অস্ত্রোপচারের আগে দেহে বিঁধে থাকা সূচ। —ফাইল চিত্র।
মাঝে-মধ্যে হতাশা নিবিড় জাল বুনতে শুরু করে। সমাজে এবং পারিপার্শ্বিকতায় এমন কিছু ক্লেদ আচমকা ভেসে ওঠে যে নেতির শৈবাল-দাম সরিয়ে ইতির প্রবাহের দিকে এগনোর ইচ্ছাই অন্তর্হিত হতে চায়। পুরুলিয়া থেকে তেমনই এক ক্লেদ ভেসে উঠেছে। এক শিশুর উপর অমানুষিক নির্যাতনের ছবি সামনে এসেছে। মানসিকতায় বর্বরতার ছায়া কতটা গভীর হলে একের পর এক সূচ আমূল গেঁথে দেওয়া যায় কারও শরীরে, তা আন্দাজ করাও অত্যন্ত কঠিন। আর ‘আশ্রয়’ দিচ্ছেন যিনি, এমন বীভৎসতার উৎসও যখন তিনিই, তখন কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা আরও দুরূহ। এই পরিস্থিতিতেই জন্ম নেয় হতাশাটা। এই পরিস্থিতিতেই যাবতীয় বিশ্বাসের মূলে নেমে আসে মারণ আঘাত।
তবু হতাশ হচ্ছি না। বীভৎসতার নতুন নজিরটা সামনে আসার পর নেতিবাচক আকস্মিকতার ঘোর তৈরি হয়েছিল বটে। কিন্তু মানবিক মুখগুলোও এগিয়ে এসেছে ততোধিক তৎপরতায়, ততোধিক আন্তরিকতায়। চিকিৎসক থেকে সমাজকর্মী, সংবাদমাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, প্রশাসন থেকে সাধারণ— মেয়েটার জন্য উদ্বেগ দেখা গিয়েছে সব মহলে। মাত্র কয়েক দিনে অচেনা থেকে আপন হয়ে ওঠা মেয়েটার জন্য কিছু করতে পারার আকুতি শোনা গিয়েছে শহর থেকে গঞ্জে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। প্রত্যক্ষ ভাবে কিছু করতে না পারার আক্ষেপ শোনা গিয়েছে অলিতে-গলিতে, আনাচে-কানাচে।
সূচবিদ্ধ শিশুকন্যা যেন আমাদের সমাজেরই মূর্ত প্রতিচ্ছবি। অজস্র শরে বিদ্ধ সে, রক্তাক্ত সে, ভারাক্রান্ত সে। তবু সে লড়ে, তবু সে যুঝে চলে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় বিরুদ্ধে, তবু সে এগোয় জীবনের দিকে। চেতনে হোক বা অবচেতনে, সে যেন জানেই, তাঁর মুখ চেয়ে আজও আকুল সহস্র-লক্ষ। এই আকুল আকুতিতেই কিন্তু বাঁচার রসদ খুঁজে পায় সূচবিদ্ধ শিশুকন্যা। এই আকুল আকুতিই বাঁচিয়ে রাখে সমাজকে, বাঁচার রসদ খুঁজে দেয় আমাদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy