Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

সভার মহিলাদের কাছে সেটা ছিল এক চরম বিস্ময়কর ঘটনা। শশী কপূর অপার ধৈর্যে তাঁদের প্রত্যেকের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন।

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

অন্য রকম শশী

২০০২ সাল। আমি পুণের এক মিলিটারি হাসপাতালের কমান্ড্যান্ট। সেই হাসপাতাল এশিয়ার বৃহত্তম প্যারাপ্লেজিক সেন্টার হিসাবে পরিচিত। যুদ্ধ কিংবা দুর্ঘটনায় আহত, কোমরের নীচ থেকে, এমনকী গলার নীচ থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত সৈনিকদের সুস্থ করে তুলে যতটা সম্ভব কর্মক্ষম করে তোলা হয় ওই হাসপাতালে। ক্যান্সার সচেতনতা নিয়ে এক আলোচনা সভায় আমি আমন্ত্রিত। সেখানে শশী কপূরের সঙ্গে দেখা হল। স্ত্রী জেনিফারের মৃত্যুর পর ক্যান্সার-আক্রান্তদের পাশে সক্রিয় ভাবে থাকতেন শশী কপূর। সভার শেষে ওঁকে আমার হাসপাতালে, পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী সৈনিকদের সঙ্গে কিছু সময় কাটাবার অনুরোধ করলাম। ব্যস্ততার মধ্যেও উনি পর দিন সকালে আসতে রাজি হলেন। ওঁকে না জানিয়ে আমি অফিসার এবং অন্য সৈনিকদের স্ত্রীদের বললাম, একটি সভার আয়োজন করতে। সৈনিকদের স্ত্রীদের কাছে তাঁদের সমস্যা জানার জন্য প্রত্যেক মাসেই তেমন সভা হত। ওঁরা তেমনই কিছু ভেবেছিলেন। পাছে নিরাশ হতে হয় তাই আগে শশীর আসার কথা ওঁদের জানাইনি।

পরদিন নির্ধারিত সময়ে উনি এলেন। বললেন কিছুই খাবেন না, শুধু ঘন ঘন চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি খাবেন। ওঁকে কাছে পেয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত সৈনিকদের আনন্দের সীমা ছিল না। মানুষটার চোখেমুখে দরদ উছলে পড়ছিল। ওখান থেকে বেরতেই, একটু সংকোচের সঙ্গে ওঁকে জানালাম সৈনিকদের স্ত্রীদের সভার কথা। উনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন।

সভার মহিলাদের কাছে সেটা ছিল এক চরম বিস্ময়কর ঘটনা। শশী কপূর অপার ধৈর্যে তাঁদের প্রত্যেকের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। আধ ঘণ্টার জন্য এসেছিলেন, কিন্তু দু’ঘণ্টা কাটিয়ে গেলেন। খ্যাতিমান হলেও কতটা বিনয়ী থাকা যায় শশী কপূর ছিলেন তার উজ্জ্বল উদাহরণ।

সমরেন্দ্র মৌলিক বেহালা

কে পথিকৃৎ

দেবব্রত ঘোষের চিঠিতে (‘পথিকৃৎ স্বামীজি’, ৩০-১১) জানলাম, ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন নাকি নেতাজি জার্মানি থেকে বসে পরিচালনা করেছিলেন এবং এই আন্দোলনে কংগ্রেসের কোনও অবদান ছিল না! ১৯৪২-এর ২৬ এপ্রিল ‘হরিজন’ পত্রিকায় গাঁধীজি ‘ভারত ছাড়ো’ বলে একটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রথমে ১৪ জুলাই ওয়ার্ধা অধিবেশনে, তার পর ৮ অগস্ট বোম্বাই অধিবেশনে, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি পরের দিন ৯ অগস্ট থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। ৮ অগস্ট ১৯৪২, অসহযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ঘোষণা করেন গাঁধীজি। তিনি ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃবর্গকে ব্রিটিশ পুলিশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করে ও বিনা বিচারে জেলে ঢোকায়। এই খবরে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। জেলের বাইরে যে নেতারা সে দিন অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁরা হলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ, লালবাহাদুর শাস্ত্রী ও রামমনোহর লোহিয়া (এঁরা ভারতের জাতীয় কংগ্রেসেরই নেতা ছিলেন, কামচাটকা থেকে আসেননি)।

এই আন্দোলনকে নেতাজি কায়মনোবাক্যে সমর্থন করেছিলেন। এই আন্দোলনের সক্রিয় বিরোধিতা করেছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, এম এস গোলওয়ালকর, হিন্দু মহাসভা, দামোদর সাভারকর, মুসলিম লিগ, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তখন ইংরেজ সরকার তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়)।

দেবব্রতবাবু বলছেন, স্বামীজিই স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃৎ, কারণ উনিই পথ তৈরি করে রেখেছিলেন, সেই পথে হেঁটেছিলেন গাঁধী। দেবব্রতবাবু জানলে খুশি হবেন, স্বয়ং গাঁধীজি বলেছিলেন, স্বামীজির রচনা পড়ে ওঁর দেশপ্রেম হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। আবার বিবেকানন্দ বলতেন, ঠাকুর ওঁকে সব সময় পথ দেখান। তা হলে তো দেবব্রতবাবুর যুক্তি অনুসারে, শ্রীরামকৃষ্ণই দেশজোড়া স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন।

গাঁধীজি, নেতাজিসহ আরও বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর আধ্যাত্মিক ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনার প্রভাব অপরিসীম। এ কথা মেনে নিয়েও বলা যায়, সমস্ত দেশ ঘুরে, হিন্দু-মুসলিম-শিখ-জৈন, শিক্ষিত-নিরক্ষর, দলিত-অভিজাত, আঞ্চলিক বিদ্রোহীশক্তি, সমস্ত ধরনের ভারতবাসীকে একত্রিত করে, ব্রিটিশবিরোধী যে ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে তা বড় সহজ কাজ ছিল না। তাই তার প্রত্যক্ষ কারিগরদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে আপত্তি থাকা উচিত নয়।

মানস ঘোষ হাওড়া

বাংলা ‘পদ্মাবতী’

পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ‘পদ্মাবতী’ ছবিটিকে বাংলায় প্রদর্শনের আমন্ত্রণ জানানোয় তাঁকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ আমাদের লজ্জিত করেছে। তবে চলচ্চিত্রের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা কিছুটা আশ্বস্ত হতে পারি এটা ভেবে, কাল্পনিক চরিত্র চিতোরের মহারানি পদ্মিনীকে নিয়ে সর্বপ্রথম চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে এই বাংলার বুকেই। এবং এই চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রধান কারিগরও (পরিচালনা ও প্রযোজনা) ছিলেন এক খ্যাতনামা বাঙালি: ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি চলচ্চিত্র-মহলে ডিজি নামেই অধিক পরিচিত। ১৯৭৫ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য ব্রিটিশ ডোমিনিয়নস ফিল্ম কোম্পানি’র ব্যানারে এটিই ছিল প্রথম ছবি। ছবির নাম ‘কামনার আগুন’ (ফ্লেম্স অব ফ্লেশ)। ১২ রিলের এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৩০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, মধ্য কলকাতার ‘পার্ল’ সিনেমায় (পরবর্তী সময়ে ‘জ্যোতি’)। নির্বাক ছবিটিতে পদ্মিনীর চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন ডেলেসিয়া ক্লার্ক নামে এক অবাঙালি মহিলা। এর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন পরবর্তী সময়ের বিখ্যাত পরিচালক দেবকীকুমার বসু। দেবকীকুমার এতে একটি ছোট্ট চরিত্রে রূপদানও করেছিলেন।

তবে রানি পদ্মিনী কেন্দ্রিক ছবিগুলি কোনও দিনও বক্স অফিসে লাভের মুখ দেখেনি। ১৯৬৩-তে চিত্রাপু নারায়ণমূর্তি পরিচালিত বিপুল ব্যয়ে নির্মিত একটি তামিল ছবি ‘চিতোর রানি পদ্মিনী’তে বৈজয়ন্তীমালা, শিবাজী গণেশনের মতো তারকা থাকলেও ছবিটি চলেনি। ছবিতে চিতোর-মহারানি হিসেবে বৈজয়ন্তীমালার একটি নাচের দৃশ্য সে কালেও দর্শক মহলে প্রবল সমালোচিত হয়েছিল। ১৯৬৪-তে অভিনেত্রী অনিতা গুহ ‘মহারানি পদ্মিনী’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে রানির ভূমিকায় অভিনয় করেন। মহঃ রফি ও আশা ভোঁসলের কণ্ঠে এই ছবির গানগুলি জনপ্রিয় হলেও, ছবিটি জনপ্রিয় হয়নি।

শুভায়ু সাহা ইন্দ্রপুরী, খাগড়া, মুর্শিদাবাদ

দৃষ্টিহীন যাঁরা

অনেক সময় টিভি চ্যানেলগুলি অনেক খবর শুধু লিখে দেয়, বলে না। যাঁদের দৃষ্টি ক্ষীণ, বা যাঁরা দৃষ্টিহীন, তাঁরা এই খবর কী করে জানবেন? বহু ব্যাংক বা অন্য সংস্থা তাদের নোটিস এসএমএস করে পাঠায়। দৃষ্টিহীন মানুষ তো তা পড়তেই পারবেন না। সুলভ শৌচাগারেও যদি দৃষ্টিহীন বা অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবস্থা থাকে, ভাল হয়।

স্বামী বেদানন্দ সেবাপীঠ মাতৃমন্দির, কলকাতা-৩৩

একটা ভুল

আমার লেখা ‘রাতের চেয়েও অন্ধকার’ প্রতিবেদনে (-১২) একটি তথ্যগত প্রমাদ ঘটেছে। লেখা হয়েছে, শিশু যৌন নিপীড়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের সমীক্ষাটি ২০১২ সালে করা হয়েছিল। ওটি ২০০৭ সাল হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমি আন্তরিক দুঃখিত।

সীমান্ত গুহঠাকুরতা ব্যারাকপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE