Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

পুরুষের সব কিছুই শ্রেষ্ঠ, তাই তার পোশাকও অনুকরণযোগ্য। আর মেয়েদের মতো, মেয়েদের সাজপোশাকও অবজ্ঞার যোগ্য।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

ছেলেরা ফ্রক পরুক

অন্বেষা দত্তের নিবন্ধ (‘রেখেছ পুরুষ করে’, ২৮-১১) অত্যন্ত সময়োপযোগী। নারীবাদ পুরুষতন্ত্রের বিরোধিতা করে, পুরুষের নয়। বরং পুরুষতান্ত্রিক সমাজ পুরুষের জীবনেও যে বৈষম্য সৃষ্টি করে তারও অবসান চায় নারীবাদ। নিবন্ধে আছে ছেলেদের ‘মানুষ’ করার কথা এবং সে প্রসঙ্গে এসেছে নারী-পুরুষের নিজের ইচ্ছেমত পোশাক পরার কথা। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েরা যদিও বা পুরুষের পোশাক পরতে পারেন, এক জন পুরুষের কি মহিলার পোশাক পরার স্বাধীনতা আছে? বাবা-মা সোৎসাহে মেয়ের জন্য শার্ট-প্যান্ট কিনছেন, এ তো হামেশাই দেখছি। কিন্তু কোনও মা-বাবাই, শাড়ি তো দূরস্থান, ফ্রক পরতেই ছেলেদের উৎসাহিত করবেন কি? বরং এমন কিছু হলে ‘গেল গেল’ রব ওঠে, প্রশ্ন ওঠে সেই পুরুষের যৌন পরিচয় নিয়ে, তিনি হয়ে ওঠেন ব্যঙ্গ-উপহাসের পাত্র। এর পিছনে সেই পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব। পুরুষের সব কিছুই শ্রেষ্ঠ, তাই তার পোশাকও অনুকরণযোগ্য। আর মেয়েদের মতো, মেয়েদের সাজপোশাকও অবজ্ঞার যোগ্য।

অনন্যা চট্টোপাধ্যায় কলকাতা-১০৬

কাঠামো নেই

মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিবন্ধটিতে (‘ফেল করানোর যুক্তি’, ৩০-১১) আবেগ যতটা, যুক্তি ততটা নেই। রাজ্য সরকারের অ্যানুয়াল স্টেটাস রিপোর্ট অনুসারে, প্রথম শ্রেণিতে যত ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়, তার ৫০% ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকে বসে। ২০০৬ সালে প্রাথমিকে ভর্তির সংখ্যা ছিল ২২ লক্ষের কিছু কমবেশি, ২০১৬ সালে মাধ্যমিক দেয় প্রায় ১১ লক্ষ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য দিকে একটা সংখ্যা চলে যায় ধরলেও, যা পড়ে থাকে তা ভয়াবহ। বাকি প্রায় ১০-১১ লক্ষ ছাত্রছাত্রী পড়া ছাড়তে বাধ্য হয় কেন? পাশ-ফেল তো নেই?

অভিজ্ঞতায় জানি, সীমাহীন দারিদ্র মাঝপথে বহু জনকে পড়া ছাড়িয়ে দেয়। গ্রামের বহু মানুষও প্রায়ই আবদার নিয়ে আসেন, দুর্বল ছাত্রছাত্রীকে আরও এক বছর একই শ্রেণিতে রেখে দিতে। একটি শ্রেণিতে সবাই সমান মেধার হয় না। অনেকে বেশি সময় দাবি করে। পাশ নম্বর তো বিরাট কিছু নয়। সেটুকু তুলতে পারছে না মানে তার আর একটু সময় দরকার। এই দাবি কি অন্যায্য?

আসলে যথাযথ পরিকাঠামো নেই, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত যথাযথ নয়। চরম অব্যবস্থায় তাই মূল্যায়নের কোনও দিক-দিশা নেই। শিক্ষকরা আদৌ ঠিকমত পড়াচ্ছেন কি না, তারও মাপকাঠি নেই। এই অবস্থায়, সেরেফ একটা আদর্শ পরিস্থিতি ধরে নিয়ে পাশ-ফেল তুলে দিলে চলে?

মৃণাল শতপথী ইন্দা, পশ্চিম মেদিনীপুর

মজা বেড়েছে

মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় পাশ-ফেল না রাখার যে যুক্তিগুলো দিয়েছেন তা বহু পুরনো। আশির দশকে রাজ্য সরকার যখন প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি এবং পাশ-ফেল তুলে দেয়, এই যুক্তিই দিয়েছিল। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী যত পদক্ষেপ করা হয়, তার সবই গরিব মানুষের জন্য ‘কুমিরের কান্না’ কেঁদেই নেওয়া হয়, তা সে নোটবন্দিই হোক আর পাশ-ফেল তুলে দেওয়া। কিন্তু দীর্ঘ তিরিশ বছর পর প্রমাণিত, পাশ-ফেল তুলে দিয়ে শিক্ষার সামগ্রিক মানেরই ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে গেছে, গরিব শিক্ষার্থীরাও যার শিকার। গ্রামে হতদরিদ্র পরিবারের একটা অংশের ছেলেমেয়ে ভাত খেতে স্কুলে আসে, এটা ভাল কথা। কিন্তু তার ওপরের স্তর— নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের যে ছেলেমেয়েরা আসে, তারাই এখন সরকারি স্কুলে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের মধ্যে যারা তিরিশ শতাংশ নম্বরও পায় না, দেখা যায় তারা খুব একটা স্কুলে আসেই না। তারা মিড-ডে মিলের তোয়াক্কা করে না, তবে পোশাক, সাইকেল, কন্যাশ্রীর টাকা নিতে আসে। এই স্কুল-বিমুখতার কারণ কী? দারিদ্র একমাত্র যুক্তি হতে পারে না, কারণ প্রতি বছরই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে প্রত্যন্ত গ্রামের অনেকেই ভাল ফল করছে। আসলে উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা, যারা ইতিমধ্যেই ভবিষ্যতের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে, দেখছে, তাদের দাদা-দিদিরা ভাল ফল করেও চাকরি পাচ্ছে না। সরকারি দফতরে নিয়োগ বন্ধ অথবা লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি। তেলেভাজার দোকানের জন্য তো পাশ করার দরকার নেই। ফলে, ছাত্রছাত্রীদের মনে দেখা দিচ্ছে পড়াশোনার প্রতি চরম উপেক্ষা।

দ্বিতীয় কারণ, রুচি ও সংস্কৃতির মারাত্মক অধঃপতন। মদ, জুয়া, গালাগালি, মারপিট, নোংরামির বন্যা। তা ছাড়া এখন ছেলেমেয়েদের সারা বছর বড্ড মজা করতে হয়। ক্রিকেট, তিন মাস পুজো, বিয়ে, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন— সব কিছু নিয়েই বড়দের চরম বাড়াবাড়ি। পরিবেশটাই পড়াশোনার প্রতিকূল। পাশ করার দায় থাকলে তবু ক’দিন বই নিয়ে বসতে বাধ্য করা যায়।

পার্থ ভট্টাচার্য ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

‘বিদেশি’ বাস্তব

পড়াশোনা শিখতে পারা বা না পারার মধ্যে পাশ-ফেলের কোনও ভূমিকা থাকার তো কথা নয়। গান, ক্রিকেট, নাচ শিখতে দলে দলে ছেলেমেয়ে ভিড় করে। সেখানে তো ‘ফেল’ বলে কেউ মাথায় হাত দেয় না। আসলে, এ দেশের মধ্যে সেঁধিয়ে আছে একটি ‘বিদেশ’। সেখানকার নাগরিকরা ভাবতেই পারেন না, মিড-ডে মিল খাওয়ানো স্কুলগুলিতে পড়াশোনা হয়। তাঁরা নিজেরা টাকা দিয়ে ঝকঝকে ‘প্যাকেজড’ শিক্ষা কেনেন। তাই, পাশ-ফেল ফিরে এলে প্রান্তিক মানুষ, সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি, জনজাতিদের কী হবে, এ ভাবনায় তাঁরা উদ্বিগ্ন হবেন কেন? তাঁরা ভাববেন, তাঁদের সন্তান ‘টপ’ করবে কি না, আমেরিকায় যাবে কি না। যাঁদের ভয় নেই, ভার বহনের বন্দোবস্ত আছে, তাঁরা কেন ভয়মুক্ত ভারমুক্ত শিক্ষার অধিকার নিয়ে মাথা ঘামাতে যাবেন?

অরণ্যজিৎ সামন্ত কলকাতা-৩৬

আসল কাহিনি

শেষ সেনসাস অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিতের হার ৭৭.০৮%, সর্বভারতীয় গড় ৭৭.০৪% এর থেকে বেশি। শুনতে চিত্তাকর্ষক। কিন্তু আসল কাহিনি? তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির অনেক ছাত্রছাত্রী বাংলা বর্ণমালাও পড়তে পারে না। অথচ সেনসাসে সাত বছরের ঊর্ধ্বে স্কুলে পড়া সব শিশুই ‘শিক্ষিত’ তকমা পেয়ে যাচ্ছে। পাশ-ফেলের বাঁধন না থাকায় অষ্টম শ্রেণি পেরিয়ে যাচ্ছে এরা। তার পর মাধ্যমিকে ঢালাও নম্বর পেয়ে শিক্ষিত বেকারদের তালিকা সমৃদ্ধ করছে। এহেন শিক্ষাব্যবস্থায় পাশ-ফেল চালু করলে, প্রতিবেদকের মতে, মেয়েদের সমস্যা হবে। স্কুলছুট, বাল্যবিবাহ, মেয়ে পাচার বাড়বে। কাকতালীয় ভাবে, প্রতিবেদনটির পাশের পাতায় একটা খবর আছে: এক অষ্টম শ্রেণির মেয়ে স্কুলের দিদিমণিদের কাছে জানিয়েছে, তার মা তাকে বিক্রি করে দিতে চায়, অথচ সে পড়তে আগ্রহী। জানতে চাই, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে স্কুলের পাশ-ফেলের কি কোনও সম্পর্ক আছে?

পূজা সেনগুপ্ত দে কলকাতা-৮

ভ্রম সংশোধন

• ‘ক্যামেরার জাদুকর অজয় কর’ শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে ১৯৮৪ সালে যখন ‘বিষবৃক্ষ’ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন গিয়েছিলেন উত্তমকুমারের কাছে (‘পত্রিকা’, ২-১২)। ঠিক সালটি হবে ১৯৮০।

• ‘সামাজিক হোক পড়ুয়ারা, চায় শিক্ষা দফতর’ শীর্ষক খবরে (‘কলকাতা’, ২-১২) নুটবিহারী দাস গার্লস স্কুলের নাম ভুলবশত নুটবিহারী দাস বয়েজ স্কুল প্রকাশিত হয়েছে।

এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটিরগুলির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE