একলা মানুষ
দৃশ্য এক, স্থান মাল্টিপ্লেক্স, অপেক্ষাকৃত খালি প্রেক্ষাগৃহে বেশ কয়েকটি আসনের দিকে চোখ পড়ে যায়। কোথাও বড় পপকর্নের পাত্র নিয়ে একা বসে থাকা তরুণী, কোথাও বা স্মার্টফোনে ব্যস্ত থাকা একা তরুণ। আবার আর একটু দূরে হয়তো মাঝবয়সি এক ভদ্রলোক তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় পরদার দিকে তাকিয়ে। তিনিও একাই এসেছেন। দৃশ্য দুই, স্থান ক্যাফে কফি ডে। দু’জনের টেবিলে এক জন মানুষ বিষণ্ণচিত্তে কফির দিকে তাকিয়ে। বা কোনও তরুণী, সেলফি আর হোয়াটসঅ্যাপে মগ্ন, কিন্তু এসেছেন একাই। দৃশ্য তিন, স্থান প্রিন্সেপ ঘাট, নদীর স্রোতের দিকে তাকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষ, যাঁদের পাশের আসনে কেউ নেই। দৃশ্য চার, পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁ, পানীয়ের গ্লাস হাতে কোনও তরুণ আপন মনে সময় কাটাচ্ছে মোবাইল, অথবা রেস্তোরাঁয় চলতে থাকা গানের মধ্যে।
এই দৃশ্যগুলো কিন্তু নিছকই উদাহরণ নয়, এই দৃশ্য বার বার ফিরে দেখা যায় শহরের বিভিন্ন অংশে। আমরা সত্যি কি একা হয়ে যাচ্ছি? এ রকম একলা মানুষ যে একদম দেখাই যেত না, সেই দাবি করছি না। কিন্তু এটা কি সত্যি নয় যে, ইদানীং প্রবণতাটা অল্পবয়সিদের মধ্যেও বেড়ে চলেছে? একটু খেয়াল রাখলে দেখতে পাবেন, আপনি যেখানেই যান না কেন, এই দৃশ্যগুলো আপনার চোখে পড়বেই। মনোবিদদের কাছে আমার প্রশ্ন, অল্পবয়সি মানুষের মধ্যে একাকিত্ব কেন বাড়ছে? নিছকই কি ওঁরা ব্যতিক্রম? না কি অসহনশীলতা? না কি ডিজিটাল জীবনের শিকার? সমাজ কোনও গভীর অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না তো? এর সমাধানই বা কী?
হিমাদ্রি কর্মকার
কলকাতা
ধর্ম-তাস
রোহিঙ্গা-শরণার্থীদের বিষয়ে জহর সরকারের রচনার প্রেক্ষিতে মিহির কানুনগোর ‘ঠিকই তো করেছে’ শীর্ষক চিঠি (৭-১০) পড়ে বোঝা যায়, মূল বক্তব্যটি ধর্মীয়-রাজনীতিরই প্রতিফলন। সেই রাজনীতি সমাজজীবনে ধর্মীয় মেরুকরণ ও জাতিবিদ্বেষের বীজ বপন করে চলেছে। পত্রলেখক নিজেও তা গোপন রাখেননি। প্রকৃতপক্ষে, এমন উদ্যোগ সাম্প্রতিক প্রবণতা নয়। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ এমন তাস খেলেছে, জার্মানিতে হিটলার খেলেছেন। আর সবটাই হয়েছে তথাকথিত জাতীয়তাবাদের মোড়কে। মায়ানমার বা বাংলাদেশেও এ খেলা দেখা গেছে বহু দিন ধরেই।
বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু জামাতপন্থীরা যেমন সংখ্যালঘু হিন্দু ও বৌদ্ধদের মারছে, মায়ানমারেও বৌদ্ধ-মগরা বহু কাল ধরেই পীড়ন চালাচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলমান-রোহিঙ্গাদের উপর। দেশে হিন্দুত্ববাদী শাসকদল সুকৌশলে আমাদের জনমানসে এই ভিত্তিহীন তথ্যটি প্রোথিত করতে সচেষ্ট যে, সংখ্যালঘুর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে তা অবশেষে সংখ্যাগুরুকে দমন করবে। ঠিক একই ভাবে মায়ানমারের শাসকশ্রেণিও দেশের অন্যতম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের (গণনিধনের ফলে যারা ক্রমহ্রাসমান) সংখ্যাগুরু হয়ে ওঠার অলীক প্রচার চালাচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের, ‘অহিংসবাদী’ বৌদ্ধরা রাখাইন প্রদেশটিকে মৃত্যু-উপত্যকা করে তুলতে বহু কাল ধরে সক্রিয়। বৌদ্ধশ্রমণ আশিন উইরাথু প্রকাশ্যেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নানা ফরমান জারি করেছেন। তিনিই বৌদ্ধ-সন্ত্রাসবাদের প্রধান প্রবক্তা ও পরিচালক। আগে তাঁর কারাদণ্ড হলেও, সু চি-র শাসনকালে তাঁর সন্ত্রাসবাদ মাত্রাছাড়া হয়েছে।
উগ্র বৌদ্ধ-জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে তিনি দেশের সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের বোঝাতে ও বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছেন যে, মায়ানমারের মোট জনসংখ্যার ৪.৩ শতাংশ মুসলমান-রোহিঙ্গা বৌদ্ধ সংখ্যাগুরুর পক্ষে বিপজ্জনক। আরাকান প্রদেশ-সহ মায়ানমার (বর্মা) দীর্ঘ কাল ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে-সময় ইতিহাসে আরাকান ও মগদের ‘ভারতীয়’ হিসাবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো মায়ানমারের এই ইতিহাস চিহ্নও অস্বীকারের নয়। তা ছাড়াও, সীমান্তবর্তী বৃহৎ রাষ্ট্রশক্তি হিসাবেও আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার কারণে ভারত উদ্ভূত সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারে না। আর বাঙালি তো পারেই না। কারণ, শরত্চন্দ্রের উপন্যাসেই প্রমাণ, তার সঙ্গে বর্মার যোগ কত নিবিড়।
মায়ানমার যেমন একটি জনজাতিকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে, ভারতও তেমন মত পোষণ করে কাশ্মীরে, বা পাকিস্তান বালুচিস্তানে। কিন্তু, সন্ত্রাসবাদী হিসাবে চিহ্নিত করে সেই জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াসটি রাষ্ট্রের কাছে ‘শান্তির পথ’ হিসাবে পরিগণিত হলেই যে তা দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরা মেনে নেবেন, তা নয়। রাষ্ট্রনীতির ধর্মই সংখ্যালঘুকে রক্ষা ও প্রতিপালন, তাদের হত্যায় ইন্ধন দেওয়া নয়। এমনকী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীও গুজরাত দাঙ্গার সময় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাজধর্ম রক্ষার কথা বলেছিলেন। এই রক্ষাধর্ম কখনও ‘তোষণ’ হতে পারে না।
পত্রলেখক প্রশ্ন তুলেছেন, শরণার্থী রোহিঙ্গারা হিন্দু হলে তথাকথিত মানবতাবাদীরা তাদের প্রতি এমন সংবেদনশীল হতেন কি না। আমরা দেখেছি, লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী-পদপ্রার্থী মোদীও বার বার রাজ্যে এসে হিন্দু শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু, মানবতাবাদীরা বাংলাদেশের হিন্দু বা খ্রিস্টানদের প্রতি আক্রমণে যেমন সরব হন, ঠিক তেমন ভাবেই হয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পক্ষেও। সংখ্যালঘু বিচারে ধর্মচিহ্ন তাঁদের কাছে হিন্দুত্ববাদীদের মতো জরুরি নয়।
তা ছাড়া শরণার্থীদের দেশে ঠাঁই দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়টিও রাষ্ট্র যে সব সময় একই দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখে, তা নয়। ভারত দলাই লামা-সহ বহু তিব্বতি-বৌদ্ধকে ঠাঁই দিয়েছে বলেই মায়ানমারের বৌদ্ধ-পীড়িত রোহিঙ্গাদেরও আশ্রয় দেবে, কথাটা তা নয়। কথাটা হল, এর আগে দেশে শরণার্থী প্রশ্নে ধর্ম-পরিচয় কখনও মুখ্য হয়ে ওঠেনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান শরণার্থীরা যুগপৎ আশ্রয় পেয়েছেন ভারতে। তখন হয়তো পৃথিবীতে জঙ্গিপনা এমন সর্বব্যাপী ছিল না। কিন্তু, সেই কারণে একটি গণঘাতক রাষ্ট্র তার সংখ্যালঘুগোষ্ঠীকে ‘জঙ্গি’ হিসাবে চিহ্নিত করলেই, ভারতও তেমনই করবে, এই দৃষ্টান্ত সরকারের ধর্মবাদী চরিত্রই স্পষ্ট করে।
গৌতম ঘোষদস্তিদার
রহড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
শুনতেই হচ্ছে
বাঙালির মননের মধু সত্যিই জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে নেই। বিজেপির কৌশল এবং তাদের পথের সমর্থক বাঙালিরা নন। কিন্তু ওদের দাবিকে কি পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারছে বাঙালিরা? আর বাঙালির মননের মধু যে জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে নেই, সেই মননের জন্য কৃতিত্ব কিন্তু আগের সরকার দাবি করতেই পারে। অনেক কুফলের মধ্যে এই একটা সুফল বর্তমান সরকার পাচ্ছে।
কিন্তু বর্তমানে এই মনোভাবের কি কোনও উন্নতি হচ্ছে? বরং ধারণা করাই যায় তা একটা সম্পৃক্ত জায়গাতে পৌঁছে গিয়েছে।
মোদ্দা কথা, মনের দিক থেকে বাঙালি না চাইলেও পরিস্থিতি তাদের বাধ্য করছে অমিত শাহদের আগুন-ঝরানো ভাষণ শুনতে।
শুভাশিস ধাড়া
দাসপুর
দুইয়ের মাঝে
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সীমান্তবর্তী কয়েক হাজার বাসিন্দা কলকাতা যাওয়ার জন্য এই রেলপথের উপর নির্ভরশীল। অথচ অফিস টাইমে সকাল ৬:৫০ মিনিটের পর শিয়ালদহ যাওয়ার ট্রেন সেই ৮:০৮-এ। ব্যস্ত সময়ে দীর্ঘ সময় শিয়ালদা যাওয়ার ট্রেন না থাকায় প্রচুর মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। ৬:৫০ ও ৮:০৮-এর মাঝে একটি শিয়ালদহ যাওয়ার ট্রেন চালু করার জন্য আবেদন রাখছি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে।
জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ
পাঁচপোতা, গোবরডাঙ্গা রোড,
উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy