Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

খাটে ছত্রি-ডান্ডা লাগানোর বন্দোবস্ত থাকলে অতি উত্তম। বাংলা তক্তাপোশ হলে মিস্ত্রি ডাকিয়ে পায়া বরাবর সামান্য খাঁজ কাটিয়ে নিন তক্তায়, যাতে ডান্ডা সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:১৭
Share: Save:

মশারির অধিকার

এক দিকে ভাড়াটের ডেঙ্গি-আতঙ্ক, অন্য দিকে বাড়িওয়ালার দেওয়াল। জীবনরক্ষার তাগিদ বনাম সম্ভাব্য অর্থক্ষতি (‘পেরেক নিষেধ...’, ৭-১২)। আবার, মশা ঠেকানোর অন্য পন্থায় অনেক ঝামেলা। শুনেছি, মশা নিরোধক ক্রিম দীর্ঘ দিন মেখে চললে ত্বকের দফারফা। ম্যাট, কয়েল বা স্প্রে-ও নাকি ক্ষতিকর। সব কিছুর সহজ সমাধান মশারি। কিন্তু বাড়ি মালিকের অনুশাসনে দেওয়ালে হুক-পেরেক নিষিদ্ধ হলে মহা মুশকিল। আবার, টকের জ্বালায় দেশান্তরী হয়ে তেঁতুলতলায় থিতু হওয়াও কাজের কথা নয়। ডেঙ্গির থাবা থেকে গাঁ-গঞ্জেও রেহাই নেই। এ বিষয়ে কয়েকটা টিপ্‌স দিই।

খাটে ছত্রি-ডান্ডা লাগানোর বন্দোবস্ত থাকলে অতি উত্তম। বাংলা তক্তাপোশ হলে মিস্ত্রি ডাকিয়ে পায়া বরাবর সামান্য খাঁজ কাটিয়ে নিন তক্তায়, যাতে ডান্ডা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। দড়ি দিয়ে চারটে পায়ার সঙ্গে কষে বাঁধুন ডান্ডা। চারটে খুঁট-পয়েন্ট রেডি। গৃহশোভার কথা আপাতত না ভাবলেও চলবে। আগে প্রাণটা বাঁচুক। আর যদি ঘরে সার সার বিছানা পড়ে, হাসপাতালের সিস্টেমেই ভাবুন। মাথা বরাবর আর পা বরাবর যদি এ-মুড়ো থেকে ও-মুড়ো দু’খানা তার টাঙানো যায়, কেল্লা ফতে।

দেওয়ালে পেরেক ঠুকতে বারণ করা বাড়িওয়ালাকে বলি, ভাড়াটের জল-আলো যেমন বন্ধ করা যায় না, তেমনই মশারি টাঙানোর সহজ ব্যবস্থার অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। যে হারে প্রতি বছর মশাবাহিত রোগের প্রতিপত্তি বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে পুর-আইনে ভাড়াটেদের দেওয়ালে পেরেক ঠোকার অধিকার স্বীকৃত হবে— এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়।

মনে রাখতে হবে, একই বাড়িতে যদি আপনিও বসবাস করেন, তা হলে ভাড়াটেদের ভয় দেখিয়ে দূর করা মানে, টার্গেটের সংখ্যা কমছে। তাই আপনার বা আপনার আপনজনদের হুল-আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মশারা কিন্তু বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটে আলাদা করে চেনে না।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি শ্রীরামপুর-৩, হুগলি

সভার বিড়ম্বনা

বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো মিটিং, জনসভারও তেরো পার্বণ চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। বছরে সরকার এবং বিভিন্ন দলের অনেকগুলি জেলা স্তরে বা কলকাতায় কেন্দ্রীয় জমায়েত হয়। সে জন্য রাস্তা থেকে শয়ে শয়ে গাড়ি তুলে নেওয়া হয়। ফল: যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। সাধারণ মানুষ যন্ত্রণা ভোগ করবেন, সন্ধ্যায় দল বা সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হবে। এটাই দস্তুর।

ধরা যাক, ডিসেম্বরে পর পর তিন দিন যদি মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলায় প্রশাসনিক জনসভা করেন, সে জন্য হয়তো প্রতি জেলায় শ’ছয়েক করে গাড়ি তুলে নেওয়া হবে রাস্তা থেকে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও কমপক্ষে শ’দুয়েক গাড়ি উঠবে। এত গাড়ি ওই সব জেলায় চলে না। ফলে পার্শ্ববর্তী জেলার যে সব গাড়ি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে, সেগুলোও ওই দিন রাস্তায় থাকবে না। তিনটি জেলাই পাশাপাশি। ফলে সাধারণ পরিবহণ লাটে উঠবে ওই দিনগুলিতে ওই তিন জেলায়। অবশ্য মুখে বলা হবে, সব গাড়ি মোটেই তুলে নেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে সে কথা রাখা হবে না। সে স্কুল-কলেজে যত পরীক্ষা চলুক, অফিস- কোর্ট-কাছারিতে যত কাজ থাক। রাজনীতির দাদা-দিদির জন্য সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি নিশ্চিত।

সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে একটু অন্য ভাবে ভাবতে শিখতে হবে। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের যুগে মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার বিকল্প অনেক পথ খোলা আছে। প্রয়োজনে ব্লক লেভেলে ছোট ছোট সভা করে জনগণের কাছে নিজেদের কথা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেখানে মানুষ পায়ে হেঁটে, সাইকেলে, মোটরবাইকে কিংবা ছোট গাড়িতে সহজে পৌঁছতে পারবেন।

কৃষ্ণা কারফা বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

তোষণ

‘কোটিবার তোষণ করব’: মমতা (৭-১২) শীর্ষক খবর পড়ে, তোষণ নিয়ে কয়েকটি কথা মনে হল। শ্রীহরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ আর ‘সংসদ বাংলা অভিধান’-এর শরণ নিয়ে দেখলাম, ‘তোষণ’ মানে ‘প্রীত করা’, ‘সন্তোষসাধন করা’, ‘তুষ্ট করা’ ইত্যাদি। অন্য ভাবে ভাবলে, কারও জন্য কাজ করা, তদ্বির করা, ওকালতি করা— এ রকম আরও কত। কিন্তু ঘটনা হল, কারও জন্য করলে অন্য কেউ তো বাদ পড়বেই। ধরা যাক, প্রসন্ন গোয়ালিনি নিজের গরুর দুধ দুইয়ে নিজের বিড়ালটাকে একটু দিলেন, আর প্রায় পুরোটাই নিজের ছেলেটাকে দিলেন; তা হলে তাঁর নিজের গরুর নিজের বাছুরটার জন্য পড়ে রইল কাঁচকলা। আমার অন্যদের থেকে বেশি টাকা আছে বলে, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে বেশি ওয়াকিবহাল বলে, ট্রেনের সিট সংরক্ষণ করে আয়েশে সফর করছি, সেই জন্যই তো সাধারণ কামরায় ‘তিল ধারণের ঠাঁই’ থাকছে না! এই মহাবিশ্বের সম্পদ সীমিত। তাই পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক, ‘কেউ খাবে তো কেউ খাবে না।’

এখন প্রশ্ন হল: কার হয়ে বলব? সোজা কথায়, যে বা যারা দুর্বল। এই ‘দুর্বল’ শব্দটা কিন্তু বহুমাত্রিক। কে কোন ক্ষেত্রে দুর্বল, সেটা ‘আমি’ই ঠিক করব। তর্ক উঠতে পারে, নিতান্ত মনের টানেই আমি অন্যের হয়ে লড়ছি, না কি এই কাজটা সেরেফ ‘মিথোজীবিতা’। মা-বাবা কিংবা অভিভাবক তাঁর পরিবারের সেই সদস্যের দিকেই একটু বেশি ঝুঁকে থাকেন, যিনি দুর্বলতর— এটা না হলে পরিবারে, সমাজে সমতা থাকে না, দুর্বলতরদের বিপন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। পরিবেশ সংরক্ষণের বেলায় ‘লুপ্তপ্রায়’ তকমা দেয়াটা এ জন্যই জরুরি। বোধহয় পৃথিবীতে প্রথম রাষ্ট্র গঠনের পিছনে এমন দর্শনই অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, না হলে ‘মাৎস্যন্যায়’ অবাধে চলত।

দেশের, দেশ-প্রধানের, এমনকী যে কোনও আধিকারিকেরই নীতি এমনই হওয়া উচিত, যাতে দুর্বলতররা (ভিন্ন ভিন্ন অর্থে) ক্রমশ সমতার দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। সে তাঁরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুই হোন (যেমন মুসলিম ও অন্যান্যরা), সমাজের পিছড়ে বর্গই হোন (যেমন তফসিলি জাতি ও জনজাতি ইত্যাদি), দৈহিক বা মানসিক ভাবে কমজোরিরাই হোন (যেমন প্রতিবন্ধী, প্রবীণ, শিশু)। তবে এ কথাও সত্যি, ‘যে সবাইকেই খুশি করতে চায়, সে কাউকেই খুশি করে উঠতে পারে না।’

আর একটা কাজ করা যেতে পারে, সরকারি দফতর ও প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েক জন কর্মী যদি দুর্বলতর গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়েরই হন, তা হলে সেই গোষ্ঠীগুলি ভাবার সুযোগ পায়, ‘ওরা আমাদেরই লোক’। নইলে আসল উদ্দেশ্যটাই মাটি হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। কারণ, ‘কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে/ কভু আশীবিষে দংশেনি যারে’।

কল্লোল সরকার রথতলা (পশ্চিম), হৃদয়পুর, উত্তর ২৪ পরগনা

গিমিক

আমাদের দেশে রেল স্টেশনের ওভারব্রিজ যথেষ্ট চওড়া নয় বলে, নিয়মিত সংস্কার হয় না বলে, যাত্রীরা পদপিষ্ট হয়ে মারা যান। আর প্রধানমন্ত্রী গল্প শোনান বুলেট ট্রেনের। লোকে ভাল করে খেতে পায় না, আর প্রধানমন্ত্রী সি-প্লেনে চড়ে জনগণের উদ্দেশে হাত নাড়েন। সাধারণ বোধবুদ্ধি আর আত্মমর্যাদা শিকেয় তুলে, গিমিকবাজিকে রাজনীতি বলে চালানোয় এখন অনেকেই বেশ দক্ষ, কিন্তু মোদীজি এই কাজে একেবারে ডক্টরেট করে ফেলেছেন। আবার ওঁর দলের লোক বলেছেন, এটাই উন্নয়ন। কী করে হয়? হ্যাঁ, এ দেশের সাধারণ মানুষ যদি রাতদিন সি-প্লেনে চড়ত, সেটা হত উন্নয়ন। তার বদলে, বিশেষ সুযোগ পেয়ে এক-আধ জন মানুষ বড়লোকিয়ানা দেখালে, আর সেটা নিয়ে বঞ্চিতদের সামনে দেখনদারি করলে, তাকে মোটেই উন্নয়ন বলে না। অভদ্রতা বলে।

অলকেশ ঘোষ বেলঘরিয়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE