Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: চার দিনের টেস্ট ম্যাচ

টি-টোয়েন্টি বা একদিবসীয় ক্রিকেট ম্যাচের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গেলে শুধু চার দিনের টেস্ট করলেই হবে না, বিন্যাস বদলে, টেস্ট ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করার জন্য নিষ্পত্তির বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে হবে।

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০০:১১
Share: Save:

‘চার দিনের টেস্ট দেখছেন শাস্ত্রী’ (১০-২) সংবাদ প্রসঙ্গে জানাই, প্রায় দেড় দশক আগে, ২০০৩ সালে, আইসিসি-র কাছে ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের সদস্য অ্যান্ড্রু ওয়াইল্ডব্লাড যখন প্রথম চার দিনের টেস্ট ক্রিকেটের প্রস্তাব রাখেন, বিশুদ্ধবাদীরা ‘রে-রে’ করে তেড়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এখন অনেকেই এ ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে চিন্তাভাবনা করছেন।

কিন্তু টি-টোয়েন্টি বা একদিবসীয় ক্রিকেট ম্যাচের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গেলে শুধু চার দিনের টেস্ট করলেই হবে না, বিন্যাস বদলে, টেস্ট ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করার জন্য নিষ্পত্তির বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে হবে। বিগত এক দশকে চার দিনেই টেস্টের মীমাংসা হয়েছে প্রায় ৪০% ক্ষেত্রে (সর্বকালীন নিরিখে ২৮.৬%)। তার মানে এখনকার ফর্ম্যাটে চার দিনের টেস্ট হলে তিন-পঞ্চমাংশ টেস্ট অমীমাংসিত থেকে যেত। সেটা কি টেস্ট ম্যাচের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন হত?

টেস্ট ক্রিকেটকে টানটান উত্তেজনায় মুড়ে ফেলার জন্য দুটি দলকেই একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ওভার খেলার সুযোগ দিতে হবে। কী ভাবে? বর্তমানে টেস্টে দিনে ৯০ ওভার খেলা হয়। মানে, চার দিনের টেস্ট হলে মোট ৩৬০ ওভার বল হতে পারে। নিয়ম হোক, দুটি দলই দু’ইনিংস মিলিয়ে সর্বাধিক ১৮০ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পাবে। তবে কোনও একটি ইনিংসে ১২০ ওভারের বেশি খেলতে পারবে না। সে-ক্ষেত্রে অন্য ইনিংসে (প্রথম/দ্বিতীয়) ৬০ ওভার ব্যাট করতে পারবে। খেলায় হার-জিত যদি নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন তুলনায় দুর্বল দলটি আর ড্র-এর খেলা খেলতে পারবে না। এর ফলে টেস্ট ক্রিকেটের জৌলুস শুধু ফিরে আসবে না, ফিরতে বাধ্য তার রোমান্টিসিজ্মও।

দুই, টেস্ট শুরু করতে হবে বৃহস্পতিবারে, যাতে টেস্টের শেষ দুটি দিন পড়ে সপ্তাহান্তের ছুটির দিনে। ফলে শনি-রবিবারে ক্রিকেট মাঠে দর্শক সমাগম বাড়বে, আর বাড়ির ড্রয়িং রুমে বাড়বে টেলিভিশনের ভিউয়ারশিপ। এতে বাণিজ্যিক দিক দিয়েও টেস্ট ক্রিকেট, টি-টোয়েন্টি বা ওডিআই-এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে।

সজলকান্তি ঘোষ শ্রীনিকেতন, বারুইপুর

সেই রূপকথা

দোলন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দায়টা এখন আমাদেরই’ (১০-২ ও ১১-২) লেখাটি বহু দিনের স্মৃতি জাগিয়ে দিল। সালটা ১৯৩৯-৪০ হবে। রেঙ্গুন শহরে আমাদের দোতলা বাড়ির একতলাটি ভাড়া দেওয়া হত। এক বার এক মুসলিম দম্পতি ভাড়াটে এলেন। ফতিমা বিবি আর তাঁর স্বামী গিয়াসুদ্দিন। দিদির সঙ্গে ফতিমা বিবির বেশ ভাব হয়ে গেল। সেই সুবাদে আমরাও ওঁদের ঘরে যেতাম। খুব সুস্বাদু মিষ্টান্ন খাওয়াতেন আমাদের। মনে পড়ে, কিছু অন্যায় কাজ করে মায়ের হাতের বেত খাওয়া থেকে বাঁচতে, পিছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে ওঁদের দরজায় ধাক্কা দিতেই, ফতিমা বিবি দরজা খুলে ভিতরে টেনে নিতেন। মা উপর থেকে দেখে ফিরে যেতেন। এক বার অপরাধটা গুরুতর হওয়ায় আমার রাগী মা বেত হাতে তাড়া করে নীচে নেমে এলেন। আমি তখন ফতিমা বিবিকে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। মা বেত তুললে ফতিমা বিবি এক হাতে আমাকে জড়িয়ে রেখে আর এক হাত তুলে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘মত মারো, মত মারো।’ মা ফিরে গেলেন।

আমাদের একটি চোঙাওয়ালা গ্রামোফোন ছিল। দাদার খুব প্রিয়। দাদা চাইল এর বদলে একটা আধুনিক সাউন্ডবক্সওয়ালা গ্রামোফোন। গিয়াসুদ্দিনের একটা গ্রামোফোনের দোকান ছিল। সারাইয়ের কাজও হত। ওঁকে ধরলে, উনি রাজি হলেন। কিন্তু দু’মাসের মধ্যেও সেটা পাওয়া গেল না। তখন ফতিমা বিবিকে আমরা ধরলাম। ঠিক এক মাস পরে একটা নতুন গ্রামোফোন নিয়ে উঠে এলেন তাঁরা দু’জন। রেকর্ড বাজানো শুরু হলে আমরা ফতিমা বিবিকে ঘিরে উল্লাসে নাচতে লাগলাম। গিয়াসুদ্দিনের চোখে মুখে তখন তৃপ্তির হাসি।

আজ এ-সবই মরীচিকা মনে হয়। ভালবাসার আবরণ সরে গিয়ে এক ভয়াল উন্মত্ততা যেন আমাদের গ্রাস করেছে। কী ভাবে, কেন এমনটা হল, সমাজ-বিশেষজ্ঞরা বিচার করবেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আজ শুধু দীর্ঘশ্বাস পড়ে হতাশা ও বিষাদে।

চিত্তরঞ্জন নাগ কলকাতা-৬০

দায় কার

দোলন গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা পড়ে মনে হল, লেখক প্রতিটি ছত্রে হিন্দুদেরই দায়ী করেছেন হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ফারাক তৈরির জন্য। সত্যিই কি তাই? অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি লেখায় পাই, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হচ্ছে, ‘হঠাৎ রবিকাকা রাখি হাতে মসজিদের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমরা সবাই আতঙ্কিত হলাম, এই বুঝি কোনও অঘটন ঘটে।’ তার মানে ভেদাভেদ ঘোচাতে হিন্দুরাও তো এগিয়ে এসেছেন। এখনও বাংলার বহু জায়গায় দুই সম্প্রদায়ের রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই উদ্যোগী হন হিন্দুরা।

লেখক লিখেছেন, আমরা মুসলমানদের ঠাকুর ভোগ খেতে ডাকিনি। তিনি বোধহয় জানেন না, মুসলিমরা ঠাকুরের উদ্দেশে নিবেদিত ভোগ বা প্রসাদ খান না।

এখনও অনেক মুসলিম ছাত্র ‘বন্দে মাতরম’ উচ্চারণ করেন না। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে ভারত হারলে বহু মুসলিম উল্লাস করে বোম ফাটান। এর বিরুদ্ধে কি কিছু বলা উচিত নয়? গোধরা কাণ্ডের পর গুজরাতের দাঙ্গার সময় এক মুসলিম লোকের ছবি কাগজে বেরিয়েছিল, যিনি জোড়হাত করে প্রাণ ভিক্ষা চাইছেন। তাঁকে বাম সরকার কলকাতায় নিয়ে এসে রাজনৈতিক প্রচার চালিয়েছিল, সংখ্যালঘু ভোট আদায় করার জন্য। অথচ বাম সরকার সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয়ে তসলিমা নাসরিনকে বাংলায় থাকতে দেয়নি। তখন কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের কলম গর্জে ওঠেনি।

আসলে পশ্চিমবঙ্গে বসে হিন্দুদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা খুব সহজ, কারণ সব রাজনৈতিক দলই বুঝে নিয়েছে, সংখ্যালঘু তাস ঠিক মতো খেলতে পারলেই এখানে সরকার গড়ার সুবিধে। লেখকের মতো কিছু বুদ্ধিজীবীই হিন্দু-মুসলিমের মাঝে দেওয়াল তুলে দিচ্ছেন। কবি সহজেই ত্রিশূলের মাথায় কন্ডোম পরাতে পারেন। কিন্তু তা করায় কত হিন্দু যে গোঁড়া হিন্দুত্বের দিকে এগিয়ে গেলেন, তার হিসাব কেউ রাখে না।

লেখককে জানাই, এখনও আমরা গ্রামের বুকে হিন্দু-মুসলমান খুবই প্রীতির সঙ্গে বাস করছি। ছোটবেলায় দেখেছি বাড়িতে এক মৌলবি সাহেব আসতেন, বাবার সঙ্গে ধর্ম বিষয়ে আলোচনা করতেন। তাঁর বহু উপদেশ এখনও মেনে চলি। আমাদের বাড়িতে তিনি দু’চার কাপ চা খেতেন। কখনও মাকে সেই কাপ আলাদা করে রাখতে দেখিনি।

আমার বাড়িতে বসেই নামাজ পড়েছেন মুসলিম বন্ধু। আমি মুসলিম বন্ধুর বাড়িতে যাই ইদের দিন। তাঁর মেয়ের বিয়েতে ক্ষীর খাইয়ে আসি। লেখককে বলি, আজকের এই অবক্ষয়ের দিনে, রাজনীতির কারবারিরা ধর্মের বেড়াজাল দিয়ে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যে ফাটল ধরাতে চাইছে। আপনার কলম তাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুক।

অচিন্ত্য পান্ডা খানাকুল, হুগলি

কাগুজে বাঘ

ফেসবুক খুললেই দেখা যায় বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা খবরের পোস্টার বা ভিডিয়ো আপলোড করেন, আর কোনও কোনও খবর ঘিরে দুই প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠীর কিছু লোক, কখনও নকল পরিচয়ের আড়ালে কিছু মানুষ, সাম্প্রদায়িক বিষ ঢালার কাজে মত্ত হয়ে ওঠেন। স্বপক্ষে/ বিপক্ষে মন্তব্য করতে গিয়ে অশ্লীলতার সুনামি বইয়ে দেন এই কাগুজে বাঘেরা। এই দাঙ্গাবাজদের মধ্যে কিছু শিক্ষিত ব্যক্তিকেও অতিদাহ্য শব্দ প্রয়োগ করতে দেখা যায়। এর মারাত্মক প্রভাব ফেসবুকে সীমাবদ্ধ না থেকে, মাঝে মাঝেই বিভিন্ন হিংস্র রূপে নেমে আসে এই সমাজে।

মহম্মদ মকদুম কালিন্দি, পূর্ব মেদিনীপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Test Match Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE