Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

শিবের মাথায় জল ঢালা কথাটি প্রচলিত হলেও সত্যিই কি তা-ই? আসলে কথাটিই ভুল। কারণ, আমরা কিন্তু শিবলিঙ্গে জল ঢালি। সুতরাং কথাটি মাথা হলেও, এখানে সেটি শির বা মস্তক নয়।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

মাথায় জল ভুল কথা

জহর সরকারের প্রতিবেদনটি সময়োপযোগী হলেও তিনি কিন্তু বেশ কয়েক বার বাবা তারকনাথ বা শিবের মাথায় জল ঢালার কথা লিখেছেন (‘বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী বাবা তারকনাথ’, রবিবাসরীয়, ৬-৭)। শিবের মাথায় জল ঢালা কথাটি প্রচলিত হলেও সত্যিই কি তা-ই? আসলে কথাটিই ভুল। কারণ, আমরা কিন্তু শিবলিঙ্গে জল ঢালি। সুতরাং কথাটি মাথা হলেও, এখানে সেটি শির বা মস্তক নয়।

সঞ্জয়কুমার মিশ্র

বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

তখন জাল-রা

অশোককুমার মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধটি পড়ে সমৃদ্ধ হলাম (‘জাল ডাক্তারের হাত এড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড, ফ্রান্সও’, রবিবাসরীয়, ৬-৮) । এই প্রসঙ্গে আরও কিছু বলার লোভ সামলাতে পারলাম না।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ‘ভেজাল, ভেজাল ভেজাল রে ভাই, ভেজাল সারা দেশটায়/ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিষ মিলবে নাকো চেষ্টায়!/ভেজাল তেল আর ভেজাল চাল, ভেজাল ঘি আর ময়দা...’। তেল, চাল, ঘি-তে ভেজাল মেশানো বহু দশক আগে থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু ভেজাল ডাক্তার! বিগত কয়েক মাসে খাস কলকাতাতেই পসার জমিয়ে বসা বেশ কয়েক জন ভুয়ো ডাক্তারের গ্রেফতারির খবরে মনে হতেই পারে, ভেজালের লিস্টিতে এ হয়তো নতুন সংযোজন।

ইতিহাস কিন্তু অন্য ইঙ্গিত দেয়। সে যুগের কলকাতাতেও ছিল ভেজাল ডাক্তারদের রমরমা। ‘সে যুগ’ বলতে যে সময়ের কথা বলছি, তখন কলকাতা লালদিঘির কোলে লালিত হচ্ছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ তখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি। ওয়ারেন হেস্টিংসের জমানা তখন। সে সময়ের কলকাতা ছিল অদ্ভুত সব রোগের ডিপো। ইংল্যান্ড থেকে যে শক্তসমর্থ যুবক দু’পায়ে হেঁটে কলকাতায় পদার্পণ করল, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সে কফিনবন্দি হয়ে চলল মাটির তলায়। কী রোগে মরল, কেউ ধরতেও পারল না।

আলাদা করে বলা দরকার, সে যুগে অনেক ইংরেজই মারা পড়তেন কলকাতার গরমে সান-স্ট্রোক হয়ে। কলকাতার প্রাণঘাতী গরম নিয়ে মোক্ষম লিখেছেন এমিলি ইডেন (এনার নামেই ইডেন গার্ডেনস) –“It was so HOT-I don’t know how to spell it large enough.”

সে সময়ের গরমের তীব্রতাটা হয়তো সহজেই আঁচ করা যায়। গ্রীষ্ম শেষে বর্ষা আসতেই জুড়ে বসত ম্যালেরিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, অজানা সব জ্বর। এমনই এক অজানা রোগের উল্লেখ পাই ১৭৮০ সালের জুন মাসের এক ইংরেজি দৈনিকে-“We learn that several people has been suddenly carried off within these few days by tumors in the neck, symptoms of a very unusual nature.” মশা-মাছির উপদ্রব সারা বছর লেগেই থাকত।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জোব চার্নক মারা গিয়েছিলেন ম্যালেরিয়ায়। তখন অবশ্য মৃত্যুর কারণ বোঝা যায়নি। কিন্তু লক্ষণ দেখে, এখনকার ডাক্তাররা অন্তত তা-ই বলেছেন। এই অবস্থায় তখন সাহেবরা কী করলেন? তাঁরা নাকউঁচু জাত, আমাদের দেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতি অর্থাৎ কবরেজি, হাকিমি, তাবিজ-কবচ এ সবে তাঁদের বিশ্বাস নেই। অনেক সাহেবই এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিলেন। তাঁরা কেউ কেউ নিজেরাই হয়ে উঠলেন স্বঘোষিত চিকিৎসক। আর যাঁদের বাপ-ঠাকুরদা কোনও কালে চিকিৎসক ছিলেন, তাঁদের তো কদরই আলাদা। পসার জমে উঠল। যে সমস্ত সাহেবরা এত দিন ছিলেন উকিল, কোম্পানির কেরানি বা জাহাজের মামুলি খালাসি, তাঁরাই হয়ে গেলেন ডাক্তার। ‘‘ধরত জাহাজের দড়ি, এখন ধরে রোগীর নাড়ি’’— কথাটা মোটেও অতিরঞ্জিত নয়।

এই প্রসঙ্গে বলি, জেমস হিকির নাম হয়তো কমবেশি সকলেই শুনে থাকবেন। ভারতের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’-এর সাংবাদিক, সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর। এই হিকি সাহেব কিন্তু সময় পেলে ডাক্তারিও করতেন! ১৭৬৪ সালের এক জ্বরাক্রান্ত রোগীকে কী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তা দেখা যাক— ‘At 7 a.m. 16 oz of blood was taken away and antimonial wine in camphor mixture was prescribed. At noon 18 leeches were applied to the right side; at 9 a.m. the patient was bathed in perspiration and a blister was applied to the epigastrain.’

এ রকম কিম্ভূত চিকিৎসা করেও সেই রোগীকে বাঁচানো গেল না। আজকের যুগের যে কেউ বলবেন, রোগীর মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত রক্তপাত। কিন্তু তখন এটাই ছিল প্রচলিত চিকিৎসা। কলকাতার বিষাক্ত জল-হাওয়ায় রোগীর রক্ত বিষিয়ে গিয়েছে, তাই এমন জ্বর। সুতরাং বিষাক্ত রক্ত বার করে দেওয়াটাই হাতুড়ে ডাক্তারবাবুদের নিদান। ক্রমে এই ‘ব্লিডিং প্রসেস’ রমরমিয়ে ব্যবসা শুরু করল। কলকাতায় এসে সাহেবদের মেয়ে-বউদের একটু স্বাস্থ্যহানি ঘটলেই তাঁরা ছুটতেন ‘ব্লিডিং’ করাতে। স্যর ফিলিপ ফ্রান্সিস যে বার ওয়ারেন হেস্টিংসের সঙ্গে ডুয়েল লড়ে আহত হলেন, তাঁকেও করানো হল ‘ব্লিডিং’। বরাত জোরে তিনি বেঁচে যান। জ্বর হলে ‘ব্লিডিং’ করাও, রোগীকে কষে রেড ওয়াইন খাওয়াও, কলেরা হলে তলপেটে কষে বাঁধো ‘কলেরা বেল্ট’— এই ছিল সে সময়ের ভেজাল ডাক্তারদের চিকিৎসা।

ভুয়ো ডাক্তারদের এ রকম হাস্যকর চিকিৎসার এক সামগ্রিক চিত্র ধরা পড়ে, ১৭৮১ সালের ‘বেঙ্গল গেজেটে’ প্রকাশিত এক ব্যঙ্গাত্মক কবিতায়— “Some doctors in India would make Plato smile,/If you fracture your skull, they pronounce it bile,/A Sprain in your toe or an anguish shiver,/The faculty here call a touch of liver,/And with ointment mercuri and pills calomelli/ They reduce all bones in your skin to a jelly...”

১৭৯৫ সাল নাগাদ ডিন উইডিড নামে এক ডাক্তার কলকাতায় এসে, ন্যাচারাল ফিলজফি এবং কেমিস্ট্রির ওপর পঁচিশটা বক্তৃতা দিলেন। অনেক সাহেবই শুনলেন এই বক্তৃতা। বক্তৃতা শুনে তাঁরাও হয়ে গেলেন ডাক্তার। এঁদের পারিশ্রমিক আবার অন্য ডাক্তারদের তুলনায় বেশি। বাড়িতে ডেকে পাঠালে পারিশ্রমিক বাবদ পুরো একটা সোনার মোহর, সেই সঙ্গে যে পালকি চেপে এসেছেন, তার বেহারাদের মজুরি, উপরন্তু ওষুধপত্রের দামও।

শেষ পর্যন্ত ১৮৩৫ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা হল। ক্রমে ভুয়ো ডাক্তারদের রমরমা অনেকাংশে কমল। ভুয়ো ডাক্তারিতে কিছুটা রাশ টানা গেল বটে, কিন্তু নির্মূল করা গেল কি?

মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রায় ৮৮ বছর পর, ১৯২৩ সালে প্রকাশিত সাহিত্যিক পরশুরামের (রাজশেখর বসু) ‘চিকিৎসা-সঙ্কট’ গল্পেও উঠে আসল, চিকিৎসার তৎকালীন সংকটজনক দশা। হাতুড়েদের ফলাও কারবার। গল্পের প্রধান চরিত্র, মাঝবয়সি, বিপত্নীক ‘নন্দ’র রোগ কেউ ধরতে পারে না। অ্যালোপ্যাথ ডা. তফাদার বলেন, “ট্রিফাইন করে, মাথার খুলি ফুটো করে অস্ত্র করতে হবে, শর্ট-সার্কিট হয়ে গেছে”। হোমিয়োপ্যাথ নেপাল ডাক্তারের মত— “পেটে ডিফারেনশ্যাল ক্যালকুলস হয়েছে”। তারিণী কবরেজ বললে— “উদুরি। উর্ধুশ্লেষমা”। হাকিম বললে— “হড্ডি পিল্ পিলায় গয়া”। এ গল্পের অবশ্য সুখকর সমাপ্তিই ঘটে, সে কথা আমরা জানি। শেষ পর্যন্ত লেডি ডাক্তার মিস বিপুলা মল্লিক ধরতে পারেন ‘নন্দ’ বাবুর রোগটি। রোগটি একাকিত্ব। পরশুরামের কলমে সাতপাকে বাঁধা পড়েন মিস বিপুলা ও নন্দ- “মিসেস বিপুলা মিত্র এখন স্বামী ভিন্ন অপর রোগীর চিকিৎসা করেন না”।

গৌরব বিশ্বাস

কলকাতা-৫১

ভ্রম সংশোধন

‘ভাল মানুষের টানেই লাভলি ফের জেলমুখী’ প্রতিবেদনে (১৩-৮) লেখা হয়েছে—
‘শ্বশুর খুনের ঘটনা লাভলির জীবন আকাশ-পাতাল পাল্টে দিয়েছিল।’
ঠিক বাক্যটি হবে— ‘শ্বশুরের মৃত্যুর ঘটনা লাভলির জীবন
আকাশ-পাতাল
পাল্টে দিয়েছিল।’ অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE