Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

কৃষ্ণা বসু (‘রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে কখনও মিশিয়ো না’, ২০-৫) লিখেছেন, ‘আজকের এই ভেদাভেদ ও হানাহানির মধ্যে এ সব কথা আমরা কি এক বারও স্মরণ করতে পারি না?’

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ০০:০৫
Share: Save:

রাজনীতি আর ধর্ম মিশবেই

কৃষ্ণা বসু (‘রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে কখনও মিশিয়ো না’, ২০-৫) লিখেছেন, ‘আজকের এই ভেদাভেদ ও হানাহানির মধ্যে এ সব কথা আমরা কি এক বারও স্মরণ করতে পারি না?’ দেখা যাক নেতাজি যখন এই কথা বলেছিলেন তখন কী অবস্থা ছিল। ১৯৪৭-পূর্ব ভারতে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ইত্যাদি অনেক সমস্যা ছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল রাজনৈতিক তথা আর্থিক পরাধীনতা। দেশ ও দেশবাসীকে স্বাধীন করতে গেলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সব বাকি সব শক্তি দিয়ে লড়াই করাই ছিল বিবেচনাপ্রসূত কাজ। নেতাজি এই সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। ভারতে সব ধর্মাবলম্বীর ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন, ব্রিটিশবিরোধী বিদেশি শক্তিরও সাহায্য নিয়েছিলেন। মূল কথা হল নেতাজিকে ভিনদেশে ব্রিটিশ বিরোধী ভিনদেশের জন্য নিয়োজিত ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম করতে ধর্ম-জাত-বর্ণ ইত্যাদি ভেদনিরপেক্ষ সৈন্যদল গঠন করতে হয়েছিল।

আজকে অবস্থা ভিন্ন। স্বাধীন দেশে নাগরিকদের মধ্যে ভ্রাতৃভাব স্বীকৃতি তো আছেই। এ ছাড়াও আছে মৌলিক অধিকার, নির্দেশমূলক নীতি ও মৌলিক কর্তব্য ইত্যাদি। বড় কথা হল কিছু ধারা আছে যেগুলি পরির্বতনীয়। এই ভারতে ফের ধর্মতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই ধর্মতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। সংকীর্ণ মৌলবাদ যাকে নিয়ন্ত্রণ করছে দলীয় রাজনীতি, তার বিরুদ্ধে সব শক্তিকে এক করতে হবে। এইখানে দুটি ভাবনা আছে।

এক, এই ধর্মতন্ত্রের বিরুদ্ধে ধর্মহীন বা ধর্মবিযুক্ত রাজনীতি দিয়ে লড়াই করা যায় কি? ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান ও মানবতাবাদী দর্শন তো আমাদের আছে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, ধর্ম ও রাজনীতিও মিশবেই। এই মিশেলটাকে যথাসম্ভব ধর্মনিরপেক্ষ, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবতাবাদী করতে হবে।

দুই, সংকীর্ণ মৌলবাদী ধর্মতন্ত্রের কিন্তু আগ্রাসী মুনাফাকেন্দ্রিক অর্থব্যবস্থাও আছে। অর্থাৎ সমান্তরাল পথে অর্থনীতির বিপদ নিয়েও সমান গুরুত্ব দিয়ে সাবধান ও সতর্ক হতে হবে।

তাই রাজনীতি আর ধর্মের মধ্যে তখন মিশেল হয় না বলে কোনও দিনই মিশেল হবে না, এমন কোনও চরম নীতিবাক্য থাকতে পারে না। মিশেলটার আঙ্গিক, গঠন, চরিত্র সর্বোপরি উদ্দেশ্য কী, তা বিচার করাই সমকালের কর্তব্য।

শুভ্রাংশুকুমার রায় চন্দননগর, হুগলি

শাসানির ফল

বেসরকারি নার্সিংহোমগুলির উপর সরকারি শাসানি যে ভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নানা বিড়ম্বনার সামনে ফেলেছে তা নিঃসন্দেহে শিল্পহীন পশ্চিমবঙ্গের সবেধন চিকিৎসাশিল্পর প‍‌ক্ষে ভয়ঙ্কর (‘রোগী-সঙ্গীর... হাসপাতালই’, ২০-৫)। ঝাঁ চকচকে নার্সিংহোমে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা লাভের বিনিময়ে আজীবনের সঞ্চিত ধন হারানো ম‍ধ্যবিত্ত বাঙালির অসহায় প্রতিশোধস্পৃহাকে এ জাতীয় সংবাদ চরিতার্থ করছে। নার্সিংহোমগুলিকে এই প্রবণতার বলি আরও হতে হবে

স্বাস্থ্য কমিশনের নতুন নতুন ফরমানে জর্জরিতও হতে হবে তাদের (‘ছলছুতোয় টাকা... কমিশনের’, ২০-৫)। কিন্তু এত কিছুর পরেও প্রশ্ন একটা থাকবে, তা হল, এক দিকে রোগী ও তার পরিবার, অ‍ন্য দিকে সরকার, এই সাঁড়াশি আক্রমণ সহ্য করে মফস্সল ও জেলা শহরের ছোট ছোট নার্সিংহোমগুলি, যেগুলো এত দিন সরকারি পরিকাঠামোর খামতি খানিকটা হলেও ঢাকা দিত, তারা টিকে থাকবে কি? কারণ তারা সরে গেলে সরকারি পরিকাঠামোর উন্নতি হবে, এমন ভরসা তো নেই। পরিবর্তে বাজারের নিয়ম অনুযায়ী জোগানের অভাব চিকিৎসা পরিষেবাকে আরও মহার্ঘ করে তুলবে। সুতরাং, যদি সত্যি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি করতে হয় তা শুরু করতে হবে সরকারের নিজের ঘর থেকে। সরকারি পরিষেবা যদি উন্নত হয়, তবে বেসরকারি পরিষেবা নিজের অস্তিত্বের তাগিদেই উন্নত হবে। নতুবা হাততালি কুড়োতে গিয়ে এই সরকার আমাদের হয়তো আরও বড় বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

অপূর্ব মানিক দত্ত কলকাতা-৭৮

বোকা বানানো

বাসন্তী ছিল বামফ্রন্টের শরিক আরএসপি-র ঘাঁটি। তাদের আমল থেকেই উন্নয়নে ভাটা পড়েছিল। আর এই অনুন্নয়নকেই হাতিয়ার করে এখানে তৃণমূলের পঞ্চায়েত, বিধায়ক, সাংসদরা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। মানুষও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু সেই উন্নয়ন কই? যে উন্নয়নের কথা ভোটের আগে সাংসদ, বিধায়করা বলেছিলেন!

বাসন্তীতে ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হয়। কিন্তু এখানে দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছে বিদ্যুতের সমস্যা। দিনে ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎই থাকে না। যেটুকু সময় থাকে তা-ও আবার লো ভোল্টেজ। ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ সবাইকে নাকাল হতে হয়। বাসন্তী ব্রিজ-সহ এই এলাকার রাস্তায় নেই কোনও আলোর ব্যবস্থা। এখানে রয়েছে পানীয় জলের সংকট। অথচ রয়েছে প্রায় ২ লক্ষ লিটার জল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জলের ট্যাঙ্ক, রয়েছে জলের পাইপ। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় এগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। চালু হয়নি কোনও সরকারি বাস পরিষেবা। রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা। বাসন্তী বাজার থেকে পুরন্দরের মাতলা নদী বাঁধ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার পিচের রাস্তা তৈরি হয়েছিল ২০ বছর আগে। সেই রাস্তা আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে তৈরি হয়েছে কৃত্রিম জলাশয়, বেরিয়ে পড়েছে পূর্বের ইটের রাস্তা। ভ্যান রিকশা চলাচল তো দূরের কথা মানুষকে পায়ে হেঁটে এই ৩ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে হোঁচট খেয়ে পড়তে হয়। গুরুতর অসুস্থ মানুষকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়ার আগেই রাস্তায় প্রাণ হারাতে হয়।

এই রাস্তার পাশেই রয়েছে প্রায় দু’হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রীর পাঠ কেন্দ্র বাসন্তী হাই স্কুল, পুরন্দর প্রাইমারি স্কুল, রয়েছে তিনটেরও বেশি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। ছাত্রছাত্রীদের এই নরক পথ পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বর্তমান সরকারের পঞ্চায়েতে, বিধায়ক, সাংসদরা ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই রাস্তা মেরামতির, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পানীয় জল, বিদ্যুতের সমস্যা মেটাবেন, রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করবেন। কোথায় কী?

এ দিকে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা গরিব মানুষদের ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকায়, মিশন নির্মল বাংলর শৌচাগারের টাকায় ভাগ বসাচ্ছেন। বহু মানুষ ইন্দিরা আবাস যোজনার শুধু প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন, দু’বছর হয়ে গেলেও আজও ঘরের জন্য বরাদ্দ পুরো টাকা পাননি। যে উন্নয়নের কথা ভোটের আগে বলেছিলেন কোথায় সে উন্নয়ন? মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পিছিয়ে থাকা সুন্দরবনের মানুষদের বোকা বানিয়ে অন্ধকারে রাখা
বন্ধ হোক।

মামনি দাস বাসন্তী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা

ইদানীং বেশ কিছু খবরের কাগজ, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে দুটো শক্তিধর দেশ একে অপরকে পরমাণুর হুমকি দিচ্ছে। টিভিতে দেখছি একটি দেশ অপর দেশে রাসায়নিক হামলা চালাচ্ছে। হাসপাতাল, স্কুল পর্যন্ত বোমার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ছোট বাচ্চারাও হিংস্রতার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নেতারা সাধারণত এই ধরনের আক্রমণে হতাহত হন না। সাধারণ মানুষদের উপরই কোপ পড়ে। এই ভাবেই হয়তো আমরা আরও বড় ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছি। বুঝতে পারছি না যে, যুদ্ধ কখনওই কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না, বরং তা আরও বড় বিপদের সম্মুখীন করে তোলে। সমস্ত রাষ্ট্রনেতাদের উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা আর অবিলম্বে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করা। নয়তো শেষের সেই দিনটা আসতে বেশি বাকি নেই।

দিব্যরূপ চৌধুরী কলকাতা-৫৯

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE