Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: তোমার এই দশা!

আসলে এই ‘কাগুজে পতাকা’র ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। যার সম্মান দিতে জানি না, তাকে ব্যবহার না করাই ভাল।

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫০
Share: Save:

প্রজাতন্ত্র দিবস হোক কিংবা স্বাধীনতা দিবস, ঠিক তার পরেই ‘কাগুজে ত্রিরঙা পতাকা’র হাল অত্যন্ত করুণ হয় পড়ে। যে-পতাকাগুলিকে এত গৌরব ও ভালবাসার সঙ্গে বাড়িতে বা পাড়ায় সাজানো হয়েছিল, যেগুলি আমাদের দেশের প্রতীক হিসাবে এতটা সম্মান পাচ্ছিল, সেগুলি নালা-নর্দমা, চলার পথে গড়াগড়ি খায়! কিংবা অতি অনাদরে কোথাও ডাঁই করে রাখা থাকে। এই দৃশ্য অবশ্যই কাম্য নয়। আসলে এই ‘কাগুজে পতাকা’র ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। যার সম্মান দিতে জানি না, তাকে ব্যবহার না করাই ভাল।

বিশ্বজিৎ কর সুভাষপল্লি, খড়্গপুর

সহজ হতে শিখুন

মার্কসবাদ বিজ্ঞান, বিজ্ঞানে গোঁড়ামির স্থান নেই, সবটাই পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত। কিন্তু গত দু’দশকে মার্কসবাদী-বামেদের জাতীয় রাজনীতিতে চলার পথ এ-ধারণাকে গুলিয়ে দেয়! বিজ্ঞান বলে, ‘ন্যাচারাল ল’জ আর সিম্পল।’ অন্য ভাবে ভাবলে, সরল না হলে সর্বব্যাপী হয় না। সেটি যুগে যুগে যারা বুঝেছে তারা সহজবোধ্য ছোট্ট কথায় মানুষকে দিয়ে যুগান্তকারী কাজ করিয়ে নিয়েছে। চৈতন্যদেবের ‘হরিবোল’ অথবা শ্রীরামকৃষ্ণের ‘কথামৃত’ অবলীলায় যে ভাঙন রোধ করতে পেরেছে, প্রচুর তত্ত্বকথা তা পারেনি। সাধাসিধে কথা ধোঁকা খাওয়ানোতেও খুব কার্যকর, ‘পরিবর্তন’, ‘কালো টাকা দূর করা’ ইত্যাদি তার উদাহরণ, অথচ উলটো দিকে যাঁরা এটা সত্যি সত্যিই ঠেকাতে চান, বিশেষত বামেরা, তাঁরা অনেক যুক্তি, পরিসংখ্যান, অর্থনীতির জটিল কথা হাজির করেন। এই দুইয়ের মধ্যে, সরল ও আকর্ষণীয় পরিবেশনই সর্বদা জেতে, সাময়িক জয়েও অনেক সময় অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। যাঁরা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে এই mass-psychology বুঝে এগোবেন, তাঁরা জনসমর্থনকে নিজের দিকে টানতে সমর্থ হবেন, তাঁদের সচেতনও করবেন সহজে। অন্যথায়, উদ্দেশ্য যতই মহান হোক, মানুষের সমস্যার কথা বলেও তাদের সঙ্গে পাওয়া দুষ্কর হবে। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে যদি মানুষকে প্রশ্ন করা হয়: ‘হে জনগণ, আপনারা বাজার অর্থনীতির পক্ষে সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে, না বাজার অর্থনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা দুটোরই বিপক্ষে, না নরম সাম্প্রদায়িকতারও বিপক্ষে?’, তবে পরীক্ষকই ফেল। পরিবর্তে মানুষ সাদাসিধে ভাবে জানতে চাইবেন, ‘তোমরা কি পারবা তাদের হারাতি?’ মানুষ কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য ‘হ্যাঁ’ শুনতে চান।

বামেদের বর্তমান যে পরিস্থিতি, এবং পার্লামেন্টে বামেদের অভাবে দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে নিজেদের জেদ মানুষের ওপরে নতুন করে না চাপিয়ে অবিলম্বে নতুন সম্ভাবনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। ধরা যাক, এই মুহূর্তে মানুষ চাইছে ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে দেশ বাঁচাতে। বামেরা একা এ-লড়াই লড়বে, এটা মানুষ বিশ্বাস করবে কি না, তার কোনও বিজ্ঞানসম্মত পথে জনমত চর্চা হয়েছে? পার্টি সদস্যের মত তো পক্ষপাত ও লবিবাজিতে দুষ্ট, আর সত্তর-আশির দশকের মতো সেই জনসংযোগও হারিয়ে গেছে। তাই বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতিতে সাধারণ-জনমতের পরিসংখ্যান না তৈরি করে, এই সন্ধিক্ষণে কোনও রণনীতি মানুষের ওপর সেরেফ চাপিয়ে দেওয়া একটি চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক কাজ। ফ্যাসিস্ট-বিরোধী সকল শক্তিকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনার নেতৃত্ব দিলে তবেই বামপন্থীরা প্রাসঙ্গিক থাকবেন কি না, আর সেটা কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে হবে কি না, সে বিষয়ে মানুষ কি ভাবছে সেটা বোঝা প্রয়োজন। অনেকে এর বিরুদ্ধ যুক্তি হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালের নির্বাচনী ব্যর্থতাকে খাড়া করছেন, কিন্তু তাঁরা ভুলে যান, পাটিগণিতে শেষ অবধি বাজিমাত না হলেও, রাজ্য জুড়ে বিরোধীরা শাসকদলের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিল, যেখানে তার কয়েক মাস আগেও দেওয়াল লেখার লোক হচ্ছিল না। আলাদা লড়লে শাসক দল ২৫০ পেরিয়ে যেত কি না, তার কোনও প্রমাণ নেই |

প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা-১২৫

একটি ফলক

চন্দননগরের গঙ্গার ধারে পুলিশ থানার দেওয়ালে একটি শ্বেতপাথরের ফলক রয়েছে। তার ওপর ফরাসি ভাষায় যা লেখা, তার মর্মার্থ: স্বাধীনতা-সাম্য-ভ্রাতৃত্ব। ক্যাঁ জেলস্যাঁ, জ্যুল-এর স্মরণে। মার্শাল অব দ্য হাউস, সামরিক বাহিনীর প্রধান, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার। জন্ম ২ মার্চ ১৮৯৮, ফিন্যি-সিগমে (সেন এ মার্ন)-এ। নিজের কর্তব্য করাকালীন অজানা উগ্রপন্থীদের হাতে নিহত, ১৯৩৩-এর মার্চ মাসে।

বোঝা যাচ্ছে, চন্দননগরে ফরাসি আমলেও পুলিশ কমিশনারেট ছিল। সম্প্রতি রাজ্য সরকার চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট চালু করেছে। চন্দননগর তিন পুলিশের শাসনে শাসিত (ব্রিটিশ, ফরাসি, স্বাধীন ভারতের পুলিশ) ছিল, যা ভারতের অন্য কোনও নগরে হয়নি। চন্দননগর থানায় (মাল থানা) রয়েছে স্বাধীনতা-পূর্ব দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ। এগুলি একত্র করে একটি পুলিশ মিউজিয়াম তৈরি হলে, ভাল হবে।

কল্যাণ চক্রবর্তী সম্পাদক, চন্দননগর হেরিটেজ

সুদের হার

নোট-বন্দির ফলে আজ ব্যাংকের ভাঁড়ার উপচে পড়ছে, সুদের হার কমানো হচ্ছে, কিন্তু ক্রেতার অভাব, অথচ সেভিংস জমায় ব্যাংক-কে দৈনিক ভিত্তিতে ৪% সুদ দিতে হচ্ছে। সারা বিশ্বেই আজ সুদের হার তলানিতে; মেয়াদি জমায় সুদের হার চিন আর আমেরিকায় ১.৫০% , ইংল্যান্ডে ০.৯০% আর জাপানে মাত্র ০.০৭%! আমাদের দেশেও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শিল্প টিকে থাকতে হলে, প্রতিযোগী দেশগুলির সমপর্যায়ে সুদ নামিয়ে আনতেই হবে। মনে পড়ছে মেকনের ডিরেক্টর এসএন ওয়াজির-এর কথা। আশির দশকের মাঝামাঝি, গল্প করতে করতে উনি বললেন, আমাদের দেশে গ্রোথ কম, শিল্প বিকাশের হারও কম, কারণ আমাদের দেশে জমায় সুদের হার খুব বেশি, আর ভারতীয়রা অতিরিক্ত সঞ্চয়ী, এমনকী ভিখারির বালিশের তলায় লাখ টাকার সঞ্চয় থাকে। ফলে বাজারে তেমন চাহিদা থাকে না, শিল্পের বিকাশও ঘটে না। শিল্পে চাহিদা আনতে গেলে জমায় সুদ কমানো উচিত, যাতে শিল্প সস্তায় ঋণ পায়। আর সঞ্চয়ে সমস্ত রকমের কর-ছাড় তুলে দিয়ে, ছাড়ের পরিমাণ অর্থ আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া উচিত, যাতে যাঁদের ক্ষমতা আছে তাঁরা মনের সুখে কেনাকাটা করতে পারেন, বাজারে চাহিদা বাড়ে, উৎপাদন বাড়ে, আর সরকারের কর বাবদ আয় বাড়ে।

বাজেট ভাষণে জানা গেল, ভারতে আয়করদাতার সংখ্যা অত্যন্ত কম, ১৩০ কোটির দেশে মাত্র ৩ কোটি ৭০ লক্ষ লোক আয়করের রিটার্ন দাখিল করেন, আর মাত্র ১ কোটি ৯০ লক্ষ লোক আয়কর দেন। এর কারণ গ্রামে মাত্র ৫%-এর এবং শহরে ১০%-এর বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার বেশি। এ-ছাড়া আছে নানান কর ছাড়ের ব্যবস্থা, তাই শেষ পর্যন্ত মাত্র ওই ক’টি লোকই আয়করের আওতায় পড়েন এবং অধিকাংশের আয়করের পরিমাণ অতি সামান্য। কিন্তু এই আয়কর আদায়েই সরকারের বিপুল ব্যয় আর নানান অভিযোগ, মামলা মোকদ্দমা! অন্য দিকে সবাইকেই কিন্তু অপ্রত্যক্ষ কর দিতে হয়, আর অপ্রত্যক্ষ কর আদায়ে খরচ অনেক কম। খুব ভাল হয়, যদি জমায় এবং সব রকমের বিনিয়োগে, কর ছাড় একেবারে তুলে দিয়ে, সেই অনুপাতে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তা হলে স্বল্প আয়করদাতার সংখ্যা কম হবে। আয়করদাতার সংখ্যা কম হলে এবং লেনদেন ক্যাশলেস করতে পারলে, আয়কর দফতরের আয়তন অনেক কমানো সম্ভব, দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব। মনে রাখা উচিত, চুল-দাড়ি কামিয়ে যেমন ওজন কমানো যায় না, চুনোপুঁটিদের কাছ থেকে আয়কর আদায় অর্থনৈতিক ভাবে তেমন লাভজনক হতে পারে না। এ অনেকটা ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির মতো।

হরলাল চক্রবর্তী কলকাতা-৪০

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Paper flag Ban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE