ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সিসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি এলাকায় যাহা ঘটিল, তাহাকে ট্রাম্পের পরাজয় বলিলে অত্যুক্তি হইবে, কিন্তু অবশ্যই তাহাকে ট্রাম্পিজম বা ট্রাম্পবাদ-এর পরাজয় বলা যায়। গত নির্বাচনের পর আমেরিকায় এই প্রথম ডেমোক্র্যাট বিজয়ের নিশান। দুই স্টেটের গভর্নর পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা নির্বাচিত। এহ বাহ্য। উভয় ক্ষেত্রেই রিপাবলিকান প্রার্থীদের কুৎসাময় এবং বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারকে মার্কিন জনগণ প্রত্যাখ্যান করিলেন, প্রধান কথা ইহাই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁহার অনুচরবৃন্দ ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী র্যালফ নরথ্যামকে অন্তহীন কুৎসার লক্ষ্য করিয়াছিলেন, মিথ্যার বন্যা বহাইয়াছিলেন, অভিবাসী ও অপরাধীদের প্রতি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী নাকি অতিশয় নরম— এই মর্মে উসকানি-বিজ্ঞাপন দিয়া পরিবেশ বিষাক্ত করিতেছিলেন। এত সবের পর এই ফলাফল নিশ্চিত ভাবে রিপাবলিকানদের উদ্দেশ্যে একটি কঠিন ভর্ৎসনা প্রেরণ করে। প্রসঙ্গত, ট্রাম্পিজম কথাটির অর্থ কেবল ভোটের আগে মিথ্যা অভিযোগে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া ভরিয়া দেওয়া নহে। ভোটের ফলাফল পছন্দমাফিক না হইলে সঙ্গে সঙ্গে ডিগবাজি খাইয়া নিজের সঙ্গে পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান রচনা করাও ট্রাম্পবাদের অন্তর্গত। ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান প্রার্থী জিলেস্পি বেচারি বোধহয় ভাবেন নাই— যে প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহেও তাঁহার জন্য তুড়ি মারিয়া দিনকে রাত করিয়া দিচ্ছিলেন, ভোটের ফল বাহির হইতেই তিনি হঠাৎ বলিয়া দিবেন, জিলেস্পির মতামতের সহিত তাঁহার কোনও যোগ নাই!
কেবল দুইটি গভর্নরের পদ জেতাই নহে, ভার্জিনিয়াতে ডেমোক্র্যাটরা প্রাদেশিক আইনসভায় বিরোধীদের অপেক্ষা নিজেদের অনেক শক্তপোক্ত করিতে পারিয়াছেন। অন্যত্রও একই প্রবণতা স্পষ্ট। নিউ হ্যাম্পশায়ারের ম্যাঞ্চেস্টার শহরের মেয়র পদটি ছিনাইয়া লইয়াছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। আরও নানা পদে মহিলা, কৃষ্ণাঙ্গ, লিঙ্গান্তরিত, সমকামী, অভিবাসী প্রার্থীদের জয় হইয়াছে। অর্থাৎ ২০১৬ সালে ট্রাম্প যে আমেরিকা গড়িবার শপথ লইয়াছিলেন, দেশবাসী তাহার বিপরীতে রায় দিতেছেন। মার্কিন সমাজের একাংশ নিঃসংশয়ে জানাইতেছেন, তাঁহারা বৈচিত্রময় দেশ চাহেন, আইডেন্টিটির ভিন্নতাকে সম্মান করেন, আমেরিকান বলিতে তাঁহারা ভিন্নতাকেই বরণ করিতে চান। ইহাকে এখনই পরিবর্তনের পদধ্বনি বলা না গেলেও, ট্রাম্পের দিক হইতে হাওয়া যে নিতান্ত এলোমেলো, তাহা নিশ্চিত। রিপাবলিকানদের হতাশা স্বাভাবিক। তাঁহারা আগেভাগেই বলিয়া ফেলিয়াছিলেন, ভার্জিনিয়া যদি ‘লাল’ হয়, তবে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হইবার সম্ভাবনা ষোলো আনা। লালের বদলে নীল আসিয়া পথ জুড়িয়া বসিল। এ বার তাঁহারা কী বলিবেন?
মার্কিন ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি এক বৎসরের মধ্যেই এতখানি অপ্রিয়তার লক্ষ্য হইয়াছেন। একের পর এক ভুল, হাস্যকর কিংবা বিপজ্জনক কাজ করিয়াছেন। দেশের নাগরিকদের মধ্যে তাঁহাদের প্রেসিডেন্ট বিষয়ে এক প্রবল নিরাপত্তাবোধের অভাব না ঘটাই অস্বাভাবিক। তবে দুইটি কথা মনে রাখা দরকার। এক, রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে ধস না নামিলে পরিবর্তনের এই এলোমেলো হাওয়া ঝড়ে পরিণত হইবার সম্ভাবনা কম। দুই, ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ হইতে অর্থনৈতিক অ্যাজেন্ডা এখনও তৈরি হয় নাই, তাঁহাদের প্রচারের ভিত এখনও দুর্বল। বড় পরিবর্তনের জন্য শুধু নেতি-ভোটের উপর ভরসা করিলে চলিবে না, ইতিবাচক ভোটেরও ব্যবস্থা করিতে হইবে। সময় আছে। আশা করা যায়, ভোটের আশায় ট্রাম্প ও ট্রাম্পবাদের ভ্রান্তি-বিভ্রান্তির ভরসায় বসিয়া না থাকিয়া ডেমোক্র্যাটরা নিজেদের কর্মসূচি লইয়াও কিছু মাথা ঘামাইবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy