Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Editorial news

স্বার্থরক্ষা আর তোষণ আলাদা, আমরা বুঝব কবে?

অদ্ভুত বক্তব্যের আরও অদ্ভুত যুক্তি খাড়া হচ্ছে এখন। এই রাজ্যে ৩১.৯ শতাংশ মানুষ মুসলিম, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫১
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরা জনসভায় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ প্রস্তাবনার ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন, হ্যাঁ, তিনি মুসলিম তোষণ করবেন। কোটি বার করবেন। যে দেশ ধর্মনিরপেক্ষতার শপথ নিয়েছে সংবিধানে, যে সংবিধানের শপথ নিয়ে মুখ্য বা যে কোনও মন্ত্রিত্বে আরূঢ় হন এই দেশের নাগরিক, সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে নিপীড়ন বা তোষণ, দুই-ই সমান দূষণীয়, এই কথা বলার জন্যও কোনও বালক আর নেই?

অদ্ভুত বক্তব্যের আরও অদ্ভুত যুক্তি খাড়া হচ্ছে এখন। এই রাজ্যে ৩১.৯ শতাংশ মানুষ মুসলিম, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শতাংশের ভিত্তিতে স্থির হবে সব কিছু? পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং তাঁদের জন্য সংরক্ষণের সুযোগ তৈরির পশ্চাদপটকে রেখেই বলছি, শতাংশের হিসাব স্থির করে দেয় সব কিছু? এই রাজ্যে বৌদ্ধদের সংখ্যা তো শতাংশের হিসাবে তুলনামূলকভাবে আরও নগণ্য, তবে কি তাঁরা তোষণের মাপকাঠিতে অগ্রাধিকার পাবেন? গাঁধীজির ভাবনায় সংখ্যালঘুর সামাজিক-মানসিক স্বাচ্ছন্দ বা নিরাপত্তার সুনিশ্চিতির লক্ষ্যে মননচর্চাসম্ভূত যে নির্দেশ ছিল, সেখান থেকে কি সরে আসছি আমরা? ৩১.৯ শতাংশ হলে তোষণযোগ্য, এই যদি সহজ সূত্র হয়, তবে এটাও পরিষ্কার হওয়া দরকার, শতাংশের হিসাবে যাঁরা অধিকতর তাঁরা কী মর্যাদার অধিকারী? অথবা কমতির দিকের জন্যও কী ভাবনা রয়েছে সরকারের।

ভুল হয়ে যাচ্ছে কোথাও। স্বার্থরক্ষা ও তোষণ যে এক হতে পারে না, এটা বুঝছি না বলেই সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু দ্বন্দ্বে ক্রমাগত দীর্ণ হচ্ছি আমরা। কারণ, আমরা অভ্যস্ত হচ্ছি না বৃহত্তর ভঙ্গিতে পরিস্থিতিকে দেখার জন্য। সংখ্যালঘুর স্বার্থরক্ষা এই ধর্মনিরপেক্ষ দেশের লক্ষ্য, এবং সেই লক্ষ্য ইস্পাতকঠিন হওয়া দরকার, যাতে গোরক্ষা বা যে কোনও অজুহাতে আক্রমণের ঘটনাগুলোকে দৃষ্টান্তমূলকভাবে প্রতিহত করা যায়। কিন্তু সেখানেও মাপকাঠিটা ভেদাভেদহীন হওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: ধর্ম দেখি না, মুসলিমদের দেখবই: মমতা

কেন্দ্রে-রাজ্যে, রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে এবার আমাদের বোঝার সময় এসেছে, বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক দরবারে যথোপযুক্ত আসনলাভের চেষ্টা করতে হবে আমাদের। তোষণ অতএব নিপীড়ন, অথবা যেহেতু নিপীড়ন অতএব তোষণের গণ্ডিবদ্ধ রাজনীতি ছাড়িয়ে সার্বিক উদার দৃষ্টির প্রয়োজন এখন। ধর্মপরিচয় ছাড়িয়ে এক উদাত্ত ভারতের স্বপ্ন দেখা এই মুহূর্তে কঠিন ঠেকছে। কিন্তু শুরু হতে পারে এই উদ্যোগ?

তোষণ-নিপীড়ন অথবা শতাংশের হিসাবগুলো বন্ধ করবে রাজনৈতিক দলগুলো? বাকিটা ছেড়ে দিন আমাদের এই রাম-রহিমদের উপরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE