Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

বিবিধ রতন

মহিলা হইতে মুসলমান, সমকামী হইতে দক্ষিণ ভারতের মানুষ— বিজেপির নেতাদের রাজনৈতিক অশুদ্ধতার লক্ষ্যবিন্দুগুলি আপাতবিক্ষিপ্ত।

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০১:১৮
Share: Save:

নরেশ অগ্রবাল কে? নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা সবেগে মাথা নাড়িয়া জানাইয়া দিবেন, তাঁহারা নরেশ অগ্রবালকে চেনেনই না। সমাজবাদী পার্টির এই সাংসদ মাত্র এক দিন পূর্বেই বিজেপিতে যোগ দিয়াছেন, অতএব মোদী-শাহরা তাঁহাকে না-ই চিনিতে পারেন। কিন্তু, তাঁহারা যোগী আদিত্যনাথকে চিনিবেন নিশ্চয়। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কুরসিতে তাঁহারাই আদিত্যনাথকে বসাইয়াছিলেন। আদিত্যনাথের মতে, মহিলারা স্বাধীনতা পাইবার অযোগ্য। তাঁহারা সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতিকেও চিনিবেন— ফতেহপুরের বিজেপি সাংসদ। ‘রামজাদ’-এর সহিত মিলাইয়া মুসলমানদের একটি বিশেষণে ভূষিত করিয়াছিলেন তিনি। তরুণ বিজয়ও তাঁহাদের যথেষ্ট পরিচিত। বৎসর দেড়েক পূর্বেও রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ ছিলেন। তাঁহাদের মধ্যে যে বর্ণবিদ্বেষের তিলমাত্র নাই, তাহা বুঝাইয়া দিতে শ্রীবিজয় বলিয়াছিলেন, বর্ণবিদ্বেষ থাকিলে কি আর আমরা দক্ষিণ ভারতের মানুষদের সহিত মিশিতাম? আদিত্যনাথ-বিজয়দের দেখিলে কবি হয়তো লিখিয়াই ফেলিতেন, ‘হে বিজেপি, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন।’ নরেশ অগ্রবাল সেই ভাণ্ডারে নবতম সংযোজন মাত্র। বিজেপিতে আগমনের যত অল্প দিনই হউক না কেন, তাঁহার মনটি নিপাট বিজেপির ছাঁচে ফেলা। ‘দ্য পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স’, আক্ষরিক অর্থেই। ভারতে সম্ভবত আর কোনও রাজনৈতিক দলে এমন এত জন নেতা নাই। আর কোনও রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক শুদ্ধতাকে এই ভাবে গঙ্গায় বিসর্জন দিয়া আসে নাই। সুষমা স্বরাজরা যতই অগ্রবালের নিন্দা করুন, ইতিহাসকে অস্বীকার করিবেন কী ভাবে?

মহিলা হইতে মুসলমান, সমকামী হইতে দক্ষিণ ভারতের মানুষ— বিজেপির নেতাদের রাজনৈতিক অশুদ্ধতার লক্ষ্যবিন্দুগুলি আপাতবিক্ষিপ্ত। গভীরতর বিশ্লেষণে বোঝা যায়, আক্রমণের উৎস অভিন্ন, গন্তব্যও। যে পরিচিতিগুলির বিরুদ্ধে আদিত্যনাথ-অগ্রবালরা ভয়াবহ সব মন্তব্য করিয়াই চলেন, সেগুলির প্রতিটিই নাগপুরের নিকট ‘অপর’। নাগপুর যে হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্থানে বিশ্বাসী, তাহার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে পুরুষতন্ত্র, তাহার প্রতিটি পদক্ষেপে উচ্চ বর্ণের জয়ধ্বনি। নাগপুরের মন বিশ্বাস করে, মহিলারা পুরুষের অধীনে থাকাই বিধেয়, এবং তাহাদের পরিসর ঘরের চার দেওয়ালে সীমাবদ্ধ। কোনও মহিলা সেই গণ্ডি অতিক্রম করিতে চাহিলে এই মন ধরিয়া লয়, ঘরের বাহিরে তাঁহার অস্তিত্বটি অনৈতিক, অবৈধ। অতএব, কোনও অভিনেত্রী স্বক্ষেত্রে যতই দক্ষ হউন, বিশ্ব জুড়িয়া তাঁহার দক্ষতা যে স্বীকৃতিই অর্জন করুক, নরেশ অগ্রবালদের চোখ তাঁহার ‘নাচ’-এর অধিক আর কিছু দেখিতে পায় না। এবং, নিছক ‘নাচ’-এর মধ্যেও যে শিল্প থাকে, নাগপুরের চোখ তাহাও দেখিতে পায় না। ‘নাচ’ হইয়া দাঁড়ায় নিম্ন স্তরের রূপক। হিন্দি এবং ‘আর্য’-পরিচিতির আগ্রাসনের মানসিকতা নাগপুরকে শিখায়, দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় মানুষ আর্যবলয়ের মানুষের সমতুল্য নহেন। গোলওয়ালকর স্বাধীন ভারতে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করিয়া রাখিবার বিধান দিয়াছিলেন। আদিত্যনাথরা সেই মানসিকতাটিকেই বহন করিয়া চলিতেছেন। নরেশ অগ্রবালকে তাঁহারা দুই বাহু প্রসারিত করিয়া স্বাগত জানাইতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Naresh Agarwal BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE