Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গালিতে বা গুলিতে নয়, আলিঙ্গনেই গণতন্ত্র

লাঠি, কাঁদানে গ্যাস যত্রতত্র। কোথাও ছররা, কোথাও গুলিও মুড়ি-মুড়কি। বিক্ষোভ থেকে উড়ে আসা পাথর ঠেকাতে মানব-ঢাল ব্যবহারের মতো প্রবল বিতর্কিত পদক্ষেপও করতে দেখা গিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে।

লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৩
Share: Save:

বার বার উচ্চারণটা শোনা যাচ্ছিল। কাশ্মীরের ভিতরে শোনা যাচ্ছিল, কাশ্মীরের বাইরেও শোনা যাচ্ছিল। বিশিষ্টজনেরা সতর্ক করেছিলেন, সুশীল সমাজ প্রতিবাদ করছিল, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি গর্জে উঠছিল। তা সত্ত্বেও প্রশাসকদের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, বেপরোয়া বলপ্রয়োগেই সমস্যার একমাত্র সমাধান দেখছেন তাঁরা। কিন্তু দেশের প্রধান প্রশাসক স্বাধীনতা উদ‌যাপনের ক্ষণে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানালেন, কাশ্মীরের সঙ্কটমুক্তির পথ গুলিতেও নেই, গালিতেও নেই, রয়েছে আলিঙ্গনে। ভূস্বর্গের জন্য এর চেয়ে ইতিবাচক উচ্চারণ আর কী-ই বা হতে পারত স্বাধীনতা দিবসে?

লাঠি, কাঁদানে গ্যাস যত্রতত্র। কোথাও ছররা, কোথাও গুলিও মুড়ি-মুড়কি। বিক্ষোভ থেকে উড়ে আসা পাথর ঠেকাতে মানব-ঢাল ব্যবহারের মতো প্রবল বিতর্কিত পদক্ষেপও করতে দেখা গিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। নাগরিকের ক্ষোভের মুখে রাষ্ট্রের জবাব যে এর কোনওটিই হতে পারে না, তা বলাই বাহুল্য। গণতন্ত্রে বল প্রয়োগের পরিসর অত্যন্ত কম। আলাপ-আলোচনা এবং নিরন্তর আলাপ-আলোচনাই গণতন্ত্রে সঙ্কটমুক্তির সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য পথ। জটিল কোনও সমাজ-রাজনৈতিক আবর্ত যখন পথ গিলে নেয়, তখনও আলোচনার মাধ্যমেই রফাসূত্রে পৌঁছনোর চেষ্টা করতে হয়। প্রয়োজনে সব পক্ষকেই কিছু ত্যাগ করতে হয়, সমঝোতায় আসতে হয়। সর্বোপরি, রফাসূত্রের খোঁজটা একটু ধৈর্যশীল হয়ে করতে হয়, অসহিষ্ণু মন বা মেজাজ নিয়ে নয়। ভারতীয় রাষ্ট্র, আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে ভারতের বর্তমান প্রশাসকরা, গণতন্ত্রের সে সব শিক্ষা ভোলার পথে বলে মনে হচ্ছিল রোজ। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ কিন্তু বলল, কোনও শিক্ষাই বিস্মৃত হয়নি ভারত।

বাহুবল আর ক্ষমতার আস্ফালনে রাষ্ট্র কখনও নাগরিকের মন জয় করতে পারে না, পারে আলিঙ্গনে, পারে ভালবাসায়। শুধু কাশ্মীরের জন্য নয়, ভালবাসার এই তত্ত্ব দেশের প্রতিটি প্রান্তের জন্য সমান ভাবে সত্য। সহিষ্ণুতা দিয়েই জয় করতে হবে যাবতীয় প্রতিকূলতাকে, ভিন্নমতকে পিষে দিয়ে নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণেও অমোঘ শিক্ষাটা মান্যতা পেল। ‘গো-রক্ষক’রা শুনতে পাচ্ছেন তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE