Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

এ বছরের বর্ষার সূচনায় বাদল মেঘের ঘনঘটাপূর্ণ বর্ষণমুখর এক প্রভাতে গ্রামের পাড়ার প্রায় বুজে আসা একটি ডোবায় অনেক দিন পরে কিছু ব্যাঙের দেখা পেলাম! দেখে আনন্দের সঙ্গে কিছুটা দুঃখ বোধ হল; কেন না, ব্যাঙেদের সে নাদুসনুদুস সুস্বাস্থ্য কোথায়! ডাকেরও সে তেজ নেই!

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ডাকে সে তেজ নেই

বাংলায় আষাঢ়স্য প্রথম দিবসের প্রতীক হল ‘ব্যাঙের ডাক’। আগে পাড়ার ডোবা-খানা-খন্দে মেঘলা সকালে ব্যাঙের ডাকের জলসা অনুষ্ঠিত হওয়া দেখতাম। বর্ষার ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ার সময়কালেই তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। স্ত্রী ব্যাঙ ডোবার ঘোলা জলে ডিম ছাড়ে; যা, জলে ভাসমান পুং ব্যাঙের স্পার্মের সঙ্গে মিলিত হয়ে নিষিক্তকরণের মাধ্যমে অজস্র ‘শিশু ব্যাঙ’ অর্থাৎ ‘ব্যাঙাচি’-র জন্ম দেয়। উভচর এই প্রাণিটির জীবনচক্রের প্রাথমিক দশাগুলিতে নব আষাঢ়ের বৃষ্টির জমা জল অপরিহার্য। বাল্যে দল বেঁধে সুদৃশ্য সোনালি কাঁচাহলুদ বর্ণ ব্যাঙ দম্পতিদের গলা ফুলিয়ে ডাকার দৃশ্য উপভোগ্য ছিল বটে। এখন গ্রামের বেশির ভাগ ডোবাই মাটি ভরাটের দৌরাত্ম্যে বিলুপ্ত। সুন্দর সুঠামদেহী সোনালি ব্যাঙেরা ঠিকানা হারিয়েছে।

এ বছরের বর্ষার সূচনায় বাদল মেঘের ঘনঘটাপূর্ণ বর্ষণমুখর এক প্রভাতে গ্রামের পাড়ার প্রায় বুজে আসা একটি ডোবায় অনেক দিন পরে কিছু ব্যাঙের দেখা পেলাম! দেখে আনন্দের সঙ্গে কিছুটা দুঃখ বোধ হল; কেন না, ব্যাঙেদের সে নাদুসনুদুস সুস্বাস্থ্য কোথায়! ডাকেরও সে তেজ নেই! ডোবায় যা জল আছে, তার চেয়ে বর্জ্য প্লাস্টিক-পলিথিনের পরিমাণটাই বেশি! শুধু মানুষের নয়, সর্বনাশা ‘প্লাস্টিক দূষণ’ আজ ব্যাঙেদেরও অসুস্থতা আর অস্বাস্থ্যের কারণ! এই দূষণ সম্পর্কে সকলে সচেতন না হলে বিপন্ন হবে প্রকৃতি তথা সমগ্র পরিবেশ। হারিয়ে যাবে প্রকৃতির অনিন্দ্যসুন্দর সৃষ্টি। সেই সঙ্গে নষ্ট হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও।

সাবির চাঁদ

রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ

বাঙালি-বিদ্বেষ

শুভমানস ঘোষ লিখেছেন, তিনি সম্প্রতি সেলুলার জেলে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ শো’টি দেখেছেন (‘উল্লাসকর দত্ত’, সম্পাদক সমীপেষু, ১৪-৬)। ওই শো’তে বলা হয়েছে ‘তিনি (উল্লাসকর দত্ত) জেলের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচবার জন্য পাগল সেজে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন বন্দিদের প্রতি সহৃদয় এক ইংরেজ ডাক্তার।’

প্ৰথমেই জানাতে চাই, বিপ্লবী উল্লাসকর সম্পর্কে যা ওই শো’তে বলা হয়েছে তা সর্ব্বৈ মিথ্যা। তাঁর সহবন্দি উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নির্বাসিতের আত্মকথা’য় লিখেছেন জেলে প্রচণ্ড অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাঁদের জেলের বাইরে কাজ করতে পাঠানো হয়। মাটি কাটা, কাঠ কাটা, রাজমিস্ত্রির কাজ। আট ঘণ্টা রোদে পুড়ে, জলে ভিজে কাজ করতে হত। আন্দামানে বছরে সাত মাস বর্ষা। জেলে তবু আশ্রয় ছিল। এখানে তাও নেই। সামান্য খোরাকি, তাও চুরি হয়ে বাইরে বিক্রি হয়ে যায়। জঙ্গলে জোঁক ও পোকা। উপেন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘রোগীর জন্য জেলের বাহিরে চারিটি হাসপাতাল; সেগুলি বাঙালী Asst. Surgeon-এর তত্ত্বাবধানে বলিয়া চীফ কমিশনার কর্নেল ব্রাউনিং আদেশ দিলেন যে,আমাদের অসুখ হইলে আমরা সে সমস্ত হাসপাতালে যাইতে পারিব না; আমাদিগকে জেলে ফিরিয়া আসিতে হইবে। জ্বরে ধুঁকিতে ধুঁকিতে বিছানা ও থালা-বাটি ঘাড়ে করিয়া পাঁচ-সাত-দশ মাইল হাঁটিয়া আসা বড় সুবিধার কথা নয়। উল্লাসকরকে রৌদ্রে ইট তৈয়ার করিতে দেওয়া হইয়াছিল। সেখানকার হাসপাতালে যিনি জুনিয়র মেডিক্যাল অফিসার, তিনি বলিলেন যে, উল্লাসকরের রৌদ্রে কাজ করা সহ্য হইবে না। কিন্তু বাঙালী ডাক্তারের কথা গোরা Overseer সাহেব গ্রাহ্য করিবেন কেন? উল্লাসকরকে সেই কার্যেই বহাল রাখা হইল। ফলে তিনি কাজ করিতে অস্বীকৃত হইয়া পুনরায় জেলে ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন যে, শুধু পীড়নের ভয়ে কাজ করিতে হইলে মনুষ্যত্ব সঙ্কুচিত হইয়া যায়। সাজার ভয়ে কাজ করিতে তিনি রাজী নহেন। তাঁহার সাত দিন দাঁড়া হাতখড়ির ব্যবস্থা হইল। কিন্তু সাত দিন আর পূর্ণ হইল না। প্রথমদিনই বেলা ৪।।০ টার সময় হাতকড়ি খুলিতে গিয়া পেটি অফিসার দেখিল যে উল্লাসকর জ্বরে অজ্ঞান হইয়া হাতকড়িতে ঝুলিতেছেন।... রাত্রে শরীরের উত্তাপ ১০৬ ডিগ্রী পর্যন্ত চড়ে। প্রাতঃকালে দেখা গেল যে, জ্বর ছাড়িয়া গিয়াছে, কিন্তু উল্লাসকর আর সে উল্লাসকর নাই। আসন্ন বিপদের মধ্যেও যিনি চিরদিন নির্বিকার,তীব্র যন্ত্রণায় যাঁহার মুখ হইতে কখনও হাসির রেখা মুছে নাই, তিনি আজ উন্মাদরোগগ্রস্ত’’ (সমগ্রন্থ, পৃ ৯৪-৯৬)।

উল্লাসকরকে ১৯১৩ সালে মাদ্রাজ জেলে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হন। মুক্তি পান ১৯২০ সালে। ১৯৩১-এ আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ১৮ মাস কারারুদ্ধ ছিলেন।

ওই সময় জেলের ভিতর সাভারকরদের মনোভাব কী ছিল? উপেন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘‘মারাঠী নেতাদের মতে যেহেতু বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম্’ গানে সপ্তকোটি কণ্ঠের কথা আছে, ত্রিশ কোটি কণ্ঠের কথা নাই, এবং যেহেতু বাঙালী কবি লিখিয়াছেন ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ সেইহেতু বাঙালীর জাতীয়তাবোধ অতি সঙ্কীর্ণ। একজন আর্যসমাজী নেতা বাঙালী-বিদ্বেষ বশত একদিন বলিয়াছিলেন যে, যেহেতু রামমোহন রায় এদেশে ইংরাজী শিক্ষা প্রচলন করিবার জন্য ইংরাজ গভর্নমেন্টকে পরামর্শ দিয়াছিলেন সেহেতু তিনি দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক। এরূপ যুক্তির পাগলা-গারদ ভিন্ন আর অন্য উত্তর নাই। মারাঠী নেতাদের মনে এই বাঙালী-বিদ্বেষের ভাবটা কিছুটা বেশী প্রবল...। ভারতবর্ষে যদি একতা স্থাপন করিতে হয় তাহা হইলে তাহা মারাঠার নেতৃত্বেই হওয়া উচিত— ইহাই তাঁহাদের মনোগত ভাব। হিন্দুস্থানী ও পাঞ্জাবীরা গোঁয়ার, বাঙালী বাক্যবাগীশ, মাদ্রাজী দুর্বল ও ভীরু— একমাত্র পেশোয়ার বংশধরেরাই মানুষের মতো মানুষ— নানা যুক্তিতর্কের ভিতর দিয়া এই সুরই ফুটিয়া উঠিত।’’ ‘নির্বাসিতের আত্মকথা’ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘আশ্চর্য বই হয়েছে। এরকম বই বাংলাতে কম পড়েছি।’ আশা করি ঠিক ইতিহাস এই বইটি থেকে পাওয়া যাবে।

শান্তনু দত্ত চৌধুরী

কলকাতা-২৭

লজ্জা হয়

ভাগীরথী এক্সপ্রেস ট্রেনে বহরমপুর থেকে শিয়ালদহ যাচ্ছি। রিজার্ভেশন টিকিট ছিল না বলে একবারে সামনের দিকে অর্থাৎ ঠিক ইঞ্জিনের পিছনের কামরায় উঠেছি। কামরাটির প্রথমে কিছুটা জায়গা লাগেজ স্পেস, তার পর কিছুটা জায়গা প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত, তার পর সাধারণ যাত্রীদের বসার জায়গা, তার পর আবার লাগেজ স্পেস। আমাকে দাঁড়িয়েই যেতে হচ্ছিল। ট্রেন যখন বেথুয়াডহরি স্টেশনে, তখন বয়স্ক প্রতিবন্ধী এক মানুষ আমাদের কামরায় উঠলেন। তিনি ওঠামাত্র কামরার সব ডেলি প্যাসেঞ্জার তাঁকে বসার ব্যবস্থা না করে দিয়ে জ্ঞান দেওয়া শুরু করল, ‘কাকু পাশেই হ্যান্ডিক্যাপড্ কামরা আছে। ওটাতে চলে যান। বসার জায়গা পেয়ে যাবেন।’ ভদ্রলোক বললেন, ‘জানি বাবা, কিন্তু পুলিশ নামিয়ে দিল।’ ‘কেন?’ ভদ্রলোক বললেন, ‘কী বলব বাবা, আমার হ্যান্ডিক্যাপড্ সার্টিফিকেট নেই যে।’ পুলিশ আর ডেলি প্যাসেঞ্জারদের ব্যবহার দেখে লজ্জা হচ্ছিল। কামরার ভিতরের কোনও যাত্রীকে সহানুভূতি দেখিয়ে ভদ্রলোককে বসার জায়গা দিতে দেখলাম না। বরং উপদেশ দিতে শুনলাম, ‘কৃষ্ণনগরে ট্রেন অনেক ক্ষণ দাঁড়াবে। তখন আপনি জেনারেল কামরায় চলে যাবেন।’ তা-ই হল। ট্রেনটি যখন কৃষ্ণনগর স্টেশনে ঢুকল, তিনি নেমে গেলেন।

সঞ্জয়কুমার মিশ্র

বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

খালের অন্ত্যেষ্টি

ঠাকুরপুকুর থেকে বাখরাহাট যাওয়ার রাস্তায় গত ১০-১৫ বছর আগে পর্যন্ত জল যাওয়ার খাল দেখা যেত। কিন্তু মহাপুরুষদের দৌলতে সেই খালগুলি বুজিয়ে সেখানে ইমারতের জলসা বসেছে। আর খালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছে একের পর এক। আর বেশি দিন নেই যখন আমরা নৌকা নিয়ে বের হব। প্রশাসনের ভ্রুক্ষেপ নেই। এখনও পর্যন্ত যে খালগুলো জীবিত আছে, তারা যেন আমাদের জন্য জীবিত থাকে, সে অনুরোধ রইল।

সৌগত মণ্ডল

ঠাকুরপুকুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE