Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

শুধুমাত্র আইনরক্ষাই নয়, মানবিক ধর্মও পালন করুন!

এ কথাও ঠিক, পুলিশ অর্থেই অমানবিক বা অত্যাচারী নয়। অসংখ্য পুলিশকর্মী আছেন, যাঁরা এর উল্টো পথের পথিক, সমাজ তাঁদের কুর্নিশ জানায়। কিন্তু মানবিকতার চর্চা আরও পরিশ্রমসাধ্য।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৭
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যমগ্রামের দূরত্ব দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি। এই বিপুল দূরত্ব অতিক্রম করে এক বিন্দুতে এসে দাঁড়াল তারা এক লহমায়। সেই বিন্দুতে গৌরব নেই, লজ্জার সেই মুহূর্ত তৈরি হল রক্ষকের বদান্যতায়। সেই রক্ষক, ভারতভূমির বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে যার মুখে অমানবিকতার ছাপ, গায়ে অত্যাচারীর পোশাক, অন্তত সর্বজনীন অভিযোগ সেটাই।

মধ্যমগ্রামে এক হেলমেটহীন যুবকের সঙ্গে বচসার সূত্রে সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশের যে চেহারা দেখা গেল শনিবার, তাতে শিউরে উঠলাম আমরা। যুবককে রাস্তায় ফেলে ক্রমাগত চড়-লাথি-কিল মারতে থাকে এই রক্ষকেরা, যার পরিণামে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। রাস্তার আইনরক্ষার ভার তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছে প্রশাসন, দেশের আইন নিজেদের হাতে তুলে নিলেন তাঁরা। পুলিশের একটা অংশের বিরুদ্ধে ঠিক এই অভিযোগেই সোচ্চার হলেন আমজনতা। পতাকা কাঁধে নিলে তা বহন করার শক্তি অর্জন করতে হয়, অন্যথায় ঔদ্ধত্যসুর্ধিত অপব্যবহারই যে হয়, তা আরও এক বার প্রমাণ হল মধ্যমগ্রামে।

সেই পুলিশেরই অমানবিক মুখ দেখা গেল সাহারানপুরে। দুর্ঘটনায় আহত ক্রমাগত নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকা দুই তরুণকে গাড়িতে তুলে নিতে অস্বীকার করল টহলদার পুলিশের ভ্যান, কারণ গাড়িতে রক্তের দাগ লাগবে! শেষ পর্যন্ত রাস্তাতেই মৃত্যু হল দুই তরুণের। যথাসময়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে বাঁচানো যেতে পারত যাঁদের, অমাবিক কিছু মুখ গাড়িতে রক্তের দাগের কারণে সেই সম্ভাবনার পথটাই বন্ধ করে দিলেন। গাড়িতে দাগ লাগল না ঠিক, টহলদার ভ্যানের ওই পুলিশকর্মীদের গায়ে রক্তের দাগ লাগল না কি? মানবিক-অমানবিক মুখ নিয়ে এত চর্চা, তার আঁচ এসে পৌঁছয় না প্রত্যন্ত প্রান্তের কিছু হৃদয়ে?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এ কথাও ঠিক, পুলিশ অর্থেই অমানবিক বা অত্যাচারী নয়। অসংখ্য পুলিশকর্মী আছেন, যাঁরা এর উল্টো পথের পথিক, সমাজ তাঁদের কুর্নিশ জানায়। কিন্তু মানবিকতার চর্চা আরও পরিশ্রমসাধ্য। কিছু ফুটবল খেলার আয়োজনে অথবা কম্বল বিতরণে প্রচারের আলো এসে পড়ে, কিন্তু সেই আলোর বাইরে বেরিয়ে সমাজের মধ্যে নিবিড় ভাবে মিশে একটা চর্চার দরকার হয়। সেটা মেধাসঞ্জাত এবং শ্রমসাধ্য।

আরও পড়ুন
‘গাড়িতে রক্তের দাগ লাগবে!’ আহতদের নিল না পুলিশ, মৃত্যু পথেই

ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া প্রতিটি শ্রেণিরই ওই মেধা ও শ্রমের চর্চার মধ্যে যাওয়া দরকার। পুলিশ বা রাজনীতিক, অভিযোগের সর্বজনীনতায় সবাই মোটামুটি ভাবে তো সমানই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE