাতা ‘ক’ প্রচারতরঙ্গের নাম ‘গীতাঞ্জলি’ ও কলকাতা ‘খ’ প্রচারতরঙ্গের নাম ‘সঞ্চয়িতা’। রবীন্দ্রনাথ তাঁর অমর সৃষ্টিগুলিকে সংকলনের জন্য যে নামগুলি নির্বাচন করে গিয়েছেন সেই সব নাম এ ভাবে অবিবেচকের মতো অপব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না। তাই কোনও রকম আলাপ-আলোচনা ব্যতিরেকে কর্তৃপক্ষের এমন অদ্ভুতুড়ে নামকরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এখন থেকে ‘গীতাঞ্জলি’তে কি শুধুই গান বাজানো হবে? আর ‘সঞ্চয়িতা’তে সকল পুরনো গান, নাটক, প্রতিবেদন ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকবে? নাকি সেই আগের ‘খ’ প্রচার তরঙ্গের মতোই হিন্দি-ইংরেজি অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবে? হুটহাট রবীন্দ্রনাথকে ঢাল হিসাবে সামনে রেখে এর পর যদি এফ এম প্রচারতরঙ্গগুলির নাম ‘শেষের কবিতা’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘যোগাযোগ’ ইত্যাদি রেখে আকাশবাণী অবাধ বাণিজ্যে কোমর কষে ময়দানে নেমে পড়ে, তখন বাঙালি কী করিবে?
সঞ্জীব রাহা, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
ধর্ম ও রাজনীতি
কৃষ্ণা বসু লিখেছেন, ‘রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে কখনও মিশিয়ো না’ (২০-৫) ধর্ম হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। ধর্মানুভূতি মানুষের অন্তরের গভীরে প্রোথিত থাকে। যদি এটিকে কোনও বিশেষ ব্যবস্থার আদলে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করা হয়, তা হলে একে ধ্বংস করা হবে। রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার মানে পক্ষপাতিত্ব এবং দলীয় আনুগত্য নয়। মানবিক মর্যাদা ও কল্যাণ, পরিবেশ উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়নিষ্ঠা এবং শান্তির ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে এমন সব রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে ধর্মের বক্তব্য থাকতে পারে; এবং বাস্তবে তা থাকা উচিতও বটে। ধর্ম হল নৈতিকতার উৎস, যা দায়িত্বপূর্ণ রাজনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, সহায়ক।
দূরদর্শী নেতাজি এটা বুঝেছিলেন বলেই তিনি ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে কখনও ভাবতে পারতেন না। ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে যে কোনও প্রকার নেতিবাচক রাজনীতির জন্য মানুষ ধর্মকেই দায়ী করতে পারে। কারও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হউক তা কোনও দেশেই কাম্য নয়। নেতাজির রাজনীতিতে দেশাত্মবোধ যে অগ্রগণ্য ছিল, তাঁর প্রার্থনা সংগীত অপছন্দ হওয়ার ঘটনা থেকেই তা স্পষ্ট।
সত্যিকারের ধার্মিক ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা দায়িত্ববোধ সহকারে রাজনীতি করেন, তাঁরা কোনও একক ধর্মের অনুগত হতে পারেন না। বিভেদের পরিবর্তে তাঁদের বিদ্যমান সম্প্রদায়সমূহ ও সমাজব্যবস্থাগুলোর মধ্যে ঐক্যের বাতাবরণ গড়ে তোলা উচিত৷ সেই হিসেবে নেতাজির আদর্শ আজও রাজনৈতিক নেতাদের পথপ্রদর্শক।
অমরনাথ কর্মকার, কলকাতা-১৫০
আমের নামে
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে আমের সম্পর্ক অনেকটা আমে-দুধে মাখামাখির মতো। যদিও আম শব্দটা মৈথিলি শব্দ। আমের নাম কৃষ্ণের শতনামকেও ছাড়িয়ে যাবে। বাল্মীকি আমকে ‘চুত’ বলেছেন, কালিদাস ‘আম্র’ আর বাৎসায়ন বলেছেন, ‘সহকার’। সংস্কৃত ভাষায় আমকে আম্র; বাংলায় আম; তামিলে মানকে এবং ইংরেজিতে ম্যাঙ্গো বলা হয়। বাংলার প্রাচীন গ্রন্থ শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে এই আম আমবু, ভারতচন্দ্রে আম, ঈশ্বর গুপ্ত’য় আঁব, মাইকেলে রসাল নামে অভিহিত হয়েছে। সম্রাট বাবর আমের প্রতি দুর্বল ছিলেন। বিহারের দ্বারভাঙার কাছে ‘লাখবাগ’ বাগানে তিনি এক লক্ষ আম গাছ লাগিয়ে ছিলেন। আইন-ই-আকবরি’তে নানা প্রজাতির আমের উল্লেখ আছে।
মুর্শিদাবাদের নবাবদেরও আম্রপ্রীতির পরিচয় মেলে। ‘কোহীতুর’ মুর্শিদাবাদের এক দুর্লভ প্রজাতির আম। কিছু কাল আগে আমি কোহীতুর-এর গাছ দেখি, তাতে আম যত্সামান্য ফলে। কিন্তু স্বাদ লা-জবাব। লালবাগে এক জনের বাগানে দেখেছি জগৎবিখ্যাত আম, আলফানসো। গৌড়ের জঙ্গলে ফজলি নামে এক ব্যক্তির উঠানে এক আমের গাছ ছিল যা মালদার কালেক্টর আবিষ্কার করেন। পরে তিনি এই আম খেয়ে মুগ্ধ হয়ে এর নাম দেন ‘ফজলি’। উত্তরপ্রদেশের হাজিপুরের বিখ্যাত আম হল, ল্যাংড়া। কথিত আছে, ল্যাংড়া ফকিরের আস্তানায় এই আম ফলেছিল বলে এমন নাম।
সিপাহি বিদ্রোহের আগে ডেভিস সাহেব কলমের সাহায্যে ‘বোম্বাই’ আমের উদ্ভাবন করেন। মিথিলার জমিদার কৃষ্ণদাস ঠাকুরের বাগানের বিখ্যাত আম ‘কিষাণভোগ’। এ ছাড়া নানা আমের মধ্যে গোলাপখাস, গোলাপভোগ, গঙ্গাসাগর, হিমসাগর ইত্যাদি আমও বেশ সুস্বাদু। কিন্তু বর্তমানে আমের এত সংকর প্রজাতি যে কোনটা আসল কোনটা নকল, কোনটা মিঠা, কোনটা টোকো, বোঝা বড় দায়!
ভাস্কর দেবনাথ, নবপল্লি, কারবালা রোড, বহরমপুর
টুসু সত্যাগ্রহ
মাতৃভাষা রক্ষার জন্য ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে একটি বাংলা ভাষা আন্দোলন হয়েছিল মানভূম-পুরুলিয়ায়। টুসু গানে এর প্রচার করা হত বলে এই আন্দোলনের আর এক নাম ছিল টুসু সত্যাগ্রহ। ১৯৩১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী মানভূম জেলার সদর মহকুমা পুরুলিয়ায় শতকরা ৮৭ ভাগ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বসবাস ছিল।
স্বাধীনতার পর তৎকালীন বিহার নিয়ন্ত্রিত মানভূম-পুরুলিয়ায় বাংলাভাষীদের তীব্র সমস্যার মুখে পড়তে হয়। ১৯৪৮ সালে এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় মানভূম জেলার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা হরফে সাইনবোর্ড দেওয়া যাবে না। বাংলাভাষীদের স্কুলে বাংলায় প্রার্থনা সংগীত চলবে না, তার পরিবর্তে ‘রামধুন’ আবশ্যিক। সরকারি বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনে বাংলা ভাষা চলবে না।
এই অন্যায়ের প্রতিবাদে আন্দোলন হয়। ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল অতুলচন্দ্র ঘোষ, নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত, লাবণ্যপ্রভা ঘোষ প্রমুখের নেতৃত্বে পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার পাকবিড়রা থেকে ১০ জন মহিলা সহ ১০০৫ জন পদযাত্রায় কলকাতা এসে আইন অমান্য করেন। ৭ মে তাঁরা কারাবরণ করেন। ১৩ দিন পর ২০ মে মুক্তি পান। তাই ২০ এপ্রিল অথবা ২০ মে আর একটা ভাষা আন্দোলন দিবস আমরা বাঙালিরা পালন করতে পারি না কি?
রামজান আলি, বর্ধমান
নিট অবিচার
ডাক্তারির অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা তথা নিট-এ পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষায় পরীক্ষা দেওয়া ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ‘অভিন্ন প্রবেশিকা’ পরীক্ষার নামে আঞ্চলিক ভাষার ভিত্তিতে ‘ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নপত্র’ হয়েছে! ছাত্রছাত্রী এবং বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত, ইংরেজি ও হিন্দি প্রশ্নপত্রের তুলনায় বাংলায় প্রশ্নপত্র আলাদা ও যথেষ্ট কঠিন হয়েছে। প্রশ্ন হল, ইংরেজি ও বাংলায় দুটি ভিন্ন মানের প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে একটি অভিন্ন মেধা তালিকা তৈরি করা কতখানি ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত? এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাংলায় পরীক্ষা দেওয়া ছাত্রছাত্রীদের মেধা তালিকার ওপরের দিকে আসতে না দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা নয়?
এর সমাধানসূত্র ভাবা যেতে পারে। এক, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ৮৫ শতাংশ ডাক্তারি সিটের জন্য যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়, তাদের সকলেরই ৭ মে-র ‘নিট’ পরীক্ষা সম্পূর্ণ রূপে বাতিল করে একটি অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া। দুই, সমগ্র দেশের ‘নিট’ বাতিল করে ফের অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া। কারণ, ‘নিট’-এর মূল লক্ষ্যই ছিল— এক দেশ, এক প্রশ্ন, এক মেধা তালিকা।
কাশীনাথ লক্ষণ, বাগনান, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy