নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
অনুগামীরা মহাসমারোহে উদ্যাপন করছিলেন তাঁর জন্মদিন, আর জন্মদিনে তিনি নিজে জাতিকে উৎসর্গ করছিলেন দেশের সবচেয়ে বড় জলাধার তথা সুবিশাল সেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্প। যে কোনও সমারোহই সমস্ত আলো নিজের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর সমারোহের আয়োজন যদি হয় বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে, তা হলে আলোকবৃত্তের অবস্থান অন্যত্র সরে যাওয়ার কোনও কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না। তবু জানবেন, আলোকবৃত্তটাই সব নয়, তার বাইরেও থেকে যায় অনেকটাই, বস্তুত বেশিরভাগটাই। তাই গুজরাতের প্রান্তে দাঁড়িয়ে সর্দার সরোবরকে জাতির প্রতি উৎসর্গ করার সময় নরেন্দ্র মোদী যখন নতুন আলোর স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই অন্ধ্রপ্রদেশের এক প্রান্তের মানুষ কোথাও বিন্দুমাত্র আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলেন না, গাঢ় অন্ধকার আগামী দিনে আরও গাঢ় হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছিলেন। সেই আশঙ্কা থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে চেক পাঠিয়ে অভূতপূর্ব এক প্রতীকী প্রতিবাদ রচনা করছিলেন।
প্রতিবাদের ৪০০ চেক নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর নামে। ৬৮ বছরে পদার্পণ মোদীর, তাই ৬৮ পয়সার চেক। প্রধানমন্ত্রী, দেশজুড়ে উন্নয়নের রথ ছুটছে বলে সদর্পে যখন বড়াই করছেন আপনি, তখন দেশের এই খরাক্লিষ্ট প্রান্তের কথা আপনার সম্ভবত মনে পড়েনি। কিন্তু আমরা আপনার জন্মদিনটাও মনে রেখেছি, অসীম অনটনের সঙ্গে যুঝতে যুঝতেও আপনার জন্মদিনের যত্সামান্য ‘উপহার’ পাঠাতে আমরা ভুলিনি। রায়ালসীমার মানুষের বার্তাটা অনেকটা এই রকমই। চলচ্চিত্রের এক চিরন্তন হয়ে যাওয়া পঙ্ক্তি মনে পড়ছে নিশ্চয়ই— ভরপেট নাও খাই, রাজকর দেওয়া চাই।
আরও পড়ুন: মোদীর বার্থডে গিফট্, ৪০০টি ৬৮ পয়সার চেক!
না, নরেন্দ্র মোদীকে হীরক রাজ বলছি না এখনই। কিন্তু তাঁর রাজত্বে হীরক রাজত্বের মতো রূপকল্প যে তৈরি হতে শুরু করল, সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি বই কি! ভারতের মতো সুবিশাল এবং অসীম বৈচিত্রের দেশের প্রতিটি কোনায় সর্বদা সমান ভাবে নজর দেওয়া শক্ত। কিন্তু শক্ত কাজটা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার অঙ্গীকার সামনে রেখেই তো দিল্লির মসনদে আরোহন। সে কথা ভুললে চলবে কী করে?
সুবিশাল সর্দার সরোবরের উদ্বোধন করলেন নরেন্দ্র মোদী, সেচে এবং বিদ্যুতে চার রাজ্যের চেহারা বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার করলেন। নদী সংযুক্তিকরণের বিরাট প্রকল্প হাতে নিলেন। বুলেট ট্রেন প্রকল্পের সূচনা করলেন। কখনও গুজরাতি, কখনও মরাঠি অস্মিতাকে জাগ্রত করতে বিপুল ব্যয়ে সর্দার পটেল এবং ছত্রপতি শিবাজির মূর্তি গড়ার কাজও শুরু করে দিলেন। কিন্তু এক প্রান্তে বা বেশ কিছু প্রান্তে যখন এত রোশনাই, তখন আরও বেশ কিছু প্রান্ত খরা বা বন্যা বা শস্যহানি বা অনাহার বা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মারে ভুগছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সে দিকেও তো একই সঙ্গে নজর দিতে হবে। উন্নয়নের ফসল সব জমিতে সমান ভাবে ফলবে না, সে হয়তো আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ‘উন্নয়ন যজ্ঞের’ ন্যূনতম ফলনটুকু তো সর্বত্রই নিশ্চিত করতে হবে। সেটুকু করতে পারলে জন্মদিনটা নিষ্কলঙ্ক হত অনেকখানি হয়তো। সর্দার সরোবরকে জাতির প্রতি উত্সর্গ করলেন যে দিন, সেই দিনেই জাতির কাছ থেকে এমন চেক পেতে হত না সম্ভবত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy