Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

আমি একটি নূতন দুর্ভোগের কথা বলি। আমার ছেলে কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার সময় মাঝেমধ্যে স্কুলের সামনেই দোকানগুলোর বারান্দায় বসে অপেক্ষা করি।

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০০:২০
Share: Save:

স্কুলের সামনেই

উত্তরবঙ্গের দিক থেকে যখন ভাগীরথী নদীর ব্রিজ অর্থাৎ রামেন্দ্রসুন্দর সেতু পার হয়ে বহরমপুর শহরে ঢুকছেন, তখন চোখ মেললেই দেখতে পাবেন চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর রাস্তার বাম পাশে বহরমপুর পুরসভার করে দেওয়া দোতলা, তিনতলা বিভিন্ন রকম স্টল আছে। স্টলগুলোর মাঝে মাঝে ফাঁকা জায়গা রাখা আছে, কারণ জাতীয় সড়কের সমান্তরাল একটি রাস্তা বহরমপুর শহরের বুক চিরে ভাগীরথী নদীর ধার বরাবর খাগড়া হয়ে লালবাগ শহরে গিয়েছে। ওই ফাঁকা জায়গাগুলো থাকার ফলে জাতীয় সড়কে যানজট হলেই বা এমনিতেই পথচলতি যানবাহন ওই ফাঁকফোকরগুলো কাজে লাগিয়ে দেয়। অর্থাৎ অনায়াসেই জাতীয় সড়ককে পাশ কাটিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে আর একটি জটের সৃষ্টি করে। এ এক চেনা দুর্ভোগ।

আমি একটি নূতন দুর্ভোগের কথা বলি। আমার ছেলে কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার সময় মাঝেমধ্যে স্কুলের সামনেই দোকানগুলোর বারান্দায় বসে অপেক্ষা করি। স্কুলের মেন গেটের সামনেই জাতীয় সড়কে যাওয়ার জন্য যে ফাঁকা জায়গাটি আছে, সেটি দিয়ে এত বেশি গাড়ি চলাচল করার ফলে রাস্তাটির অবস্থা যে কী হয়েছে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ওই বিদ্যালয়েই সকালে প্রাথমিক বিভাগের ক্লাস হয়। স্কুলের সামনে এই রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছোট ছোট ছেলেদের যে কোনও সময়ে বিপদআপদ হয়ে যেতে পারে। উপরের ছবিটি দেখলেই দুরবস্থা টের পাওয়া যায়। চারিদিকে দেখছি বহরমপুর শহরে রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভাকে অনুরোধ, যত শীঘ্র সম্ভব জায়গাটি মেরামত করুন।

আর, ফাঁকফোকরগুলিতে পার্কের ঘূর্ণায়মান গেটের মতন কেবল পথচারীদের জন্য গেটের ব্যবস্থা করুন, যাতে কোনও গাড়ি ওই পথ ব্যবহার করতে না পারে।

মানসী মিশ্র বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

ডিগবাজি

কে তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘নীতীশ’, তা জানা নেই (‘যৎকিঞ্চিৎ’, ৩০-৭)। নীতীশ কুমার, বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলছি। মাত্র ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে ইস্তফা এবং পুনরায় শপথগ্রহণের যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করলেন, তার নজির ভূ-ভারতে আছে বলে আমার জানা নেই। এঁরা জনাদেশ নিয়ে যেমন খুশি তেমন ডিগবাজি খেতে এতটাই পারঙ্গম যে, সার্কাসের জোকার পর্যন্ত হাঁ করে চেয়ে থাকে। এঁদের বাগাড়ম্বর দেখে এই প্রতীতি জন্মে যে, প্রদেশ বা দেশের জন্য এঁদের অন্তরাত্মা কতই না রোদনশীল! জনগণের চিন্তায় এঁদের শরীর ও মনপ্রাণ ভেঙে ছত্রখান হয়ে যায়।

‘রাজনীতি’ মানে, বিদ্যালয়ের মাস্টারমশাইয়ের কাছে শিখেছিলাম ‘নীতির রাজা’। আজকের দিনে মাস্টারমশাইদের সমাস পড়ানোর সময় বোধ হয় নতুন করে ভাবতে হবে। কেন না, রাজনীতি এখন শুধুই রাজার নীতি, রাজার মর্জি। আরও একটু খোলসা করে বললে, রাজার স্বেচ্ছাচারিতাই এখানে মুখ্য। তাঁর মসনদ, তাঁর স্বার্থ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, তার জন্য যত নীচেই নামতে হোক না কেন, কুণ্ঠা নেই। লজ্জা বা জনগণের প্রতি দায়, সে তো বিস্তর পরের কথা।

তেজস্বী বা লালুপ্রসাদ যে ধোয়া তুলসীপাতা তা কোনও আহাম্মকও বলবে না। যখন নীতীশ, মোদীর পরিবর্তে নিজেকে দিল্লির মসনদে ভাবছিলেন, তখন লালুর দুর্নীতির বিষয়ে হুঁশ ছিল না? হঠাৎ, কুড়ি মাস সংসার করার পরে তাঁর সংবিৎ ফিরেছে! অথচ যাঁর হাত ধরলেন, সেই হাত দুটো নিরীহ নিরপরাধের রক্তে রঞ্জিত। তাঁর কাছে যা আছে, শুধুই আত্মম্ভরিতা আর ৫৬ ইঞ্চির দম্ভ। ক্ষমতার লাড্ডু এতই মিষ্ট যে, সেটি গ্রহণের সময় কার হাত থেকে গ্রহণ করছেন, তা দেখার সময় পর্যন্ত নীতীশ কুমারের নেই।

কিন্তু জনতা তো বিলক্ষণ দেখছেন। স্বার্থান্ধ, বলা ভাল, মসনদান্ধ রাজনীতিক নীতির ধার ধারবেন না; সন্ধি করবেন এবং সন্ধি ভাঙবেন, আবারও সন্ধি করবেন— এ কথা শিরোধার্য করে নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে যে উত্তরাধিকার পৌঁছয়, তাতে উচ্চশির বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে না। সিংহাসন হয়তো বাঁচে, কিন্তু সিংহের অকালমৃত্যু ঘটে। দেশ জুড়ে শুধু শৃগালের দাপাদাপি বেড়ে যায়।

আকমল হোসেন চালতিয়া, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

বাংলা বাঁচান

বাংলা ভাষা আরবি, ফারসি, ইংরাজি ইত্যাদি ভাষা থেকে সমৃদ্ধ হয়েছে। দারোগা, আদালত, টেবিল, চেয়ার প্রভৃতি অন্য ভাষা থেকে আমদানি করা এবং বাংলায় তার আত্তীকরণ বহু দিন হল হয়েছে। ওই সব শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হয় নেই, না হলে যা আছে তা হাস্যকর ও অচল। কিন্তু যে সব শব্দ আজকাল মিডিয়ার কল্যাণে ব্যবহার হয় তা বিপজ্জনক। এই সব শব্দ বাংলা ভাষার গভীরতাকে ক্ষুণ্ণ করছে। যেমন ‘লাগু’, ‘বকওয়াস’, ‘হারগিজ’, ‘বগল মে’, ‘আপন করা’ ইত্যাদি। টিভিতে বার বার ‘নিয়মটি লাগু হয়েছে’ বলা হয়। ‘লাগু’ মরাঠি কথা, বাংলায় ঠিক বাক্য হবে ‘নিয়মটি প্রযোজ্য হয়েছে’। কিন্তু টিভিতে লাগু বার বার শুনে সাধারণ মানুষ শব্দটি বাংলা ভেবে নিচ্ছেন।

কিন্তু সমস্যা অন্য। হিন্দি ভাষার উত্তরভারতীয় রীতি বাংলায় যে ঢুকে পড়ছে, সেটাই বিপদের। সুকান্ত চৌধুরী তাঁর লেখায় জানিয়েছেন, পথে-ঘাটে বচসা বাধছে ‘আগে’-র প্রচলিত আর অধুনা হিন্দিলব্ধ অর্থ অর্থ নিয়ে (‘আমরা মেনে নিই বলেই ভাষার এই হাল হয়েছে’, ১-৮)। আসল সমস্যা এইখানে। নিজের ভাষাকে ভুলে খিচুড়ি বাংলা বলা ও অন্য জাতির স্টাইলে বাংলা ভাষা ও রীতিকে গুলিয়ে ফেলা ভবিষ্যতে এই ভাষার মৃত্যুঘণ্টা বাজাবে।

তুলনায় বাংলাদেশে নির্ভেজাল বাংলার ব্যবহার আজও বহমান, তারা ভাষার ঘন ঘন সংস্কারও করছে। সে দেশের মানুষ ভুল বানান ও বাংলা শব্দের বিমূর্তকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এক সময় বাংলাদেশের বাংলা একাডেমি বাংলা স্বরবর্ণ থেকে ‘ঐ’ শব্দ বাদ দেওয়ার কথা ভেবেছিল। তাঁদের যুক্তি ছিল ‘ঐ’-এর বদলে ‘ওই’ শব্দ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তীব্র প্রতিবাদে বলা হয় যে ‘ঐতিহ্য’ শব্দকে কী করে লেখা হবে? আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসীরা বাংলা ভাষাকে প্রাণবন্ত রাখতে সে রকম মুখর হয়ে উঠতে পারি না?

অগ্নিমিত্র চৌধুরী কলকাতা-৮৬

কুমাতা

সোমা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্যে সায় দেয়, এমন দু’তিনটি ঘটনার উল্লেখ না করে পারছি না (‘কুমাতা কখনও নয়’, ৩-৮)। প্রথম ঘটনাটি শৈশবে বাবা-মায়ের আলোচনা থেকে শোনা। এক মা তাঁর শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে গ্রীষ্মের দুপুরে কাঁসাই নদী পার হয়ে কোথাও একটা যাচ্ছিলেন। নদীর ক্ষীণ স্রোত এক কোণে বইছিল। জল পার হয়ে বিস্তীর্ণ গরম বালির ওপর হাঁটতে হাঁটতে মা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে এক সময় শিশু সন্তানটিকে বালিতে শুইয়ে নিজে তার ওপর দাঁড়িয়ে পড়েন।

দ্বিতীয় ঘটনাটি চেনা পরিবারের। সুন্দরী মায়ের কন্যাটি ছিল কালো, শ্রীহীন। মা মেনে নিতে পারেননি। তাই তাকে শুধু বুকের দুধই নয়, অন্য কিছুও ঠিকমত খাওয়াতেন না। শিশুটি ক্ষীণ হতে হতে পাঁচ মাস বয়সে মাকে চিরতরে মুক্তি দিয়ে চলে যায়। এত নিপুণ ভাবে মনে হয় মা-ই পারে সন্তানকে হত্যা করতে।

পাশের বাড়িতে নন্দা নামে এক মাঝবয়সি বউ কাজ করতেন। এক দিন শুনি, নন্দা মেয়েকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছেন। আসলে, মেয়ে জামাইয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। জামাইকে জব্দ করার জন্য নন্দা মেয়ের মুখে বিষ দিয়েছিলেন। মারতে চাননি, মেয়ে মারা যাবে ভাবেনওনি।

তিনটি হত্যার ক্ষেত্রে তিন জন মায়ের তিন রকম পরিস্থিতিতে তিন রকম মানসিকতা কাজ করেছে। অতএব এ ক্ষেত্রে অসম্ভব বলে কিছু হয় না। তবে, সমাজের বড় অংশে কন্যাসন্তান আজও কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই অনেক মা তাঁর দুর্ভাগ্যের জন্য নিজের কন্যাসন্তানকেই দায়ী ভাবেন।

রোশেনারা খান মেদিনীপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE