Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

আমি যে স্কুলে পড়াই (জগতলা সূর্যকুমার বিদ্যালয়, বাটানগর), সেখানে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে সাত-আট জন ছাত্রছাত্রী ছাড়া কারওরই বই থাকে না।

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫২
Share: Save:

সংস্কৃত ভাষার হাল

‘স্কুলের সংস্কৃতের কী হাল’ (২৯-১২) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা বলি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পোষিত বিদ্যালয়গুলিতে সংস্কৃতের পঠনপাঠন সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে সীমাবদ্ধ। যেহেতু নবম শ্রেণিতে সংস্কৃত আর পড়তে হবে না, সেই জন্য শতকরা আশি জন ছাত্রছাত্রীরই সংস্কৃত পড়ার কোনও আগ্রহই থাকে না। অভিভাবকবৃন্দও সেই রকমই উৎসাহহীন। অনেকের বই কেনারও বিন্দুমাত্র ইচ্ছে থাকে না।

আমি যে স্কুলে পড়াই (জগতলা সূর্যকুমার বিদ্যালয়, বাটানগর), সেখানে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে সাত-আট জন ছাত্রছাত্রী ছাড়া কারওরই বই থাকে না। ব্যাকরণ বইয়ের তো কথাই নেই। অনেক আদেশ, অনুরোধ, ‘সোনা’, ‘বাবা’ প্রভৃতি সম্বোধন-সম্ভাষণ— সবই বিফলে যায়। আবার নবম-দশম শ্রেণিতে সংস্কৃত না পড়ে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অনেক ছাত্রছাত্রী বিষয় না পেয়ে, শেষে সংস্কৃত নিতে বাধ্য হয়। সেখানে দু’বছর সংস্কৃত না পড়ার সেই অভাব বোধ করতে হয়। অার আছে ছাত্রছাত্রীদের অনুপযুক্ত সিলেবাস। নোটবইয়ের দৌলতে অনেকে অনেকটা নম্বর পায় ঠিকই, কিন্তু তাতে প্রকৃত শেখা হয় কি?

সংস্কৃত জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারতবর্ষের প্রত্যেক নাগরিকের ভাষা। অনেকে মনে করেন সংস্কৃত শুধুমাত্র পুরোহিতবর্গের ভাষা। এই ধারণা ভুল। প্রত্যেকেরই এই ভাষা পড়া উচিত। আর তার জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে চলা উচিত। শুধুমাত্র সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে সংস্কৃত পড়িয়ে দায়সারা কাজ করলে হবে না। নবম-দশম শ্রেণিতেও যদি পড়ানো হয়, অন্তত পঞ্চাশ নম্বরও যদি থাকে, সংস্কৃত পড়ানোর উদ্দেশ্য সফল হবে।

পৃথ্বীশ চক্রবর্তী কলকাতা-১৪০

অ-খেলোয়াড়

গত ২ জানুয়ারি আই লিগে নিজেদের মাঠে চেন্নাই এফ সি-র কাছে মোহনবাগানের পরাজয়ে, এক জন সমর্থক হিসেবে এই আটাত্তর বয়সেও কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু এই পরাজয়ের জন্য ক্লাব সমর্থকদের অখেলোয়াড়সুলভ অভব্য আচরণকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না। কোচ সঞ্জয় সেনকে হেনস্তা করা থেকে তাদের কেউ বিরত করলেন না! ক্লাবের কোনও বড়, মেজ বা ছোট কর্তা কোচকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন না! তা হলে কি সঞ্জয় বিতাড়নের পর্বটি অনেক আগেই সারা হয়েছিল? মোহনবাগান কর্তারা তাঁদের ময়দানি ঐতিহ্য ‘কোচ বিতাড়ন’ থেকে সরে আসতে পারলেন না— এটি শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবকে আবার কলঙ্কিত করল।

একা সঞ্জয় সেন কেন ব্যর্থতার দায় নেবেন? কেন ক্লাবের টেকনিক্যাল কমিটি, প্লেয়ার রিক্রুটাররা বাদ যাবেন বা ছাড় পাবেন? সঞ্জয়ের মতো ব্যর্থতার দায় তাঁরাও নিজেদের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করে খেলোয়াড়ি মনোভাবের পরিচয় দিতে পারতেন।

প্রতাপরঞ্জন হাজরা শ্রীরামপুর, হুগলি

ভুল ভাবনা

দু’বছর আগেও ‘দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে’ ধরে সিঙ্গুরের পাশ দিয়ে যাতায়াতের পথে দূর থেকেই টাটাদের গাড়ি কারখানার রঙিন শেড নজরে পড়ত। এখন পাশ দিয়ে কখন হুশ করে বেরিয়ে যাই বুঝতেও পারি না। বর্তমান রাজ্য সরকারের জোরদার প্রচেষ্টায় আদালতের রায়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই কারখানা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সে ভাবে দেখলে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা এ ভাবে ধূলিসাৎ করা হল। শুনেছি এখন ওই হাজার একর জমির কিছু কিছু জায়গায় সরষে চাষ হচ্ছে। তবে আসল কথা হল মানুষ। গাড়ি কারখানা ভেঙে দিয়ে সরষে চাষ করলে মানুষ যদি ভাল থাকে, তা হলে কারও কিছু বলার নেই। ভাল না থাকলেও ভাল থাকতেই হবে। সত্যজিৎ দেখিয়েছিলেন, হীরকের রাজা ভগবান।

মাঝে এক বার অবশ্য ‘গোয়ালতোড়’-এর গল্প শোনা গিয়েছিল। ওখানে নাকি বিশাল জমি পড়ে আছে গাড়ি তৈরির উপযুক্ত পরিবেশ নিয়ে। সরকার পরিকাঠামো গড়ে দেবে। মুখ্যমন্ত্রী এক মাসের সময়সীমা ধার্য করলেন। এক মাসের মধ্যে শিল্পপতিদের জানাতে হবে কারা ওখানে কারখানা গড়তে ইচ্ছুক। কেউ হয়তো ভেবেছিলেন, শিল্পপতিরা হুকুম শুনে ছুটে চলে আসবেন। এক জনও আসেননি।

তার পর আমাদের অতি দক্ষ ও পরিশ্রমী মুখ্যমন্ত্রী শিল্প আনতে জার্মানি ও ইংল্যান্ড গিয়েছেন। মুম্বইতে এ দেশের এক প্রধান শিল্পপতির বাড়ি চলে গিয়েছেন। ল্যান্ড ব্যাংক আর ‘এই রাজ্যে এখন বন্‌ধ হয় না’ শুনতে শুনতে শিল্পপতিদের কানে তালা ধরে যাবার জোগাড়। তবুও কোনও বড় শিল্পের প্রস্তাব নিয়ে কেউ আসেন না।

তবুও এরই মাঝে, ‘সিঙ্গুর’ ‘নন্দীগ্রাম’-এর দেখানো পথে, কিছু সংগঠিত মানুষের উদ্যোগে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্ৰিড প্রকল্পের বিরোধিতা শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ভুলকে অনুসরণ করে আবার এক ভুল হতে যাচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন ঠিক ভোল্টেজের বিদ্যুৎ পেতে এই প্রকল্পটি এই রাজ্যের দরকার। প্রকল্প-বিরোধীরা আলোচনায় এসে সমস্যার সমাধান করুন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের কথা ভেবে ‘দেখ কেমন লাগে’ বলে প্রকল্পের বিরোধিতা বন্ধ হোক। ‘সিঙ্গুর’ গড়তে ব্যর্থ হওয়া সিপিএম এখন বঙ্কিমচন্দ্রের বাক্যই স্মরণ করুক— ‘তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?’

প্রণব রাহা দুর্গাপুর-৪

তাই সংরক্ষণ

‘সংরক্ষণ কেন’ (৮-১) শীর্ষক চিঠি প্রসঙ্গে বলি, ভারতীয় সমাজে কিছু উঁচু জাতি শত শত বৎসর ধরে সমাজের মর্যাদাসম্পন্ন জায়গাগুলিতে অবস্থান করে আছেন। এঁরা যে কাজ করেন, তাতে মূলত বুদ্ধির প্রয়োজন (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, সরকারি/বেসরকারি চাকরি, শাসন, পরিচালনা ইত্যাদি)। সমাজের মর্যাদাহীন জায়গাগুলিতে অবস্থান করছেন দলিতরা। যেমন, মেথর, ঝাড়ুদার, জুতো পালিশ করেন যাঁরা, ভাগাড়ে মৃত পশুর চামড়া ছাড়ান যাঁরা, খেতমজুর, শ্রমিক, কুলি, পরিচারক ইত্যাদি। এঁদের কাজ মূলত দৈহিক শ্রম দ্বারা সম্পাদিত হয়। উঁচু জাতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম জিনগত ভাবে ওই বুদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছে। এই জিনগত ভাবে সমতুল হতে দলিতদের শত শত বৎসর সংরক্ষণের প্রয়োজন।

সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় দলিত/ওবিসি আজ সরকারি চাকরিতে, শিক্ষাক্ষেত্রে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে সক্ষম হচ্ছেন। সমাজের প্রধান সারির অংশীদার হতে পারছেন। যার ফলে তাঁদের শ্রেণিতে কুসংস্কার দূর হচ্ছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য উন্নয়নমুখী ভাবনা সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়ছে। পত্রলেখকের কথা অনুযায়ী সংরক্ষণ তুলে দিলে, অনুন্নত সম্প্রদায়কে উন্নত করার প্রয়াস বন্ধ হয়ে যাবে এবং উঁচু জাতির দ্বারা সব কুক্ষিগত হবে। আশ্চর্য ব্যাপার হল, শত শত বছরের বঞ্চনার বৈষম্য পত্রলেখকের নেতিবাচক মনে হয়নি, অথচ বৈষম্য দূরীকরণের প্রয়াসকে নেতিবাচক মনে হয়েছে!

অনন্তকুমার মণ্ডল কাটিগ্রাম, বীরভূম

সরোদ ঘরানা

‘সরোদ থেমে গেল বুদ্ধদেবের’ (১৬-১) শীর্ষক লেখাটিতে একটি ভুল চোখে পড়ল। লেখা হয়েছে, ‘শাহজাহানপুর-সেনিয়া ঘরানার ধারক-বাহক বুদ্ধদেববাবু সুরের উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছেন অজস্র শিষ্যের মধ্যে।’ প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সঙ্গে শাহজাহানপুর-সেনিয়া ঘরানার কোনও যোগাযোগই নেই। মুরাদ আলি খানের কাছ থেকে সরোদবাদন শিখেছিলেন মহম্মদ আমির খান। তাঁর কাছ থেকে শিখেছিলেন রাধিকামোহন মৈত্র। রাধিকামোহন মৈত্রের ছাত্র ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। মুরাদ আলি খানের ভ্রাতুষ্পুত্র উস্তাদ হাফিজ আলি খান, যাঁর পুত্র ও পৌত্র যথাক্রমে উস্তাদ আমজাদ আলি খান ও আমান আলি খান। অর্থাৎ বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত গ্বালিয়র সরোদ ঘরানার শিষ্য।

অসিত ঘটক কলকাতা-৬৮

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE