Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদের আঁচড়ে দ্বিখণ্ডিত দুই বাংলার মধ্যে মৈত্রী-বন্ধন দৃঢ় করার উদ্দেশ্য নিয়ে চালু হল নতুন ট্রেন— কলকাতা-খুলনা বন্ধন এক্সপ্রেস। একই সঙ্গে গেদে ও দর্শনার পরিবর্তে কলকাতা আর ঢাকার টার্মিনাল স্টেশন দুটিতেই ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস চেকিং-এর বন্দোবস্ত শুরুর মাধ্যমে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা-সময়ও কমিয়ে আনা হল বেশ কিছুটা। দুটি উদ্যোগই সময়োপযোগী এবং সাধুবাদযোগ্য।

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

আর মনের বন্ধন?

• র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদের আঁচড়ে দ্বিখণ্ডিত দুই বাংলার মধ্যে মৈত্রী-বন্ধন দৃঢ় করার উদ্দেশ্য নিয়ে চালু হল নতুন ট্রেন— কলকাতা-খুলনা বন্ধন এক্সপ্রেস। একই সঙ্গে গেদে ও দর্শনার পরিবর্তে কলকাতা আর ঢাকার টার্মিনাল স্টেশন দুটিতেই ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস চেকিং-এর বন্দোবস্ত শুরুর মাধ্যমে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা-সময়ও কমিয়ে আনা হল বেশ কিছুটা। দুটি উদ্যোগই সময়োপযোগী এবং সাধুবাদযোগ্য।

তবে আরও কিছু বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের তাগিদ অনুভব করছি। ধর্মের ভিত্তিতে বাঙালিকে দুই রাষ্ট্রে বিভক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই ঐতিহাসিক ভাবে দু’পারের বাঙালির মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল সাতচল্লিশ সালে, কালক্রমে রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কারণে সেই ফাটল ক্রমশ প্রশস্ত হয়েছে। একই ভাষায় কথা বলা, একই প্রকৃতি, মাটি আর জলহাওয়ায় লালিত দুই বাংলার সাধারণ মানুষকে তার প্রায় অভিন্ন সংস্কৃতি আদানপ্রদানের সুযোগ ভারত বা বাংলাদেশ— কোনও রাষ্ট্রই দিতে পারেনি, বা বলা ভাল, দিতে চায়নি। বাংলাদেশে বরং ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলি দেখার এবং এই বাংলার সমসাময়িক সাহিত্যপাঠের সুযোগ তুলনামূলক ভাবে বেশি। অথচ অজ্ঞাত ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক কারণে এ বাংলায় ও-পার বাংলার চ্যানেল প্রদর্শন নিষিদ্ধ, মুষ্টিমেয় কিছু বই ছাড়া ওখানকার সমসাময়িক বইপত্রও প্রায় দুর্লভ।

এ বাংলায় অনেকেই আছেন, যাঁরা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নাট্যচর্চা, সাহিত্য, সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে আগ্রহী। বছর দুয়েক আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে টিভি চ্যানেল সম্প্রচারসহ সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বাড়ানোর ব্যাপারে বেশ কিছু আলোচনা এবং চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তার কোনও ইতিবাচক প্রভাব এখনও চোখে পড়ল না। পারস্পরিক দূরত্বের এই অবকাশে দুই ধর্মে বিভক্ত একই বাঙালির মনের ব্যবধান বেড়েছে। রাজনীতির ইন্ধনে পরস্পরের প্রতি বেড়েছে অনাস্থা, অবিশ্বাস। অথচ সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ক্ষেত্রটি সুগম হলে মননচর্চার পরিসরটি যেমন বাড়ত, তেমনই সম্প্রীতির বন্ধনটিকেও নিবিড়তর করা যেত। তা না করে শুধুমাত্র ট্রেনপথে যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে ঐক্যবৃদ্ধির প্রচেষ্টা কতখানি সাফল্য আনবে, বলা শক্ত।

সুমন চক্রবর্তী

মাহেশ, শ্রীরামপুর, হুগলি

অখণ্ড রাষ্ট্রচেতনা

• রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, আমাদের নেশান ছিল না, ছিল দেশ, ছিল সমাজ ও বিশ্ববোধ (‘নেশানের জবাবে রবীন্দ্রনাথ’, ১-১১)। আসলে ইংরেজিতে যা ‘ন্যাশনালিজম’, বাংলায় তা-ই ‘জাতীয়তাবাদ’। কিন্তু ‘ন্যাশনালিজম’ আর ‘জাতীয়তাবাদ’ সমার্থক নয়। জাতীয়তাবাদকে অতিক্রম করে যায় জাতীয়তাবোধ, যা একটি দেশ ও জাতির ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৮৬৬ সালে বাংলায় প্রথম ‘ন্যাশনালিজম’ শব্দটা চালু হয় এবং অরবিন্দ আর একটি ইংরেজি প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রকে ‘ন্যাশনালিস্ট’ বলেছিলেন। বিবেকানন্দ নিজেও কিন্তু ভারতবর্ষকে একটা জাতি ও রাষ্ট্র বলেই অভিহিত করেছেন।

প্রাচীন ভারতে রামায়ণ বা মহাভারতের যুগে রাষ্ট্রচেতনা ছিল, এমনকী পরবর্তী মৌর্য, গুপ্ত যুগ পেরিয়ে আধুনিক ভারতেও সেই অখণ্ড রাষ্ট্রচেতনার ধারাই বহমান। উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্য শাসকদল ও রাজনৈতিক দলগুলোই দায়ী। রাষ্ট্রচেতনার ধারণা তার জন্য ভুল প্রমাণিত হয় না। রবীন্দ্রনাথের কাছে গ্রাম ও গ্রাম্যতা ভিন্নার্থক ছিল। কারণ গ্রামের মানুষের সারল্য, আতিথেয়তা, আন্তরিকতা যদি পল্লিজীবনের আকর্ষণ হয়ে থাকে, তবে সংকীর্ণতা, চিন্তার দৈন্য, বৌদ্ধিক চর্চার অভাব ছিল গ্রাম্যতার সংজ্ঞা। স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামের যে ছবি রবীন্দ্রনাথ (এবং গাঁধীজিও) এঁকেছিলেন ও বাস্তবায়িত করতে চেয়েছিলেন, আজ সেটা আর সম্ভব নয়। কারণ প্রযুক্তিনির্ভর ভোগবাদী নাগরিক জীবনের আত্মসুখসর্বস্বতা গ্রামীণ জীবনে মূল্যবোধের চরম বিপর্যয় ও বিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দেশভাগের পর, যেটা রবীন্দ্রনাথ দেখে যাননি।

নেশানের নামে বজ্জাতি, যা বর্তমানে চলছে, সেটা রবীন্দ্রনাথই প্রথম বলেননি। রম্যাঁ রলাঁ-র কাছে ইতালির পরিস্থিতি জেনেও রবীন্দ্রনাথ মুসোলিনির সঙ্গে শুধু সাক্ষাৎই করেননি, তাঁর প্রশংসাও করেছিলেন যা রম্যাঁ রলাঁ-কে পীড়িত করে। যাঁরা বিবেকানন্দ ও অরবিন্দ চর্চা করেন, তাঁরা জানেন উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বিবেকানন্দ বার বার সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এবং অরবিন্দ, বাঘা যতীন, সূর্য সেন বা নেতাজি কেউই উগ্র জাতীয়তাবাদী ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথের ‘মানুষের ধর্ম’ অসাধারণ গ্রন্থ। কিন্তু সেটা তাঁর গভীর মনন, উপনিষদের গভীর পাঠ ও বৌদ্ধিক চর্চার মুদ্রিত রূপমাত্র, যা বিবেকানন্দ বা অরবিন্দের দার্শনিক চেতনার তুলনায় নগণ্য। বিবেকানন্দের পত্রাবলি, রচনাবলি, অরবিন্দের ‘দ্য লাইফ ডিভাইন’, গীতানিবন্ধ, যোগসমন্বয় ইত্যাদি গ্রন্থে উচ্চতর, বৃহত্তর ও মহত্তর ধর্ম প্রকাশিত, যার অনুসরণ সমগ্র মানবজাতির পক্ষেই হিতকর।

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য, ছোটগল্প এবং সংগীতের একান্ত গুণগ্রাহী ও পাঠক হয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি, ‘মানুষের ধর্ম’ আমাদের সেই আলোকিত পথে বহন করতে পারবে না একটা স্তরের পর। ঠিক এখানেই বিবেকানন্দ বা অরবিন্দের দার্শনিক চেতনার প্রয়োগ অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ও মূল্যবান। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, ‘ন চ সর্বং বিধিয়তে... প্রভবার্থায় হি ভূতনাং ধর্মপ্রবচনং কৃতম।’ অতীত অনাগত সমস্ত বিষয়েই সমস্ত বিধিবিধান দেওয়া আছে কোনও একটা গ্রন্থে, তা হতে পারে না। কাজেই একমাত্র পথ, একমাত্র মত, চূড়ান্ত মতবাদ বলে কিছু হয় না। রবীন্দ্রনাথের অনেক আগে মহাভারতে সেটি বলা হয়েছে।

ভারতবর্ষ অসংখ্য বৈচিত্রের সমাহারে একটা অখণ্ড জাতিসত্তার স্বদেশভূমি। প্রাচীন যুগে এখানে ‘বহুজাতিক তত্ত্ব’ বলে কিছু ছিল না। ব্রিটিশ আমলে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি’ থেকে এই তত্ত্বের প্রচলন, যা আমরা বহন করছি। ভারতবর্ষে একটাই জাতি বাস করে, ভারতীয় জাতি, যা বৃহত্তর মানবজাতির এক আঞ্চলিক অংশমাত্র।

উগ্র রাষ্ট্রচেতনা একটা বিশ্বজনীন সমস্যা। কারণ পড়শি দেশ যদি উগ্র জাতীয়তাবাদী হয়, তা হলে অজান্তেই আমরাও তা-ই হব, এটা ইতিহাসের নিয়ম। নান্দনিক চেতনার উচ্চ স্তরে থেকে রবীন্দ্রনাথকে সংকীর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহার না করাই ভাল।

দেবব্রত ঘোষ

কলকাতা-১৫৩

দেখতেই হবে

• আমাদের কেবল অপারেটর সম্প্রতি সিটি কেব‌্ল-এর অনুষ্ঠান প্রচার করছেন। টিভি খুললেই সবার আগে চলে আসে একটি বিশেষ খবরের চ্যানেল। ওপরে ঘোষণা: দেশের এক নম্বর নিউজ চ্যানেল! রিমোট কোনও কাজ করবে না যতক্ষণ না ৩০ সেকেন্ড সেই চ্যানেল দেখছেন; আরও ৩০ সেকেন্ড টেলি শপিং দেখতেই হবে! তার পর চ্যানেল বদল করা যাবে।

শান্তনু চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা-৯৪

লজ্জা কার?

• ওরা থাকে ফুটপাতে। ছাত্র সুজিত, মঙ্গল আর সন্ধ্যা দাস। ওদের দুপুরের খাবারটা স্কুলেই জোটে। তাই নিয়মিত যেতে হয় স্কুলে।

গত ৫ নভেম্বর রাত তিনটে। একটি মারুতি ভ্যান এসে চটপট মঙ্গল আর সন্ধ্যা দাসের স্কুলব্যাগ তুলে নিল গাড়িতে। মঙ্গল, সন্ধ্যার মা চিৎকার করতে থাকে— ‘ওতে কিছু নেই গো। ওটা বাচ্চাদের স্কুলের ব্যাগ।’ মঙ্গলের বাবা ছুটে গিয়ে মারুতির উপরেই লাফিয়ে ওঠে। বিবেকানন্দ রোডে উঠে জোর ব্রেক কষে ফিল্মি কায়দায় তাঁকে ফেলে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয় তারা। পর দিন সকালে মঙ্গল, সন্ধ্যা ব্যাগের ভেতরে রাখা বই-খাতা ও একমাত্র ইউনিফর্ম চুরি হওয়ায় লজ্জায় স্কুলে আসেনি। এ লজ্জা কার?

অনাথ মৃধা

ই-মেল মারফত

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE