বিনা পয়সার প্রাপ্তিকে মানুষ সম্মান করে না, এমন আশঙ্কা করেন অনেকে। জনধন যোজনায় খুলিয়া দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপর একটি সমীক্ষা প্রমাণ করিল, সকল ক্ষেত্রে সে ভয় সত্য নহে। প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনার অধীনে খুলিয়া দেওয়া তিন হাজার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কার্যকলাপ দুই বৎসর ধরিয়া দেখিয়াছেন তিন গবেষকের একটি দল। তাহাতে স্পষ্ট, শুরুটা ধীরে হইলেও কালক্রমে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট হইতে লেনদেন তত বাড়িয়াছে। ২০১৪ সালের অগস্ট মাসে খোলা অ্যাকাউন্টগুলির মাত্র ৩০ শতাংশ ২০১৬ সালের নভেম্বরেও অর্থশূন্য রহিয়াছে। যাহা এ বিষয়ে জাতীয় গড়ের সমান। জনধন যোজনা ব্যতীত অপর যে সকল অ্যাকাউন্ট একই সময়ে খোলা হইয়াছিল, সেগুলির ক্ষেত্রে কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারে বাড়িবার এই ধারা দেখা যায় নাই। সমীক্ষকদের সিদ্ধান্ত, দরিদ্র, স্বল্পশিক্ষিত মানুষ ব্যবহার করিতে করিতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কাজে লাগাইতে শিখিতেছেন। এটিএম-এ টাকা তোলা হইতে শুরু করিয়া ব্যাঙ্কে টাকা সঞ্চয়ের অভ্যাস, সবই আয়ত্ত করিতেছেন। মহিলা ও বয়স্কদের মধ্যে অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের হার কিছু কম, কিন্তু ক্রমে অভ্যস্ত হইতেছেন তাঁহারাও। বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলেরই জনধন অ্যাকাউন্টে সঞ্চয়ের অঙ্ক বাড়িয়াছে। সাক্ষরতার অভাব বা অপর কোনও অক্ষমতা তাঁহাদের রাস্তা রোধ করিয়া দাঁড়ায় নাই।
ব্যাঙ্ক, সমবায়ের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহিত গরিবদের সংযুক্তি প্রয়োজন, এ কথাটি পরিচিত। কিন্তু গরিবের ব্যাঙ্ক সংযুক্তির কাজটি তেমন অগ্রসর হয় নাই। ভারতে ছাব্বিশ কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না তিন বৎসর পূর্বেও। তাঁহাদের সকলকে ব্যাঙ্কের সহিত যুক্ত করিতে জনধন যোজনার সূচনা করিয়াছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু জোগান দিলেই চাহিদা তৈরি হইবে কি না, সে প্রশ্নটির সমাধান হয় নাই। বিশ্বে ছয় শত কোটি মানুষের মধ্যে আড়াই শত কোটিই ব্যাঙ্কের সহিত সম্পর্কহীন। ইহা চাহিদার অভাব, নাকি চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জোগানের অভাব, সেই বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। এই সমীক্ষাটি ইঙ্গিত দিল, অভাব জোগানের। অ্যাকাউন্ট খুলিয়া দিলে অজ্ঞতা, অনভ্যাস ধীরে ধীরে কাটাইয়া মানুষরা ব্যাঙ্ক ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ হইয়া ওঠেন। জোগান বাড়াইলে চাহিদা বাড়িবে।
ইহার পূর্বে গবেষকরা দেখাইয়াছেন, দরিদ্র মানুষ সরকারি সহায়তাকে কাজে লাগাইয়া জীবনকে উন্নত করিয়াছেন। এমনকী অতি-দরিদ্র পরিবারগুলিকে কোনও জীবিকার প্রশিক্ষণ-সহ অনুদান দিলে তাঁহারাও বাস্তবিক আয় বাড়াইয়াছেন, এবং শুধু তাহাই নহে, সেই বর্ধিত আয় দীর্ঘ দিন ধরিয়াও রাখিয়াছেন। শিক্ষা বা পুষ্টির জন্য সরকারি সহযোগিতা বা অনুদান সেই সব উদ্দেশ্যেই ব্যয় করিয়াছে গরিব পরিবার, অকারণে নষ্ট করে নাই, তাহারও সাক্ষ্য মিলিয়াছে। ব্যাঙ্ক সংযুক্তিতেও গরিবের আগ্রহের প্রমাণ মিলিল। অর্থ মন্ত্রকের তথ্য, বর্তমানে ভারতে আটাশ কোটির অধিক জনধন অ্যাকাউন্টে প্রায় চৌষট্টি হাজার কোটি টাকা জমা রহিয়াছে। জনধন প্রকল্প কার্যকর না হইলে ইহার একটি বড় অংশ নিশ্চিত ব্যাঙ্কের বাহিরে থাকিত। গরিব ব্যাঙ্ক পরিষেবা পাইতে আগ্রহী, এ বার ব্যাঙ্কগুলিকেও গরিবের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy