Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

এর পর দুর্যোগের চেয়ে রাজনীতিকে বেশি ভয় পাবেন নাগরিক

এ কথা মানতে হবে যে বেশ বিরল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উত্তরবঙ্গ এ বছর। এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সচরাচর দেখা যায় না। পরিস্থিতির এত অবনতি হতে পারে, আঁচ করা হয়তো সম্ভব ছিল না প্রশাসনের পক্ষে।

রসদ নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। বালুরঘাটে চকভৃগু এলাকায়।

রসদ নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। বালুরঘাটে চকভৃগু এলাকায়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০৫:০৫
Share: Save:

দুর্গত মানুষ সর্বাগ্রে যা চান, তা হল পরিত্রাণ। তাঁর এমন দুর্গতি কেন হল? কে দায়ী? কার সাজা হওয়া উচিত? এ সব প্রশ্ন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মানছি। কিন্তু এক-বুক বা এক-গলা বা এক-মানুষ জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কেউই চান না। হাবুডুবু খেতে থাকা মানুষের কাছে ডাঙায় ওঠাটাই অগ্রাধিকার। জলে কেন পড়তে হয়েছিল, সে ব্যাখ্যাটা পরে খুঁজলেও খুব একটা ক্ষতি হয় না সম্ভবত।

উত্তরবঙ্গের মানুষকে অবশ্য আগে ব্যাখ্যাটাই শুনতে হচ্ছে, পরিত্রাণ পরে। পরিত্রাণ কবে হবে, কী ভাবে হবে, কতটাই বা হবে— দিশা নেই এখনও। করাল বন্যার গ্রাসে বিপর্যস্ত জনজীবন, বিচ্ছিন্ন দশায় রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রহর কাটছে, বেলা গড়াচ্ছে, রাত পোহাচ্ছে। ত্রাণের কাজ গতি পাচ্ছে না, উদ্ধারকারীদের দেখা মিলছে না।

এ কথা মানতে হবে যে বেশ বিরল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উত্তরবঙ্গ এ বছর। এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সচরাচর দেখা যায় না। পরিস্থিতির এত অবনতি হতে পারে, আঁচ করা হয়তো সম্ভব ছিল না প্রশাসনের পক্ষে। অতএব কঠিন হয়ে পড়েছে পরিস্থিতির মোকাবিলা। কিন্তু দু’পাশের দুই প্রতিবেশী রাজ্য বিহার এবং অসমও তো এ বছর একই রকম দুর্যোগের শিকার। তাদের পরিস্থিতি তো এতটা কঠিন নয়। ত্রাণ পৌঁছচ্ছে দ্রুত, কালক্ষেপ না করে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, জলবন্দি অবস্থাতেও সর্বত্র অনুভূত হচ্ছে সহানুভূতিশীল প্রশাসনের উপস্থিতি। মাঝে থাকা বাংলার হাল এমন কেন তা হলে?

রাজ্য সরকার অভিযোগের আঙুল তুলেছে কেন্দ্রের দিকে। প্রধানমন্ত্রী বিহার এবং অসমে ফোন করেছেন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাকে নিয়ে আগ্রহ দেখাননি। দাবি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।

কেন্দ্রের অভিযোগ আবার ঠিক বিপরীত। বিহার এবং অসমের সরকার প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদে অবহিত করেছে, কেন্দ্রের সহায়তা চেয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রকে বন্যা সংক্রান্ত তথ্যই দেয়নি। দাবি কেন্দ্রের।

প্রশ্ন হল— এখন কি এই দাবি-পাল্টা দাবি, অভিযোগ-প্রত্যাভিযোগের সময়? নাকি সর্বশক্তি সমন্বিত করে দুর্গত মানুষের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়াটাই অগ্রাধিকার? দুর্গত মানুষ তো কেন্দ্র-রাজ্য তরজা বোঝেন না। তাঁরা ত্রাণ বোঝেন, জলবন্দি অবস্থায় বেঁচে থাকার রসদ খোঁজেন, উদ্ধার পাওয়ার প্রহর গোনেন। সেই ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাটুকু সুনিশ্চিত করা প্রশাসনের কাছে অগ্রাধিকার নয় কি?

বিপর্যয়কে ঘিরে রাজনীতি এ দেশে নতুন কিছু নয়। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি হয় এ দেশে, দুর্যোগ নিয়ে রাজনীতি হয়, ত্রাণ বিলি নিয়েও হয়। কিন্তু সে সব মারপ্যাঁচে ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে দুর্যোগের ধাক্কাটা যে প্রাথমিক ভাবে সামলে দেওয়া দরকার, সে কথাও কি আমরা ভুলে যাব! দুর্যোগের প্যাঁচে পড়া লক্ষ লক্ষ মানুষকে রাজনীতির মারপ্যাঁচে ফেলব! দুর্যোগের সঙ্গে রাজনীতির আর ফারাক থাকল কোথায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE