Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

কিন্তু স্মৃতি পোড়ে না। এখনও মনের রের্কডে পর পর লাইন হয়ে গেঁথে রয়েছে। খবরটা পড়ে অনেক বছর পর কেমন যেন পুরনো রেকর্ডটা এ দিন সকালে নিজের মনের গ্রামোফোনে বেজে উঠল।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

শৈশবের কার্শিয়াংটা

সকালে চা খেতে গিয়ে কাগজটা দেখে চমকে উঠেছি। ‘পুড়ে ছাই কার্শিয়াঙের প্রাচীন হল’! বুঝলাম, পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে আমার স্কুলও। রাজরাজেশ্বরী কিন্ডার গার্টেন। আমার জীবনের প্রথম স্কুল।

কিন্তু স্মৃতি পোড়ে না। এখনও মনের রের্কডে পর পর লাইন হয়ে গেঁথে রয়েছে। খবরটা পড়ে অনেক বছর পর কেমন যেন পুরনো রেকর্ডটা এ দিন সকালে নিজের মনের গ্রামোফোনে বেজে উঠল।

কার্শিয়াঙের নয়া কামানপাড়ার রেল কোয়ার্টার্সে আমরা থাকতাম। ১৯৫৪-’৫৫ সাল। পাহাড়ের গা ঘেঁষে এঁকেবেঁকে উঠে গিয়েছে রাস্তা। পাশেই সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা উঠে গেলেই চার্চ। সবে ব্রিটিশ আমল শেষ হয়েছে। প্রচুর অ্যাংলো ইন্ডিয়ান তখনও রয়ে গিয়েছেন। শুনেছি তাঁরা পরে ওখানেই পাকাপাকি ভাবে থেকে যান। ওই রাস্তাটা উঠে গিয়েছে ডাওহিল বরাবর।

পাহাড়ের গা দিয়ে খাঁজকাটা একটি সিঁড়ি দিয়ে অনেকটা ঘুর পথেই যেতে হত স্কুলে। তর তর করে ১৬০টি ধাপ ভেঙে উপরে উঠতে গিয়ে অনেক দিন মাঝপথে হাঁপিয়ে উঠতাম। বাড়ির বড়রা এক রকম জোর করেই কোনও কোনও দিন পৌঁছে দিতেন স্কুলে।

এক বার স্কুলে যাচ্ছি, সেই সময় ওই পাহাড়ি সিঁড়ি দিয়ে এক দিদিমনিও উঠছেন স্কুলে যাওয়ার জন্য। কোনও ভাবে শাড়িতে পা বেঁধে তিনি গড়িয়ে গিয়েছিলেন অনেক নীচে। সে এক রক্তারক্তি কাণ্ড। এ দিন সকালে কেন জানি না চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই ‘শিউলি’ দিদিমনির মুখটাও।

কার্শিয়াঙে খুব বৃষ্টি পড়ে। জামা কাপড় শুকোতে চায় না। বাড়িতে মা কাঠকয়লার উনুনের উপরে বড় বড় বেতের টুকরি বসিয়ে জামাকাপড় শুকনো করে দিতেন। ওই বেতের টুকরি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হত কমলালেবু। এক দিন প্রচণ্ড ঠান্ডা। আমার সোয়েটার শুকনো হয়নি। কিন্তু স্কুল কামাই করা যাবে না। বাধ্য হয়ে মায়ের কালো রঙের একটি অলেস্টার পরানো হয়েছে আমায়।

কিন্তু সে কি আমার হয়? সারা শরীর ঢেকে সেটা নেমে গিয়েছে প্রায় পা পর্যন্ত। ওই ভাবেই আস্তে আস্তে পাহাড় কেটে উঠছি দাদার হাত ধরে। আচমকা চার্চের গেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছিল দুটি প্রকাণ্ড অ্যালসেশিয়ান। ওই রকম কালো আলখাল্লা দেখে তারা আমায় তাড়া করে। ভয়ে দাদার হাত ছাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে দৌড়েছিলাম। যেন প্রাণ বাঁচানোর দৌড়। হঠাৎ বুঝলাম কেউ আমায় দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ফেলল। চোখ খুলে দেখি, চার্চের এক জন বিশপ। আর তাঁকে দেখে দুই মূর্তিমানও পাহাড়ের খাঁজে বসে গিয়েছে। বুক ভরে শ্বাস নিলাম। আর দাঁড়াইনি। সোজা বাড়িতে।

এই রোদ। এই বৃষ্টি। ঠিক যেমনটা হয় কার্শিয়াঙে। সকালে চা খেতে খেতে কাগজের এই খবরটাই মনের রের্কডের উপরে পিনটা বসিয়ে দিল। আর তখনই ভেসে উঠছে রাস্তার ধার-ঘেঁষা তেজপাতা গাছের সারি, বড় বড় ইউক্যালিপটাস, ঝাউ, পাইন। আর একটু উঠলেই কার্শিয়াং স্টেশন। স্মৃতির কুয়াশায় ভেসে চলেছি রেললাইন দিয়ে। সেই স্কুল ঘর। ছোট্ট ছোট্ট বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল।

আনন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়
ব্যারাকপুর

এবং সত্যজিৎ

উত্তমকুমার ‘নিশীথে’ ছবিটি ১৯৪৬ সালে করেননি (‘বাংলা ছবির প্রবীণতম’, রবিবাসরীয়, ৭-৫)। ১৯৪৬-এ তিনি ছায়াছবিতেই আসেননি। ‘নিশীথে’ উত্তমকুমার করেছিলেন তার অনেক পরে। উত্তমকুমারের মুখে আলো ফেলা নিয়ে যে বিবাদের কথা বলা হয়েছে, সেটা যথাযথ। সত্তরের দশকের আগে কোনও এক শুক্রবার খবরটি এসেছিল। রামানন্দ সেনগুপ্ত সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় মহাশয়ের অবজ্ঞার খবরটি চিত্তাকর্ষক। বর্তমান নিবেদকের কিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা যায়। ১৯৭৬-এ একটি সরকারি ব্যাংকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য সত্যজিৎ রায় মহাশয়কে অনুরোধ করা হয়। উনি তা পত্রপাঠ নাকচ করেন। অত বড় মাপের মানুষ সেটা করতেই পারেন। কিন্তু প্রত্যাখ্যানের ভাষা কিছুটা হতাশাজনক ছিল।

স্বপনকুমার ঘোষ
কলকাতা-৩৪

নামান্ত

‘বিপান্ত’ করে না হয় সিনেমার বাপান্ত হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। তবে নিষিদ্ধ শব্দের সংখ্যা এই ভাবে ক্রমশ বেড়ে যাবে (‘তবে তো হাতে রইল...’, মৈত্রীশ ঘটক, ১৬-৭) । এর পর হয়তো গরু নিয়ে রচনা লেখা স্কুলপাঠ্য থেকে বাদ হয়ে যাবে। গরু রচনায় এখনও একে গৃহপালিত পশু বলা হয়। কিন্তু গোমাতা তো এখন দেবী। তাই পশু বলা অন্যায়। আবার গরু মরে গেলে তার শিং, হাড়, চামড়ার বিবিধ ব্যবহার উল্লেখ করা হয়, যা করা যাবে না। কারণ, দেবীর মৃত্যু নেই, হত্যা তো আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরেও আছে। গরিব থেকে বিত্তবান ভারতবাসী যে আমিষ পদটি মোটামুটি কম দামে খেতে পায়, সেই ‘রামপাখি’ ভক্ষণও হয়তো নামের জন্যই নিষিদ্ধ হবে।

ত্রিদিব মিশ্র
শান্তিনিকেতন

শিয়রে শমন

প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের বিভিন্ন দিকবদলও এই সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন, ব্রাহ্মণ্যবাদ। বৈদিক যুগের শ্রমের বিভাজনকে মুছে দিয়ে বংশানুক্রমিক জাতপাতের বিভাগ। হরিজন, দলিতকে ঘৃণ্য, অচ্ছুৎ ভাবা, তাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে বঞ্চিত করে রাখা— নানা অত্যাচার। এক সময় দলিত সমাজের যোগ্যতম প্রতিনিধি হয়ে এগিয়ে এলেন বাবাসাহেব অম্বেডকর। আরও আগে বর্ণহিন্দুদের শুভবুদ্ধি জাগরিত হলে, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যে সাম্য আসতে পারত, তা আর হল না। শুরু হল সংরক্ষণ। দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে চাপা বৈরিতার সৃষ্টি হল।

এ ছাড়া ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দৃষ্টান্ত দেখাতে নানা মুনির নানা মত তো আছেই। সব বুঝি না, তবে দেখতে পাচ্ছি, আবার গেরুয়াধারী ব্রাহ্মণ্যবাদ (সব ব্রাহ্মণ বা বর্ণহিন্দুদের কথা বলা হচ্ছে না), ক্ষমতার হাত ধরেছে। ক্ষমতাবানের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি তীব্র ঘৃণার আবহ সর্বব্যাপী হতে চলেছে। অন্য সম্প্রদায়ের মৌলবাদী শক্তিও এই সুযোগটাই চাইছিল। তার মধ্যে ফেক নিউজ আর ফোটোশপের কল্যাণে পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো। এমনকী সমধর্মের শান্তিকামী মানুষরাও হিংসা, ট্রোলের শিকার হচ্ছে। সমাজের একটা শিক্ষিত অংশের মনেও বিদ্বেষের বীজ সুকৌশলে প্রোথিত করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হল, গেরুয়া ব্রিগেডের এই ‘প্রায়-অসীম’ ক্ষমতা কত দিন? পাশা না হয় না-ই পাল্টাল, এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা তো এক দিন চাপে পড়বেই। তখন আবার নতুন করে ভোটের অংক কষায় কিছু ‘সাতেও না, পাঁচেও নেই মানুষ’-এর কপাল পুড়বে না তো? আবার নতুন সংরক্ষণ! মেধার অবমূল্যায়ন! ভুললে চলবে না, বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ, সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। চাপিয়ে দেওয়া এই অর্থনৈতিক বৈষম্য আটকাতে সবচেয়ে আগে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। না হলে সমূহ বিপদ।

মানস ঘোষ
হাওড়া

এ কি খিদিরপুর

এক কালের ঐতিহ্যমণ্ডিত খিদিরপুরের অবস্থা এখন শোচনীয় বললেও কম বলা হয়। একে তো রাস্তায় তিন সওয়ারির মোটরবাইকের অবিরাম দাপট। তা ছাড়া গত ক’দিন যাবৎ একটি যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে নবনির্মিত এক ফুটপাথের উপর মন্দিরের সামনে ঢালাও চেয়ার পেতে ব্যারিকেড করে সারা দিন ধরে গান, মাইকে ভাষণ, কীর্তন ইত্যাদি চলছে। এবং তার অনতিদূরেই পরের পর পুনর্নির্মাণ হতে থাকা বাড়ির বর্জ্য আর জঞ্জালের স্তূপ। এ কোন খিদিরপুর?

প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-২৩

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE