Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

কিছু দিন আগেই পরিবেশ দিবস চলে গেল। পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে অতিরিক্ত খরার প্রকোপে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, জনজীবন হয়ে পড়ছে বিপন্ন।

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০০:১৯
Share: Save:

কল্যাণীতে সবুজ ছোঁয়া

গত‌ ছ’বছর কল্যাণীতে থাকার অভিজ্ঞতায় বুঝেছি, এখানে প্রাণ ধারণের অফুরন্ত অবকাশ রয়েছে। কিছু দিন আগেই পরিবেশ দিবস চলে গেল। পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে অতিরিক্ত খরার প্রকোপে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, জনজীবন হয়ে পড়ছে বিপন্ন। এমতাবস্থায় ‘গাছ লাগাও পৃথিবী বাঁচাও’-এর চেয়ে অমৃতবাণী আর কিছু হতেই পারে না। সেখানে কল্যাণীর মতো শহরে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। প্রতিটি বাড়ির সামনে কিছুটা জায়গা বরাদ্দ শুধু গাছেদের জন্য। সবুজ প্রকৃতির এমন মেলবন্ধন হোক প্রতিটি শহরেই। কর্পোরেশন থেকে বাধ্যতামূলক করা উচিত প্রতিটি বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সামনে কিছুটা জায়গায় যেন গাছেরা স্থান পায়।

আবু তাহের ভগবানগোলা, মুর্শিদাবাদ

থামল ‘ডি সি’

ধানবাদ-চন্দ্রপুরা রেল লাইন চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার খবরটা পড়ে নস্ট্যালজিয়ায় আক্রান্ত হলাম (‘চন্দ্রপুরা শাখায় বন্ধ...’, ১৩-৬)। সালটা ১৯৭৬। চাকরি নিয়ে ডিভিসি-র চন্দ্রপুরা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জয়েন করেছি। পাহাড়, জঙ্গল ঘেরা আদিবাসী-অধ্যুষিত গ্রাম ছিল চন্দ্রপুরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব।

সেই সময় চন্দ্রপুরার সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল আদিম যুগের মতো। বাড়ির সঙ্গে খবর আদানপ্রদানের একমাত্র মাধ্যম ছিল ডাক বিভাগ। সব কিছু ঠিকমত চললেও চিঠি আদানপ্রদানে কম করে তিন-চার সপ্তাহ লাগত। নিকটবর্তী শহর, মানে ধানবাদের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ধানবাদ-চন্দ্রপুরা প্যাসেঞ্জার, চলতি নাম ডি সি। সকালে চন্দ্রপুরা থেকে যাত্রা করে সন্ধ্যায় ধানবাদ থেকে ফিরত। সারা যাত্রাপথটা ছিল কয়লাখনি অঞ্চল দিয়ে। ট্রেনের অবস্থাও ছিল সঙ্গিন। ছারপোকা অধ্যুষিত খান পাঁচ-ছয় লজ্‌ঝরে কামরা। পঁচিশ-ত্রিশ কিমির যাত্রা শেষ করতে লাগত তিন থেকে চার ঘণ্টা বা তারও বেশি। সকালে যদিও বা ঠিকঠাক ধানবাদ পৌঁছে যেত, সন্ধ্যায় ফেরার সময় ছিল এক বিভীষিকার যাত্রা।

স্টেশনগুলোর অবস্থাও ছিল তথৈবচ। কামরার জানলা দিয়ে বাইরের ঘন অন্ধকারের দিকে তাকালে চোখে পড়ত জায়গায় জায়গায় মাটির ফাটলের মধ্যে দিয়ে আগুনের শিখা আর ধোঁয়া। সেটা অবশ্য কেউই গুরুত্ব দিত না। শুধু জানতাম, কয়লা খনি থেকে আগুন বেরোচ্ছে। সেটা যে কী ভয়াবহ হতে পারে, সে সম্পর্কে তখন কোনও ধারণাই ছিল না। আজ অনেক বছর হল চন্দ্রপুরা ছেড়ে চলে এসেছি। কিন্তু মন বাঁধা পড়ে আছে সেই চল্লিশ বছর আগের অবস্থায়।

সুব্রত ঘোষ বালির মোড়, বেলতলা, হুগলি

তিনটি অর্থ

‘জীবনসূত্র’ নামক সম্পাদকীয়তে (২৯-৫) ঈশোপনিষদের শ্লোকাংশের অনুবাদ করা হয়েছে। ‘ত্যাগের দ্বারা ভোগ কর।’ সংস্কৃত শ্লোকাংশটি হল— ‘তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা’। এই শ্লোকাংশটির তিনটি অর্থ আছে। সব ক’টি অর্থই ব্যাপক ও গভীর। রবীন্দ্রনাথ এই তিনটি অর্থকেই মান্যতা দিয়েছেন।

ঈশোপনিষদের পূর্ণ শ্লোকাংশটি নীচে দেওয়া হল— ‘তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ ধনম্।’ শ্লোকটির প্রথম অর্থ— ত্যাগের দ্বারা ভোগ কর। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘শান্তিনিকেতন’ গ্রন্থে ‘বিশ্ববোধ’ প্রবন্ধে এই অর্থ গ্রহণ করেছেন।

শ্লোকটির দ্বিতীয় অর্থ— ঈশ্বর স্বেচ্ছায় তাঁর নিজের সম্পত্তির যে অংশ আমাদের জন্য ত্যাগ করেছেন, সেইটুকু অংশ নিয়ে আমাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করা উচিত। এখানে, তেন= সেই ঈশ্বর কর্তৃক; ত্যক্তেন= ত্যাগপূর্বক প্রদত্ত বস্তুসমূহ দ্বারা; ভুঞ্জীথা= ভোগের কার্য নির্বাহ করা উচিত। এই অর্থটি শ্রীগীতায় গ্রহণ করা হয়েছে। এই অর্থটি রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ধর্ম’ গ্রন্থের ‘ততঃ কিম্’ প্রবন্ধে গ্রহণ করেছেন।

তৃতীয় অর্থটি শঙ্করাচার্য ব্যাখ্যা করেছেন, ত্যাগের দ্বারা (আত্মাকে) পালন বা রক্ষা করা উচিত। অর্থাৎ এখানে সংযমের কথাই বলা হয়েছে। এই অর্থটি শঙ্করাচার্য তাঁর নানা গ্রন্থের নানা স্থানে বৈদিক তত্ত্ব ব্যাখ্যায় গ্রহণ করেছেন। ভুঞ্জীথার অর্থ পালনীয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘পথের সঞ্চয়’ গ্রন্থে ‘অন্তর বাহির’ প্রবন্ধে অর্থটি গ্রহণ করে বলেছেন— ‘সংযমই অন্তরলোকে প্রবেশের সিংহদ্বার। ...বাহ্য উপকরণকে সংক্ষিপ্ত করিয়া সংযমকে আশ্রয়’ করণীয়।

পরিশেষে জানাই, শ্লোকটি শুক্ল-যজুর্বেদের চল্লিশতম অধ্যায় থেকে ঈশোপনিষদে গৃহীত হয়েছে। ‘ভুঞ্জীথা’ শব্দটি ‘ভুজ’ ধাতু থেকে আসছে। ‘ভুজ’ ধাতুর অর্থ পালন করা, ভোগ করা প্রভৃতি।

শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য কলকাতা-৩৯

অদূরদর্শিতা

নন্দগোপাল পাত্র সৌরশক্তির বিকাশ সম্বন্ধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেশ করেছেন (‘সৌরশক্তিই পথ’, সম্পাদক সমীপেষু, ২২-৪)। দুঃখের বিষয়, ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে ‘প্রথম’ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর আর কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। ফলে ওডিশা ও বিহার অনেক এগিয়ে গিয়েছে।

লেখক ‘পেরোভস্কাইট’ দ্বারা সৌরকোষ নির্মাণ ও ‘আবিষ্কার’-এর উল্লেখ করেছেন। এই কম্পাউন্ড প্রথম প্রস্তুত করেন মিৎজি ২০০১ সালে এবং সৌরকোষ তৈরির উপযোগিতা প্রমাণ করে দেখান চার জাপানি (মিয়াসাকি ও অন্যান্যরা) গবেষক ২০০৯ সালে। তাঁদের সৌরকোষের কার্যক্ষমতা ছিল মাত্র ৩.৪ শতাংশ। তবুও এই ফল সারা পৃথিবীতে সাড়া জাগানোর ফলে ২০১৬ সালে কার্যক্ষমতার উন্নতি ২০ শতাংশের ওপরে পৌঁছে গেছে। কিন্তু এর অসুবিধা আছে— প্রথমে কয়েক ঘণ্টা, এখন কয়েক দিনের মধ্যে বাতাস ও আর্দ্রতার সংস্পর্শে এসে ‘পেরোভস্কাইট’ সৌরকোষের কর্মক্ষমতা বহু গুণ কমে যায়। অথচ সিলিকন কেলাসের দ্বারা নির্মিত সৌরকোষের আয়ু এখন ২৫ বছরের বেশি প্রমাণিত। সুতরাং সিলিকন সৌরকোষ পৃথিবীতে ৮৮ শতাংশর বেশি বাজার দখল করেছে। আগামী দশ বছরে অন্তত তার বিকল্প নেই।

দুঃখের বিষয়, ১৯৮০-র দশকে যখন ভারতে সৌরকোষের প্রযুক্তি কোন পথে যাবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছিল, তখন সস্তা প্রযুক্তির খোঁজে সিলিকন কেলাসের বদলে সরকারি দফতর ‘অকেলাসিত’ সিলিকন সৌরকোষ বেছে নেয় বিশেষজ্ঞের মতামত অগ্রাহ্য করে। এই সৌরকোষের কর্মক্ষমতা তখন মোটে ৬ শতাংশ ছিল, এখন মেরেকেটে ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে। তুলনায় সিলিকন কেলাসের সৌরকোষ গবেষণাগারে ২৬ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারে ১৮-২০ শতাংশ পাওয়া সহজলভ্য। অকেলাসিত সিলিকন-এর আর এক প্রতিবন্ধক, সূর্যের আলোয় এর কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। প্রতিবন্ধকতা যদিও খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে, কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায়নি।

কেলাস সিলিকনের সৌরকোষ তৈরি করতে লাগে পরিশুদ্ধ বালি বা কোয়ার্জিট পাথর, যার অভাব ভারতে নেই। তিরিশ বছর আগের অদূরদর্শিতার ফল— ভারতে অর্ধপরিবাহী সিলিকন তৈরির পরিমাণ শূন্য। চিন এখন এই বিষয়ে অগ্রণী। ভারতের সৌরকেন্দ্রগুলি সম্পূর্ণ ভাবে এখন চিনা প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। অথচ এটা ইলেকট্রনিক-এর যুগ, মোবাইল ফোন থেকে কম্পিউটার— সবই সিলিকন চিপ-এর ওপর নির্ভরশীল। আজকাল প্রচলিত প্রযুক্তি ছাড়া অনেক নতুন উপায়ে সিলিকন কেলাসের উৎপাদন সফল হয়েছে। আইআইটি খড়্গপুর প্রায় কুড়ি বছরের প্রচেষ্টায় ধানের তুষ থেকে সিলিকন কেলাস উৎপাদন সফল ভাবে দেখিয়েছে। কোনও বিদেশি যন্ত্রাংশ বা মালমশলা ব্যতিরেকে স্বল্প খরচে এই কাজ সফল হয়েছে। ক্যালিফর্নিয়ায় একটি ছোট শিল্পসংস্থা তুষ থেকে সিলিকন প্রযুক্তিতে হাত দিয়েছে। সিলিকন প্রযুক্তিতে এ দেশে সরকারি অনীহা বোধগম্য নয়।

ডি এন বসু প্রাক্তনী আই আই টি খড়্গপুর ও আই আই এস সি বেঙ্গালুরু

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE