Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

দেশে আগুন লাগলে কিন্তু অগ্নিসংযোগকারীকেও পুড়ে মরতে হবে

প্রথমে আক্রান্ত হল ছবির সেট। আক্রান্ত হলেন পরিচালক। তার পরেও একটানা চড়তে থাকল বিরোধিতার সুর। দীপিকা পাড়ুকোনের নাক কেটে নেওয়ার হুমকি এল। সব শেষে এল মুণ্ডচ্ছেদের নিদান।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫৩
Share: Save:

এ কোন সংস্কৃতি! ভারতকে কোন পথে নিয়ে যেতে চাই আমরা? কোনও চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে আপত্তি ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তার জেরে প্রতিবাদ হতে পারে, বিতর্ক হতে পারে, বিরোধিতা হতে পারে। কিন্তু এমন হিংসার আবাহনও যে হতে পারে, তা কল্পনাতীত!

প্রথমে আক্রান্ত হল ছবির সেট। আক্রান্ত হলেন পরিচালক। তার পরেও একটানা চড়তে থাকল বিরোধিতার সুর। দীপিকা পাড়ুকোনের নাক কেটে নেওয়ার হুমকি এল। সব শেষে এল মুণ্ডচ্ছেদের নিদান। নায়িকার বা পরিচালকের বা দু’জনেরই মুণ্ডচ্ছেদ করা হোক— নিদান হরিয়ানার বিজেপি নেতার। ১০ কোটি টাকা পুরস্কার— ঘোষণা তাঁর। রাজপুত অস্মিতার নামে এই যা কিছু চলছে এবং যে পথে এগচ্ছে, তা শেষ হবে কোথায়? প্রগতিশীল, উদার, মুক্তমনা, উদাত্ত দৃষ্টিভঙ্গির কথা ছেড়েই দিলাম। সভ্যতার দেওয়া মূল্যবোধগুলোর ন্যূনতম খেয়াল রাখে যে সমাজ, সেখানেও কি এমন ফতোয়া দিতে পারা যায়?

আরও পড়ুন

দীপিকাদের ‘মুন্ডু কাটলে ১০ কোটি’, ঘোষণা বিজেপি নেতার

হরিয়ানা বিজেপি-র এক অত্যন্ত পরিচিত মুখ এই ফতোয়া জারি করেছেন। বিজেপি এই ফতোয়া প্রথার অত্যন্ত বিরোধী। নানা ইসলামি ফতোয়ার বিরুদ্ধে বিজেপি-র সুর বরাবরই চড়া। ফতোয়া প্রথার বিরোধী অন্যান্য দলও। বিজেপি বা অন্য যে কোনও দল যে ফতোয়া প্রথার বা কট্টরবাদী নিদানের বিরোধিতাই করবে, তা বড়াই করে বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কোনও প্রগতিশীল বা গণতান্ত্রিক শক্তি এই ধরনের কার্যকলাপের বিরোধিতাই করবে। কিন্তু হরিয়ানার বিজেপি নেতা সুরজ পাল আমু যেন স্বাভাবিকতার পরোয়াই করেন না।

এখনও ধরে নিচ্ছি না যে, এ ভয়ঙ্কর রাজনীতিটাআসলে বিজেপি-রই রাজনীতি। একজন বিজেপি নেতা বিচ্ছিন্ন ভাবে যে ফতোয়া জারি করলেন বা যে নিদান দিলেন তা ওই নেতার ব্যক্তিগত বিকৃতি বলেই ধরে নিচ্ছি। কিন্তু মাঝে মাঝে এও মনে হচ্ছে যে, বিজেপি নেতৃত্বই চান না, এই সব নেতাদের বিতর্কিত অবস্থানগুলোকে দলের অবস্থানের থেকে ভিন্ন হিসেবে দেখা হোক। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যে, এ সব মন্তব্যের পিছনে প্রচ্ছন্ন কোনও প্রশ্রয় কাজ করছে।

যোগী আদিত্যনাথ অতি সম্প্রতি বললেন, ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটিই সংবিধানের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার। প্রাথমিক ভাবে এই মন্তব্যকে আমরা যোগীর ব্যক্তিগত অবস্থান বা ভাবনা হিসেবেই বেছেছি। কিন্তু বিজেপি-র সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও বিবৃতি নিয়ে সামনে আসেননি। এর পরে উত্তরপ্রদেশেরই এক বিজেপি কাউন্সিলরের ভাষণের ভিডিও ভাইরাল হল। তাতে মুসলিমদের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি— বিজেপি-কে ভোট না দিলে এমন সমস্যা হবে, যা আগে কখনও হয়নি। সব শেষে এল হরিয়ানা বিজেপি-র প্রবীণ নেতার নিদান— দীপিকার মুণ্ড আনলে ১০ কোটি টাকা। এ সব বিতর্কিত মন্তব্যকেও বিজেপি-র অবস্থানের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবেই দেখা হচ্ছে এখনও অবধি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে কোনও ক্ষেত্রেই খুব স্পষ্ট করে বা খুব তীব্রতার সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্ব এ সবের বিরুদ্ধে সরব হলেন না। এর মধ্যে কি প্রশ্রয়ের বার্তাই খুঁজে নেব তা হলে?

এই আপাত-নীরবতা যদি সত্যিই প্রশ্রয়ের ইঙ্গিত হয়, তা হলে বিজেপি নেতৃত্বকেও সতর্ক করা দরকার। আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা যে বিপজ্জনক, সে কথা মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। আগুন যদি লাগে তা হলে কিন্তু নিজের দেশেই লাগবে। লেলিহান শিখাটা কিন্তু অগ্নিসংযোগকারীকে আলাদা করে চিনে নিতে পারবে না। ছাই হতে হবে সকলকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE