Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

আমাদের এটাও মনে রাখা উচিত, টাকা আমাদের জাতীয় সম্পত্তি। টাকা ছাপতে সরকারের বিপুল অর্থব্যয় হয়। ফলে টাকা পয়সার ঠিক সংরক্ষণ প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

টাকার গায়ে লেখা

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, নতুন টাকার উপর কোনও কিছু লেখা থাকলে সেই টাকা বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করে আমরা অনেকে এখনও টাকার উপর লিখছি, অনেক সময় আবার ‘আইনের ফাঁক’ খুঁজে পেনের বদলে পেনসিল দিয়ে। এটিএম থেকে বের হওয়া টাকাতে প্রায়ই এ ধরনের ‘লেখা’ নজরে আসছে। দোকানদার, বা বাজারওয়ালা, বা কেউই প্রায় সেই ‘লেখা’ টাকা নিতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে বহু মানুষ বিপদে পড়ছেন, যে কাজের জন্য টাকা তোলা হল সেই কাজ অসমাপ্ত রেখেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে, বা ইরেজার কিনে সেই লেখা মুছে, টাকা চালাতে হচ্ছে। এই অভ্যাস চলতে থাকলে, এমন দিন দূরে নয়, যখন এটিএম কার্ডের সঙ্গে ইরেজারও নিয়ে ঘুরতে হবে।

আমাদের এটাও মনে রাখা উচিত, টাকা আমাদের জাতীয় সম্পত্তি। টাকা ছাপতে সরকারের বিপুল অর্থব্যয় হয়। ফলে টাকা পয়সার ঠিক সংরক্ষণ প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সীমান্ত সর্দার বাঁশবেড়িয়া, হুগলি

হোক অশান্তি

দুটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শ্রেণির পড়ুয়া যেন সব সময় ওত পেতে থাকে, কখন রাজ্যে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটবে, আর তক্ষুনি তারা রে-রে করে মাঠে নেমে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবে। জি ডি বিড়লার শিশু নির্যাতনে অভিযুক্ত শিক্ষকদের গ্রেফতার করা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন। তবু ওখানে চলল আন্দোলনের নামে রোজ চিৎকার হাততালি বিপ্লবীয়ানা। আসলে আন্দোলন অভিভাবকদের হাতে ছিল না, বেনো জল ঢুকে পড়েছিল, যাদের একমাত্র কাজ অশান্তি পাকানো।

বিজন মজুমদার রামনগর, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

বিজ্ঞানের মান

বিকাশ সিংহের ‘বাংলায় বিজ্ঞান, এই হাল কেন’ (৬-১২) লেখাটি পড়ে কিছু কথা যোগ করতে চাই৷ বিজ্ঞানের এই হালের জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। অঙ্কে বা বিজ্ঞানে যারা একশোয় একশো পাচ্ছে, তাদের একটু অন্য ধরনের প্রশ্ন করলে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই ঠিক উত্তর দিতে পারে না। কারণ ছোটবেলা থেকে তারা মুখস্থ-শক্তির উপর জোর দেয়৷ গণিত এবং বিজ্ঞানে যে প্রভূত কল্পনাশক্তির দরকার হয়, তা আমরা বুঝি না৷ তার ফলে ছোটবেলা থেকে ছাত্রদের স্বাধীন চিন্তা করার সুযোগ দেওয়া হয় না৷

আর বিজ্ঞানের যে কদর নেই এ কথা একশো ভাগ সত্য৷ আমাদের সংবাদপত্রে বা টিভিতে বুদ্ধিজীবী হিসেবে সিনেমা-থিয়েটারের লোক এবং পলিটিকাল সায়েন্স বা ইতিহাসের অধ্যাপক ছাড়া আর কেউ পাত্তা পান না৷ বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের সম্পর্কে ধরেই নেওয়া হয়, তাঁরা তাঁদের বিষয়টার বাইরে কিছুই জানেন না৷ অথচ সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছাত্রছাত্রীরাই এই সব সাবজেক্ট নেন৷ কোনও সমাজে বিজ্ঞানীদের যোগ্য সম্মান না দেওয়া হলে, মৌলিক বিজ্ঞানে ভাল কাজ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম৷

রাজকুমার রায়চৌধুরী কলকাতা-৭৫

আমলাগিরি

বিকাশ সিংহ লিখেছেন, ‘বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার যে সমাদর ছিল তার ধারে কাছে আজকের বাংলার বিজ্ঞানচর্চা আসতে পারে না।’ ঠিকই। তবে বাংলায় ভাল ছাত্রের অভাব এখনও দেখা যায়নি। হ্যাঁ, ভাল ছাত্রদের দেশের বাইরে পাঠানোর অসম্ভব স্পৃহা তৈরি হয়েছে বাবা-মায়ের। এদের সামান্য অংশ যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য, বেশির ভাগই সমৃদ্ধ জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষায়।

এটাও ঠিক, বিদেশে টাকা তো বেশিই, সঙ্গে সুবিধা এবং স্বাধীনতাও বেশি। ভারতের বিজ্ঞানীরা এখন ভাল টাকা পাচ্ছেন, কিন্তু স্বাধীনতা আছে কি? সরকারি কলেজের অধ্যাপক-গবেষক ছাত্রছাত্রীদের থেকে শোনা, কোনও বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনারে আয়োজকদের অনুমতি পাওয়ার পর দফতরের আমলাদের ও বিভাগীয় অনুমতি পাওয়া খুবই সময়সাপেক্ষ। একই ঘটনা প্রজেক্টের অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রেও। এই বিষয়গুলো যত দিন আমলাদের হাতে থাকবে, তত দিন বাংলা পিছিয়ে থাকবে।

অন্য দিকে, মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি। সর্বশেষ বাজেটে বিজ্ঞানের জন্য বরাদ্দ ছিল জাতীয় উৎপাদনের ০.৯%। আমাদের দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বাজেট বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের তুলনায় কম। ভারতে বিগত দশকে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে বিজ্ঞানীর সংখ্যা। অনেক প্রতিভাবান তরুণ বিজ্ঞানী দেশে ফিরে এই সব প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীর সংখ্যার অনুপাতে বাড়েনি গবেষণা খাতে বরাদ্দ।

আর, বিজ্ঞান গবেষণায় সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সরকারি নীতি। অনেক ক্ষেত্রে সরকার তাদের ‘ইলেকশন ম্যানিফেস্টো’ রূপায়ণের জন্য দলীয় ধ্যানধারণা শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এই সব প্রতিবন্ধকতার জন্য ভারত তথা বাংলার গবেষণার এই হাল।

নন্দগোপাল পাত্র সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

নারীর মূল্য

সোনালী দত্তের নিবন্ধের (‘...কার মিছিলে হাঁটছেন...’, ১৬-১১) উত্তরে লেখা চিঠিতে মানসেন্দু কুণ্ডু (‘পুরুষের ক্লাব’, ৫-১২) বিভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন, সোভিয়েট ও চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্বে মহিলাদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। লেখকের মতে— শুধু ভারতীয় কমিউনিস্ট দলগুলি নয়, বিশ্বের সমস্ত কমিউনিস্ট পার্টিই আসলে মুখে প্রগতিশীল হলেও কাজে রক্ষণশীল, তাই তাদের সেন্ট্রাল কমিটি ও পলিটব্যুরোতে পুরুষের আধিক্য। এর বিপরীতে নারীর ক্ষমতায়নের সার্থক নমুনা হিসেবে তিনি ধনতান্ত্রিক দেশের কিছু উদাহরণ দিয়েছেন।

প্রশ্ন হল, এ ধরনের পরিসংখ্যান দিয়ে কোনও দলে বা দেশে নারীর প্রকৃত অবস্থান আদৌ বিচার করা যায় কি? কোনও রাষ্ট্রের প্রধান নারী হলেই সেই দেশে আপামর নারীসমাজের অবস্থান-মর্যাদা-সুযোগসুবিধার চিত্রটা বদলে যায় না। তেমনই, পলিটব্যুরোয় নারীর সংখ্যা দিয়ে কোনও দলের প্রগতিশীলতা বিচার হয় না। গুণ বা যোগ্যতা বিচারের ক্ষেত্রে লিঙ্গভেদ না করা— শুধু রাজনৈতিক দল নয়, যে কোনও ক্ষেত্রে এটাই দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত। এটা করতে যারা অক্ষম, নারীর সমমর্যাদা বোঝাতে আলাদা করে নারীর ‘ক্ষমতায়ন’-এর প্রলেপ তাদেরই দিতে হয়।

তা হলে একটি সংগঠন নারীকে মূল্য দিচ্ছে কি না, কী ভাবে বোঝা যাবে? সংগঠনটি মহিলাদের কাজে যুক্ত করতে সত্যিই সচেষ্ট কি না, ঘরে-বাইরে নানা ধরনের বঞ্চনা-অবহেলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিক্ষা মহিলা-কর্মীদের দিচ্ছে কি না, উপযুক্ত রাজনীতি-সচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের প্রতিই সমান যত্নশীল কি না, তাদের মহিলা-কর্মীরাও সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন কি না: এইগুলোই বিচার্য হওয়া উচিত।

একটি যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টিতে এই প্রক্রিয়ায় যিনি পলিটব্যুরোর মতো সর্বোচ্চ নেতৃত্বে যাওয়ার জ্ঞান ও যোগ্যতা অর্জন করবেন, তিনি মহিলা বা পুরুষ যেই হোন, সেই স্বীকৃতি তাঁকে দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে মহিলাদের সমস্ত রকম ভাবে সাহায্য করা, আর মহিলা বলেই কাউকে নেতৃত্বে
বসিয়ে দেওয়া— দুইয়ের মধ্যে ফারাক বিস্তর।

ভোট-রাজনীতি, সস্তা জনপ্রিয়তাকাঙ্ক্ষা বা পরিবারতন্ত্রের খাতিরে যোগ্যতা বিচার ছাড়াই মহিলা বলেই কাউকে সামনে নিয়ে আসাটা কখনওই নারীর যথার্থ সম্মানের পরিচায়ক নয়, বরং সেটাই প্রগতিশীলতার পরিপন্থী।

সঙ্ঘমিত্রা চট্টোপাধ্যায় কলকাতা-৭৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE