Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: গোর্কির ‘মা’র শক্তি

১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিনয়-বাদল-দীনেশের রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। বিনয় বসু ও বাদল গুপ্ত মারা গেলেও মৃতকল্প দীনেশকে বহু চেষ্টায় বাঁচিয়ে তোলা হয়েছিল।

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ম্যাক্সিম গোর্কির দেড়শো বছরের জন্মদিন উপলক্ষে (‘ব্রেখট থেকে... অনুপ্রেরণা’, রবিবাসরীয়, ২৫-৩) নিবন্ধটিতে, ‘গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসটির কথা লেখা হয়েছে। আমাদের দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনেও এই বইয়ের প্রভাব ছিল অপরিসীম। ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিনয়-বাদল-দীনেশের রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। বিনয় বসু ও বাদল গুপ্ত মারা গেলেও মৃতকল্প দীনেশকে বহু চেষ্টায় বাঁচিয়ে তোলা হয়েছিল। স্পেশাল ট্রাইবুনালের বিচারে তাঁর ফাঁসির হুকুম হয়।

ফাঁসির দণ্ডাদেশের পর তিনি তিন মাস বেঁচেছিলেন। রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত কুড়ি বছরের দীনেশ আলিপুর কনডেম্‌ড সেলে বা ফাঁসির ওয়ার্ডে কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ আবৃত্তি করতেন আপনমনে। মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়ার জন্য তাঁর মনে স্থান পায়নি কোনও উদ্বেগ বা কোনও দুশ্চিন্তা।

১৯৩১ সালের ৭ জুলাই মঙ্গলবার আলিপুরের সেন্ট্রাল জেলে দীনেশের ফাঁসির দিন স্থির হলে, আগের দিন মা-বাবা এসেছেন বীর পুত্রের সঙ্গে শেষ দেখা করতে। সে দিন ফাঁসির সেলে মা ও সন্তানের শেষ আলিঙ্গন। দু’জনেই আত্মহারা। অদূরে জেল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি অফিসার সময়ের হিসাব রাখছেন। স্নেহার্ত মায়ের করুণ আর্তনাদ, দীনেশ কিন্তু স্থির, অচঞ্চল। অশ্রুসিক্ত মা জানতে চাইলেন, পুত্রের এই নিদারুণ অভাব কী দিয়ে তিনি মেটাবেন?

মায়ের আলিঙ্গনাবদ্ধ দীনেশ সান্ত্বনার স্বরে জবাব দিলেন, ‘‘দাদাকে বলো ম্যাক্সিম গোর্কি’র ‘মা’ বইখানা তোমাকে বার বার পড়ে শোনাতে। তা হলে তুমি আমাকে হারাবার ব্যথা থেকে মুক্তি পাবে।’’ মৃত্যুর মুখোমুখি দীনেশ ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’কে উপলব্ধি করেছিলেন। যে মা আপন সন্তান ও মেহনতি মানুষের পুত্রকন্যাদের প্রতি স্বাভাবিক মায়া-মমতায় ধীরে ধীরে গণসংগ্রাম ও গণবিপ্লবের তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার শাণিত অস্ত্রের অভাবিত অত্যাশ্চর্য প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছিলেন।

অসিতাভ দাস

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়

মানে অন্য

ম্যাক্সিম গোর্কি বিষয়ে বিভাস চক্রবর্তীর নিবন্ধটি সুখপাঠ্য। কিন্তু একটি শব্দের অর্থনির্দেশে অসতর্ক ভুল হয়েছে। রুশ ‘ম্যাক্সিম’ শব্দটির অর্থ তিনি ‘তেতো’ বলেছেন। তা নয়। লাতিন ‘ম্যাক্সিমাস’ থেকে আসা ‘ম্যাক্সিম’ শব্দের লাতিন, হিব্রু, ইংরেজি ইত্যাদি ভাষায় নানা রকম মানে: শ্রেষ্ঠ, ঈশ্বর, অলৌকিক কাণ্ডে পারদর্শী। স্লাভিক-ভাষী দেশে এই নাম ব্যবহৃত হয় বেশি। রুশ সাহিত্যিক আলেক্সেই ম্যাক্সিমোভিচ পেশকভ লেখক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘ম্যাক্সিম গোর্কি’ ছদ্মনামে। ‘গোর্কি’ শব্দের অর্থ রুশ ভাষায় ‘তেতো’। নিজের বিড়ম্বিত ও তিক্ত অভিজ্ঞতাময় জীবনের কথা ভেবে তিনি এই ছদ্মনাম নিলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর লেখনী বিশ্বসাহিত্যকে মাধুর্যমণ্ডিত করেছে।

ঋতম্ মুখোপাধ্যায়

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়

ডাক্তার পাত্রপাত্রী

স্টেথোস্কোপে-বসা দুই প্রজাপতির গাঁটছড়া বাঁধার উদ্যোগে অসুবিধে কোথায় বোঝা গেল না (‘স্টেথোস্কোপে প্রজাপতি-ফাঁদ কেন’, ৫-৪)। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ ঠিক করেছে, ডাক্তারি পেশার পাত্রপাত্রীর বিয়ের বিজ্ঞাপন সাইট চালু করবে। কেউ এই পেশার পাত্র অথবা পাত্রী পছন্দ করতে চাইলে সাইটে ঢুকে বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করবেন, উভয়পক্ষের পছন্দ হলে বিয়েতে গড়াবে। ডাক্তারদের এই সাইট থেকেই জীবনসঙ্গী অথবা সঙ্গিনী নির্বাচন করতে হবে, আইএমএ এমন কোনও গণ্ডি তো কেটে দিচ্ছে না!

একই ভাবে আইটি পাত্রপাত্রীর সাইট, শিক্ষাজগতের পাত্রপাত্রীর সাইট বা ব্যবসায়ী পাত্রপাত্রীর জন্য আলাদা সাইটের কথা ভাবা যেতেই পারে। যাঁদের যেমন ইচ্ছে, তেমন সঙ্গী সেই সাইটে খুঁজে নিতে পারবেন। এতে পিছিয়ে পড়ার জায়গা কোথায়? আমাদের দেশে বিয়ে-থা বর্ণাশ্রম প্রথা মেনে চলত, সে কি এখন মুছে গিয়েছে একেবারে? আধুনিক সাইট বা সংবাদপত্রের বিয়ের বিজ্ঞাপনে উঁকি মারলেই দেখা যাবে, বিজ্ঞাপনগুলির বড় অংশ জুড়ে ধর্ম-গোষ্ঠী-রাশি-গণ ইত্যাদি শব্দ। যাঁরা এক সময়ে জাত-গোষ্ঠীর সীমারেখা নস্যাৎ করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন, তাঁরাই আবার পুত্র-কন্যার বিয়ে দিতে গিয়ে বেড়া খাড়া করতে চাইছেন। সমাজবিদরা বরং এই পিছন-চলনের দিকে নজর দিন, যাতে সাধারণ মানুষের গোষ্ঠী-মানসিকতা দূর হয়।

সম-পেশার দাম্পত্যে সবারই লাভ। তাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিতটি মজবুত হয়। স্বামী-স্ত্রী পেশা এবং নেশাগত ভাবে এক পথের পথিক হলে মানবসমাজ কতখানি লাভবান হতে পারে, তার উজ্জ্বল উদাহরণ পিয়ের কুরি এবং মাদাম কুরি দম্পতি। ডাক্তার দম্পতির ক্ষেত্রে ছবিটা অন্য মাত্রা পেতে পারে। বহু দূরের গাঁ-গঞ্জ থেকে সঙ্কটজনক রোগীকে ডাক্তারবাবুর কাছে এনে জানা গেল, কোনও কারণে তিনি গরহাজির। ডাক্তার-বৌদি যদি সেই সময়ে যোগ্যতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেন, রোগী এবং তাঁর স্বজনদের কাছে সে হবে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। আজকাল সব পেশাতেই কাজের অস্বাভাবিক চাপ। একই পেশার মানুষ হলে অন্যের অসুবিধা বুঝবেন। তেত্রিশটা ঝামেলা সামলে বাড়ি ফিরে খ্যাচখ্যাচ শুনতে হবে না।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি

শ্রীরামপুর-৩, হুগলি

বর্ণপ্রথা?

আইএমএ বোধ হয় ভবিষ্যতে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পরিষেবার পাশাপাশি সমাজে ‘কৌলীন্য প্রথা ভিত্তিক বিবাহ’ বিষয়ক পরিষেবায় মনোনিবেশ করতে চলেছে। ডাক্তার পাত্র বা পাত্রীই পরস্পরকে ভাল বুঝবেন, ইঞ্জিনিয়ারই ইঞ্জিনিয়ারকে বুঝবেন, ম্যানেজমেন্টের লোকজনও নিশ্চয়ই তাই— এ তো আশ্চর্য যুক্তি। এ যেন পুনরায় চতুর্বর্ণ প্রথার ছাঁচে নব-উদ্ভাবিত ‘ডাক্তারবর্ণ’ প্রথার পত্তন। শোনা যায়, অতি সঙ্কীর্ণমনা কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতা মাঝে মাঝে সমর্থকদের বলে থাকেন, ভিন্ন দলের সমর্থকদের সঙ্গে চায়ের দোকানে পাশাপাশি না বসতে, অথবা তাদের ঘরে ছেলেমেয়েদের বিয়ে না দিতে। কিন্তু খোদ ডাক্তারদের এ হেন প্রজাপতি-স্বাতন্ত্র্য? জাতপাত বা অস্পৃশ্যতারই আর এক রূপ নয় তো?

সুব্রত বিশ্বাস

ধর্মপুকুরিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা

ভোটকর্মীর ভোট

বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটকর্মীরা ই ডি ভোটার হিসাবে সাধারণত পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে বড় এলাকা হওয়ায় প্রচুর সংখ্যায় ই ডি ভোটার থাকেন। ফলে, ই ডি ভোট আলাদা ভাবে গণনা হলেও, সংখ্যা বেশি থাকার দরুন রাজনৈতিক দলগুলি বুঝতে পারে না, তাদের এলাকার কোন চাকুরে ভোটকর্মী কোন দলকে ভোট দিলেন। এটি ভোটকর্মীদের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আক্রোশ থেকে বাঁচতে রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করে।

কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো হয়ে যায়। এক একটি বুথে দু’তিন জন, এমনকী মাত্র এক জন ই ডি ভোটার থাকেন। আলাদা ভাবে ই ডি ভোট কাউন্টিংয়ের সময় রাজনৈতিক দলগুলি পরিষ্কার বুঝে যায়, বুথের চাকরিজীবী ভোটকর্মীরা কে কাকে ভোট দিয়েছেন। ফলে, ভোটদানের গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার পরোক্ষে নষ্ট হয়।

এই সমস্যার সমাধানে, ছোট্ট এবং খুব সহজ একটি পদক্ষেপ করা যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে, ভোট গণনার সময়, বুথের ব্যালট বাক্স খোলার পরে তার সাধারণ ব্যালট ভোটের সঙ্গে ই ডি ভোটের ব্যালটগুলিকে মিশিয়ে দিলে, আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে না।

প্রণবকুমার মাটিয়া

পাথরপ্রতিমা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maxim Gorky Soviet literature
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE