কলকাতায় হলে তবেই
কলকাতায় কোনও একটি ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে, প্রিন্ট বা টিভি মিডিয়া ‘এক্সক্লুসিভ’ বা ‘ব্রেকিং নিউজ’ তকমা দিয়ে খবরটিকে নিয়ে হইচই শুরু করে। আর ঠিক তখনই দেখা যায়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একই ধরনের পুরনো বা টাটকা ঘটনা-দুর্ঘটনার অজস্র খবর আসে, যা আগে খবর হয়নি। বা, সেই খবরকে আগে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ সময় পুলিশকেও দেখা যায় হঠাৎ খুব তৎপর হয়ে উঠতে। জি ডি বিড়লার শিশু নির্যাতনের পৈশাচিক ঘটনা নিয়ে হইচই শুরু হতেই, একই রকম বা তার থেকেও মর্মন্তুদ অসংখ্য ঘটনা জানা গেল রাজ্যের অন্যান্য প্রান্ত থেকে।
অর্থাৎ, (১) অন্যায়, বঞ্চনা, নিপীড়ন, দুর্নীতি, খুন-জখম— সবই চলছে আপন গতিতেই। পুলিশ-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থা: এই তিন স্তম্ভ নয়, চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়া যদি আলোড়ন তোলে, তবে ভুক্তভোগী একটু সুরাহা পেতে পারে।
(২) সেই অন্যায় যদি কলকাতায় ঘটে, তবে প্রতিবাদ ও হইচইয়ের মাত্রা বাড়ে এবং প্রশাসনের, সরকারের নড়েচড়ে বসার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
(৩) সে ক্ষেত্রেও আবার চটপট সুরাহা না হলে, নতুন ঘটনার নীচে এই ঘটনা চাপা পড়ার খুব সম্ভাবনা। কারণ মিডিয়া নতুন ব্রেকিং নিউজ খুঁজছে সারাক্ষণ।
সুদর্শন নন্দী
রাঙামাটি, মেদিনীপুর শহর
শিশুর স্কুল
জি ডি বিড়লার এক কিশোরী, যে তার স্কুলকে ভালবাসে, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করে, সে সরল মনে তার মা’কে প্রশ্ন করেছে— আচ্ছা এত জনের মধ্যে বেবিদের কি সব সময়ে চোখে চোখে রাখা যায়? ওদের জন্য তো আলাদা স্কুল হওয়া উচিত। প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বড় স্কুলের কাঠামোটাই শিশুদের পক্ষে অনুপযুক্ত। যৌন হেনস্তা ছাড়াও শিশুরা আরও নানা ভাবে বিপর্যস্ত হয়, সেটা তারা ঠিকমত প্রকাশও করতে পারে না। অনভিজ্ঞ তরুণ মা-বাবারাও সেটা অনেক সময়ে বুঝে উঠতে পারেন না। শারীরিক-মানসিক ভাবে খানিকটা শক্ত হওয়ার আগেই শিশুরা পৌঁছে যায় বিরাট জায়গায়। সেখানে বাস্তব কারণেই নানা কর্মী। তাদের শিক্ষা রুচি আচরণ মানসিকতা বিভিন্ন হতে বাধ্য। তার ওপর আছে বয়সে বড় কিশোর-কিশোরীরা। অনেক সময়ে তাদের নির্দোষ আমোদ শিশুর মনকষ্টের কারণ হয়। ক্যামেরার চোখে তা ধরা পড়ে না। কেউ কেউ যে করেই হোক নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়। কমজোরি দুর্বলদের হয় মুশকিল। বেড়ে ওঠার সময় এই সংকট পরবর্তী জীবনে আরও বড় সংকট তৈরি করেছে, তার উদাহরণ ভূরি ভূরি। তাই ছোট শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য দরকার সম্পূর্ণ আলাদা স্কুল। না হলে প্রকাশ্যে ও নিভৃতে নানা হেনস্তার ঘটনা ঘটতেই থাকবে, যা সিসিটিভিতে ধরা পড়বে না।
ঋতা বসু
বালিগঞ্জ, কলকাতা
শিক্ষা প্যাকেজ
‘শাস্তি আমরাও চাই, তা বলে ম্যামদের জুতো দেখাবে কেন’ (৫-১২) লেখাটি পড়লাম। প্রশ্নের উত্তরটা সোজা। বিগত দুই দশকে শিক্ষা একটি বাণিজ্যিক প্যাকেজে পরিণত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষা এখন ‘এত দাও, এত নাও’ হিসেবি-সম্পর্কে আবদ্ধ। তাই এখন উধাও ছাত্র-শিক্ষক বা শিক্ষক-অভিভাবক শ্রদ্ধা ভালবাসা। তদুপরি ইন্ধন হিসাবে হাজির নির্লজ্জ প্রাইভেট টিউশন। দোষ দু’তরফেই। মধ্যিখান থেকে ধূলিধূসরিত হল সুমহান এক সম্পর্ক, উঠে এল শুধু জুতো।
সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
সল্ট লেক
জলাভূমি
সুকান্ত চৌধুরীর ‘পরিবেশ রক্ষাটা আজ সত্যিই বাঁচার লড়াই’ নিবন্ধটি (১৮-১১) গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত পূর্ব কলকাতার জলাভূমির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লেখক সবাইকে পুনরায় সজাগ করেছেন। পূর্ব কলকাতার জলাভূমি আমাদের শহরের জল ও হাওয়ার বিষ পরিশুদ্ধ করে। কিন্তু তরল বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের কোনও যান্ত্রিক ব্যবস্থার ‘দরকারও নেই’ কথাটি যেমন ঠিক, সমস্যাপূর্ণও বটে। বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের যান্ত্রিক ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও বায়ুমণ্ডলের ক্ষতিকারক। এ দিকে, কেন্দ্রীয় পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের কলকাতা কর্পোরেশনকে পাঠানো (৯-১০-২০১৫) নির্দেশ অনুযায়ী, কলকাতায় অপরিশুদ্ধ নিকাশি জল জলাভূমিতে সরবরাহ করা আইনবিরুদ্ধ। অর্থাৎ, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকা কলকাতার ‘কিডনি’, এই দাবির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে বলে ওই বোর্ড মনে করে না। মনে করে, এর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলে দূষণ হয়। অথচ এই অপরিশুদ্ধ নিকাশি জলের জোগান ছাড়া পূর্ব কলকাতা জলাভূমির অস্তিত্বই থাকে না।
সুকান্তবাবু লিখেছেন, ‘হাজার পঁচিশ পরিবারের’ রুজির কথা। ‘মাছ ও সবজি উৎপাদন’ থেকে রুজির বাস্তব হাল তিনি জানেন কি? জলাজমি ভরাট ও জমি অন্য ব্যবসায় ব্যবহার অকারণে হচ্ছে না। ‘জবলেস গ্রোথ’ বিষয়ে কিছু ভাবনারও দরকার। আর, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় ব্যক্তিগত মালিকানা সর্বোচ্চ। কোন যুক্তিতে এই মালিকেরা নিজেদের আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়ে পরিবেশ রক্ষা করে চলবেন? তা করলে তাঁরা বিশেষ অনুদান পাবেন না কেন? তাঁদের সম্পত্তির মাছ ও সবজি উৎপাদন ছাড়া অন্য আর্থিক লাভজনক ব্যবহারের কথা ভাববেন না কেন?
শেষে জানতে চাইব, প্রতি দিন ৭৫০ মিলিয়ন নিকাশি জল পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে পরিস্রুত হচ্ছে, এই তথ্য কোথায় পাওয়া গেল? বাস্তবে নিকাশি জলের কত শতাংশ জলার মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে তার ঠিক হিসাব নেই।
তপন সিংহ
কলকাতা-২৯
পুলিশের নাচ
ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে একটি নাচের ভিডিয়ো, তাতে দেখা যাচ্ছে এক সাব-ইনস্পেক্টর থানার মধ্যে উর্দি পরিহিত অবস্থায় একটি হিন্দি গানের তালে হাসিমুখে কোমর দুলিয়ে নৃত্য পরিবেশন করছেন। সহকর্মীরা সেই নাচ উপভোগ করছেন। ভিডিয়োটি ফেসবুকে পোস্ট হতেই সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। উর্দি পরিহিত অবস্থায় এমন কাজ নাকি অত্যন্ত নিন্দনীয়।
এক জন মানুষ যদি নিজের সহকর্মীদের মধ্যে, সামান্য অবসরে নাচের মাধ্যমে একটু আনন্দ-বিনোদনে মেতে ওঠেন, তা কি সত্যিই গর্হিত ঘটনা? এমনিতেই পুলিশের চাকরি আর পাঁচটা পেশার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক চাপের মধ্যে পুলিশকে কাজ করতে হয়। অবসর সময় প্রায় নেই বললেই চলে। সারাক্ষণ দৌড়ঝাঁপ গোলাগুলির মধ্যেই জীবনযাপন। পরিবার পরিজন ছেড়ে কাঁধে তুলে নিতে হয় সমাজ সুরক্ষার দায়িত্ব। আমরা যদি অফিসের কাজের ফাঁকে ফঁাকেই হোয়াট্সঅ্যাপ খুলে রসিকতা পড়তে পারি, ফেসবুক খুলে কমেন্ট লিখতে পারি, উনি অফিসের কাজের মধ্যে একটু নাচতে পারেন না কেন? বোঝাই তো যাচ্ছে, তখন থানায় তেমন কাজ ছিল না।
এই হিন্দি গানের তালেই যখন আমরা টিভিতে বা পাড়ার অনুষ্ঠানে আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের স্বল্প পোশাকে কদর্য ভঙ্গিতে নাচ পরিবেশন করতে দেখি, তখন তা তো দিব্যি উপভোগ করি। শুধুমাত্র পুলিশ বলেই এত সমালোচনা? একটু সহানুভূতিশীল হয়ে বিষয়টিকে হালকা ভাবে নেওয়া যেত না?
সুদীপ লোহার
গড়গড়িয়া, সারেঙ্গা, বাঁকুড়া
বিশ্ব বাংলা
অচিন্ত্য বিশ্বাস চিঠিতে (৫-১২) জানতে চেয়েছেন ‘বিশ্ব বাংলা মানে কী?’ আচ্ছা, বিশ্বকাপ মানে কি? ‘যা বিশ্ব তা-ই কাপ’, না ‘বিশ্বময় কাপ’? এর মানে হল সারা বিশ্ব অংশগ্রহণ করে যে প্রতিযোগিতায়৷ তেমনই, বিশ্ব বাংলা মানে হল ‘বিশ্বের মিলনক্ষেত্র বাংলা’৷
প্রিন্স মণ্ডল
ই-মেল মারফত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy