ভুঁড়ি তো বাড়বেই
ভোট-নির্ভর ভারতের রাজনীতিতে প্রচারের এক নতুন দিক খুলে গেছে। ‘চায় পে চর্চা’র মোকাবিলায় চলছে ‘খানে পে চর্চা’। স্থানীয় আম-আদমির সঙ্গে একাত্মতা প্রমাণ করতে উস্তমখুস্তম লড়াইয়ে পরের ধাপে হয়তো আসবে স্থানীয় পোশাক পরার প্রতিযোগিতা।
মোদীজি গুজরাতের লোক হওয়ায় তাঁকে এ বারের মতো ভিনপ্রদেশের খানার ধকল সইতে হল না। কিন্তু রাহুলজিকে ভোটের বাক্স ভরতে গিয়ে ভুঁড়িবৃদ্ধির ভোগান্তি মেনে নিতে হচ্ছে হাসিমুখে (‘গুজরাতি খাবার খেয়ে ভুঁড়ি বেড়েছে রাহুলের’, ১২-১২)।
ভুঁড়ির বাড়া-কমা আছে। কোনও রাজ্যে ভোট মিটে গেলে সেখানকার মেদ-বৃদ্ধিকর খাবার না খেলে, আশা করা যায়, ভুঁড়ি কমবে। কিন্তু বহু সংস্কৃতির দেশ ভারত। রাজ্যে রাজ্যে আলাদা করে ভোটে সেখানকার রসুইঘরের কাছাকাছি পৌঁছতেই হবে। আমাদের রাজ্যে ভোটের সময় হয়তো পছন্দের খাদ্য-তালিকার শীর্ষে থাকবে খাকরা-র বদলে লাবড়া। দক্ষিণে ভোট হলে ধোকলার বদলে দোসা। ১২৫ কোটি মানুষের পছন্দের নেতা হয়ে উঠতে গেলে রাজনীতিককে পরিবর্তনশীল রসনায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতেই হবে।
মুশকিল অন্য জায়গায়। সারা দেশে একসঙ্গে ভোটপর্ব মেটানোর চিন্তাভাবনা চলছে। সে ক্ষেত্রে সব প্রদেশের খাদ্যরস একযোগে একই রসনায় চার্জ করলে বিপদের কথা। মধ্যপ্রদেশের বাড়বৃদ্ধির প্রবল সম্ভাবনা। উদরসর্বস্ব বপু নিয়ে চলাফেরা কষ্টকর। ইমেজেও টান পড়তে পারে। বিমান আর গাড়িতে বেশির ভাগ পথ পাড়ি দিলেও, আমজনতার কাছাকাছি যেতে গেলে কিছু পথ পদব্রজে যেতেই হয়। তখন?
খাবার বাদ দিয়ে নয় রাজনীতিকরা পোশাকের কথাই ভাবুন। ভোটের পরেই অন্যের পোশাক খুলে ফেলে নিজের বেশ ধারণ করবেন।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর-৩, হুগলি
যোগেশবাবু
চিকিত্সক হিসাবে অনেক বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে। যোগেশ দত্তকে নিয়ে লেখাটা পড়ে (‘কলকাতার কড়চা’, ১১-১২) একটা ঘটনা মনে পড়ল। ২০০৯। অবসর নেওয়ার পর কলকাতার একটা হাসপাতালে কিছু দিন মেডিক্যাল ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেছিলাম। এক সকালে হাসপাতালে পৌঁছেই জানলাম, যোগেশ দত্ত বুকে ব্যথা নিয়ে মিনিটখানেক হল আইসিইউ-তে ভর্তি হয়েছেন। নিয়ম অনুসারে সে দিন যে হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞের ভর্তির দিন, তাঁর নামেই ভর্তি করা হয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে। তিনি হাসপাতালের সবচেয়ে নামী এবং অভিজ্ঞ ডাক্তার। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য। তক্ষুনি আইসিইউ-তে গেলাম।
সেখানকার ডাক্তাররা প্রাথমিক কাজগুলি ঠিকঠাক করছিলেন। এমন সময় দেখি, অল্প কিছু দিন আগে নিয়োগ করা হয়েছে এমন এক জন হৃদরোগ-বিষেশজ্ঞ আইসিইউ-তে এসেছেন, তাঁর রোগীদের দেখতে। আমি বললাম, ‘তুমি এই কেসটা নাও।’ ইতস্তত করে তিনি বললেন, ‘স্যর, আজকে সিনিয়ার দাদার দিন। কেসটা আমার নেওয়া ঠিক হবে?’ বললাম, ‘তুমি কনফিডেন্ট কি না সেটা বলো, বাকিটা আমার উপর ছেড়ে দাও।’ তিনি রাজি হলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি ইমার্জেন্সিতে বিষেশজ্ঞ ডাক্তারের নাম পাল্টে দিতে বললাম।
এই ডাক্তার যোগেশবাবুকে দেখে এবং কিছু টেস্ট করে বললেন, ম্যাসিভ অ্যাটাক হয়েছে। একটা ইনজেকশন আছে যেটা খুব তাড়াতাড়ি দিতে পারলে হার্টের মাংসপেশির আরও ক্ষতি আটকানো যায়। সবচেয়ে বড় ডাক্তারের অপেক্ষায় না থেকে আমার এই সিদ্ধান্ত কাজে লাগল। অন্য কোনও রোগীর ক্ষেত্রেও আমি একই
সিদ্ধান্ত নিতাম, তবে এক জন স্বনামধন্য মানুষকে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একটু দুশ্চিন্তা তো থাকেই।
এ দিকে একটু সুস্থ বোধ করতেই যোগেশবাবু শিশুর মতো আবদার জুড়লেন, ‘আমাকে কিন্তু কালকেই ছেড়ে দিতে হবে। শো আছে। দর্শকরা টিকিট কেটেছেন, তাঁদের নিরাশ করতে পারব না।’ ওঁকে অসুখের কথা বলতে পারছিলাম না। আশ্বাস দিয়ে বললাম, ‘সুস্থ হলে অবশ্যই শো করবেন। আমিও আপনার অনেক শো দেখেছি মুগ্ধ হয়ে।’
পরের দিন যোগেশবাবুকে ওঁর অসুস্থতার আসল কারণ বুঝিয়ে বললাম। যেহেতু মূকাভিনয়ে অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় তাই ওঁকে একটু সাবধান হতে হবে। সে দিন শো করা কিছুতেই সম্ভব নয়। তার পর নিজে অভিনয় না করলেও, মূকাভিনয় নিয়ে এতগুলি বছর ধরে উনি যা করে গেলেন, তাতে উনি অনেক সম্মান পেলেও, মূকাভিনয়ের এক জন পথের দিশারির আরও অনেক পাওনা ছিল।
সমরেন্দ্র মৌলিক
বেহালা
কয়াল
বিজয়ার পর পোস্টকার্ডে চিঠি লেখা আজ অতীত। গ্রামের রাস্তায় আর দেখা যায় না সুদৃশ্য ছই দেওয়া গরু বা মোষের গাড়ি। ঠিক একই ভাবে অবলুপ্ত হল গ্রাম বাংলার একটি পেশা: ‘কয়াল’। আগে গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। ধান বিক্রি করা ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই নির্ভরশীল ছিলেন এই কয়ালের উপর। দু’জনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতেন কয়াল। তাঁর আয় হল বস্তা পিছু কমিশন। আবার বিভিন্ন উপায়ে তিনি আয় বাড়িয়ে নিতেন। বিক্রেতাকে বাজার-দর থেকে বস্তাপিছু কয়েক টাকা কম দাম বলতেন। আর ক্রেতাকে বলতেন, বিক্রেতা আর দু’টাকা বেশি না পেলে ধান দেবে না। এটুকু না করলে পরিবার নিয়ে তার সংসারও চলত না। তবে সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটি ছিল, ওজনের মারপ্যাঁচ করে চাষির কাছ থেকে বেশি ধান নিয়ে ক্রেতাকে দিয়ে, পরে তাঁর কাছ থেকে বাড়তি ধানের কিছুটা অংশ বুঝে নেওয়া। কারণ ওজন করার দায়িত্ব কয়ালের। এই ভাবেই চলত ধানের বেচাকেনা।
কয়াল নির্বাচনের পদ্ধতি ছিল গণতান্ত্রিক। আগের দিন ঢোল সহযোগে চৌকিদার ঘোষণা করতেন, আগামিকাল কয়াল নির্বাচন করা হবে। শিবতলা বা চণ্ডীমণ্ডপ বা অন্য কোনও জায়গায় সারা বছরের জন্য একটি প্রাথমিক দর ঠিক হত। এর পর ইচ্ছুক ব্যক্তিদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি দর ডাকতেন, তাঁকেই এক বছরের জন্য কয়াল নির্বাচিত করা হত। নির্ধারিত অর্থ বছরের মধ্যে মিটিয়ে দিতেন কয়াল, এই অর্থ গ্রাম্যদেবতার পুজোয় বা উৎসবে ব্যয় করা হত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বাজারের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কয়ালের প্রয়োজন ফুরলো। পেশাটি অবলুপ্ত হল। সকাল হলে গাঁয়ের রাস্তায় আর দেখা যায় না বাঁ-হাতে দাঁড়িপাল্লা এবং ডান হাতে পাঁচ কেজির বাটখারা হাতে সবার পরিচিত কয়ালকে।
প্রেমকৃষ্ণ মাজি
পুইনি, পূর্ব বর্ধমান
ভুয়ো খবর
কিছু লোক সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মিথ্যে খবর ছড়াচ্ছে। সাধারণ বুদ্ধি থেকে আমরা সন্দেহ করতে পারি, অবিশ্বাস করতে পারি, তবে মিথ্যে খবরটির ভাইরাল হওয়া তো কিছুতেই ঠেকাতে পারি না। মুদ্রণ বা বেতার বা টেলিভিশনের মতো এখানে কোনও নিয়ন্ত্রক নেই, কেবলমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হল। যে কোনও উত্তেজক খবর চটজলদি শেয়ার করার প্রতি আমাদের যে প্রবল উৎসাহ, তাতে আমরা আর লেখাটির সত্যতা যাচাই করার জন্য অপেক্ষা করি না। শুধু আমাদের দেশেই নয়, এই সমস্যা সারা বিশ্ব জুড়ে। সাম্প্রতিক খবরে প্রকাশ পেয়েছে, আমেরিকা, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি প্রায় ১৭টি দেশের নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে ভুয়ো প্রতিবেদন। ক’দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছিল একটি উদ্ভট তথ্য— আমাদের নতুন ২০০০ টাকার নোটে নাকি লাগানো আছে জিপিএস, যার মাধ্যমে সরকার আমাদের উপর নজর রাখতে পারবে! কেয়া চৌধুরি
কলকাতা-৪৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy