সারা দিনের ক্লান্তির শেষে চোখ দুটো লেগে এসেছিল একটু। হঠাৎ আঁতকে উঠলাম। একটু আগে অবধি আমাদের গাড়ি হুহু করে দৌড়োচ্ছিল জাতীয় সড়ক ধরে। গাড়িটা আচমকা দাঁড়িয়ে গিয়েছে, আর চার পাশ ছেয়ে গিয়েছে কাশ্মীর পুলিশ, আধাসেনা থেকে সেনার সাঁজোয়া গাড়িতে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে কোথা থেকে শয়ে শয়ে জওয়ান এসে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে পড়লেন পজ়িশন নিয়ে। বাঁ পাশের মাঠের উপর দিয়েই একটা সেনার ট্রাক এসে দাঁড়াল আমাদের একেবারে সামনে। সেখান থেকে অত্যাধুনিক বন্দুক হাতে ঝড়ের গতিতে নেমে কিছু বিএসএফ জওয়ান ঢুকে গেলেন সামনের একটা গলিতে, যেখান থেকে তখনও ভেসে আসছে গুলির আওয়াজ। সেনা আর জঙ্গিদের মরণপণ লড়াইয়ের ময়দানে তখন অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আমরা কিছু পর্যটক। এই ভারতবর্ষের গল্প আগে শুনেছিলাম, চোখে দেখিনি। ড্রাইভার জাভেদের কথায় যখন সংবিৎ ফিরল, তখন আধাসেনা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলো সরিয়ে জায়গাটা ফাঁকা করে দিতে চাইছেন। আমাদের গাড়িটাও সেনা আর সাঁজোয়া গাড়ি কাটিয়ে চলতে লাগল আস্তে আস্তে। জাভেদ জানালেন, এর পর চেকিং বেড়ে যাবে খুব। তবে ভয়ের কিছু নেই, কাশ্মীর উপত্যকায় এ সব নিয়মিত ঘটনা।
দিনটা ৩ জুন, ২০১৬। ব্রিজবিহার থেকে অবন্তীপুরা অবধি রাস্তায় আমাদের গাড়ির সামনে পিছনে সমানে চলতে লাগল দুটো সাঁজোয়া গাড়ি, তাতে কম করে জনাকুড়ি জওয়ান। জাভেদ জানালেন, রাস্তার উপর জঙ্গি হামলা জায়গা আর সময় বুঝে হয়। হয় দুপুরে, নয় ভোরে, নয় মাঝরাতে। এক জন পর্যটকও যাতে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেটা সেনা আর জঙ্গি, দু’তরফই নজরে রাখে। সেনারা দায়িত্ববোধে, আর জঙ্গিরা স্বার্থে। জাভেদ নিজেকে কাশ্মীরি ভাবেন, ভারতীয় নয়। তবু আমাদের জানিয়েছিলেন, কী গোপন ফর্মুলায় আমাদের টাকার একটা অংশ ঘুরে জঙ্গি আর পাথরবাজদের হাতে পৌঁছয়। আমরা, মানে উপত্যকার পর্যটকরা, তাই এক প্রকার ‘অ্যাসেট’, জঙ্গি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে। তা ছাড়া উপত্যকার সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের পেট চলে পর্যটনে। সেখানে আঘাত করে নিজেদের জনভিত্তি কমাতে কোনও দিনই চাইবে না বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। আমরা তাই নিরাপদ।
জায়গায় জায়গায় রাস্তার দু’ধারে কিছুটা দূরে দু’চার জনের জটলা দেখা যাচ্ছিল সে দিন। জাভেদ জানিয়েছিলেন, জম্মু আর পহেলগাঁওয়ের গাড়িগুলো মোটামুটি ভাবে সন্ধের মধ্যে এলাকা পেরিয়ে গেলেই, ওরা পাথর ছুড়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আধাসেনাদের বাধ্য করবে গাড়ির ভিতরের বাঙ্কারে ঢুকে যেতে। তবে এ সবের মাঝে কোনও পর্যটকের গাড়ি চলে এলে, সাময়িক বিরতি নিয়ে অপেক্ষা করবে গাড়ি পেরিয়ে যাওয়া অবধি। তাই শ্রীনগর আর দক্ষিণ কাশ্মীরের একটা বড় জায়গায় ভারতবিরোধী পোস্টার আর প্রো-পাকিস্তান দেওয়াল লিখন দেখে দেশবাসী হিসাবে কষ্ট হলেও, পর্যটক হিসাবে ভয় হত না।
এই ধারণা নিয়েই চলছিলাম এত দিন। বন্ধু থেকে সহকর্মীদের বোঝাতাম, কেন কাশ্মীর মোটেই বিপজ্জনক নয় আমাদের পক্ষে। ভেবেও রেখেছিলাম, আবার যাব। ভাবনার মূলে এ বার আঘাত লাগল। পাথরবাজদের ঢিলে আহত হয়ে মারা গেলেন চেন্নাইয়ের পর্যটক থিরুমানি, আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও কয়েক জন। ঘটনা শ্রীনগর-গুলমার্গ রোডের নারাবাল এলাকার, সাম্প্রতিক অতীতে যা প্রায়ই উত্তপ্ত হলেও, পর্যটকদের উপর হামলা এই প্রথম। কিন্তু এ রকম তো হওয়ার কথা ছিল না! তবু হল, কারণ কাশ্মীরের রাজনীতি এ বার অন্য খাতে বইতে শুরু করেছে। জানি না এই নোংরা আর সুবিধাবাদী রাজনীতিতে কার ঠিক কতটা লাভ, তবে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা করতে বসলে উপত্যকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমাদের মতো সম্ভাব্য পর্যটকদের নামও তালিকার শুরুর দিকে থাকবে নিশ্চিত ভাবে।
অভিরূপ ঘোষ মানবাজার, পুরুলিয়া
এখন ডাক্তার
কুণাল সরকার তাঁর লেখায় (‘নিধিরাম বানিয়ে রাখলে হবে?’, ২৬-৪) যথার্থই বলেছেন, ‘‘সদর্থক চিকিৎসার জন্য যত শয্যা, যে পরিকাঠামো চাই, তা বেসরকারি ডাক্তারদের দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের নিধিরাম সর্দার করে রাখলে দেশ কি উন্নত, স্বচ্ছ হতে পারবে?’’ পরিকাঠামোগত ত্রুটি মেনে নিয়েও প্রশ্ন হল: যাঁরা সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে স্থায়ী চাকরি করেন তাঁরা কি ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ করেন না? অবশ্যই করেন। যে চিকিৎসক যত নামজাদা হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে তাঁর পসার তত ভাল। বরং চাকরিটা তাঁর প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন হিসাবে কাজ করে। যে চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত, শিফ্ট অনুযায়ী কিছু সময় থাকেন ইমার্জেন্সিতে, কিছুটা সময় রোগীদের ওয়ার্ডে একটা চক্কর, ব্যস ডিউটি শেষ। তার মধ্যেই প্রাইভেট হসপিটাল থেকে রিং এলে চলে যাওয়া। দিনের অবশিষ্ট সময় প্রাইভেট ক্লিনিকে। সম্প্রতি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে এসে স্বাস্থ্যসচিব স্বচক্ষে দেখে গেলেন চিকিৎসকবাবুদের রোগীর প্রতি দায়িত্ববোধ! বায়োমেট্রিক উপস্থিতি আছে। বাস্তবে কুণালবাবুর নিধিরাম সর্দাররা কলেজ হাসপাতালেই নেই। সুতরাং চিকিৎসকবাবুদের নিধিরাম সর্দার হওয়ার ক্ষেত্রেও যে কর্তব্যকর্মের প্রয়োজন, তার মানসিকতা আদৌ আছে কি?
বেসরকারি হাসপাতালের এক জন প্রশাসক-চিকিৎসক হিসেবে তিনি লিখেছেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতাল বাণিজ্যিক হারে, লভ্যাংশের কথা ভেবে বিল বানালে সাধারণ মানুষ ও নেতারা অসন্তুষ্ট হন।’’ এখানে বাণিজ্যিক হারের পরিমাণ উল্লিখিত হয়নি। চিকিৎসা সাধারণ মানুষের কাছে বাণিজ্যিক পণ্য বা সেবার মতো নয়। এটি একটি অত্যাবশ্যক সামগ্রী। এই সেবার উপরে মানুষের বাঁচা-মরা নির্ভর করে। তাই এই সেবা আয়ত্তের মধ্যে না হলে আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে বেসরকারি হাসপাতালের খরচ ও তার সঙ্গে কিছু স্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে একটা ন্যায্য উপায় চাই, ঠিকই। যদিও এই ন্যায্য উপায় চাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, হাসপাতালের মালিকেরা কয়েক হাজার কোটি টাকা ধার করে চম্পট দিতে পারেন না। চম্পট দিতে পারেন না বলে কি তাঁরা অন্যায্য বিল বানানোর ছাড়পত্র পেতে পারেন? আর নীরব মোদী, বিজয় মাল্যরা যদি হাসপাতালের ব্যবসা করতেন, তা হলে অসুবিধা কোথায়?
একটা সময় ছিল, যখন গভীর রাতেও পাড়ার ডাক্তারবাবুর বাড়িতে গিয়ে রোগীর বাড়ির লোকেরা চিকিৎসার জন্য ডাকতেন। সময়ের তোয়াক্কা না করে ডাক্তারবাবুও স্টেথো আর ব্যাগ নিয়ে চলে যেতেন রোগীর বাড়ি। আজকাল দিনের বেলাতেও কেউ আর রোগীর বাড়ি যান না। ডাক্তারকে যত তোয়াজই করা হোক না কেন, রোগীর বাড়িতে আসবেন না, তা রোগী শয্যাশায়ী হলেও। কারণ, আসা-যাওয়াতে যে সময় ব্যয় হয়, সে সময়ের মধ্যে রোগী দেখে যত আয় হয়, কোনও রোগীর বাড়ি গেলে সেই পরিমাণ অর্থ পাবেন না। আসলে এ সমাজ থেকে মানবিকতা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। ডাক্তারবাবুরাও এর ব্যতিক্রম নন। অবশ্যই কিছু ডাক্তার আছেন অন্য রকম, যাঁরা ভগবানতুল্য।
সৈকত রায় সেকেন্দারপুর, খানাকুল, হুগলি
শৈল নয়
‘কলকাতার কড়চা’য় (৩০-৪) শৈল দেবী প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে যে ‘শাপমুক্তি’ ছবিতে অজয় ভট্টাচার্যের লেখা এবং অনুপম ঘটকের সুরে ‘একটি পয়সা দাও গো বাবু’ গানটি শৈল দেবীর কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল। তথ্যটি ঠিক নয়। এই গানটি ছবিতে নেপথ্যে গেয়েছিলেন তৃপ্তি (আন্না) সেন। প্রমথেশ বড়ুয়া এঁকে দিনহাটা থেকে নিয়ে আসেন তাঁর ছবিতে গান গাওয়ানোর জন্য।
সোমনাথ রায় কলকাতা-১৫
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy