আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্যের ঘটনাবলি সম্পর্কে প্রতি দিন খবরের কাগজ পড়লেই মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়। প্রশ্ন হল, শাসকদল এত পীড়িত কেন? তারা তো যথেষ্ট পরিমাণে আত্মবিশ্বাসী তাদের কাজ সম্পর্কে, তা হলে ভোট-পরবর্তী ফলাফল সম্পর্কে এত আশঙ্কা কিসের? এ কি পায়ের তলায় মাটি হারানোর অশনিসঙ্কেত?
অবশ্য এ জিনিস বাম জমানাতেও বহুল প্রচলিত ছিল। আসলে নতুন কিছুই না, এ ঘটনা অতীতে যেমন ফিরে ফিরে এসেছে, ভবিষ্যতেও আসবে। কিছু দিন আগেই যেমন এনএমসি বিল নিয়ে এমবিবিএস চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করলেন, আয়ুশ চিকিৎসকদের কিছু অ্যালোপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করতে দিতে পারা নিয়ে। অতীতে এঁরাই হাতুড়ে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের সপক্ষে সাগ্রহে সমর্থন জানিয়েছেন বা বি এসসি নার্সিং প্রশিক্ষিতদের অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দিতে পারাকে সমর্থন করেছেন। এ দ্বিচারিতা কেন?
আসলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা ক্ষমতাসীন মানুষদের গল্পের ইতিকথা বোধ হয় এটাই। কাল বদলায়, কিন্তু মানুষের আদিম প্রবৃত্তি নয়।
চন্দ্রিমা মণ্ডল ই-মেল মারফত
কার লাভ হল
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রথম পর্ব অর্থাৎ মনোনয়নপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে যে অশান্তি ও নৈরাজ্য ঘটতে দেখা গেল, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। অবশ্য এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এ রাজ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার অতীত ইতিহাস খুব একটা উজ্জ্বল নয়। লোকসভা, বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে রক্তপাত ও প্রাণহানি ঘটার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। অষ্টম ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনও যে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবে না, সে আশঙ্কা ছিলই। তবে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পেশের মতো নির্বাচন-প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়েই যে রাজ্যের অবস্থা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে, তা কেউ ভাবতে পারেনি। এত কাল সাধারণত ভোট গ্ৰহণের দিন বিরোধী দলের এজেন্টদের বুথ থেকে বার করে দিয়ে ছাপ্পাভোট মেরে গণতন্ত্রের ‘উৎসব’ পালন করা হয়েছে। কিন্তু পথ আটকে অন্য দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রার্থী হওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়নি। নিজ নিজ শক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন দল প্রার্থী করেছে। অনেকে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। কোনও অসুবিধা হয়নি। ভোটের দিন হয়তো সাধারণ ভোটার শুনেছেন, ‘আপনার ভোট হয়ে গেছে।’ কিন্তু এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের মানুষের নতুন অভিজ্ঞতা হল। বহু জায়গায় বাম, বিজেপি ও কংগ্রেসের প্রার্থী, প্রস্তাবক ও নেতৃত্বকে ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক ও মহকুমা শাসকের অফিসে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। ওই সব অফিসের প্রবেশপথ ও রাস্তা থেকেই তাঁদের কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপরোক্ত ঘটনাকে কয়েকটি কোণ থেকে দেখা যেতে পারে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রেক্ষাপটে বলা যায়, মনোনয়ন পেশেই এত বাধাদান একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। গণতন্ত্রে লড়াই হয় ব্যালটে। কিন্তু লড়াইকে ব্যালট পেপার পর্যন্ত যেতেই দেওয়া হবে না, এ কেমন গণতন্ত্র! তবে এখন যে দল গণতন্ত্রকে খুন করছে তাদেরও এক দিন ভুগতে হবে। এক মাঘে শীত শেষ হয় না।
এ বার রাজনৈতিক দলগুলোর লাভক্ষতির ব্যাপারটা দেখা যাক। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নিশ্চয়ই প্রত্যক্ষ ভাবে অনেক সুবিধা পেল। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্ৰাম পঞ্চায়েতের বহু আসন তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পকেটে পুরে নিল। ভোটগ্ৰহণ ও গণনা করার আগেই তাদের আবির খেলার সুযোগ এসে গেল। কিন্তু তাদের এত তাড়াহুড়ো করার কি আদৌ কোনও দরকার ছিল? সব দলই যদি মনোনয়ন জমা দিতে পারত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হত, তাতে কি শাসকদলের খুব চিন্তার কারণ ছিল? মনে তো হয় না। শহরের মতো গ্ৰামবাংলাতেও তৃণমূল কংগ্রেস এখন সবচেয়ে শক্তিশালী দল। জনসমর্থন ও সাংগঠনিক দিক থেকে অন্য দলগুলোর থেকে এই দল অনেকখানি এগিয়ে। বাম, বিজেপি ও কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধ হলেই কেবল তৃণমূলের সঙ্গে নির্বাচনে শক্ত ভাবে লড়াই করা সম্ভব। কিন্তু এই তিন দলের তো নির্বাচনী আঁতঁাত হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক ভাবে ভোট হলেও তৃণমূলের খারাপ ফলের আশঙ্কা ছিল না। কিন্তু তারা বাম, বিজেপি, কংগ্রেস, সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের ওপর যে তাণ্ডব চালাল, তার জন্য তাদের এখন তীব্র নিন্দার সম্মুখীন হতেই হবে। কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি তাঁদের এই অগণতান্ত্রিক অপকর্মকে সমর্থন করতে পারেন না। কাজেই তৃণমূল কংগ্রেসের ভাবমূর্তির ক্ষতি হল। ওই দলের সঙ্গে দুর্বৃত্ত ও দুষ্কৃতীদের গভীর সংযোগের পুরনো অভিযোগই আরও এক বার সত্য প্রমাণ হল।
সবচেয়ে লাভ হল বিজেপির। বাংলার গ্ৰামাঞ্চলে তাদের পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত হল। বাম ও কংগ্রেসের অত্যাচারিত কর্মীরাও এ বার আশ্রয় পেতে বিজেপিতে যোগ দেবেন। অনেক আগে থেকেই বামপন্থীদের একটা অংশ বিজেপিতে ঢুকছিলেন। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যেতে যাঁদের খুব আপত্তি, তাঁরাও বিজেপিতে যাচ্ছিলেন। যাঁরা তৃণমূল ত্যাগ করার সাহস দেখাচ্ছিলেন, রাজনীতিতে তাঁদের নতুন ঠিকানা নিশ্চিতরূপে ছিল বিজেপি। কাজেই বিজেপি এ রাজ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে একটা জায়গা তৈরি করছিলই। সাম্প্রতিক মনোনয়ন-কাণ্ড বিজেপিকে সেই লক্ষ্যে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে সাহায্য করল। কোনও সন্দেহ নেই এই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ভোট ও আসন দুই-ই বাড়বে। পশ্চিমবঙ্গের মাটি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য এখন অনেকটাই প্রস্তুত!
মজিবুর রহমান প্রধান শিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল, মুর্শিদাবাদ
সমীক্ষা হলে
প্রতি নির্বাচনের মতো আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জনমত সমীক্ষা হল। কিন্তু মনোনয়ন পর্ব শেষ হতে দেখা গেল অনেক জায়গায় বিরোধীরা মনোনয়নই দাখিল করতে পারেননি। কেন পারলেন না, তার একটা সমীক্ষা হলে ভাল হত।
দেবব্রত সেনগুপ্ত কোন্নগর,হুগলি
বিবেক কোথায়
রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্য জুড়ে পুলিশ প্রশাসনকে কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখে শাসকদলের মদতে গুন্ডাবাহিনী যে ভাবে বিরোধী পক্ষকে আক্রমণ করে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে পঞ্চায়েত নির্বাচন একতরফা ও প্রহসনে পরিণত হবে। হিংসা ও সন্ত্রাস এমন লাগামছাড়া হয়েছে যে, কর্তব্যরত সাংবাদিকরাও নির্লজ্জ আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ভাবতে অবাক লাগে, রাজ্য জুড়ে এই তাণ্ডবের মধ্যে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, যিনি গণতন্ত্রের যে কোনও লাঞ্ছনায় সদা-প্রতিবাদী, তাঁর দল বলছে, এ সব সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মিলে বিরোধীদের নাটক। দল ও সরকারকে হেয় করার অপচেষ্টা। জানতে ইচ্ছা হয়, সরকারঘনিষ্ঠ কবি, বুদ্ধিজীবী, সুশীল বিদ্বজ্জনেরা এই সঙ্কটকালে তাঁদের বিবেক কোথায় গচ্ছিত রেখেছেন?
দেবকী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় উত্তরপাড়া, হুগলি
বদলায়নি
শাসক বদলেছে, বদলেছে পতাকার রং। কিন্তু বদল হয়নি প্রকৃত ধর্মের। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পেশের প্রতিটি দিনের রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পরিবেশের ছবিই তার প্রমাণ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হয়ে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— সবার আমলেই ভোটে ঝরছে লাল রক্ত। এগুলি কী চলছে? সামান্য একটি মনোনয়নপত্রকে কেন্দ্র করে পরিবেশটাই খারাপ করছে দুষ্কৃতীরা। এরা এত সাহস পায় কোথা থেকে? কে দেয় এত সাহস?
মঙ্গলচন্দ্র ঘোষ মালদহ
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy