Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গঙ্গাপ্রাপ্তি

বর্জ্য পরিশোধন, শৌচাগার নির্মাণ, আরও শ্মশান তৈরি করিয়া গঙ্গায় শবদেহ ভাসাইবার প্রথার প্রতিরোধ, এই সকল কাজ যদি হইত, তবে আদালতকে নূতন তারিখ নির্দিষ্ট করিয়া ফের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করিতে হইত না। সরকার-নির্দিষ্ট লক্ষ্যের অধিকাংশই যে অপূর্ণ, সরকারি তথ্যেই তাহা প্রকাশিত।

নির্দেশ অমান্য করেই চলছে গঙ্গায় শবদেহ ভাসানোর প্রক্রিয়া। ছবি:রয়টার্স।

নির্দেশ অমান্য করেই চলছে গঙ্গায় শবদেহ ভাসানোর প্রক্রিয়া। ছবি:রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

গ ঙ্গার দূষণ বন্ধ করিতে দুই বৎসর সময় দিয়াছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। এই সময়ের মধ্যে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার হইতে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও অবধি ৫৪৩ কিলোমিটার জুড়িয়া গঙ্গায় শিল্প বা নিকাশি ব্যবস্থা হইতে বর্জ্য পদার্থ আসিয়া যেন না মেশে, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। এমন নির্দেশে আশ্বস্ত হইবার কথা। কিন্তু সংশয় দুর্মর। গত তিরিশ বছর ধরিয়া গঙ্গাকে কলুষমুক্ত করিবার যে প্রচেষ্টা চালাইতেছে নানা দলের সরকার, দুই বৎসরে কি সেই লক্ষ্য পূরণ হইতে পারে? যদি পারে, তবে এত দিন হয় নাই কেন? বিশেষত নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হইয়া নদীর দূষণমুক্তির প্রকল্পটিকে ‘নমামি গঙ্গে’ নাম দিয়া রীতিমতো ধর্মীয় আবেগ যুক্ত করিয়াছেন। পাঁচ বৎসরের জন্য কুড়ি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও করিয়াছেন। দূষণরোধে কোন সময়ের মধ্যে কী কী করিতে হইবে, তাহার নির্দেশও জারি হইয়াছে। বর্জ্য পরিশোধন, শৌচাগার নির্মাণ, আরও শ্মশান তৈরি করিয়া গঙ্গায় শবদেহ ভাসাইবার প্রথার প্রতিরোধ, এই সকল কাজ যদি হইত, তবে আদালতকে নূতন তারিখ নির্দিষ্ট করিয়া ফের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করিতে হইত না। সরকার-নির্দিষ্ট লক্ষ্যের অধিকাংশই যে অপূর্ণ, সরকারি তথ্যেই তাহা প্রকাশিত। চার হাজার কিলোমিটার নিকাশি ব্যবস্থা নির্মাণের লক্ষ্য ধার্য হইয়াছিল, ২০১৪ সাল হইতে আজ অবধি হইয়াছে কিঞ্চিদধিক এক হাজার। মানব-বর্জ্য পরিশোধনের কারখানার লক্ষ্যের অর্ধেকও পূরণ হয় নাই। যদিও সংসদে সরকার অঙ্গীকার করিয়াছে যে ২০২০ সালের মধ্যে সকল লক্ষ্য পূরণ হইবে, কিন্তু যে বিপুল কাজ বাকি, তাহাতে ইহা এক প্রকার দুরাশা।

অতএব আদালত নূতন করিয়া লক্ষ্য বাঁধিল। ইহাও লক্ষণীয় যে, আদালতের নিকট এই মামলাটি দায়ের হইয়াছিল বত্রিশ বৎসর পূর্বে। তাহার পর নানা নামে সরকারি প্রকল্প চলিয়াছে, আদালতে মামলাও চলিয়াছে। প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা, উভয় তরফ হইতেই নানা সময়ে নানা নির্দেশ মিলিয়াছে নানা রাজ্যের আধিকারিকদের। কিন্তু কাজ হয় নাই। দূষণকারী চর্মশিল্প গঙ্গার পাড়েই রহিয়া গিয়াছে, নড়ানো যায় নাই। চর্মশোধনের জন্য ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিক-যুক্ত জল পরিশোধনের জন্য যে কারখানা নির্মাণের কথা ছিল, তাহাও হয় নাই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনক্ষেত্র বারাণসী পরিচ্ছন্নতার সূচকে এখনও শেষ দশে রহিয়া গিয়াছে। শৌচাগার নির্মাণের হিসাব কষিয়া লাভ হইবে না, যদি নিকাশি, রাস্তাঘাটের পরিচ্ছন্নতা, মৃতদেহ সৎকার, এমন কোনও বিষয়েই উন্নতি না ঘটিয়া থাকে। উত্তরপ্রদেশের কর্মসংস্কৃতি অপর নানা ক্ষেত্রের মতো দূষণ-প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও রাজ্যটিকে পিছনে রাখিতেছে।

অতএব প্রশ্ন, ডঙ্কা বাজাইয়া প্রকল্পের উদ্বোধন করিয়া সামান্য কাজ করিবার ঐতিহ্য কি চলিতেই থাকিবে? গঙ্গাকে নির্মল করিবার কাজটি আর পাঁচটি সরকারি প্রকল্পের মতো নহে, কারণ মোদীই তাহাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়াছেন। তাঁহার ‘ধ্বজাধারী’ প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি ‘নমামি গঙ্গে’। তাহাতেও যদি আদালতের ধমক খাইতে হয়, তাহার অধিক লজ্জা আর কী থাকিতে পারে? পরিবেশ সুরক্ষার প্রশ্নে দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁহার স্ব-নির্বাচিত প্রকল্পে নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রে পিছাইয়া থাকেন, তাহা হইলে দেশের মানুষেরই লজ্জা করিতে থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE