Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
News Letter

হরিপদ কেরানিরা ধাক্কা খাচ্ছেন

যদি সত্যিই গ্রেফতার হওয়ার যোগ্য হন তাপস পাল, তা হলে চার মাস আগেই গ্রেফতার হতে পারতেন তিনি, বা দু’মাস পরেও হতে পারতেন। অথবা এখন গ্রেফতার হলেও অস্বাভাবিকতার কিছু নেই।

যিনি আইন প্রণেতা, তাঁর বিরুদ্ধেই বেআইনি ক্রিয়াকলাপের অভিযোগ ওঠে প্রথমে।—ফাইল চিত্র।

যিনি আইন প্রণেতা, তাঁর বিরুদ্ধেই বেআইনি ক্রিয়াকলাপের অভিযোগ ওঠে প্রথমে।—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৯
Share: Save:

যদি সত্যিই গ্রেফতার হওয়ার যোগ্য হন তাপস পাল, তা হলে চার মাস আগেই গ্রেফতার হতে পারতেন তিনি, বা দু’মাস পরেও হতে পারতেন। অথবা এখন গ্রেফতার হলেও অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। কিন্তু সিবিআই-এর পদক্ষেপ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, এবং বিরোধীদের ইঙ্গিতগুলো মিলেমিশে এমন এক পরিস্থিতির জন্ম দিল, যাতে গ্রেফতারির উদ্দেশ্য এবং বিধেয় নিয়ে সংশয়ের বিস্তর অবকাশ তৈরি হল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। প্রতিহিংসা বলেই, এত দিন কিছু হয়নি, নোট বাতিল নিয়ে মুখ খুলতেই আঘাত এল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধীরা বললেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাই যদি হয়, তা হলে এত দিন নিশ্চয়ই গোপন রাজনৈতিক বোঝাপড়া ছিল কিছু। ছিল বলেই, অস্ত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও এত দিন তার প্রয়োগ হয়নি।

এ দেশে একটি সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট শাসন প্রণালী রয়েছে, দেশে আইনের শাসন রয়েছে এবং সুসংহত একটি ব্যবস্থায় ভর করেই দেশটা চলে বলে যে হরিপদ কেরানির বিশ্বাস, সেই হরিপদ কেরানি কিন্তু আজ ধাক্কা খাচ্ছেন। যিনি আইন প্রণেতা, তাঁর বিরুদ্ধেই বেআইনি ক্রিয়াকলাপের অভিযোগ ওঠে প্রথমে। তার পর সংশয় তৈরি হয়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদৌ ব্যবস্থা নেওয়া হবে তো? অবশেষে আচমকা একটা বৃহৎ পদক্ষেপ হয়, কিন্তু এমন সময়ে হয়, যখন পদক্ষেপটির প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে অবধারিত ভাবে প্রশ্ন উঠে যায়।

রাষ্ট্রের পরিচালক যাঁরা, তাঁদের প্রতিটি কার্যকলাপের এ পিঠে এবং ও পিঠে এ ভাবে রাজনৈতিক নকশার ছাপ থাকবে কেন? সাধারণ নাগরিকের বেছে নেওয়া প্রতিনিধিরা ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছে যা কিছু করেন, সে সব কিছুর নেপথ্যেই রাজনীতির কুটিল প্রবাহ লুকিয়ে রয়েছে, এই ধারণা আইন, শাসন, সংবিধান তথা গোটা ব্যবস্থা সম্পর্কেই সাধারণ নাগরিকের মনে এক গভীর অবিশ্বাস তৈরি করে। এমন অবিশ্বাসের বাতাবরণ এই প্রথম বার তৈরি হল, তা নয় মোটেই। আগেও বহু বার হয়েছে, এখনও হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হতে থাকবে সম্ভবত। আশঙ্কাটা সেখানেই। বিশ্বাসের ভিতটা বার বার ধাক্কা খেতে খেতে ধসে না পড়ে এক দিন!

অবিশ্বাসের বাতাবরণে আজ বিপন্ন বোধ করেন সাধারণ নাগরিক। বিশ্বাসের ভিতটা কখনও ধসে পড়লে কিন্তু সবচেয়ে বিপন্ন হতে হবে আজকের নিয়ন্ত্রকদেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay Tapas Paul CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE