‘বিস্কুট নয়, সুপিষ্টকম! রোজকার ঘরোয়া আড্ডাও সংস্কৃতে’ (৫-২) পড়লাম। সংস্কৃতে কথা বলেন এমন লোকের সংখ্যা আমাদের রাজ্যে কম হলেও, ২০১৬-র উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পরীক্ষায় সংস্কৃত বিষয়ে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩,০৯,৩৮২ জন। সারা দেশে আনুমানিক পাঁচ কোটি ছাত্রছাত্রী সংস্কৃত পড়েন। দেশের ১২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে সংস্কৃত পড়ানো হয়। রয়েছে ১৫টি সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের প্রসারের জন্য আছে ১০টি অ্যাকাডেমি, ১৬টি ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, প্রায় ৬০টি সংস্কৃত পত্রিকা। আটটি রাজ্যে রয়েছে সংস্কৃত এডুকেশন বোর্ড বা ডাইরেক্টরেট। (সূত্র: www.sanskrit.nic.in )। বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা ও গবেষণা করা যায়।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘ভারতবর্ষের চিরকালের যে চিত্ত সেটার আশ্রয় সংস্কৃত ভাষায়। এই ভাষার তীর্থপথ দিয়ে আমরা দেশের চিন্ময় প্রকৃতির স্পর্শ পাব, তাকে অন্তরে গ্রহণ করব, শিক্ষার এই লক্ষ্য মনে দৃঢ় ছিল। ইংরেজি ভাষার ভিতর দিয়ে নানা জ্ঞাতব্য বিষয় জানতে পারি, সেগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু ভাষার একটা আনন্দ আছে, সে রঞ্জিত করে আমাদের মনের আকাশকে, তার মধ্যে আছে একটি গভীর বাণী, বিশ্বপ্রকৃতির মতোই সে আমাদের শান্তি দেয় এবং চিন্তাকে মর্যাদা দিয়ে থাকে।’
অনেকে মনে করেন, প্রাদেশিক ভাষার আবির্ভাব এবং সংস্কৃতের পরিবর্তনযোগ্য চরিষ্ণুতা (ডেভেলপমেন্ট) না থাকার জন্য সংস্কৃত ভাষা হিসাবে পিছিয়ে পড়েছে। কিন্তু, এখন যেখানে সময়ের দাবি অনুযায়ী সব স্তরের পাঠ্যক্রমের সংস্কার করা হচ্ছে, সেখানে সংস্কৃতই বা পিছিয়ে থাকবে কেন?
নন্দগোপাল পাত্র সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
লিপি ও উচ্চারণ
রমজান আলি (সম্পাদক সমীপেষু, ২৮-২) ‘অ্যা’-কে রোমান লিপিতে লেখার সমস্যার কথা লিখেছেন। সত্যি বলতে, বাংলা ভাষাতেও এই ধ্বনিকে লেখা যায়? ‘এ্যা’ না ‘অ্যা’? ধ্বনিবিদ মুহম্মদ আব্দুল হাই প্রথমটি লিখতে চান, কিন্তু আচার্য সুনীতিকুমারপন্থীরা পরেরটি। গোড়ায় গলদ হল, বাংলা প্রাইমারগুলিতে এই ধ্বনি (সেই সঙ্গে অ>ও ইত্যাদি)-র স্থান এখনও হয়নি। এমন অনেক ধ্বনিই উচ্চারণে গ্রহণ-বর্জন করতে শেখানো হয়, যেমন উচ্চারণ হয় ‘আনন্দোবাজার পোত্রিকা’ বা ‘আন্তোর্জাতিক মাতৃভাষা দিবশ’। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীর মতো বাঙালি শিক্ষার্থীরাও বাংলা বানান আর উচ্চারণকে অনায়াসে মেলাতে পারে না। কারণ, বাংলা বানান বা লিপিতে যেমনটা লেখা হয় তেমনটা উচ্চারণে হয় না, তা অনেকখানি বিচ্যুত হয়ে বাগ্ধ্বনিপ্রাপ্ত হয়। উদাহরণ দিই: হাডবাজার <হাটবাজার, গাসতলা<গাছতলা, পাঁসসের<পাঁচ সের ইত্যাদি। এমন শত শত আছে।
ভাষাচার্য সুনীতিকুমারপন্থীরা চেয়েছিলেন, রোমান হরফে বাংলা ভাষার লিপ্যায়ন হোক। আমরাও তা চাই। বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে প্রসারিত করতে হলে এমন কিছু পন্থা ভাবা দরকার। এতে মাতৃভাষীর বাংলা লিপির কোনও ক্ষতি হবে না, বরং অন্যভাষীদের প্রকৃত বাংলাভাষার দুধের স্বাদ কিছুটা হলেও ঘোলে মিটবে। হিন্দি ও ইংরেজির দ্বিমুখী চাপ এড়িয়ে আমাদের ভাষাসংস্কৃতির পুষ্পও এক-আধটুকু বিকশিত হয়ে উঠবে।
একাধিক লিপিতে লেখা হয় এমন ভাষা ভারতে কম নেই। যেমন পঞ্জাবি, সিন্ধি, সাঁওতালি ইত্যাদি। পঞ্জাবি এখন গুরুমুখী, উর্দু, দেবনাগরী ইত্যাদি লিপিতে লেখা হয়। সিন্ধি উর্দু, দেবনাগরী ইত্যাদিতে। সাঁওতালি যেমন অলচিকিতে, তেমনই রোমানে। বাংলা অন্য লিপিতে লেখা হলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।
কারণ, এই রোমান লিপিতে এক সময় বাংলা বই মুদ্রিত হওয়ার ইতিহাস আছে। পর্তুগিজ পাদ্রি মানোএল দ্য আসাম্পশাঁও এই লিপিতে লেখেন Crepar Xaxtrer Orth bhed (কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ)। লেখার কাল ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দ, প্রকাশকাল ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দ। মুদ্রণস্থান পর্তুগালের রাজধানী লিস্বন। উক্ত পাদ্রির সমকালে আর এক ধর্মান্তরিত বাঙালি দোম আন্তনিয়ো এই হরফে লিখেছিলেন ‘ব্রাহ্মণ রোমান ক্যাথলিক সংবাদ’। তা হলে?
শ্যামলচন্দ্র দাস তারাবাগ, বর্ধমান
অন্য সংকেত
রমজান আলি জানতে চেয়েছেন, ‘এখন’ বা ‘বেলা’ শব্দে ‘এ’-র উচ্চারণ ‘এ্যা’ হলে রোমানে কোন লিপি দেবেন। এখানে আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালা বা ইন্টারন্যাশনাল ফোনেটিক আলফাবেট-এর সাহায্য নিতে হবে। এই বর্ণমালা ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত এবং এখানে প্রতিটি ধ্বনিকে সংকেতের সাহায্যে বোঝানো হয়। ইংরাজি ও অন্যান্য ভাষার অভিধানে এই সব সংকেত ব্যবহৃত হয়।
ওই বর্ণমালার সংকেত অনুযায়ী ‘এ্যা’ ধ্বনি বোঝাতে ‘ae’ ব্যবহারের নির্দেশ আছে। ইংরাজি ‘absent’ ‘absolute’ প্রভৃতির উচ্চারণ বোঝাতে ওই সংকেত অভিধানে ব্যবহৃত হয়। আবার ইংরাজিতে যখন ‘a’-র উচ্চারণ ‘আ’, যেমন art, তখন অভিধানে ‘a:’ সংকেত দেওয়া হয়।
পৃথিবীর বেশির ভাগ ভাষাতেই শব্দের বানান অনুযায়ী তার উচ্চারণ হয় না। তাই সব ভাষাতে এই বিশেষ বর্ণমালার সাহায্য নেওয়া হয়, এবং অভিধানের সাহায্যে উচ্চারণ নির্ণয় করা হয়।
পরিশেষে জানাই, একমাত্র সংস্কৃত ভাষায়, শব্দের যেমন বানান, ঠিক তেমনটিই উচ্চারণ করা হয়। অর্থাৎ পুরোপুরি বানান অনুযায়ী উচ্চারণ। তাই সংস্কৃত ভাষাকে ফোনেটিক ল্যাঙ্গোয়েজ বলা হয়। হয়তো আরও দু’একটি ভাষায় এই রকম ব্যবস্থা আছে, তবে সেগুলি সংস্কৃতের মতো বিখ্যাত ও বহুল প্রচারিত নয়।
শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য কলকাতা-৩৯
‘সেট্ল’ থেকে
‘সাল্টে’ শীর্ষক চিঠিটিতে (সম্পাদক সমীপেষু, ২৭-২) ‘মামলা সাল্টে ফেলেছেন’ কথাটি লেখা অাছে। কথাটির অর্থ মামলা settle করে, বা মিটমাট করে ফেলেছেন। ‘সালটানো’ কথাটার মধ্যেই ‘ইংরাজি ‘সেট্ল’ শব্দটি লুকিয়ে আছে। উল্লেখ্য, হিন্দি বা রাজস্থানি ভাষায় ‘সালটানা’ বা ‘সালটারা’ মিটমাট অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইংরেজ আমলে বিচার বিভাগ থেকে এই শব্দটি ভারতীয় ভাষায় এসেছে মনে হয়।
রাজকুমার জাজোদিয়া কালিয়াগঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
‘গাঁইয়া’
‘ও দাদা, দেখে চলুন রাস্তায়, উফ, কোত্থেকে যে গাঁইয়াগুলো এসে জোটে...’ এই ‘গাঁইয়া’ কথাটা এসেছে ‘গ্রাম্য’ থেকে, যার আক্ষরিক অর্থ ‘যাঁরা গ্রামে বাস করেন’। অথচ শব্দটি কী প্রবল ব্যঙ্গাত্মক হয়ে উঠেছে, রাস্তাঘাটে কান পাতলেই বোঝা যায়। কারও রুচি মন্দ হলে, কিংবা অদ্ভুত আচরণের জন্য, তার গায়ে ‘গাঁইয়া’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ‘গ্রামের অধিবাসী’ যে কখনও ব্যঙ্গাত্মক বিশেষণ হতে পারে না, ‘গাঁইয়া’ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই
এ কথা মনে ধাক্কা মারুক।
স্মিতা ভট্টাচার্য ঘোলা, বাঁকুড়া
‘সেফ ড্রাইভ’?
‘Safe drive Save life’ ইংরাজি সতর্ক-বার্তাটি সতর্ক ভাবে লেখা হয়নি। Safe drive শব্দবন্ধটি একটি adjectival noun phrase, ব্যাকরণগত ভাবে এর অর্থ ‘a drive that is safe’. শব্দবন্ধটি imperative verb phrase নয়, ফলে এর অর্থ দাঁড়ায় না ‘drive safely’, যা আদতে বলতে চাওয়া হয়েছে।
দিলীপকুমার দত্ত হাবড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy