Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

এয়ারপোর্ট তিন নম্বর গেট থেকে অ্যাপোলো হাসপাতাল যেতে এসি৫০ রুটের বাসে ভাড়া লাগে ২০ টাকা। কিন্তু বারাসতের এসি বাসে ভাড়া লাগে ৩৫ টাকা।

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

এক-এক রকম ভাড়া

এসি বাসে একই দূরত্বের জন্য বিভিন্ন বাসে বিভিন্ন রকম ভাড়া নেওয়া হয়। ফলে যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাকটরদের প্রায়ই বিবাদ লাগে। একটা উদাহরণ দিই। এয়ারপোর্ট তিন নম্বর গেট থেকে অ্যাপোলো হাসপাতাল যেতে এসি৫০ রুটের বাসে ভাড়া লাগে ২০ টাকা। কিন্তু বারাসতের এসি বাসে ভাড়া লাগে ৩৫ টাকা। বারাসতের এসি বাস চালায় একটি প্রাইভেট কোম্পানি বিএফ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। আর এসি৫০ রুটের বাস সরকারি। পরিবহণ দফতরের কাছে অনুরোধ প্রাইভেট বাসের ভাড়া সরকারি বাসের মতো নেওয়া হোক।

সমীরবরণ সাহা কলকাতা-৮১

সাইকোমেট্রিক

সিবিএসই নির্দেশ দিয়েছে, তাদের পরিচালনাধীন যে প্রায় ১৯ হাজার বিদ্যালয় আছে, তার প্রত্যেক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীকে সাইকোমেট্রিক মূল্যায়ন করাতে হবে (‘দায়িত্ব কাহার’, সম্পাদকীয়, ১৫-৯)। এই পদ্ধতিকে সমর্থন করা যেতেই পারে। কিন্তু ঘটনা হল, যত ক্ষণ না কোনও ব্যক্তিবিশেষের ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিক বিচ্যুতি ঘটছে, তত ক্ষণ এই পরীক্ষার বিশ্লেষণে তেমন কিছু ধরা পড়ে না। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এমনও হতে পারে, এক জন সুস্থ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষও এই পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ে মনোরোগী হিসাবে চিহ্নিত হতে পারেন।’ তখন কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অকারণ তাকে শাস্তির বিধান দিয়ে দেবেন। যদিও হামেশাই ঘটে যে, প্রথম বার এই পরীক্ষা হওয়ার জন্যেই জানা গেল যে, ওঁর এই প্রবণতা আসন্ন। তাই এই পদ্ধতিকে একেবারে অমূলক বলতে পারছি না। তবুও তার কেমিক্যাল অ্যানালিসিস প্রয়োজন এই জন্য যে নিউরোট্রান্সমিটারগুলো এই অস্বাভাবিক আচরণের জন্য দায়ী, সেগুলির অতিক্ষরণ বা অল্পক্ষরণ হচ্ছে কি না! সে ক্ষেত্রে তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন থাকবে এবং সঙ্গে কাউন্সেলিংও চলবে।

প্রত্যেক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের কাউন্সেলিং একান্তই জরুরি। ঠিকই লেখা হয়েছে যে, কমিটিতে অভিভাবকদের অন্তর্ভুক্তি জরুরি। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ব্যক্তিত্ব বিচারের ক্ষেত্রে ক্লাস ফাইভ থেকে টেন বা টুয়েলভ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত খুব দরকার। বহু বার দেখেছি, এক বা একাধিক সামাজিক সমস্যা বা অন্যায়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে তাদের সমাধানসূচক মতামত দিতে। পরিশেষে জানাই, অপরাধ প্রমাণিত হলে, ভারতীয় সংবিধানের নিয়মানুগ শাস্তি তো দিতেই হবে।

সোমনাথ মুখোপাধ্যায় কলকাতা-৫৭

ভুলে না যাই

‘ছলনার স্পর্ধা’ (১৪-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয়র প্রেক্ষিতে এই চিঠি। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ঐতিহাসিক শিকাগো অভিভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি সেই জাতির এক জন বলে গর্ববোধ করি, যে জাতি সব ধর্মের এবং সব দেশের মানুষকে আশ্রয় দিয়ে এসেছে।’ তাই আজ, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিতাড়নের বিরুদ্ধে মুখ খোলার এবং আমাদের দেশে তাঁদের স্থান দেওয়া যায় কি না— সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যদি তাঁদের ধর্ম ও দেশ মুখ্য বিবেচ্য বিষয় হয়ে ওঠে, তবে তা হবে স্বামী বিবেকানন্দের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান প্রদর্শন। শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ যখন স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিতে-ছবিতে আমরা মালা পরিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তখন যেন আমরাই আবার আমাদের অজান্তে তাঁর আদর্শের শ্রাদ্ধ করে না ফেলি! যেন ভুলে না যাই যে, ভারতবর্ষের মহান আদর্শের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই বক্তৃতাতেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা শুধু সব ধর্মকে সহ্যই করি না, সব ধর্মকে আমরা সত্য বলে বিশ্বাস করি।’

সুজিৎ দে কলকাতা-১১০

বিবেকানন্দ

বিশ্বজিৎ রায় বিবেকানন্দের ওপর যে নিবন্ধটি লিখেছেন, তার মধ্যে বেশ কিছু তত্ত্বগত ও তথ্যগত ভুল রয়েছে (‘ধর্মের নামে কারবার নয়...’, ১৫-৯)। প্রথমেই বলি বিবেকানন্দ (এবং অন্যান্য ধর্মগুরু বা মহাপুরুষেরা) স্থান-কাল-পাত্র বুঝে জিজ্ঞাসুর বৌদ্ধিক স্তর ও আধ্যাত্মিক আধার অনুসারে উত্তর দিতেন। যেখানে বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে একই ধর্মজ্ঞ ব্যক্তির বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে বিভিন্ন অসংগতি আছে বলে মনে হলেও বাস্তবে কোনও স্ববিরোধিতা নেই। বিবেকানন্দের দর্শন ও কর্ম-র অনেকটাই অজানা। বিবেকানন্দ-অনুশীলনের জন্য শুধু তাৎক্ষণিক বৌদ্ধিক চর্চাই যথেষ্ট নয়। বিবেকানন্দ সম্পর্কে তাঁর নিজের রচনাবলি ছাড়াও আরও অনেক আকরগ্রন্থ আছে, যেমন— মেরি লুই বার্কের ‘বিবেকানন্দ ইন দ্য ওয়েস্ট নিউ ডিসকভারিজ’ (৬টি খণ্ড), শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’ (৭টি খণ্ড), ‘রেমিনিসেনসেস অব বিবেকানন্দ’ ইত্যাদি।

লেখক লিখেছেন বিবেকানন্দের কাছে ধর্ম ও মোক্ষ দুটি আলাদা মার্গ। এই অদ্ভুত তত্ত্ব তিনি কোথায় পেলেন? বেদ, উপনিষদ, সাংখ্য-যোগ-ন্যায়-বৈশেষিক-মীমাংসা-দর্শন, রামায়ণ বা মহাভারতের কোথাও লেখা নেই ধর্ম ও মোক্ষ দুটি আলাদা মার্গ। ব্যাসদেব, বুদ্ধদেব থেকে শঙ্করাচার্য, বিবেকানন্দ, অরবিন্দ, কেউই বলেননি ধর্ম ও মোক্ষ দুটি আলাদা মার্গ। মোক্ষলাভ ধর্ম ছাড়া হয় না। যিনি ধর্মের পথে যোগ অবলম্বন করে সবিকল্প সমাধি পেরিয়ে নির্বিকল্প সমাধিতে আরোহণ করেছেন তিনিই মোক্ষলাভ করেছেন। অনেকেই মোক্ষলাভের পর সংসারে ফিরে আসেন লোককল্যাণের জন্য। যেমন, বুদ্ধদেব ও বিবেকানন্দ নিজেও। ধর্ম একটা জীবনব্যাপী সাধনা আর মোক্ষলাভ সে সাধনার একটি ফলমাত্র। মোক্ষ, ধর্মের একটা অবস্থান বলা যেতে পারে।

ভারতবর্ষের সংস্কার আন্দোলনে বিবেকানন্দের বিশাল অবদান ও প্রভাবের পরেও কি তাঁকে রক্ষণশীল বলা চলে? তিনি ঐতিহ্যবাহী ছিলেন, কিন্তু রক্ষণশীল কোনও দিনই ছিলেন না। যিশু ও মহম্মদ সম্পর্কে পরম শ্রদ্ধাশীল হয়েও তিনি শ্রীকৃষ্ণকে পূর্ণ অবতার বলেছেন।

বিবেকানন্দ ইসলাম নিয়ে অনেক শ্রদ্ধেয় বক্তব্য লিখেছেন, আবার আগ্রাসী ইসলাম নিয়েও বিবেকানন্দর অনেক উক্তি আছে। যেমন, (১) মুসলমানেরা যখন আরব হইতে ভারতবর্ষে আসিল তাহাদের ছিল আরবী আইন আর আরবের মরুভূমির আইন আমাদের ওপর জোর করিয়া চাপানো হইল (রচনাবলী ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৯, ষষ্ঠ সংস্করণ ১৯৮৮) (২) শতশত বৎসর ধরিয়া আল্লা হো আকবর ধ্বনিতে ভারতগগন মুখরিত হইয়াছে এবং এমন হিন্দু কেহ ছিল না যে প্রতি মুহূর্তে নিজের বিনাশ আশঙ্কা না করিয়াছে। (রচনাবলী ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৭, ষষ্ঠ সংস্করণ ১৯৮৮) (৩) মুসলমান আগমনের সময় ভারতে অনেক হিন্দুর বসবাস ছিল আজ যাহা হ্রাস পাইয়াছে এবং ইহার প্রতিকার না হইলে হিন্দুর সংখ্যা আরও কমিয়া যাইবে, শেষে আর হিন্দু বলিয়া আর কেহ থাকিবে না ও হিন্দুলোপের সাথে সাথে তাহারা যে মহৎ ভাবের প্রতিনিধিরূপ বর্তমান ছিল সেগুলিও বিলুপ্ত হইবে। (রচনাবলী ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬২-২৬৩, ষষ্ঠ সংস্করণ ১৯৮৮)

মেয়েদের কর্তব্য নিয়ে তাঁর একটাও নেতিবাচক বা রক্ষণশীল মন্তব্য নেই। যার প্রমাণ, নিবেদিতা, ক্রিস্টিন, এডিথ এলেন, এমা কালভে, এলিস হ্যান্সবেরা, জোসেফিন ম্যাকলাউডের পত্রাবলি বা সিস্টার ধীরামাতা, সিস্টার দেবমাতার লেখা। বিবেকানন্দের বর্ণাশ্রম প্রথা জন্মভিত্তিক বা বংশভিত্তিক নয়, বরং স্বভাবভিত্তিক ও কর্মভিত্তিক— যার কথা ভগবদ্গীতায় ও মহাভারতে ব্যাস-পরাশর সংবাদে, অরবিন্দর লেখায় বার বার বলা হয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু বলেছেন, বিবেকানন্দ পলিটিক্যালি কারেক্ট ছিলেন না। তিনি পলিটিক্যালি কতটা কারেক্ট ছিলেন, তার প্রমাণ বহু বিদগ্ধ দক্ষিণপন্থী বা বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের লেখায় আছে। কিন্তু স্থান সংকুলান হবে না বলে উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম।

দেবব্রত ঘোষ কলকাতা-১৫৩

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE