দু’জন পাঠকের চিঠি প্রকাশিত হয়েছে (২৫-২), যাঁরা ‘হিন্দু সংহতি’ নামক একটি সংগঠনের ধর্মতলায় আয়োজিত ১৪ ফেব্রুয়ারির সভার প্রেক্ষিতে বলেছেন, হিন্দুধর্মেও ধর্মান্তরকরণ হয়। কিন্তু ওই কথাগুলি বিভ্রান্তিমূলক। রাজ্যের নামবদল বা সাংবিধানিক ধারাবদল বা কোনও আইনের পরিবর্তন, এগুলির সঙ্গে ধর্মবদলের তুলনা চলে না। কারণ, এই সব বদল করার জন্য স্বীকৃত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের এগুলো করবার অধিকার ও তার মান্যতা আছে। হিন্দুধর্মের ক্ষেত্রে এই রকম কোনও প্রামাণ্য প্রতিষ্ঠান নেই।
সিস্টার নিবেদিতা হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, কথাটি ঠিক নয়। স্বামী বিবেকানন্দ যে বৈদিক হিন্দুধর্মের কথা বলেছেন, তা কিন্তু সনাতনী হিন্দুধর্মের সঙ্গে খাপে-খাপে মেলে না। যে-কারণে রামকৃষ্ণ মিশন বেশ কয়েক বছর আগে দাবি করেছিল, তারা একটি স্বতন্ত্র ধর্মগোষ্ঠী—‘রামকৃষ্ণপন্থী’। এই দাবি নিয়ে তারা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়, কিন্তু আদালত সেই দাবিকে গ্রাহ্যতা দেয়নি।
মায়াপুরে ইসকন-গোষ্ঠী মূলত শ্রীচৈতন্যদেব প্রবর্তিত ও প্রচারিত বৈষ্ণবধর্মের অনুসারী; গোড়া থেকেই বৈষ্ণবধর্ম সনাতন হিন্দুধর্মের থেকে পৃথক পথের পথিক। আমরা সবাই অল্পবিস্তর জানি, সনাতন হিন্দুধর্মের নানা সংকীর্ণতা ও জাতিভেদপ্রথার বিপরীতে দাঁড়িয়ে শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর উদার, শুচিসংস্কারহীন বৈষ্ণবধর্মের সূত্রপাত করেছিলেন এবং এই কারণেই তাঁর প্রবর্তিত ধর্মভাবনা লোকপ্রিয় হয়ে প্রায় ধর্ম-আন্দোলনের চেহারা নেয়। উত্তর-শ্রীচৈতন্য পর্বে সেই বৈষ্ণবধর্মের নানা বদল ঘটলেও, তা সনাতনী হিন্দুধর্মের সঙ্গে মোটেও একাত্ম হয়ে যায়নি, বরং তারই শাখাপ্রশাখা থেকে তৈরি হয়েছে নানা গৌণধর্ম, যারা প্রথাগত হিন্দুধর্মের থেকে রীতি-নীতি-ভাবনায় অনেক দূরবর্তী। কাজেই কোনও মার্কিনি সাহেব বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করতেই পারেন, কিন্তু তা বলে বৈষ্ণবধর্মকে হিন্দুধর্মের অন্তর্গত করে দেখা যায় না।
আর, যদি তর্কের খাতিরে স্বীকার করেও নিই, হিন্দুধর্মে ‘ধর্মান্তরকরণ’ হয়, তা হলেও প্রশ্ন, ‘হিন্দু সংহতি’ সংগঠনকে এই বদল করার দায় ও মান্যতা দিলেন কারা? ওই সংগঠনই কি এই দেশের কোটি কোটি হিন্দু মানুষের এক ও একমাত্র প্রতিনিধি?
মজার কথা, যে-সমাবেশকে কেন্দ্র করে এত কথাবার্তা, ওই দিন ওই সমাবেশের মূল দাবি ছিল শিয়ালদহ স্টেশনের নাম বদল করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে রাখা। স্টেশনের নামবদল থেকে ধর্মবদলের সমাবেশে তা পালটে গেল কী ভাবে, উত্তর পাওয়া যায়নি!
প্রবুদ্ধ বাগচী কলকাতা-৫২
অসাম্প্রদায়িক?
দেবাশিস ভট্টাচার্য তাঁর ‘হেরে গেল সুস্থ রাজনীতি’ (১৬-২) শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘কিন্তু মমতা সাম্প্রদায়িক, এমন কথা তাঁর চরম শত্রুরও বলার হিম্মত নেই।’ আমি সেই ‘চরম শত্রু’ না হলেও মন্তব্যটি পড়ে বেশ কৌতুক বোধ করেছি। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বিজেপি-বিএইচপি’র নেতৃত্বে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হল, দেশ জুড়ে দাঙ্গা হল, আর ১৯৯৮-এর জন্মলগ্ন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির জোটসঙ্গী হল। ১৯৯৮-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট করেই কলকাতা শহরের তিনটি লোকসভা কেন্দ্র দখল করেছিলেন ‘অসাম্প্রদায়িক’ মমতা। এর পর দু’দফায় এনডিএ সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন।
১৯৯৯-এ কার্গিল যুদ্ধের সময় দেশ জুড়ে দেশভক্তির নামে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ আর উগ্র জাতীয়তাবাদ ছড়ায় সংঘ পরিবার ও তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপি। তখনও মমতা তাদের জোটসঙ্গী। একে কী বলবেন লেখক, অসাম্প্রদায়িক না সুবিধাবাদী রাজনীতি? ২০০১-এ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাজোট’ করলেও, আবার ফিরে যান বিজেপির কাছে। ২০০২-এর ভয়াবহ গুজরাত দাঙ্গার উপর ভর করে নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয় বারের জন্য গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুলের তোড়া পাঠান।
দেবাশিসবাবু লিখেছেন, ‘হিন্দু সংহতি’ সংগঠনের প্রধান তপন ঘোষ একই সঙ্গে হিন্দু সংহতি এবং তৃণমূলকে সমর্থনের ডাক দেন, কিন্তু সেই ডাকে তৃণমূল আদৌ কতটা লালায়িত বা ‘লাভবান’ হতে পারে, তা নিয়ে ‘বিতর্কের অবকাশ’ থাকবে। ভাবের ঘরে চুরি করলে অবশ্য এমন কাল্পনিক ‘বিতর্ক’ খুঁজে পাওয়া স্বাভাবিক। ২০১৬-তে মহরম ও দুর্গাপুজোর সময় উত্তর ২৪ পরগনার কিছু এলাকায় অশান্তি নিয়ে খবর করতে এসে একটি ইংরেজি পত্রিকার সাংবাদিক বেশ কিছু মানুষের খোঁজ পেয়েছিলেন, যারা দিনের বেলায় তৃণমূল ও রাতে প্রতিপক্ষের ত্রিশূলধারী। কাজেই দেবাশিসবাবু যখন লেখেন, ‘বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতির বিরুদ্ধে তৃণমূলের লড়াইও কি তা হলে ধাক্কা খাবে না?’ তখন বেশ হাসি পায়।
হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল বা মমতা কোনও দিন কোনও লড়াই করেনি, উনি যা করেন সেটা হল নিছক নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তাই হিন্দু সংহতির মঞ্চ থেকে যখন করুণালঙ্কার ভিশু নামক এক ধর্মান্ধ হুংকার দেয়— যারা হিন্দুরাষ্ট্র মেনে নিতে পারবে না, তাদের দেশ ছাড়তে হবে— তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ, প্রশাসন ও তৃণমূল ক্যাডারবাহিনী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ যখন ‘আক্রান্ত আমরা’-র মতো কোনও সংগঠন সভা-মিছিল করে অথবা ভাঙর-ভাবাদিঘি নিয়ে কোনও কর্মসূচি হয়, তখন কী বীরবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ে তৃণমূলী ক্যাডারবাহিনী।
অজেয় পাঠক হরিণডাঙা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
আগ্রাসন
‘পনির, হিন্দি এবং জয় ভারত’ (১-৩) প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাই। গত বছর দিল্লিতে এনসিইআরটি আয়োজিত একটি জাতীয় স্তরের আলোচনাচক্রে যোগ দিই। আমাদেরও খাবারেও কখনও কোনও আমিষ পদ রাখা হয়নি। আলোচনাচক্রে শুধু এ-দেশের নয়, বিদেশের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সেতু-ভাষা হিসাবে ইংরেজিই গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু এক অধ্যাপক কিছুতেই ইংরেজি বলবেন না ঘোষণা করলেন এবং তিনি হিন্দিতেই বললেন (যদিও সেখানে কোনও দোভাষী ছিলেন না)। এতে তাঁর হিন্দি অস্মিতা বজায় থাকল ঠিকই, কিন্তু আসল কাজটা কি এগোল? আবার দেখবেন, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দফতরে হিন্দির প্রচার ও প্রসারের জন্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়, আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়, উৎসাহভাতা দেওয়া হয়। আর কোনও ভারতীয় ভাষার ক্ষেত্রে এ রকমটি আছে কি? একে ভাষা আগ্রাসন ছাড়া আর কী বলব?
শুভঙ্কর সাহা সিন্দ্রানী, উত্তর ২৪ পরগনা
খাপের হুমকি
খাপ পঞ্চায়েত জানিয়েছে, মেয়েদের আর জন্ম নিতেই দেওয়া হবে না। যাঁরা পঞ্জাব হরিয়ানা রাজস্থানে দিনযাপন করেছেন বা করছেন, তাঁরা জানেন, এই কথার ব্যাপ্তি ও প্রসার কত দূর।
১৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মতলায় একই পরিবারের কয়েক জনকে ধর্মান্তরিত করার যে নাটক অনুষ্ঠিত হল বা হতে দেওয়া হল, তার শিকড় কী ভাবে আমাদের সুস্থ বোধকে পীড়িত করে চলেছে, তা আমরা বছর পাঁচ-ছয় ধরে দেখে চলেছি নানা রূপে ও রঙে। রাজনীতিক আর ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতি আস্থা রাখার প্রশ্নই ওঠে না, কিন্তু যাদের একমাত্র ধর্ম মনুষ্যত্ব, তাদের আর ঘুমিয়ে থাকার উপায় বা সময় নেই।
শেষে খাপ-গুরুদের কাছে বিনীত প্রশ্ন: নারীহীন সমাজে আপনারা জন্ম নেবেন কী ভাবে?
নন্দিতা পাল কৃষ্ণনগর, নদিয়া
ভ্রম সংশোধন
‘বিজেপির কাঁটা ত্রুইপাল্যান্ড’ (পৃ ১, ৬-৩) প্রতিবেদনে লিখিত ত্রুইপাল্যান্ড কথাটি ঠিক নয়। হবে তিপ্রাল্যান্ড। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy