নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র
‘খুড়োর কল’ এক অদ্ভুত যন্ত্র। লক্ষ্য হাসিল হোক বা না হোক, লক্ষ্যের দিকে নিরন্তর ছুটে যেতে সে যন্ত্র মানুষকে প্রলুব্ধ করতে পারে। সবাই প্রলুব্ধ হন, এমন অবশ্য নয়। যতই সামনে ছুটছি, লক্ষ্যও ততই পিছিয়ে যাচ্ছে— এই উপলব্ধি এলে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়নো অনেকেই থামিয়ে দেন। কারণ আব্রাহাম লিঙ্কনের প্রাসঙ্গিকতা চিরন্তন। কিছু মানুষকে চিরকাল এবং সব মানুষকে কিছু কাল বিভ্রান্তির মধ্যে রাখা সম্ভব, কিন্তু সবাই মিলে চিরকাল ভ্রান্তিবিলাসে মজে থাকবেন, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই— লিঙ্কন এ সত্যই শুনিয়েছিলেন। তার পর যুগে যুগে, দেশে দেশে, পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়েছে এ সত্য। এখন যেমন এ দেশে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বলে প্রতীত হয়।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি ছিল, বাণিজ্যে অপার সমৃদ্ধির আশ্বাস ছিল, কোটি কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের অঙ্গীকার ছিল। সব মিলিয়ে ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নে ভর করে হাতে এসেছে মসনদ। সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে মসনদে। কিন্তু এখন মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে মুখ না খোলাকেই শ্রেয় বলে মনে করেন শাসক। নোটবন্দি এবং জিএসটি পরবর্তী পরিস্থিতিতে শাসক বড়াই করে এ কথাও বলতে পারছেন না যে, বণিক মহল খুব সমৃদ্ধিতে রয়েছে। আর কর্মসংস্থানহীনতা যে ঘোচানো যায়নি সে কথা খোদ শাসকদলের সভাপতি স্বীকার করে নিয়েছেন সংসদে দাঁড়িয়ে। সব মিলিয়ে তা হলে কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এখন ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নটা? হিসেব কষতে প্রস্তুত দেশ। কিন্তু শাসক এখনই সে হিসেবে যেতে উত্সাহী বলে মনে হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্ভবত খুড়োর কলেই আস্থা রাখছেন। পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা হাতে পেলেই দেখিয়ে দেবেন, দেশটা কী ভাবে চালাতে হয়— ভাবভঙ্গি এমনই ছিল ২০১৪-র সাধারণ নির্বাচনের আগে পর্যন্ত। কিন্তু সে নির্বাচনের পর থেকে ক্রমশ বদলাতে থেকেছে ভঙ্গি, ধাপে ধাপে বদলে গিয়েছে বয়ানও। প্রথমে ছিল ‘অচ্ছে দিন’। তার পর শোনা যাচ্ছিল ‘দুর্নীতিমুক্ত ভারত’ এবং ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’। তার পর সে বয়ান বদলে হল ‘নতুন ভারত’। বয়ান যতই বদলাক, যে পরিভাষাই ব্যবহৃত হোক, রূপায়ণটা ২০১৯ সালের মধ্যেই হবে— বিশ্বাস ছিল ভারতবাসীর। ধাক্কা লাগল সে বিশ্বাসেও। ২০১৯ নয়, সম্প্রতি বার বার প্রধানমন্ত্রীর মুখে ২০২২ সালের কথা শোনা যেতে শুরু করেছে। ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছর। সে বছরেই মুছে যাবে দুর্নীতি, শেষ হয়ে যাবে দারিদ্র, ঘুচে যাবে বেকারত্বের জ্বালা— প্রধানমন্ত্রীর মুখে আজকাল এমন কথাই শোনা যাচ্ছে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি তথা এনডিএ ভারতবাসীর রায় পেয়েছেন ২০১৯ সালকে সময়সীমা ধরে এগনোর জন্য। ২০১৯ সালের পরেও সরকারের রাশ তাঁর হাতেই থাকবে এবং ২০১৯-এর মধ্যে যে সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারছেন না, সে সব প্রতিশ্রুতি পরবর্তী তিন বা পাঁচ বছরে পূরণ করে দেবেন, এমন কথা শুনলে আজ বেশ ধাক্কা খেতে হয়। জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি নরেন্দ্র মোদী দিয়েছিলেন ক্ষমতায় আসার আগে, সেই সব প্রতিশ্রুতিকে কি মোদী নিজে সম্মান করছেন? প্রশ্ন উঠছে আজ নানা মহল থেকে। ২০২২ সালেও তিনিই প্রধানমন্ত্রী— নির্বাচনের অনেক আগেই মোদী কি তেমনটা ধরে নিয়েছেন? প্রশ্ন অত্যন্ত সঙ্গত।
আরও পড়ুন: ‘নয়া ভারতে’ই দূর হবে বেকারি, দাবি মোদীর
আসলে মোদী সেই খুড়োর কলেই আস্থা রেখেছেন। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যমাত্রার দিকে যত এগোচ্ছে দেশ, লক্ষ্যমাত্রাটা সম্ভবত ততই পিছিয়ে দিতে চাইছেন শাসক। আব্রাহাম লিঙ্কনের প্রাসঙ্গিকতা কিন্তু চিরন্তন, ভুলে যাবেন না যেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy