Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: হাতি বনাম রেলগাড়ি

হাতিমৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না। ২০০৪ সালে পূর্ববর্তী মিটারগেজ লাইনের রূপান্তর ঘটিয়ে ব্রডগেজে উন্নতি করার পর থেকেই হাতি মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী।

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০০:৩৭
Share: Save:

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ডুয়ার্সে ব্রডগেজ রেললাইনে দ্রুতগামী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে এক হাতি দু’টুকরো হয়ে যায় এবং এই দুর্ঘটনাটি এতটাই মারাত্মক ছিল যে, হাতির দেহটিকে টুকরো-টুকরো করে ইঞ্জিনের চাকা থেকে বার করতে হয়। বছর তিন আগে জলঢাকা ব্রিজের ওপর দ্রুতগামী ব্রডগেজ ইঞ্জিনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে চারটি হাতি প্রাণ হারায়, তার মধ্যে দুটি হাতির নিথর দেহ জলঢাকা ব্রিজ থেকে ঝুলতে থাকে।

বনদফতর এবং রেল কর্তৃপক্ষ ডুয়ার্সের হাতিদের বাঁচানোর জন্য ব্রডগেজ লাইনের ধারে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, কোথাও উচ্চ প্রাচীর, কোথাও সাবওয়ে নির্মাণ করে হাতির দলের ওপর ধারাবাহিক নজরদারি, রেললাইনের ধারে জোরালো আলোর ব্যবস্থা, সর্বোপরি ট্রেনের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণসহ নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছিল। এবং ডুয়ার্সের রেলপথে ট্রেন চালকরাও বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েই উচ্চ গতির ট্রেনগুলো চালাতেন।

কিন্তু হাতিমৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না। ২০০৪ সালে পূর্ববর্তী মিটারগেজ লাইনের রূপান্তর ঘটিয়ে ব্রডগেজে উন্নতি করার পর থেকেই হাতি মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী। অতীতের মিটারগেজ লাইন ব্রডগেজের তুলনায় কিছুটা সংকীর্ণ হওয়ায় ডুয়ার্সের হাতিগুলো খুব সহজেই লাইন পারাপার করত। ব্রডগেজ লাইন হলেই হাতি মৃত্যু বাড়বে এই আশঙ্কাতেই পরিবেশবিদরা প্রস্তাবিত ব্রডগেজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ব্রডগেজ ট্রেন চালানোর বিভিন্ন পূর্বশর্ত আরোপ করে উচ্চ আদালত খুব সীমিত ছাড়পত্র উত্তরবঙ্গ সীমান্ত রেলকে দিয়েছিল। কিন্তু হাই কোর্টের পরামর্শ, মতামত, আদেশ প্রভৃতিকে শাসক, আমলা, রাজনৈতিক নেতামন্ত্রীরা, কবেই বা মেনেছেন? তাঁদের চাই উন্নয়ন! তারই পরিণতিতে হাতিমৃত্যুর হার ঊর্ধ্বগামী।

শোনা যাচ্ছে আরও কিছু নতুন দ্রুতগামী ট্রেন ডুয়ার্সের এই রেলপথ দিয়ে চালাবার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রতি বারই হাতি মৃত্যুর পরে পরেই রেল অফিসার এবং রাজ্যের বনদফতরের সঙ্গে যৌথ বৈঠক সংগঠিত হয় এবং ট্রেন-হাতির সংঘর্ষ কমানোর জন্য নানা রকম পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়। তবে এই বারের এই পূর্ণবয়স্ক হাতিটি মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যাওয়ার পর রেলের কর্তারা যে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তাকে চমকপ্রদ বললেও কম বলা হবে! হাতিগুলো রেললাইনের উপর উঠে পড়লে চালকরা যাতে দূর থেকে হাতিগুলোকে দেখতে পান, সে কারণে ব্রডগেজ লাইনের দু’ধারে সমস্ত উচ্চ গাছগুলোকে রেল কর্তৃপক্ষ এখন সাফ করে দিতে চাইছেন। আজ থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে গেজ কনভার্শনের সময় অন্তত অর্ধ লক্ষ গাছ সাফ করে দেওয়া হয়েছিল। হাতিমৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী থেকেছে। এখন বাকি যে গাছ আছে, সেগুলো রেল কর্তৃপক্ষ সাফ করতে চাইছে।

শান্তনু বসু চাঁচল, মালদহ

শিবের বিয়ে

‘প্রেমের দিন আর শিবপুজোর রাত্রি’ (রবিবাসরীয়, ১১-২) শীর্ষক লেখায় জহর সরকার লিখেছেন, ‘শিবরাত্রির দিনে হিন্দুরা মুখ্যত উদ্‌যাপন করে থাকেন শিবের বিয়ের উৎসব, কেননা এ দিনেই শিব পার্বতীকে বিয়ে করেছিলেন বলে কথিত।’ এটি সম্ভবত ঠিক নয়। চৈত্র মাসের নীলের ব্রত (নীলষষ্ঠী) যে-দিন পালন করা হয়, সেটিই শিব-পার্বতীর বিবাহের দিন। পরবর্তী দিনটি ‘গাজন’— শিব বিয়ে করে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পথে তাঁর ভক্ত নন্দী-ভৃঙ্গীদের আনন্দ উৎসব। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথির অন্ধকার রাত্রিকে ‘শিবরাত্রি’ বলে। এই দিন উপবাস করে শিবের ব্রত করলে মানুষের ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ— চার ফল লাভ হয়।

কৃষ্ণা বসু দমদম

প্রতিবেদকের উত্তর: চিঠির লেখক সেই ‘কৃষিজীবী’ শিবের কথা বলছেন, যাঁকে বাংলা সৃষ্টি করেছিল মধ্যযুগের শেষ দিকে, শিবায়ন কাব্যগুলির মাধ্যমে। কারণ মঙ্গলকাব্য যুগের বাংলার মানুষ শিবকে কৈলাসের রাজা হিসাবে গ্রহণ করেননি। আমার লেখার শিব হচ্ছেন পৌরাণিক শিব, যাঁকে সমগ্র ভারত চেনে। যিনি উমা বা দুর্গাকে শিবরাত্রির সময় বিয়ে করেছিলেন। বাংলার শিব আলাদা, তিনি চৈত্রে গাজন করে বেড়ান (ভারতের আর কোথাও তিনি তা করেন না), তাই তাঁর বিয়ের দিনটাকে বাঙালিরা পালটে নিয়েছে।

লিঙ্গ দেবতা

জহর সরকারের মনোগ্রাহী নিবন্ধে যে-সব লিঙ্গ দেবতাদের কথা আলোচিত হয়েছে তাঁরা ছাড়া আরও কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্গ-দেবতা হলেন মিশরীয় দেবতা ওসাইরিস, অ্যাসিরীয় দেবতা বেল এবং ভুল, গ্রিসের প্যান, রোমের পেতার বা ফাদার লিবার, ফিনিশীয় বেস (আদতে মিশরীয় দেবতা), ফ্রিজীয় অ্যাটিস, সিরীয় বাল-পেওর, স্পেনীয় দেবতা হোর্টানেস ইত্যাদি। লিঙ্গাকৃতির ‘ফ্যাসিনাম’ তাগা-তাবিজ রোমের মানুষের পছন্দের জিনিস ছিল। পম্পেই-এ মানুষেরা বিপদ-আপদ ঠেকাতে লিঙ্গ-ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখত।

প্রাচীন কালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লিঙ্গোৎসব অনুষ্ঠিত হত। শিন্টোধর্মের ঐতিহ্য অনুসারে আজও জাপানে এ রকম দুটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়— ১) কানামারা মাৎসুরি, ২) হোনেন মাৎসুরি। প্রাচীন গ্রিসে ডিসেম্বর-জানুয়ারি ও মার্চ-এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত ‘ডায়োনাইসিয়া’ উৎসবের সময় লিঙ্গমূর্তি নিয়ে ‘পম্পে’ শোভাযাত্রা হত। রোমের বিখ্যাত ‘লিবারেলিয়া’ উৎসব অনুষ্ঠিত হত প্রতি বছর ১৭ মার্চ। রোমে লিবার দেবতার মন্দিরে লিঙ্গমূর্তি থাকত। লিঙ্গমূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা শস্য ও আঙুর খেতগুলি ছুঁয়ে উৎসবের কেন্দ্রস্থলে এসে পৌঁছত। সেখানে নাচ-গান পশুবলি ও ভোজ হত। লিবারলিঙ্গ ছিলেন ফসলের রক্ষাকর্তা ও উর্বরতার প্রতীক। এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ভেনাস উৎসবে রোমের মহিলারা লিঙ্গমূর্তি রথে চাপিয়ে শোভাযাত্রা করে দেবী ভেনাসের মন্দিরে নিয়ে আসতেন। এই লিঙ্গদেবতাদের অনেকেরই সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে ষাঁড়ের যোগ ছিল। আবার ষাঁড়ের শিং হল চন্দ্রকলার প্রতীক। ঠিক যেমন আমাদের শিবের সঙ্গে থাকে ষাঁড় এবং চন্দ্রকলা।

পীযূষ রায় বেহালা

ব্রিজের দেওয়াল

গত ২৯ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদে যে ভয়াবহ মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনা হল, তার জন্য চালকের মোবাইলে কথা বলাকে সম্পূর্ণ দায়ী করা হচ্ছে। ব্রিজটির ধারের দেওয়াল দুটি (রেলিং) যদি ১.৫ মিটার উঁচু ও ৩০ সেমি মোটা রি-ইনফোর্সমেন্ট ঢালাই দিয়ে গড়া হত ব্রিজটির ঢালাইয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, তবে দশ টনের বাস দেওয়াল ভেঙে নদীতে পড়ত না, দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ব্রিজের মধ্যে গড়াগড়ি খেত। এমনকী দশ চাকার পঁচিশ টনের ট্রাকের পক্ষে ওই দেওয়াল ভাঙা সম্ভব নয়। ধারে দেওয়ালগুলি সেই ভাবে মজবুত করে গড়া উচিত।

শ্যামল দে কলকাতা-৩৮

গ্রন্থাগার

হাওড়া জেলার আমতা থানার অন্তর্গত রসপুর গ্রামে অবস্থিত রসপুর পিপলস লাইব্রেরি (পশ্চিমবঙ্গ সরকার পোষিত গ্রামীণ গ্রন্থাগার) গত সেপ্টেম্বর ২০১৭ থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে। হাওড়া জেলার সবচেয়ে প্রাচীন (স্থাপিত ১৮৮৩) এই লাইব্রেরি (যেখানে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর এই লাইব্রেরিকে দেওয়া একটি চিঠি আজও সযত্নে সংরক্ষিত আছে) বন্ধ থাকার ফলে, খুব কাছে অবস্থিত দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি বি এড এবং একটি বেসিক কলেজ, দুটি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকশিক্ষিকা এবং বিভিন্ন এলাকার অগণিত পড়ুয়ার প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে।

অসীমকুমার মিত্র রসপুর, হাওড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Death Train
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE