নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএফপি।
অনেক আগেই এই উচ্চারণটা জরুরি ছিল। দেশ জুড়ে অনেকগুলো অঘটন ঘটে গিয়েছে। প্রথম অঘটনটা যে দিন ঘটেছিল, সে দিনই যদি প্রধানমন্ত্রী এই কঠোর কণ্ঠস্বরটা শুনিয়ে দিতেন, তা হলে সঙ্কট এতটা ঘনিয়ে উঠতে পারত না সম্ভবত। তবু স্বাগত জানাতে হবে প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তাকে। বিলম্বে হলেও জরুরি কথাটা বললেন তিনি। রাজধর্মে অবিচল থাকা যে তাঁর দায়বদ্ধতা এবং সে দায়বদ্ধতার কথা যে তিনি বিস্মৃত হননি, তা বুঝিয়ে দিলেন স্পষ্ট করেই।
গো-রক্ষার অর্থ কি মানুষ খুন করা? প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মহাত্মা গাঁধীর অহিংস জীবনদর্শনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। গো-ভক্তির নামে বাড়তে থাকা খুনোখুনি রুখতে গাঁধীর শরণও নিয়েছেন। বেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরেই বার্তা দিয়েছেন, বেআইনি কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না।
নরেন্দ্র মোদীর এই বার্তা যে সময়োপযোগী, সে নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রশ্ন তা-ও উঠছে। প্রধানমন্ত্রী কি পূর্ণ সদিচ্ছা নিয়ে বার্তাটা দিলেন? বিভিন্ন শিবির সংশয় প্রকাশ করছে। গো-ভক্তি, গো-রক্ষা বা গো-সেবার নামে হিংসা-হানাহানি-রক্তপাত যে ভাবে বাড়ছে, প্রধানমন্ত্রী কি সত্যিই তার নিরসন চান? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
বিরোধীদের সংশয় প্রকাশ যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, এমন কথা হলফ করে বলা যায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেকে সংশয়ের ঊর্ধ্বে রাখার দায় প্রধানমন্ত্রী অস্বীকার করতে পারেন না। এ কথা ঠিক যে বার্তাটা তিনি সদর্থকই দিয়েছেন। এ বার কিন্তু এও প্রমাণ করতে হবে, বার্তাটা মন থেকেই দিয়েছেন।
দেশের পশ্চিম প্রান্তের এক রাজ্যে দাঁড়িয়ে যে দিন গো-রক্ষার নামে মানুষ খুনের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন প্রধানমন্ত্রী, দেশের পূর্ব প্রান্তের এক রাজ্যে কিন্তু সে দিনই গো-মাংস কেনার অভিযোগ তুলে আলিমুদ্দিনকে খুন করে দেওয়া হল। যে রাজ্যে এই ঘটনা ঘটল, সেই রাজ্যের শাসন ক্ষমতাতেও নরেন্দ্র মোদীর দলই। সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় থাকা খুব অস্বাভাবিক কি?
ধরে নেওয়া যাক, ঝাড়খণ্ডের ঘটনাকে নরেন্দ্র মোদী অনুমোদন করছেন না। ধরে নেওয়া যাক, ঝাড়খণ্ডের ঘটনাকে বিজেপি-ও অনুমোদন করছে না। তা হলে কিন্তু এটাও ধরে নিতে হয় যে নরেন্দ্র মোদীর বা বিজেপি নেতৃত্বের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা দ্বারা পরিস্থিতিটা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রেও কিন্তু দায়টা নরেন্দ্র মোদীদেরই। স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের বেআইনি কার্যকলাপ সম্পর্কে দীর্ঘ নীরবতাকে যদি মৌন সম্মতি না-ও মনে করি, তা হলেও নিষ্ক্রিয়তা হিসেবে তো ধরতেই হবে। সেই নিষ্ক্রিয়তাই দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিয়েছে, পরিস্থিতিকে সঙ্কটজনক করে তুলেছে।
নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য বজ্রমুষ্টির প্রয়োজন হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তার প্রয়োগে প্রস্তুত তো? যদি তা-ই হন, তা হলে অবশ্যই নিজেকে সংশয়ের অনেক ঊর্ধ্বে তুলে নিয়ে যেতে পারবেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy