Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

অবস্থাটা ঘোরালো হয়েছে অল্প কিছু দিন আগে থেকে, কোনও কোনও সংস্থার নির্দিষ্ট স্কিমে একটা নির্দিষ্ট সময়কাল যত খুশি কথা বলা যায়।

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

মহামারী মোবাইল

কয়েক বছর হল কোনও অফিসে গেলেই দেখা যায়, চেয়ারাসীন ব্যক্তি মোবাইলে একটানা কথা বলছেন অথবা টাচ-স্ক্রিনে আঙুল ঠেলাঠেলি করছেন। বোঝাই যায়, সেটা অফিস সংক্রান্ত আলাপচারিতা নয়। শুধু অফিস কেন, খরিদ্দারকে উপেক্ষা করে দোকানদার মোবাইলে কথা চালিয়ে যাচ্ছেন— এমন দৃশ্যও বিরল নয়। মোবাইলমগ্নতা এখন জাতীয় অভ্যাস। কমবেশি সকলেই এখন মোবাইল জ্বরে আক্রান্ত।

অবস্থাটা ঘোরালো হয়েছে অল্প কিছু দিন আগে থেকে, কোনও কোনও সংস্থার নির্দিষ্ট স্কিমে একটা নির্দিষ্ট সময়কাল যত খুশি কথা বলা যায়। কারও আবার ২৪ ঘণ্টায় ১ জিবি ফ্রি। সুবিধা পুরো উসুল করতে চলছে ফাঁসির খাওয়ার মতো কথা বলা বা নেট ব্যবহার। সন্ধ্যায় স্ত্রীকে সময় দেওয়া বা পুত্র-কন্যার পড়া দেখার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি সংযোগ সংস্থার বরাদ্দটা পুরোপুরি ভোগ করা। বেশি কথা বলানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে একাধিক সংস্থা। অনর্গল কথা চলছে। হয়তো ব্যাপারটার মধ্যে ভাল দিক আছে। ঘন ঘন তত্ত্ব-তালাশের ফলে অনেক আবছা সম্পর্ক পোক্ত হচ্ছে। কিন্তু চিরকাল সংস্থাগুলি এই সুবিধা দেবে, না কথার নেশা ধরিয়ে দিয়ে হুইল গোটাতে শুরু করবে, জানা নেই। জনতা ব্যবসায়ী সংস্থাগুলির হাতের পুতুল। এমনও হতে পারে, দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলার জন্য গিফট হিসেবে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়বে।

তবে, কাজের জায়গায় হাবিজাবি কথা বলার জন্য চাকরিটি খোয়া যেতে পারে। ব্যবসাও হতে পারে চৌপাট। কথা বলতে বলতে রাস্তা অথবা রেল লাইন পার হতে গিয়ে মহার্ঘ জীবনটিও যেতে পারে গচ্চা। কী যে হবে, বলা দুষ্কর। তবে দীর্ঘ ক্ষণ কানে মোবাইল চেপে বকে চললে কানটি যাবে, তার পর বিবিধ শারীরিক বেগড়বাই— এটা নিশ্চিত। ভাবনাচিন্তার সময় কি আসেনি?

বিশ্বনাথ পাকড়াশি শ্রীরামপুর-৩, হুগলি

এডিসের চিঠি

আমার ছোট্ট পরি যখন সাঁতরে জল থেকে উঠল, তখন তার রূপ দেখে কে! কে বলবে গত সাত দিন ও এই পুরনো ফুলের টবে নিতান্ত ল্যাগবেগে চেহারা নিয়ে ভাসছিল। কী মিষ্টি ফুটফুটে দাগ ওর শরীর জুড়ে। পেটের ট্যাঙ্কটাও বেশ গোল ধরনের। বিধাতার সৃষ্ট সব কল্পনাই যেন ওর রূপের কাছে ডাহা ফেল। ধন্যবাদ জানাই আমাদের হিতৈষী মানবসমাজকে; যারা আমাদের স্বাধীন ভাবে খেয়ে, উড়ে বেঁচে থাকার লাইসেন্সটুকু দিয়েছে।

গত সাত দিন কী আতঙ্ক নিয়ে যে সময় কেটেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। এই বুঝি এল... এই বুঝি কোনও পুরসভার গাড়ি এল। কিন্তু না, তারা মহানুভব। সপ্তাহ ধরেই তাদের কোনও দেখা নেই। এলেও রাস্তার ধারে এক বস্তা আটামার্কা ব্লিচিং ঢেলে কোথায় যেন পান-টান খেতে চলে যায়। আবর্জনা ছড়াতে কিন্তু এই বাংলার মানুষের জুড়ি মেলা ভার। যেখানে ফাঁক দেখা যায়, সেখানেই ‘নিষিদ্ধ’ প্লাস্টিক মুড়ে মালপত্র ঠুসে দেন। বৃষ্টি এলে ও-সবে জল জমে সবাই জানে। তার জন্য বৃষ্টিকে দোষ দিয়ে লাভ কী! আমরা মেয়েরাও তখন আনন্দে সেখানে দলে দলে এসে জুটি। পচা কোয়ালিটির বিষ ছড়ালে মিস এডিসের অভাব হয় না। আর মশাই ওই সাদা ক্লোরিনের গন্ধে আমাদের কচু হয়। রক্তের ভাঁড়ারে টান পড়লে ব্লিচিং দিয়ে আমরা ব্রেকফাস্টও সেরে ফেলি। তবে এ রাজ্যে আর যা-ই হোক, মানুষের শরীরে রক্ত প্রচুর। তাই খোরাকিতে টান পড়ে বললে খানিক মিথ্যেই বলা হবে।

বুঝলেন তো আমি কে! আমিই বাংলার মুখ। নিত্য দিন আমার সৃষ্টিকে রেফার করতে করতে ডাক্তারবাবুরা ক্লান্ত। টিকা খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ল্যাজেগোবরে। আমার নামের গোড়ায় বিশেষণ জুড়ে প্রথম পাতায় নিউজপ্রিন্ট এত খরচ হয়েছে যে ভোটের রেজাল্ট তার কাছে নস্যি। খবর আসে যায়; কিন্তু আমরা থেকে যাই। বাংলার সুমিষ্ট রুধির আমি পান করিয়াছি; অকৃপণ ভাবে ডেঙ্গি দান করিয়াছি। তাই বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার কোনও খান নয়, আমিই বাদশাহ।

এই বাংলার প্রত্যেকটি মানুষ যিশুর মতো ক্ষমাশীল। নেতা-নেত্রীদের চাঁদপানা মুখ নিয়ে রাস্তা জুড়ে যত ক্যানভাসিং হয়, ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার কয়েক লাইন তাদের মাঝে অনাথ শিশুর মতো নিজের একটুকু বাসা খুঁজে মরে। ব্যস, এখানেই আমরা ওদের টেক্কা মেরে বেরিয়ে যাই। আমরা আমাদের কাজটুকু তো মন দিয়ে করি। দিনের পর দিন আরও বড় বড় অভিযোজিত হুল শানিয়ে উদরপূর্তি করেই যাই। আর ওরা শুধু মৃত্যুসংখ্যার সঙ্গে একমনে নিজেদের মানিয়ে নেয়।

আমার এটা সবথেকে ভাল লাগে যে এরা বক্তিমে দেবে, আলোচনা করবে, নিজেদের প্রশংসা করে টাইম মিললে টিভিতে মুখ এবং দাঁত দেখাবে। কিন্তু নিজের আশপাশ এতটুকু পরিষ্কার করবে না। উলটে চায়ের কাপগুলোকে টুক করে চার পাশে ছড়িয়ে কেটে পড়বে। ভাঙাচোরা রাস্তার প্রতিটি কোণে জল। কংক্রিটের পরতে জল ঢুকবে কোথায়। মাটি ইতিমধ্যেই ভ্যানিশ। ভাঙা ফুটপাতে আমাদের চাহিদামত খোঁদল করা আছে। জল জমে থাকে গাছের গোড়ায়, বহুতলের চার পাশে। পুরসভার হত্তাকত্তারা বলেন ও-সব ব্যক্তিগত জায়গা। আমরা পরিষ্কার করব না।

আমাদের আদর্শ, ‘হুল বিঁধাইয়া যাও, সব সময় ডেঙ্গির আশা করিয়ো না’। আমার এক বড় মেয়ের কামড়ে ডেঙ্গির স্ট্রাইক রেট তো বিরাট কোহালির থেকেও বেশি। হাসতে হাসতে সে দিন বলল— মা, ওই গ্রামেগঞ্জে কামড়েও সুখ। কোনও হাসপাতাল নেই, ল্যাবরেটরি নেই, ডাক্তার নেই। সারাবে কে! ওর ডানা চাপড়ে বললাম— জুরাসিক যুগে জন্মালে তুই স্পিলবার্গের ডাইনোদেরও ঠিক কামড়ে দিতিস। তোকে নিয়েও মস্ত সিনেমা হত। মেয়ে তো হেসেই কুটিপাটি।

এখন আমার ছোট্ট পরি কেমন তিরতিরিয়ে উড়তে শুরু করেছে। একটু সামলে নিয়েই কাজে লেগে পড়বে। ওকে পরিষ্কার বলে দিয়েছি— আগামী তিরিশ দিনে যে ক’টা মানুষ-অমানুষ পাবে, তাদের থেকে রক্ত টেনে নাও। আর ফিরতি উপহার হিসেবে ক’টা ভাইরাস ঠেলে দাও। কেউ যেন আমাদের সমাজকে বদনাম না করতে পারে যে, শুধু নিয়েই গেলে, দিলে না কিছুই।

উত্তরায়ণ সেনগুপ্ত ই-মেল মারফত

অশ্রাব্য রাজনীতি

কুমার রাণা ‘অশ্রাব্য সংস্কৃতির’ উন্নতিবিধানে সেই বামপন্থীদের ওপরই ভরসা রাখছেন (‘এই অশ্রাব্য রাজনীতি’, ২৭-১০)। তিনি বামপন্থীদের সমালোচনা করছেন এই বলে যে, ক্ষমতার মৌতাতে আবিষ্ট হয়ে এত দিন তাঁরা ‘সামুদয়িক’ রাজনীতির জটিলতা নিয়ে চর্চা ছেড়ে জোলো রাজনীতির চর্চা করেছেন। এর ফলেই নাকি এই বিপত্তি। এই অবস্থান পালটে প্রান্তের সঙ্গে আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে বামপন্থীরা নতুন শ্রাব্য ভাষা সংস্কৃতির পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু জীবনের সমস্ত আচরণেরই যথাযথ রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটানোর মতো এলেম আদৌ বামপন্থীদের মধ্যে আছে কি না, তা নিয়ে ইদানীং অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। গম্ভীরানন পার্টিকর্মীদের জলদগম্ভীর সুরে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের উচ্চারণ প্রান্তীয় জনগণকে অনেক দিন ধরে তাঁবে রেখেছিল। মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকের এই দাপটের অবসান ঘটলে চাপা পড়া ‘অশ্রাব্য গ্রাম্যতার’ উত্থান ঘটল।

একই ঘটনা কিন্তু ভারতের অন্য প্রদেশগুলিতে গত কয়েক দশক জুড়ে ঘটে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গেও ঘটল। পশ্চিমবঙ্গ কি ‘অশ্রাব্য রাজনীতির’ আঁচ এড়িয়ে চলতে পারবে?

প্রদ্যুম্ন বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা-১২

ভ্রম সংশোধন

গত কাল (২১-১১) খেলার পাতায় (পৃষ্ঠা ১৬) কিছু সংস্করণে ‘শতকের হাফসেঞ্চুরি: দুই নায়কের যাত্রাপথ’ শীর্ষক গ্রাফিকে ভুলবশত লেখা হয়েছিল, সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরি করা ভারতীয়দের তালিকায় শীর্ষে আজহারউদ্দিন (২২)। ঠিক তথ্যটি হবে সচিন তেন্ডুলকর (৫১)। আজহারের আগে আছেন সচিন ছাড়াও রাহুল দ্রাবিড় (৩৬), সুনীল গাওস্কর (৩৪) এবং বীরেন্দ্র সহবাগ (২৩)। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE