Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এ কথা অজানা নয় যে জাতি ধর্ম বর্ণ নারী পুরুষ সব কিছুর ওপরে মানুষ একটিই প্রজাতি। তবু সবাই যেন মধ্যযুগে পিছিয়ে যাচ্ছি।

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

সমৃদ্ধ যে লোকজীবন

আষাঢ় মাসের স্নানযাত্রা থেকে সাড়ম্বর হয়েছে খুঁটি পুজো। সদ্য রাখি উৎসব হল। বোনেরা ভাইয়ের হাতে রাখি পরাল, রাজনৈতিক রাখিতে সম্প্রীতি পালিত হল। কিন্তু এ ছাড়াও আছে বৃক্ষরোপণ, বৃক্ষশাখায় রাখি (ছবিতে) পরানোর কর্মোৎসব, করম পরব করমডোর যা ভারতের বহু জনজাতি এখনও নিঃশব্দে পালন করে চলেছেন। ভাদ্রের শুক্লা অষ্টমীতে দূর্বা ঘাসের পুজোর পর একাদশীতে অঙ্কুরিত বীজ, করমগাছ পুঁতে, শাল(সারিকরম) ও অরণ্যমায়ের বন্দনা করে মেয়েরা প্রথমে করমডালে ও পরে পরস্পরের হাতে রাখি বাঁধে। এই কর্মরাখির সখীরা বনে জঙ্গলে পরস্পরকে রক্ষা করে। এ যেন রবীন্দ্রনাথের বৃক্ষরোপণ, হলকর্ষণ, রাখিবন্ধন, শিল্পোৎসবের মিলিত আদিরূপ।

আমরা ভুলে যাই যে মা দুর্গা নবপত্রিকা শাকম্ভরী অরণ্য মা বা জাহেরা (সাঁওতাল), সারণা (ওঁরাও) বা ধরতী মায়ে (মুন্ডা)। বিল্ববৃক্ষ মূলে ডালিম, কদলী, কচু শস্য দূর্বাঘাস-অথবা চার-পাঁচ স্তরে বনস্পতি বৃক্ষ গুল্ম বীরুৎলতা নিয়ে মাটি পাথর আঁকড়ে ধরা মা (সিংহ, হাতি, ময়ূর, হাঁস, পেঁচা, সর্প, মহিষ, নীলকণ্ঠ পাখি প্রাণিকুল নিয়ে দশ হাতে দশ দিক থেকে, অসুর থেকে অশুভ থেকে সৃষ্টি রক্ষা করে চলেছেন)। করম পরবে দেশজ গুল্ম ও বৃক্ষ রোপণে এই অরণ্যউৎসবের সূচনা হত, যা এখন শুধু করম গাছের খুঁটি বা দুর্গাপূজার কলাবউ পোঁতায় সীমাবদ্ধ। বীজবপন, ধানরোপণ, বৃক্ষরোপণের কর্ম পরব বিলাপগাথা নয়। করম বিনতির প্রাচীন গান— ‘সিংচান্দ, বৃষ্টি, সবুজ ধানখেতের হাওয়ায়, অরণ্য মায়ের দয়ায় করম ধরম দু’ভাই পেল জীবন’। ‘প্রথম বৃষ্টিতে অঙ্কুরিত গাছ, গত বছরে জন্মানো গাছের পাতারা দুলছে। এসো, ওকে জাহের থানে (পবিত্র ভূমি)-তে পুঁতি’। ‘সবুজ অরণ্যের শান্তির হাওয়া, শিশুদের দয়া কর’। ‘আম জাম কাঁঠাল গাছে পাকা পাকা ফল, খেয়ে অরণ্য মাকে পুজো করি নাচি গাই’। ‘জলে ভেসে গেছে মাঠ, ঘরে বসে ঝুড়ি বোনা এখন আমার করম’। ‘করমগাছ, তোমার কুঠারে ডালপালা কাটব, শীতের জ্বালানি ঘরে তুলব। ডগা কাটলে গাছ ঝোপড়া, পাশে কাটলে লম্বা’। ‘শহরে লোকে আমায় দেখে, অরণ্যে যখন ফিরি, জাহেরা (অরণ্যমা) আমায় দেখে’। ‘জীবন কম হলে, জাহেরা দেয় জীবন আর শান্তি’। রোপন (হোরোরোহয়া)-এর গান, ভোরে সিংচান্দ্, ধরতি মাকে জোহার (প্রণাম)। সারাদিন ঝিরিঝিরি হাওয়ায় ঝিপিঝিপি বৃষ্টিতে
রোপণ মানুষের ধরম (তুলনীয় ধূলামন্দির, চাষ করি আনন্দে, ফিরে চল মাটির টানে)।

আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এ কথা অজানা নয় যে জাতি ধর্ম বর্ণ নারী পুরুষ সব কিছুর ওপরে মানুষ একটিই প্রজাতি। তবু সবাই যেন মধ্যযুগে পিছিয়ে যাচ্ছি। পাশ্চাত্যদেশ অরণ্যরক্ষা ও বাস্তুনীতির কথা বলে, আর আমরা অবহেলায় হারিয়ে ফেলছি এই আদি ভারতীয় সংস্কৃতি যার মূল কথা, অরণ্যই পবিত্র দেবস্থান-ধর্মস্থান, সজীব বনস্পতিই দেবতা। এই সারি বা সত্যধর্ম আরও বলে, কর্মই ধর্ম। করম, কদম, কেলিকদম বা হলদু গাছে বাস করেন বনমালী। ঘন বড় পাতা, ফুল, ফল জীববৈচিত্র রক্ষা ও বনায়নে বিশেষ উপযোগী। পরবের আগে ও পরে কৃষি, রান্নাপূজা, কাঠের কাজ, খাটিয়া বোনা, চিকিৎসা, যাবতীয় কর্ম সম্পন্ন হয়। মেয়েরা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও শস্যের জঁওয়া বা অঙ্কুরোদগম করে। করম নাচে গৃহকাজ কৃষিকাজ ফুটিয়ে তোলা হয়। এও বিশ্বকর্মা পূজা, তবে কর্ম ও বৃক্ষকেন্দ্রিক। ব্রতকথায় আছে, করম ও ধরম দুই ভাই (অন্য মতে করম, ধরম ও জীবন তিন ভাই, সবার বড় জীবন), অনেক বিবাদ, যুদ্ধের পর অবশেষে তারা বুঝতে পারে যে তারা একে অন্যের পরিপূরক, কর্ম জীবনের ধর্ম।

পরিশ্রমী আদিবাসীরা আছেন তাঁদের প্রকৃতিকেন্দ্রিক জীবন উৎসব নৃত্যগীত, আবহাওয়া উপযোগী শিল্পমণ্ডিত পরিচ্ছদ, অঞ্চল উপযোগী নিজ হাতে গড়া, কাঠ বাঁশ মাটির বাসা ও পল্লি নিয়ে। ভাষাসংস্কৃতি আলাদা হলেও ‘ইতিহাসলিপিহারা’দের এক বিষয়ে মিল, অরণ্যভূমি তাদের মা, পাহাড় সূর্য প্রকৃতি আনন্দের উৎস (এই জীবন হয়তো অনুভব করেছিলেন তপোবনের ঋষিরা, করম, কদমগাছের বনমালী কৃষ্ণ, বনবাসী রাম, কর্মসাধনা বোধিবৃক্ষের বুদ্ধদেব, ধর্ম কর্মের কদাচারত্যাগী সাম্যপ্রেমের চৈতন্যদেব; কর্মযোগী করম ভূমি কর্মটাঁড়ের বিদ্যাসাগর, পঞ্চবটীর বহুত্ববাদী রামকৃষ্ণ, মাতৃপ্রকৃতিবন্দনার বঙ্কিমচন্দ্র, পালামৌর সঞ্জীবচন্দ্র; ধূলামন্দির, বলাই, বনবাণী-বৃক্ষবন্দনা-বৃক্ষরোপণের রবীন্দ্রনাথ, স্বাধীনতাদিশারি গাঁধী, জীবনানন্দ, বিভূতিভূষণ, সবুজ শক্তি, নারীশক্তির রোকেয়া)। ভারতের এই আবহমান প্রজ্ঞা আমরা বিস্মৃত। সভ্য আধুনিক মানুষ, প্রযুক্তি নির্ভর মানুষ, মৌলবাদী ধর্মান্ধ ও নাস্তিক মানুষ নতজানু হই, জনজাতির সহজ সরলপ্রকৃতি সম্পৃক্ত ধর্ম সংস্কৃতি সমৃদ্ধ স্বাধীন জীবনশৈলীতে।

অর্চনা বন্দোপাধ্যায় শান্তিনিকেতন

স্বাধীনতার পরে

পাড়ায় পাড়ায়, ক্লাবে, স্কুল কলেজে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাড়ম্বরে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। কিন্তু এর পর যা ঘটে, তা খুবই লজ্জার এবং মর্মপীড়াদায়ক! বিভিন্ন জায়গায় সুতলি দড়ি দিয়ে ছোট ছোট কাগজ বা প্লাস্টিকের পতাকা সারিবদ্ধভাবে আটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক দিন বাদেই সেগুলো ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে, ধুলোয় গড়াগড়ি খায়, ড্রেন বা ডাস্টবিনে পড়ে, লোকজন না দেখে মাড়িয়ে যায় যাকে পতাকার অবমাননা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। সমাজের প্রত্যেকের কাছে একটি বিনম্র আবেদন, এটা বন্ধ হোক।

সাগরকুমার পাঠক রিষড়া, হুগলি

একটু এগোন

সমাজ এগোচ্ছে, এগোচ্ছে সভ্যতা। সময়ের সঙ্গে ড্রয়িং রুমের বোকা বাক্সটাও পাল্টেছে। পেটমোটা, বেঢপ চেহারা পরিত্যাগ করে হয়েছে স্লিম। এলসিডি, এলইডি, থ্রিডি, ফোর-কে প্রযুক্তি আরও কত কী! চ্যানেলে চ্যানেলে মেগা সিরিয়ালের রমরমা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সিরিয়ালগুলোর বিষয়বস্তুর কোনও অগ্রগতি নেই, বরং দিন দিন যেন দুর্দম গতিতে পিছন পানে দৌড়াচ্ছে। যে ভাবে সিরিয়ালের চরিত্রগুলোর বহুবিবাহ দেখানো হয়, তাতে মনে হয় আমরা এখনও বল্লাল সেনের যুগে বাস করছি, দেশে বহুবিবাহ বিরোধী আইন বলে কিছু নেই। নিয়ম করে সকল সিরিয়ালে দেখানো হয়, বর সকলের সামনে নববধূর হাত ধরে ঘোষণা করছে, ‘আমি তোমার সারাজীবনের ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিলাম।’ এমনকী বউ উপার্জনশীল হলেও! আধুনিক যুগে এ ধরনের কথা নারীদের মর্যাদাকে চরম ভাবে আঘাত করে। এক জন বধূ তাঁর সংসারের জন্য যে শ্রম দেন, সেটা বাজার দামে তাঁকে মিটিয়ে দিতে হলে অনেক পুরুষেরই বিয়ে করার শখ উবে যেত। এক জন বধূকে ভাতকাপড়ের সংস্থান শ্রমের বিনিময়েই করতে হয়, তিনি বরের দয়ার পাত্রী নন। সিরিয়ালের সংলাপ লেখকদের এ ধরনের চিন্তার দৈন্য থেকে বেরিয়ে এসে প্রগতিশীল হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।

সুজনকুমার দাস সুতির মাঠ, বহরমপুর

চালকের বিশ্রাম

ট্রেনের চালকরা রানিং স্টাফ ক্যাটেগরিভুক্ত। এই ক্যাটেগরিতে সারা জীবন চাকরি করার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এ চাকরিতে অনিয়ম-ই নিয়ম। কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই, কাজ শুরু বা শেষ হওয়ার। কাজের সময়ের পরিমাণও তাই। এই অনিয়ম, শরীর ও মনের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে (‘চালকের চোখে ঘুম’, ৪-৮)। চালকদের কাজের সময়সীমা হওয়া উচিত ছ’ঘণ্টা, বিশেষ প্রয়োজনে ৮ ঘণ্টা। দুটি ডিউটির মাঝে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দরকার। যে দিন ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি হবে, সে দিনই বেশি সময়ের জন্য ওভারটাইম প্রাপ্য হবে। ছুটির দরকার থাকলে অবশ্যই তার ব্যবস্থা থাকা দ‍রকার।

দেবাশিস বসু উত্তরপাড়া, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE