নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
দায়বদ্ধতা আরও বেড়ে গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। তাঁর পদক্ষেপ বিভিন্ন পরিসরে সমালোচিতও হয়েছে। তা সত্ত্বেও জনসমর্থনে ভাঁটা নেই। সমীক্ষা বলছে, নরেন্দ্র মোদী এখন আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় ভারতে। এই কারণেই দায়বদ্ধতা বেড়ে গেল। পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে ওঠার যথেষ্ট কারণ ছিল। কিন্তু পারিপার্শ্বিকতা অগ্রাহ্য করে দেশবাসীর ইঙ্গিত, এখনও প্রধানমন্ত্রীর পাশেই রয়েছে দেশ।
আমেরিকা-ভিত্তিক সমীক্ষক সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার সমীক্ষাটি চালিয়েছে। সমীক্ষা বলছে, প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীর অবস্থানকে সমর্থন করছেন প্রতি ১০ জনে প্রায় ৯ জন। অর্থাৎ দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই প্রধানমন্ত্রীর পদে নরেন্দ্র মোদীকে দেখতে চান বলে সমীক্ষাটি ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই সমীক্ষা কবেকার? নোটবন্দির সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার ৩-৪ মাস পরের। নোটবন্দির মতো পদক্ষেপকে কী চোখে দেখছেন ভারতের নাগরিকরা, নোটবন্দির পরে কোন শ্রেণির ভারতবাসীর মানসিকতা কী বলছে— তার আঁচ পেতেই সমীক্ষাটি হয়েছিল। সমীক্ষার ফলাফল সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো। নোটবন্দির জেরে বিজেপির প্রতি সমর্থন রাতারাতি বেড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে, এমনটা নয়। অন্য সব রাজনৈতিক দল ছেড়ে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন, এমনও নয়। কিন্তু সমীক্ষার আওতায় আসা প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই নোটবন্দি প্রসঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকছেন, এ বড় কম কথা নয়।
আরও পড়ুন: নোটবন্দির পরেও ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় মোদীই, বলছে মার্কিন সমীক্ষা
রাহুল গাঁধীকে সমর্থন করছেন বা সম্ভাব্য রাষ্ট্রনেতা হিসেবে মেনে নিচ্ছেন কতজন? ১০০ জনে ৫৮ জন। সনিয়া গাঁধীর ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১০০ জনে ৫৭ জন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থনে রাজি ১০০ জনে ৯০ জন। অর্থাৎ মোদীকে যাঁরা সমর্থন করছেন, তাঁরা সকলেই বিজেপির কর্মী বা সমর্থক, এমনটা নয়। অনেকেই বরং কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু নোটবন্দির মতো সিদ্ধান্তের আয়নায় মুখ দেখানোর সময় অধিকাংশ নাগরিকই জানিয়ে দিচ্ছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই।
এ কথা ঠিক যে নোটবন্দির মাত্র ৩-৪ মাস পরে হয়েছিল এই সমীক্ষা। এ কথাও ঠিক যে, নোটবন্দির ১ বছর কেটে যাওয়ার পর অথবা জিএসটি প্রবর্তনের পর পরিস্থিতিটা হুবহু ওই সময়ের মতো নাও থাকতে পারে। কিন্তু তাতেও মোদীর প্রতি বেনজির সমর্থনের ছবিটাকে লঘু করে দেখা সম্ভব হবে না। নোটবন্দির বছর ঘুরে যাওয়ার পরে জনমতে ঈষৎ তারতম্য ঘটে গিয়ে থাকতেই পারে। জিএসটি ব্যবস্থা যে প্রক্রিয়ায় প্রবর্তিত হল, তা দেখার পরে সরকারের সক্ষমতার বিষয়ে জনসাধারণের কিয়ৎ মোহভঙ্গ হয়ে থাকতেই পারে। কিন্তু জনসমর্থনের নকশাটা তাতে আমূল বদলে গিয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নানা পদক্ষেপকে সদর্থক চোখেই দেখছেন অধিকাংশ ভারতীয়, সমীক্ষার ফলাফল এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে বলে ধরে নিতে হবে।
যে সব লক্ষ্য পূরণের জন্য নোটবন্দির মতো পদক্ষেপ করা হয়েছিল বলে মোদী সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সেই সব লক্ষ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে তা নিয়ে সংশয় বিস্তর। জিএসটি ব্যবস্থা ব্যবসায়ীদের জন্য এখনও পর্যন্ত কতটুকু সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে, সাধারণ মানুষকে মূল্যবৃদ্ধির প্রকোপ থেকে সরকার কতটুকু বাঁচাতে পেরেছে, সে সব নিয়েও সংশয় বিস্তর। নানা দৃষ্টান্ত তুলে ধরে, নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, নানা পরিসরে মোদী সরকারের বিস্তর সমালোচনা হয়েছে এই সবকটি ইস্যুতেই। তা সত্ত্বেও যদি ভারতীয় জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ বিশ্বাস রাখে প্রধানমন্ত্রীর সক্ষমতায়, যদি ইতিবাচক চোখেই দেখে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলিকে, তাহলে অবশ্যই আরও বেশি কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠা উচিত মোদীর। নোটবন্দি এবং জিএসটি সাধারণ মানুষকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে যে বাধ্য করেছে, সে কথা অনস্বীকার্য। এই সব প্রতিকূলতা সহ্য করার পরে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর পদক্ষেপগুলির নানা চুলচেরা বিশ্লেষণ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরেও যদি দেশের মানুষ বিশ্বাস রাখেন, মোদী সদর্থক পথেই এগতে চাইছেন, তা হলে সে অবশ্যই সৌভাগ্যের বিষয় মোদীর জন্য। প্রধানমন্ত্রী মোদীর দায় আরও বেড়ে গেল, দেশবাসীর বিশ্বাস এবং আস্থার মর্যাদা তাঁকে দিতেই হবে। তাঁর নেতৃত্বে সদর্থক এক গন্তব্যেই পৌঁছতে চলেছে ভারত, অদূর ভবিষ্যতেই মোদীকে তা খুব স্পষ্ট করে প্রমাণ করে দিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy