Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National news

সরকারকেই কিন্তু স্বচ্ছতার প্রমাণটা দিতে হবে এ বার

উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দু’ধরনের ৫০০ টাকার নোট ছাপানোর যে অভিযোগ তথা স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির যে অভিযোগ তুলে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল সংসদে সরব হয়েছে, সে অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করার দায় বিজেপিকে তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে মাথা পেতে নিতে হবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

সিজারের স্ত্রীকে সর্বদা সব রকম সংশয়ের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। তেমনই কাম্য, তেমনটাই দস্তুর। সর্বদা সব রকম সংশয়ের ঊর্ধ্বে থাকা ক্ষমতাসীনের পক্ষে খুব সহজ কাজ নয় ঠিকই। কিন্তু রাজনীতিকরা এ কথা জেনেই রাজনীতির ময়দানে নেমেছেন যে ক্ষমতার অধীশ্বর হওয়া যতটা শক্ত, ক্ষমতার প্রতি সুবিচার করা তার চেয়েও বেশি শক্ত। অতএব, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দু’ধরনের ৫০০ টাকার নোট ছাপানোর যে অভিযোগ তথা স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির যে অভিযোগ তুলে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল সংসদে সরব হয়েছে, সে অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করার দায় বিজেপিকে তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে মাথা পেতে নিতে হবে।

নোটবন্দির পরে যে নতুন ৫০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে, তা দু’রকম নকশায় ছাপা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি ভাবে কোনও পৃথকীকরণের কথা বলা হয়নি, অথচ নোটের নকশায় প্রকারভেদ হয়েছে— এমন ঘটনা আগে ঘটেনি এ দেশে। সংসদের উচ্চকক্ষে অত্যন্ত গুরুতর ভাবে উত্থাপিত হয়েছে বিষয়টি। এক ধরনের নোট সরকারের জন্য ছাপানো হয়েছে, অন্যটি দলের জন্য— কংগ্রেসের তরফে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। অন্য বিরোধী দলগুলিও প্রবল ভাবে সরব হয়েছে। ভারতীয় গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থানে এত গুরুতর ভাবে যখন উঠেছে বিষয়টি, তখন সরকারকে কিন্তু ব্যাখ্যা দিতেই হবে। সে ব্যাখ্যা যথোপযুক্ত এবং সন্তোষজনক হওয়াটাও অত্যন্ত জরুরি।

অর্থমন্ত্রী রাজ্যসভাতেই বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তীব্র প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া যতটা তীব্র ছিল, জবাবটা ততটা শানিত ছিল না মোটেই। বিরোধীদের অভিযোগকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং ‘মর্যাদাহানিকর’ আখ্যা দিয়ে অরুণ জেটলির দাবি, দু’রকমের নোট ছাপা হয়নি, মুদ্রণে ত্রুটির কারণে একই নোটকে দু’রকম দেখাচ্ছে। বলাই বাহুল্য, এ ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হয়নি, সংশয়ও কাটাতে পারেনি। অভিযোগের ওজন এতটাই যে তার খণ্ডনটাও যথেষ্ট সুসংহত এবং তথ্য সম্বলিত ভঙ্গিমায় হওয়া দরকার।

বিপুল আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগটা ওঠার পর যে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হল, জনসাধারণের বিশ্বাস ধরে রাখতে চাইলে সে সন্দেহের নিরসনটা খুব যত্নের সঙ্গেই করতে হবে সরকারকে। ৫০০ টাকার নোটে দু’রকমের নকশা মেলার নেপথ্যে যে কোনও অসৎ নকশা নেই, সংশয়হীন ভাবে বিশ্বাসযোগ্য কোনও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সরকারকে প্রমাণ করতে হবে। তা যদি না পারেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিরা, তা হলে কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দু’রকমের নোট ছাপার তত্ত্বই প্রতিষ্ঠা পাবে। সে ক্ষেত্রে অপরাধীকে বা অপরাধীদের চিহ্নিত করার দাবিটাও জোরালো ভাবে উঠতে শুরু করবে। সরকার বা শাসক দলের পক্ষে তেমন কোনও পরিস্থিতি আরও অস্বস্তিকর হবে না কি?

অস্বচ্ছ উপায়ে যদি কিছু ঘটে থাকে, তা হলে তার প্রতিকার তথা অপরাধীর শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে। নচেৎ স্বচ্ছতার তর্কাতীত প্রমাণ পেশ করতে হবে। শুধু ক্ষমতা দখলের সক্ষমতা নয়, ক্ষমতার প্রতি সুবিচার করার সক্ষমতাও যে এই সরকারের রয়েছে, তা প্রমাণ করার একটা অবকাশ তৈরি হয়েছে। এই অবকাশকে নরেন্দ্র মোদীরা কী ভাবে কাজে লাগান, তা দেখতে চাইছে গোটা দেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE