Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

তখন বাজারে সবে জড়ো হচ্ছে মানুষ। নীচে এটিএম-এ সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গ্রাহক। আপন নিয়মে চলছে যানও। তার বরাবর নীচের দোকানগুলোয় দোকানদার পসরা সাজানোর আয়োজন করছিলেন।

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০০:১৭
Share: Save:

বিজ্ঞাপনে বিপদ ভারী

শ্রদ্ধেয় প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক ও মন্ত্রী জ্ঞানসিংহ সোহনপালের দেহ যখন চিতার আগুনে পুড়তে পুড়তে বিষণ্ণতার ফুলকি আকাশে পাঠাচ্ছিল, তখনই খড়্গপুর শহরের উলটো দিকে কৌশল্যায় হাই-ভোল্টেজের তারে তারে সংঘর্ষে মারাত্মক ভাবে জ্বলে উঠছিল আগুনের ফুলকি। কখনও দাউ দাউ করে জ্বলছিল আগুন।

তখন বাজারে সবে জড়ো হচ্ছে মানুষ। নীচে এটিএম-এ সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গ্রাহক। আপন নিয়মে চলছে যানও। তার বরাবর নীচের দোকানগুলোয় দোকানদার পসরা সাজানোর আয়োজন করছিলেন। হঠাৎ আগুনের ঝলকানি আর প্রচণ্ড শব্দ। দিশেহারা হয়ে পড়ল সবাই, মোটর সাইকেল-সাইকেল-টোটো আরোহীর মধ্যে সংঘর্ষের উপক্রম। কারণ, ওই অংশে একটি রাজনৈতিক দলের কাপড়ের বড় ব্যানার এ পার-ও পার বাঁধা ছিল। বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় ভেজা ব্যানার তারে জড়িয়ে যায়। একটি তার কেটে ঝুলেও পড়েছিল। কিন্তু তারের নীচে খাঁচায় আটকে পড়ায় বিপদ ঘটেনি।

আবার সে দিন বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে শহরের ইন্দা বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রীর মাথায় বিজ্ঞাপনের লোহার কাঠামো এসে পড়ল। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে ‘অবিবেচকদের কাজ’ বলে তিনি নিজেকে সামলে নেন। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমগুলো যদি ঠিক ঠিক জায়গায়, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দেওয়া-নেওয়ার কাজ চলত, তবে বিপদ এবং দৃশ্যদূষণ বোধ হয় খানিকটা রোধ করা যেত।

ফাল্গুনীরঞ্জন রাজ

খড়্গপুর

বন্যা রোধে

• জয়া মিত্র লিখেছেন বন্যার মূল কারণ নদীকে বেঁধে ফেলা, নদীর বুকে বাঁধ নির্মাণ করা (‘নদীকে মেরেছি, তাই মরেছি’, ৪-৮)। বাঁধ নির্মাণের ফলে নদী চরিত্রের যে পরিবর্তনের কথা লেখক বলেছেন এবং সেই পরিবর্তন যে বন্যার কারণ ঘটিয়ে চলেছে, এ কথা ঠিক। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না বাঁধ তৈরির আগে দামোদরকে ‘বাংলার দুঃখ’ বলা হত এবং প্রতি বছর দামোদরের বন্যায় মানুষের প্রাণ ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির কোনও পরিমাপ ছিল না। এখন অন্তত দামোদর ‘বাংলার দুঃখ’ নয়। এ ছাড়াও এই বাঁধগুলিকে কেন্দ্র করে দামোদর উপত্যকায় যে বিকাশ ঘটেছে, তার কোনও পরিমাপ নেই। তাই নিবন্ধের নাম ‘নদীকে মেরেছি...’ হয়তো সুবিবেচিত নয়।

এ কথা সত্যি, অতিবৃষ্টির কারণে দামোদরের জল এখনও মানুষের দুর্দশার কারণ। তাই ‘নদীকে বাঁধা ভুল হয়েছিল’ এ কথা না বলে কী ভাবে আরও বেশি বর্ষার জলকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, নদী বিশেষজ্ঞদের সে দিকেই নজর দেওয়া উচিত। দামোদরের বন্যা যেহেতু পশ্চিমবঙ্গেরই ক্ষতিসাধন করে, তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বিষয়ে সদা সচেষ্ট। কিন্তু সেই চেষ্টা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করা প্রয়োজন।

জলাধারগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, এ বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু কী ভাবে? সম্ভাব্য পথ— ১) আরও জলাধার নির্মাণ। কিন্তু বাঁধ তৈরিতে যে বিপুল পরিমাণ জমির প্রয়োজন, আজকের সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা যে আর অধিগ্রহণ সম্ভব নয়, এ বিষয়ে সকলেই একমত হবেন। তাই প্রস্তাবটি কার্যকর নয়।

২) ‘ডিভিসি-র জলাধারের জন্য টাকা চাইল রাজ্য’ শীর্ষক নিবন্ধে (১০-৮) প্রতিবেদক লিখেছেন, গ্রীষ্মের সময় জলস্তর নেমে গেলে মাটি বেরিয়ে পড়ে। সেই মাটি কেটে জলাধারের চার পাশে ফেলে অতি সহজেই পাড় উঁচু করে জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। এটি একেবারেই সম্ভব নয়। কারণ, জলাধারের পাড় উঁচু করে জলস্তর বাড়ালে জলস্তর পিছন দিকেও বাড়বে। ফলে ডিভিসির অধিগৃহীত জমির বাইরেও বহু এলাকা প্লাবিত হবে। সর্দার সরোবর ড্যামের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বহু আদিবাসী গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। এর বিরুদ্ধে মেধা পাটকরের আন্দোলন ও জটিলতা সকলের জানা।

৩) এই মাটি কেটে আশেপাশের পরিত্যক্ত খোলা-মুখ খনিগুলি ভর্তি করা। এই কাজ প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ হলেও মানুষের ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্দশার তুলনায় হয়তো বেশি নয়। তাই জলাধারগুলির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর এটি একটি সম্ভাব্য পথ হতে পারে।

৪) মাননীয় সেচমন্ত্রী ‘ম্যানমেড বন্যা’র ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে (১১-৮) অতিরিক্ত বাঁধ তৈরির কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তব কারণে এটি হয়তো সম্ভব নয়। বিষয়টি গত সাত দশক ধরে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু যে বিষয়টি রাজ্য সরকার বিশেষ উল্লেখ করে না, তা হল নিম্ন দামোদরের সংস্কার। হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে বাঁধ থেকে বেশি জল ছাড়া হবেই। তা অবশ্যই কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় পরিকল্পিত ভাবে আগে থেকে জল ছেড়ে। কিন্তু বৃষ্টির ওপর যেহেতু কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, শেষ বিচারে জলাধারের জল ছাড়ার ওপরেও কোনও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন অতিরিক্ত জল নির্গমনের পথটি তৈরি করা। বাঁধ হওয়ার ফলে সারা বছর নদীপথে ক্ষীণ ধারায় জলপ্রবাহ থাকে। ফলে নদীখাত তো সৃষ্টি হয়ই না, নদী বেড ধীরে ধীরে সমতল হয়ে গেছে। বর্ষায় এমনিতেই তা ভর্তি থাকে। জলাধার থেকে আসা অতিরিক্ত জল নির্গমনের পথ না পেয়ে দু’কূল ভাসিয়ে ধ্বংস করতে করতে এগিয়ে চলে সাগরের দিকে। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন নিম্ন দামোদর, তার অববাহিকা এবং সেচ খালগুলির আমূল সংস্কার। এটি সম্পূর্ণ ভাবে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়

গঙ্গাদর্শন, শ্রীরামপুর, হুগলি

স্মৃতিচারণে ভুল

• কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের উপর লেখা নূপুরছন্দা ঘোষের স্মৃতিচারণটিতে কিছু ভুল আছে (‘বুকের কাছে বাজল...’, পত্রিকা, ২৯-৭)। ‘আমি বনফুল গো’ এই গানটি প্রণব রায় লিখেছিলেন ১৯৪২ সালে। তিনি ১৯৩৬ সালে ‘সাঁঝের তারকা আমি’ গানটি লিখেই স্বনামে খ্যাত হয়েছিলেন। কাজেই ১৯৪২ সালে তাঁর নতুন করে নামডাক হওয়ার কোনও কারণ নেই। আর ১৯৪২ সালে উত্তমকুমার সবে ম্যাট্রিক পাশ করেছেন। তাঁর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ১৯৪৮ সালে। তা হলে ১৯৪২ সালে তিনি কী করে প্রণব রায়ের বাড়িতে চা খেতে খেতে ‘পাগলা মনটারে...’ গানটি শুনে কান্নাকাটি জুড়লেন! প্রণব রায়ের বাড়িতে গিয়ে উত্তমকুমারের চা খাওয়ার সম্পর্ক অনেক পরের ঘটনা।

দ্বিতীয়ত, ১৯৪২ সালে কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় সংগীত জগতেই আসেননি। ওই সময় ‘পাগলা মনটারে তুই বাঁধ’ গানটি গেয়েছিলেন রেনুকা দাসগুপ্ত, হিন্দুস্থান রেকর্ডে (এইচ ৩)। তৃতীয়ত, শ্রীমতী ঘোষ লিখেছেন, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে বলেছিলেন যে, উনি অতুলপ্রসাদ ছাড়া আর কারও গান ছায়াছবিতে গাইবেন না। কিন্তু কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় সলিল চৌধুরীর সুরে আধুনিক গান করেছেন। কাজেই যদি উনি এ কথা বলেও থাকেন, তার কারণ অতুলপ্রসাদের গানের জন্যে ধনুর্ভাঙা পণ নয়, অন্য কারণ ছিল।

জয়দীপ চক্রবর্তী

বাগুইআটি

‘রূপ তেরা...’

• ‘রূপ তেরা মস্তানা...’-য় সুরারোপের কিছুটা ভিন্ন ভাষ্য সম্প্রতি কিশোর-তনয় অমিতকুমার বললেন এক বাংলা চ্যানেলের বাণিজ্যিক শো-তে, অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথালাপে (‘সুর খুঁজে বের করতেন শচীনকর্তা’, পত্রিকা, ১৬-৭)। বয়ানটি এ রকম: ‘আরাধনা’র গানের রেকর্ডিং চলছে। স্টুডিয়োর পরিবেশ থমথমে। শক্তি সামন্তের মুখ গম্ভীর। শচীনকর্তার মেজাজ তিরিক্ষে। ‘রূপ তেরা...’-র যে সুরটি কর্তা দিয়েছেন, শক্তি সামন্তের তা বিলকুল না-পসন্দ। (প্রত্যক্ষদর্শী অমিত সুরটি গেয়েও শোনালেন, ভাটিয়ালি গোছের)। হঠাৎ কিশোরকুমার কর্তাকে বললেন ‘কালকে যাব শ্বশুরবাড়ি...’ গানটির সুর এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে। (অমিত এই গানটিও গেয়ে শোনালেন)। পরামর্শ মেনে নিলেন কর্তা। বাকিটা ইতিহাস।

সৌরভ সেন

কলকাতা-৬

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE