বাজেটে ১০ কোটি পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে স্বাস্থ্যবিমা এবং চাষিদের জন্য সহায়ক মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবকে দেখিয়ে বিজেপি নেতা–মন্ত্রীরা একে গ্রাম–গরিব–চাষির বাজেট বলছেন। দেশে জনস্বাস্থ্যের ভয়ংকর দুরবস্থার কথা কারও অজানা নয়। সেই দুরবস্থা দূর করা যদি সরকারের উদ্দেশ্য হয়, তা হলে বিমা কেন? কেন স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ বৃদ্ধি নয়? সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর উন্নতি না ঘটিয়ে ভারতের মতো দেশে অধিকাংশ গরিব, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? বিমায় বরাদ্দ করা মানেই তো সরকারি অর্থে বিমা কোম্পানিগুলি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যব্যবসায়ীদের পুষ্ট করা। আমেরিকাসহ যে-সব দেশে স্বাস্থ্যকে এ-ভাবে বিমানির্ভর করা হয়েছে, কোথাও তার সুযোগ সমাজের নীচের তলা পর্যন্ত পৌঁছয়নি৷
ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই বিজেপি নেতাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, চাষিদের ফসলের ন্যায্য দাম দেওয়ার। গত চার বছরে মোদী সরকার চাষিদের জন্য কিছুই করেনি। উপরন্তু সার বীজ কীটনাশক সেচ— সব কিছুর খরচ লাফিয়ে বেড়েছে। সারা দেশে কৃষক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন এক বিক্ষোভেই মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার গুলি চালিয়ে পাঁচ কৃষককে হত্যা করেছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনেও গ্রাম–গুজরাত বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সামনের বছর লোকসভা নির্বাচন। চাপে পড়েই বাজেটে লম্বা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু চাষের বিপুল খরচ কমানোর কোনও সুরাহা বাজেটে নেই। চাষিদের থেকে ফসল সহায়ক মূল্য দিয়ে কে কিনবে, অর্থাৎ সরকার নিজে কিনবে, নাকি কর্পোরেটদেরই সেই দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হবে, তা স্পষ্ট করে বলা নেই। বাজেটে কৃষকদের আয় পাঁচ বছরে দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়েছে। কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় এমন অবাক কাণ্ডটি ঘটবে, সে সম্পর্কে একটি শব্দও উচ্চারণ করা হয়নি। কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতিকে বিজেপি সভাপতি স্বয়ং নির্বাচনী জুমলা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে, সভাপতি কবে এই প্রতিশ্রুতিটিকেও জুমলা বলে উড়িয়ে দেন!
সমর মিত্র কলকাতা–১৩
চাষির বন্ধু!
‘মনসাপূজা’ (৫-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কৃষক বিক্ষোভ এবং তার ফলে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে গ্রামীণ ভোটে বিজেপির ভোট বাক্সে টান পড়া— এই দুটি বিষয়কে মগজস্থ করে জেটলি এ-বার বাজেট বক্তৃতা শুরু করবেন, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান ছিলেন না। অর্থমন্ত্রী তাঁদের হতাশ করেননি। লেখা হয়েছে ‘ফসলের সহায়ক মূল্য নাকি হইবে উৎপাদন-ব্যয় হইতে পঞ্চাশ শতাংশ বেশি’, এই ‘নাকি’ শব্দটার মধ্যে বাজেটে ঘোষণার সমস্ত ফাঁকি ধরা পড়েছে। তবে ‘অনেক ফসলেরই বর্তমান সহায়ক মূল্য উৎপাদন ব্যয়ের দেড়গুণ বা তাহারও অধিক’— এখানে ‘অনেক’ শব্দটিতে আপত্তি আছে। সরকার কৃষকের কাছ থেকে অনেক ফসল কেনে না। শুধু কেনে ধান ও গম। স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ: অন্যান্য ফসল যেমন ডাল, জোয়ার, বাজরা জেসিআই পাট ইত্যাদির সহায়ক মূল্য যুক্ত করে সরকারকে কিনতে হবে।
আর উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে শুধু ‘জমি ব্যবহার ও চাষের কাজে ব্যবহৃত লগ্নিকৃত টাকা’ নয়, কৃষকের নিজের শ্রম, যা তিনি স্বেচ্ছায় বিনিয়োগ করেন, তার মূল্যও যোগ করা উচিত। বাজেটে কৃষিক্ষেত্রে বাড়তি বিনিয়োগের মধ্যে অন্য একটি রহস্য আছে। কেন্দ্রীয় সরকার এর আগে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিল, ধান ও গমের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ওপর বোনাস তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে দিতে হবে। অনেক রাজ্য সরকার এই নির্দেশ মানছে না। ফলে ফুড কর্পোরেশন সেই সেই রাজ্যের কৃষকের কাছ থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করছে না। শুধু তা-ই নয়, ফুড কর্পোরেশনকে বিলুপ্ত করার তোড়জোড় চলছে।
এখানেই শেষ নয়, সরকার শান্তাকুমার কমিটির সুপারিশ মেনে, ২০১৩ সালের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন তুলে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুতরাং কৃষিকে লাভজনক করার যে প্রচেষ্টা বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে তা আসলে কাঁঠালের আমসত্ত্ব! কৃষিকে লাভজনক করে কৃষককে বাঁচাতে গেলে, স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ কার্যকর করতে হবে, যা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কমলকুমার দাশ কলকাতা-৭৮
জলসংকট
গত কয়েক দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচণ্ড জলসংকটের কথা প্রায়ই খবরে উঠে আসছে। কোথাও টিউবওয়েল নেই, কোথাও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অনেককে জল আনতে অন্তত তিন কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়।
সম্প্রতি মাননীয় মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা যাওয়ার সময় স্থানীয় মানুষদের জল সংকটজনিত রোষের সম্মুখীন হন। এ-দিকে পশ্চিমবঙ্গের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু জলসংকটেরই স্থায়ী মোকাবিলা করেছে তা-ই নয়, সেই সঙ্গে সেই এলাকার সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধিত হয়েছে।
তাঁরা বিভিন্ন গ্রামে জলের সমস্যা সমাধান ছাড়াও, প্রায় ১৫০০০ পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, শিশু কিশোরদের স্কুলে পাঠানোর মতো আর্থিক সংগতির ব্যবস্থা করেছেন। মাত্র ২ টাকা করে জমিয়ে তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি দশ লক্ষ টাকা। যে মেয়েরা ঘরের বাইরে বেরতেন না, ঠিক ভাবে কথা বলতে পারতেন না, তাঁরা এখন বিভিন্ন গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সবাইকে নিজেদের এই উন্নতি ও পরিবর্তনের কথা সদর্পে জানাচ্ছেন। Revolving fund-এর মাধ্যমে livelihood support-এর সুফল পাচ্ছে এই সব পরিবার। টিউবওয়েল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে ফান্ড গঠন করা হয়েছে, তার পরিমাণও আনুমানিক দশ লক্ষ টাকা। গ্রামবাসীর মধ্যে এমন ধারণা গড়ে উঠেছে: গ্রামের সম্পদ আমাদেরই সম্পদ এবং তা রক্ষা করা আমাদেরই কর্তব্য। Sustainable developement-এর ক্ষেত্রে এই প্রকল্প একটা নিদর্শন স্বরূপ এবং পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকার উন্নতির ক্ষেত্রে এটি একটি মডেল প্রজেক্ট হতে পারে। প্রয়োজনে আঞ্চলিক ভিত্তিতে মডেলটি কিছুটা পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত করে, বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের উদ্যোগে ও সহযোগিতায়, জলসংকট ও অন্যান্য সমস্যার সহজ ও স্থায়ী মোকাবিলা করা যেতে পারে।
ভারতী কাঞ্জিলাল সল্ট লেক, সেক্টর-৩
অ্যাপ নয়
পশ্চিমবঙ্গ কৃষি বিভাগ রেডিয়ো বিজ্ঞাপনে কৃষকদের স্মার্টফোনে ‘মাটির কথা’ অ্যাপ ডাউনলোড করার পরামর্শ দেয়। সাধারণ সাক্ষরতা এবং কম্পিউটার সাক্ষরতা না থাকলে এই প্রচেষ্টা অর্থহীন। সম্প্রতি এনআইসি (ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার) জেলা সদরগুলিতে ভিডিয়ো কনফারেন্সিং-এর ব্যবস্থা করেছে, সরাসরি ব্লক স্তর পর্যন্ত এই ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করলে, প্রশাসন স্বচ্ছ, দ্রুত হবে, ব্যয়ও কম হবে।
বাসুদেব দত্ত ই-মেল মারফত
কার মূর্তি?
আজকাল বিভিন্ন রাস্তার ওপর মনীষীদের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেখতে পাই। কিন্তু সেগুলি এত অযত্নে নির্মিত যে মূর্তির নীচের ফলকে লেখা নাম দেখে বুঝতে হয় মূর্তিটি কার। মনীষীদের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে শ্রদ্ধা জানানোই যদি উদ্দেশ্য হয়, তা হলে মূর্তিগুলি নির্মাণের ব্যাপারেও যত্নশীল হওয়া উচিত।
অচিন্ত্য বিশ্বাস কলকাতা-৬৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy