Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: হার মানেননি

তৎকালীন রাজপুত মহিলারা রাজপুত যুদ্ধের হার-না-মানা নীতি, প্রতিপক্ষের কাছে কখনওই নত না হওয়ার আদর্শ অক্ষুণ্ণ রাখতেই ‘জহরব্রত’ পালন করেছিলেন। এর মধ্যে ‘শরীরসর্বস্বতা’র যুক্তি খোঁজা নিরর্থক হবে।

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৮ ০০:১৩
Share: Save:

স্বস্তিক মল্লিকের চিঠির (‘ধর্ষণ ও পুংতন্ত্র’, ১৫-২) প্রেক্ষিতে জানাই, আমি চিঠিতে কোনও ভাবেই ধর্ষিতার আত্মহত্যা করাকে সমর্থন জানাইনি। লেখকের মতে, ‘যোনি আঘাতপ্রাপ্ত’ হওয়ার কারণেই ধর্ষিতা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। না, কেবলমাত্র ‘যোনি আঘাতপ্রাপ্ত’ হলেই নয়, কোনও রকম যৌন নির্যাতনের (সব যৌন নির্যাতন ধর্ষণ নয়) শিকার হলেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনও মানুষই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। তার কারণ শুধু সমাজে তাঁর মানসম্মান নিয়ে টানাটানি হওয়াই নয়, সেই ব্যক্তির অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে যে কোনও রকম যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাটাই সবচেয়ে বড় মানসিক আঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় প্রসঙ্গে বলি, নারীর আত্মসম্মান রক্ষা করা মানেই নিজের শরীর রক্ষা করা বোঝায় না। নিজের ব্যক্তিত্ব রক্ষা, আদর্শ রক্ষা, নিজস্ব সত্তা রক্ষা করার দ্বারাই আত্মসম্মান রক্ষা হয়। কেউ অন্যের পরাধীনতায় বাঁচতে অস্বীকার করতেই পারেন। সেই জন্য আত্মহত্যা করলে তার মধ্যেও পুরুষতন্ত্রের প্রভাব খুঁজতে যাওয়াটা বোধহয় যথাযথ হবে না। তৎকালীন রাজপুত মহিলারা রাজপুত যুদ্ধের হার-না-মানা নীতি, প্রতিপক্ষের কাছে কখনওই নত না হওয়ার আদর্শ অক্ষুণ্ণ রাখতেই ‘জহরব্রত’ পালন করেছিলেন। এর মধ্যে ‘শরীরসর্বস্বতা’র যুক্তি খোঁজা নিরর্থক হবে।

দেবাদৃতা মণ্ডল নদিয়া

পাঁচ বছর অন্তর

ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন কভার করতে যাওয়া একটি নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এক মাঝবয়সি যুবক বললেন, তিনি চান প্রতি পাঁচ বছর পর-পরই সরকার পরিবর্তন হোক। দেশ বা রাজ্যের অগ্ৰগতি এতেই ভাল হয়। এমন কথা অনেকেই বলেন। কিন্তু এটা ঘটা সম্ভব, যদি ভোটারদের মানসিকতার কিঞ্চিৎ পরিবর্তন হয়। সরকারের সামান্য ভুল-ত্রুটিকেও সরকার পরিবর্তনের কারণ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ভোটারদের এই মানসিকতার কথা চিন্তা করাই কষ্টকল্পনা। একটা ভুল কথা এই রাজ্যের মানুষের সম্পর্কে দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্যের পূর্বতন শাসক দল বলে বেড়াত। সেটা হল: এই রাজ্যের মানুষ নাকি খুব রাজনৈতিক ভাবে সচেতন। দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর ধরে এই রাজ্যে বামপন্থী দল শাসন করে এসেছিল বলেই তখন এটা বলতে হত? আসলে এ-ধরনের কথা মানুষের সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন যখন বুদ্ধিজীবী, কবি, শিল্পীদের লম্বা লাইন পড়ে যায় তাঁরা সরকারের কত ঘনিষ্ঠ তা প্রমাণ করতে, বুদ্ধিজীবীদের ভিড়ে শাসক দলের মঞ্চ ভেঙে পড়ার জোগাড় হয়, সেটাকে কী বলব? আরও বেশি রাজনৈতিক সচেতন না অ-সচেতন? পুরো ব্যাপারটাই হল, ‘সুবিধাবাদ সচেতন’।

রাজ্যের এখনকার সরকারের মন্ত্রীসান্ত্রিরা প্রায়ই বলেন, বাংলার মানুষ এটা সহ্য করবেন না। বা বাংলার মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। তা বাংলার মানুষের মনের সর্বজনীন ঠিকা যদি তারা নিয়েই থাকেন, তবে নির্বাচনের নামে প্রহসন সৃষ্টি করে রাজ্যের অনেক পুরসভা, পঞ্চায়েত কেন দখল করতে হয়? দিন কয়েক আগে একটি আলোচনায় কথা উঠেছিল: পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ভারতের অন্য রাজ্যে ভোটের নামে এত হিংসা, ছাপ্পা ভোট হয় না (অন্য রাজ্যে গিয়েও যে অনুযোগ শুনতে হয়)। খাতায়-কলমে বামপন্থী কর্মী ও আমার পরিচিত এক ট্রেড ইউনিয়ন নেতা (মানসিক ভাবে বামপন্থী কি না জানি না) বলে বসলেন, সব রাজ্যেই এমন হয়। একটা বুথে ৯০০ ভোটে শাসক দল ৮৮০, আর বিরোধী দলগুলির মধ্যে বাকি ২০টা ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়া; বুথের পর বুথে এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হলেও এটা নাকি কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এই হল এই রাজ্যের গণতান্ত্রিক চেতনা, রাজনৈতিক সচেতনতা; অন্যায় মেনে না নেওয়ার মানসিকতার নমুনা।

চেতনার এহেন ‘উন্নততর’ নমুনার জন্যই শাসক দলের মন্ত্রীসান্ত্রিদের গরিবের টাকা আত্মসাৎ, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েও জনগণের ভালবাসার ভোটে বিপুল ভোটে জিতে আসতে কোনও অসুবিধা হয় না। তাই এই রাজ্যের এমন উচ্চ মার্গের ‘রাজনৈতিক সচেতনতায়’ সরকারের ‘সামান্য’ ভুলত্রুটিতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার পরিবর্তন হবে, এটা দুরাশা।

প্রণব রাহা দুর্গাপুর-৪

ভূত বানানো

আধার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলাগুলো চলছে, সেখানে আইনজীবী কপিল সিব্বল প্রশ্ন তুলেছেন, অন্য কোনও প্রমাণ না থাকলে তো আধার মিলবে না। বিচারপতি চন্দ্রচূড় এই বক্তব্য খারিজ করে দেন, বলেন, ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া যে শ্রমিকদের কোনও পরিচয়পত্র নেই তাঁদের ক্ষেত্রে আধার একটি পরিচয়পত্র হতে পারে। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সিব্বল প্রশ্ন তোলেন, আধারে বায়োমেট্রিক যুক্ত করা হলে অন্য পরিচয়পত্রগুলোই তো খারিজ হয়ে যায়। এটা অসাংবিধানিকও বটে। আর, আধার যদি ভিন রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকদের পরিচয়পত্র হয় তা হলে কিছু দিন আগে মহারাষ্ট্রে মালদহের কিছু শ্রমিককে আধার থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার করা হল কেন? কিংবা রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার যুক্ত না হওয়ায় ঝাড়খণ্ডে সন্তোষী রেশন না পেয়ে অনাহারে মারা যান কেন?

আধারের হয়তো আরও কোনও গূঢ় উদ্দেশ্য আছে। আসলে একটা কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করতে চাইছে কর্তৃপক্ষ, যা দিয়ে দেশের মানুষের ওপর নজর রাখতে সুবিধা হবে। প্রয়োজনে তাদের মুছে ফেলা সম্ভব হবে। কারণ আধার একটা নম্বর মাত্র। এক জন মানুষকে মুছে ফেলার থেকে একটা নম্বর মুছে ফেলা অনেক সহজ। কারও আধার না থাকলে বা আধার নিয়ে গন্ডগোলে পড়লে সরকারি পরিভাষায় তিনি ‘ভূত’। ‘ভূত’ই তো তাড়াতে চায় সরকার।

সুমন সেনগুপ্ত কলকাতা-৭৫

খাপ পঞ্চায়েত

মেয়েদের পোশাক–আশাক, শিক্ষাদীক্ষা কেমন হবে, তা নিয়ে ফতোয়া জারি করেন এঁরা। সাবালক পাত্রপাত্রীদের নিজের পছন্দের বিবাহ মনঃপূত না হলে গুন্ডা লাগিয়ে উভয়কেই হত্যা করার নিদান দেন। আর, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই গা–জোয়ারি কার্যকলাপে লাগাম পরানোর চেষ্টা করলে তাঁরা মেয়েদের জন্ম দেওয়াই বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। তাঁরা খাপ পঞ্চায়েতের নেতা। এঁদের ব্যাপক দাপট হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের গ্রামীণ সমাজজীবনে। একটি মামলা প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালত সম্প্রতি জানিয়েছে, সাবালক নারী–পুরুষের বিয়ের সিদ্ধান্তে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এতেই ঘি পড়েছে আগুনে।

আসলে, এই স্বঘোষিত সমাজপতিদের মাথার উপরে রয়েছে রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদী হাত। এই দেশের প্রান্তে প্রত্যন্তে, গলিতে মহল্লায় মানুষের চেতনার পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে সামন্তী ভাবনা–ধারণা, যার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি যুক্ত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। স্বাধীনতার ৭০ বছর পেরিয়ে এসেও গণতান্ত্রিক শিক্ষা ও চেতনার স্পর্শ পাওয়ার সুযোগবঞ্চিত বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে খাপ পঞ্চায়েতের নির্দেশ অলঙ্ঘনীয়। সেই খাপের বিরুদ্ধতা করলে এদের কোপে পড়ার আশঙ্কা থাকে, ভোটে যার প্রভাব পড়ে। তাই রাজনৈতিক নেতা–কর্তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত দিয়ে চলেন এই ‘পিছন দিকে এগিয়ে চলা’ সংগঠনগুলিকে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর মন্তব্য করেছিলেন, ‘খাপের মতো সংগঠন সমাজের পক্ষে উপযোগী।’ তাই খাপ কর্তারা যখন ক্রমবর্ধমান ধর্ষণে লাগাম পরানোর দাওয়াই হিসাবে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার নিদান দেন— যেন ধর্ষণের জন্য দায়ী মেয়েরাই, তখন সে কথার বিরোধিতা করে না এই সব ভোটবাজ দলগুলি।

শ্রীরূপা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা–৪

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deepika Padukone Jauhar Brata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE