Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

প্রত্যেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধারই নিজস্ব জগৎ তৈরি করে নেওয়া উচিত। সে জগতে তিনি নিজেকে অনেক বেশি ভালবাসতে পারবেন, অতীতের সুখ-স্মৃতিতে ফিরে যেতে পারবেন।

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০০:৩৭
Share: Save:

এ ভাবেও বাঁচা যায়

বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের একাকিত্ব সত্যিই একটি সামাজিক সমস্যা (‘নিঃসঙ্গ বার্ধক্য’, সম্পাদকীয়, ৮-৮)। বয়স হলে মানুষ এমনিতেই শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে অশক্ত হয়ে পড়েন। মানসিক কিছু জটিলতা থেকে দৈহিক স্বাস্থ্যও খারাপ হয়। ঘরের পাশে থেকেও অনেক সন্তানই বাবা-মা’র সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না। আবার এটাও ঠিক, প্রত্যেক সম্পর্কে কোথায় যেন একটা অলিখিত দাবি থাকে। সেই মতো চাহিদা মিটতে নাও পারে। এই সব ভেবে যদি কোনও বয়স্ক মানুষ সর্বদা চিন্তা করতে থাকেন, তবে তিনি অবশ্যই একাকিত্বে পড়বেন। এতে আয়ু কমবে, বাড়বে না।

প্রত্যেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধারই নিজস্ব জগৎ তৈরি করে নেওয়া উচিত। সে জগতে তিনি নিজেকে অনেক বেশি ভালবাসতে পারবেন, অতীতের সুখ-স্মৃতিতে ফিরে যেতে পারবেন। অন্য দিকে মৃত্যুকে অনিবার্য হিসেবে মেনে নিতেই হবে। একটু অন্য রকম ভাবে ভাবা যেতেই পারে, মৃত্যু যেন নতুন একটা জগতে প্রবেশের দ্বার। এটাকে ভয় না পেয়ে জয় করতে হবে। তবে মানসিক দৃঢ়তা অনেকটাই বাড়বে।

অন্য দিকে, এই প্রজন্মকে ভাবতে হবে, তারা যে আজ এত বড় হয়েছে, তার কারণ এই বয়স্ক মানুষরা। আজ যে যুবক, কাল সে বৃদ্ধ। এ ভাবে ভাবলে দু’পক্ষেরই বোঝাপড়ায় সুবিধা হবে।

সামাজিক অনেক কাজেই বহু বয়স্ক মানুষকে যুক্ত থাকতে দেখেছি। তাঁরা সেই কাজ নিয়ে ভালই আছেন। তাঁদের মুখেই শুনেছি, কাজে আছি বলে দেহ-মন দুটোই ভাল আছে। বাড়িতে একা-একা ভাল লাগে না। আবার অনেকে সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। সমবয়সি-সমমানসিকতার মানুষও একসঙ্গে ভাল থাকার চেষ্টা করছেন। নিঃসঙ্গতা এড়ানোর নানা পথ খুঁজতে হবে। তবেই ভাল ভাবে বাঁচা যাবে।

একটা পরিবার কতটা উন্নত, সেই পরিবারের বাচ্চা কিংবা বৃদ্ধদের দেখলে বোঝা যায়। ঠিক সে রকমই একটা সমাজ কতটা উন্নত, স্বাস্থ্যবান, বর্ধিষ্ণু সেটাও বয়স্ক মানুষদের দেখলে কিন্তু বোঝা যায়।

চন্দন দাস কলকাতা-৪৭

উচ্চ সড়ক ভুক্তি

সুকান্ত চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘এ ভাবেই আমাদের জীবৎকালে ‘সঙ্গে’র জায়গায় এসেছে ‘সাথে’।’’ ‘এ ভাবে’ বলতে সম্ভবত অন্য প্রদেশের বা বিদেশি ভাষার প্রভাবের কথা বলা হয়েছে (‘আমরা মেনে নিই...’, ১-৮)। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত কাব্যে ও গানে এবং কোনও কোনও অঞ্চলে ‘সাথে’র প্রচলন ছিল। শহরে ও গঞ্জে ‘সঙ্গে’ই ব্যবহার করা হত। আসলে দেশভাগের পরে পূর্ব বাংলা থেকে দলে দলে মানুষ যখন পশ্চিমবঙ্গে আসেন, তখন থেকেই পূর্ব বাংলায় প্রায় সর্বত্র ব্যবহৃত ‘সাথে’ পশ্চিমবঙ্গের ‘সঙ্গে’র জায়গা দখল করে নেয়। একই কারণে এখানকার অনেক মানুষ ‘জন্যে’ না বলে ‘জন্য’ বলেন। অবশ্য এখনও পশ্চিমবঙ্গে কিছু কিছু মানুষকে ‘সঙ্গে’ ও ‘জন্যে’ বলতে ও লিখতে দেখা যায়। আর এক জায়গায় লেখা হয়েছে, ‘‘‘সঙ্গে’ এক দিন এসেছিল ‘সহিত’কে হটিয়ে’’। আসলে বাংলা ভাষা যখন থেকে সাধু ভাষার পরিবর্তে চলিত ভাষায় লেখা শুরু হয়, তখন থেকেই ‘সহিত’কে সরিয়ে ‘সঙ্গে’ জায়গা করে নেয়।

টিভিতে বিভিন্ন পণ্যের বাংলায় ডাব-করা বিজ্ঞাপনের বেশির ভাগ মুম্বইতে তৈরি হয়। সেখানে মূল বিজ্ঞাপনটি হিন্দিতে তৈরি হওয়ার পর বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় তার ডাবিং করা হয়। তরজমা করার ঠিক লোকের অভাবের জন্য ওই ধরনের বিজ্ঞাপনে উদ্ভট সব বাংলা উচ্চারণ ও শব্দ আমাদের শুনতে হয়। এমনকী পশ্চিমবঙ্গে যে সব শিক্ষিত বাঙালি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কাজে লিপ্ত, তাঁরাও বাংলায় ঠিকমত তরজমা করতে অভ্যস্ত নন। তাঁরা মূলত ইংরেজি নথি নিয়ে কাজ করেন। ইংরেজির প্রকাশভঙ্গি বা গঠন ঠিকমত বুঝে বাংলায় সেই ‘স্পিরিট’-এ তরজমা করতে গিয়ে তাঁরা নিজের ভাষায় ঠিক শব্দ ও প্রকাশভঙ্গি অনেক সময় খুঁজে পান না। তাই হয়তো ‘হাইরোড ডিভিশন’-এর ‘উচ্চ সড়ক ভুক্তি’র মতো তরজমা হয়।

নব্যসাক্ষরদের একটা অংশ যে আবার নিরক্ষরতার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে, তার কারণ আমার মনে হয় অর্থনৈতিক। নব্যসাক্ষরদের বেশির ভাগ মানুষই গরিব। সারা দিন পরিশ্রমের পর তাঁরা সহজ বিনোদনের খোঁজ করেন। তখন পড়ার মতো ধৈর্য বা উৎসাহ তাঁদের মধ্যে দেখা যায় না বললেই চলে। পড়াশোনায় কিছুটা সড়গড় করার জন্যে তাঁদের উপযুক্ত শিক্ষাদানের সঙ্গে আর্থিক অনুদানেরও প্রয়োজন হতে পারে। তবেই তাঁরা এক সময় এমন একটা স্তরে পৌঁছবেন, যখন নিরক্ষরতায় আবার ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে আর যা-ই হোক সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষণ পড়াশোনা চালাতে পারে না। এখনও তাদের ছাপা বইয়েরই দরকার।

মনোজ ঘোষ কলকাতা-৬১

টিকব তো?

আমি সত্তরোর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। আমাকে অতিক্রম করতে হয়েছে বিংশ শতাব্দী, স্বাগত জানিয়েছি নতুন শতাব্দীকে। কিন্তু দুই শতাব্দীর তফাতটা বড় বেশি চোখে লাগছে ও বুকে বাজছে। সুকান্তবাবুর মতো আমিও প্রতি মুহূর্তে বাংলাভাষী হিসাবে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব সংকটের যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছি।

সাহিত্যের ছাত্রী হিসাবে এ কথা আমাদের জানা এবং মেনে নিতেও বাধ্য যে ভাষা পরিবতর্নশীল; অন্য ভাষার প্রভাবও একটি ভাষার উপর অনিবার্য ভাবে পড়বে। এই বাংলাও তাই বিভিন্ন ভাষার শব্দভাণ্ডার আত্তীকরণ করে আজ বাংলার শব্দভাণ্ডার ঐশ্বর্যমণ্ডিত হয়েছে। কিন্তু শব্দকে আত্মস্থ করতে গিয়ে যদি ভাষার কাঠামোটাই বদলে যায়, তা হলে ভাষার অস্তিত্ব সংকট নিয়ে আশংকা হয়! সুকান্তবাবু ঠিক ভাবেই দূরদর্শনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। দূরদর্শনকে এখন মোটামুটি বলা যায় গণশিক্ষার (কতটা শিক্ষা পাওয়া যায় সেটা তর্কসাপেক্ষ!) মাধ্যম। সেই দূরদর্শনের অনুষ্ঠানগুলিতে হিন্দি ভাষার কুপ্রভাব দেখে বাংলা ভাষার ভবিষ্যতের জন্য মন ভারাক্রান্ত হয়। হিন্দি ভাষার প্রতি কোনও অশ্রদ্ধা কিন্তু আমি পোষণ করছি না। তবে, দুটি ভাষার মিশ্রণ আদৌ কাম্য নয়। অথচ সেটাই ঘটে চলেছে। হিন্দি ‘আধা’ শব্দ থেকে বাংলায় বলা হচ্ছে ‘আর্ধেক’। যেটা হওয়া উচিত সংস্কৃত ‘অর্ধ’ থেকে বাংলায় ‘অর্ধেক’। বাংলা ‘সঙ্গ দেওয়া’ শব্দটা এখন ‘সাথ দেওয়া’তে পরিণত হয়েছে। বাংলা ‘কারণ’ বা ‘কেন না’ হয়েছে ‘কেন কি’। এগুলি অত্যন্ত পীড়াদায়ক। সুকান্তবাবু ইংরাজির অধ্যাপক হয়েও শুধু বাঙালি বলে বাংলা ভাষার দৈন্যে পীড়া বোধ করেছেন! কিন্তু অন্যান্যদের এই সচেতনতা দেখি না কেন? অন্তত আমার চোখে তো পড়েনি। অবক্ষয় ঠেকাতে চাই বিখ্যাত ব্যক্তিদের সচেতন মন্তব্য এবং সম্ভব হলে বাংলা ভাষার শুদ্ধতা রক্ষার আন্দোলনও।

শুধু যে বাংলা ভাষারই আজ সংকট, তাই নয়। সংকট বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতির এবং বাঙালি জাতির। বাঙালি আজ তার সবটুকু সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে বরণ করে নিয়েছে অবাঙালি আচার, অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতিকে। কোথায় হারিয়ে গেল আমাদের ‘পৌষপার্বণ’, আমাদের ‘কালীপুজো’, আমাদের ‘দোল’, আমাদের ‘ভূতচতুর্দশী’। আমরা পালন করি ‘দিওয়ালি’, ‘হোলি’, ‘ধনতেরস’, সঙ্গে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। আজকাল বিয়েতে ‘গায়ে হলুদ’ নেই, ‘আইবুড়ো ভাত’ শোনা যায় না। শোনা যায় ‘মেহেন্দি’, ‘সংগীত’ ইত্যাদি। কনের ‘বেনারসী’র বদলে এসেছে ‘লেহেঙ্গা’, বরের ‘শেরওয়ানি’, আমরা কোথায় চলেছি, বাঙালি টিকবে তো!

ডলি দাশগুপ্ত কলকাতা-৩৪

নোংরা শৌচাগার

এগরা শহরে কাঁথিগামী বাসস্ট্যান্ডের কাছে অবস্থিত সুলভ শৌচাগারটি অত্যন্ত নোংরা ও দুর্গন্ধময়। বাসে ওডিশা যাতায়াতের পথে মাঝরাতে কিংবা ভোরে বাধ্য হয়েই তা ব্যবহার করতে হয়। পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই কিন্তু পয়সা আদায়ের জন্য লোক মজুত এগরা পুরসভা পরিচালিত এই শৌচাগারের জন্য। এই অব্যবস্থার প্রতিকার চাই।

সুমিতা সামন্ত পরমানন্দপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE